ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

“ইসলামে বিয়ে” ---ফখরুল ইসলাম খান।

মানুষ অল্লাহর সৃষ্টি। শুধু সৃষ্টি নয় সেরা জীব। তিনি মানুষের একটি মাত্র প্রকারেই সৃষ্টি করেন নাই। তিনি মানুষকে দুইটি লিঙ্গে ভাগ করে সৃষ্টি করেছেন। মহান অল্লাহ পাক সৃষ্টির শুরু হইতেই পুরুষ ও নারীর এক ভারসাম্য পুর্ন ডিজাইনে তৈরি করিয়াছেন। সে ডিজাইন মোতাবেক অসংখ্য অসংখ্য নারী-পুরুষ নিজেদের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট ও বিশেষত্ব লইয়া দুনিয়ার সর্বত্র এক নির্দিষ্ট অনুপাত সহকারে জন্ম গ্রহন করিতেছে। এ ডিজাইন বা ব্যবস্থাটা আপনা হইতে বিনা উদ্দেশ্যই হইয়া যায় নাই। যিনি বানাইয়াছেন তিনি ইচ্ছা করিয়া বানাইয়াছেন। এই ব্যবস্থা করিয়াছেন যে, পুরুষ স্বীয় প্রকিৃতির দাবি নারীর নিকট এবং নারী স্বীয় প্রকৃতির দাবি পুরুষের নিকট পুরন করিতে পারিবে। উভয়ই পরস্পরের নিকট পরম তৃপ্তি, স্বস্তি, শ্বান্তি ও প্রশান্তিÍ লাভ করিবে। এছাড়া মানব বংশ সংরক্ষনের এবং সভ্যতা ও তামাদ্দুন সৃষ্টির মাধ্যম বানাইয়াছেন। তাই নারী ও পুরুষের পরস্পরের প্রতি কামনা-বাসনা ও উদ্যম, ব্যগ্রতা ব্যকুলতার ভাবধারা সংস্থাপন করার মূল উদ্দেশ্য হল সমস্ত পশু প্রজাতির মোকাবেলায় মানব জাতির মধ্যে সভ্যতা ও তামাদ্দুন গড়ে তোলা। এমন অবস্থার সৃষ্টি করিয়া দিয়েছেন যে, শান্তি ও প্রশান্তি লাভের পিপাসাই তাহাদিগকে পরিবার গড়িয়া তুলিতে উদ্ধুদ্ধ করে, বাধ্য করে। ইহার ধরুন বংশ ও গোত্র গড়িয়া উঠে। আর ইহার কারণে মানব জাতির তামাদ্দন বিকাশ লাভ করে । 
সৌন্দর্য্যরে কারনে নারীকে একান্তভাবে পাওয়ার আলাøহ প্রদত্ত্ব প্রকৃতিগতভাবে যে বিধান তা হল “বিবাহ”। বিয়ে মানুষের বাস্তব প্রয়োজন, প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা ও মনের শান্তি, প্রশান্তি লাভই হচ্ছে বিয়ের প্রধানতম উদ্দেশ্য। একটি নারী ও একটি পুরুষ বিবাহ সুত্রে একত্রিত হয়ে সু-শৃংখল, সুষ্ট জীবন যাপনকেই বলা হয় দাম্পত্য জীবন। নারী পুরুষের সৃষ্টি যত পুরাতন “বিবাহ” ব্যবস্থাটি ও তত পুরাতন, এক মানবিক ব্যবস্থা । 
কুরআন হাদিসের আলোকে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। আর ইসলামে এ বিষয়ে রয়েছে প্রয়োজনীয় সুস্পষ্ট পথ নির্দেশনা। সর্বোপরি বিয়ে একটি ইবাদত, বিবাহ পূর্ব ও পরবর্তী করণীয় এবং বর্জনীয় দিক সম্পর্কে শরীয়তে রয়েছে কিছু নিয়মনীতি। তা জেনে নেয়া আমাদের জন্য ফরজ। যেমন পাত্র-পাত্রী নির্বাচন, বিযের খুতবা, বিয়ের ঘটকালি, পাত্র-পাত্রী সাক্ষাৎ, পান-চিনির অনুষ্টান, গায়ে হলুদ, বিয়ের অনুস্টান, গেইট নির্মান ও উকিল নিয়োগ এবং মোহরানা, স্ত্রী তালাকের ক্ষমতা, সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা একান্ত আবশ্যক । 

বিয়ে কি....?

মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ তায়া’লা মানুষের মধ্যে তার বিপরিত লিঙ্গের প্রতি এক সহজাত আকর্ষণ সৃষ্টি করেছেন। একের জন্য অন্যের সান্নিধ্যের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি ঢেলে দিয়েছেন। আর এই সান্নিধ্য প্রাপ্তির আইনগত, ধর্মীয় ও সামাজিক নিয়মের নাম হলো “বিবাহ”। সৌন্দর্য্যরে কারনে নারীকে একান্ত ভাবে পাওয়ার আলাøহ প্রদত্ত্ব প্রকৃতিগতভাবে যে বিধান তা হল “বিবাহ”। বিয়ে মানুষের বাস্তব প্রয়োজন, প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা ও মনের শান্তি, প্রশান্তি লাভই হচ্ছে বিয়ের প্রধানতম উদ্দেশ্য। একটি নারী ও একটি পুরুষ বিবাহ সুত্রে একত্রিত হয়ে সু-শৃংখল, সুষ্ট জীবন যাপনকেই বলা হয় দাম্পত্য জীবন। নারী পুরুষের সৃষ্টি যত পুরাতন “বিবাহ” ব্যবস্থাটি ও তত পুরাতন, এক মানবিক ব্যবস্থা । 

বিয়ের প্রয়োজনীয়তা.......?

বিয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক সব দৃষ্টিকোণ থেকেই এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে ইসলামে বিয়েকে বলা হয়েছে ঈমানের অর্ধেক। বিয়ের মাধ্যমেই ঈমানের পূর্ণতা পায়। তাছাড়া বিয়ে মানব জীবনের অন্যতম চাহিদাও বটে। এ কারণে ব্যক্তি যখন বিয়ের উপযুক্ত হয় তার জন্য বিয়েকে ফরজ করেছে ইসলাম। বিয়ে যে কেবল শারীরিক চাহিদা বা ঈমাণ পূর্ণ করে তাই নয়, পুরুষের ব্যক্তিত্বেরও বিকাশ ঘটায়। সমাজে গ্রহণ যোগ্যতা তৈরি করে। এজন্য সময়মতো বিয়ে করাকে এত বেশি গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। আর যারা বিয়ের উপযুক্ত হওয়ার পরও তা করেন না তাদের শয়তানের দলভূক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 
অনেক সক্ষম ও স্বাবলম্বী পুরুষও মনে করেন, বিয়ে করলে স্ত্রীর ভরণ পোষণ দিতে পারবে না। সামান্য আয়ে দ’ুজনের সাংসারিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে। এ জন্য বিয়ে থেকে দূরে থাকে। এটা আদৌ উচিত নয়। কারণ তাদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, অর্থাৎ তোমাদের মধ্যকার যারা বিবাহবিহীন আছে এবং দাস দাসীদের মধ্যে যারা নেককার তাদের তাড়াতাড়ি বিবাহ দিয়ে দাও। যদি তারা অভাবগ্রস্থ থাকে আমি (আল্লাহ্) নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে ধনী করে দেব। আর আল্লাহ তায়া’লা প্রাচুর্যময় ও সবকিছু জানেন।(সুরা নূরঃ ৩২)
রুজির চিন্তা করে যারা বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন তাদের উদ্দেশে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য সংকট উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই।’ {সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২-৩}
অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল’। (তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে) ‘তিনি তোমাদের উপর মুষল ধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, ‘আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’। {সূরা নূহ, আয়াত: ১০-১২}
সুতরাং আমরা কেনো আল্লাহর এতসব অনুগ্রহ পেয়েও কেনো লুফে নেবো না..??
এ দিকে রাসূল (সা.) বিবাহিত ব্যক্তিকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। আর এ কথাও স্বীকৃত, বিয়ে ব্যক্তির উপার্যন বাড়িয়ে দেয়, কমায় না। রাসূল (সা:) বলেছেন, তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহর কর্তব্য, এক. আযাদী চুক্তিবদ্ধ গোলাম অর্থাৎ যে তার রক্তমূল্য আদায় করতে চায়, দুই. পবিত্রতার মানসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি, তিন. আল্লাহর পথে যুদ্ধকারী।
এ ব্যাপারে রাসুল (সঃ) এর অপর একটি হাদীসে বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করে বলা হযয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দু:শ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ [আবূ দাঊদ: ১৫২০; ইবন মাজা : ৩৮১৯; তাবরানী : ৬২৯১]
এ সম্পর্কিত একটি হাদিস যেটি হজরত আবু জর (রা:) থেকে বর্ণিত। একবার রাসুলুল্লাহ (সা:) আক্কাফ (রা:) কে বললেন, হে আক্কাফ! তোমার স্ত্রী আছে? তিনি বলেন, না। রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন, তোমার কি সম্পদ ও স্বচ্ছলতা আছে? সে বললো, আমার সম্পদ ও স্বচ্ছলতা আছে। রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন, তুমি এখন শয়তানের ভাইদের দলভূক্ত। যদি তুমি খ্রিস্টান হতে তবে তাদের রাহেব (ধর্ম গুরু) হতে। নিঃসন্দেহে বিয়ে করা আমাদের ধর্মের রীতি। তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি যে অবিবাহিত। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যেও নিকৃষ্ট ব্যক্তি যে অবিবাহিত। তোমরা কি শয়তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাও। শয়তানের কাছে নারী হলো অস্ত্র। সবাই নারী সংক্রান্ত ফেৎনায় জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যারা বিয়ে করেছে তারা নারীর ফেৎনা থেকে পবিত্র। নোংড়ামি থেকে মুক্ত। তারপর বলেন, আক্কাফ! তোমার ধ্বংস হোক। তুমি বিয়ে কর নতুবা তুমি পশ্চাৎপদ মানুষের মধ্যে থেকে যাবে। (মুসনাদে আহমদ, জমউল ফাওয়ায়েদ, ইমদাদুল ফাতওয়া খ- ২, পৃষ্ঠা ২৫৯।) এ হাদিস অনুাযায়ী অবিবাহিত স্বাবলম্বী পুরুষকে পশ্চাৎপদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

বিয়ে কত প্রকার..........?

ইসলামে ব্যক্তির স্বাবলম্বী ও সক্ষমতার বিভিন্ন ধরণসাপেক্ষে বিয়েকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি সক্ষম পুরুষকে বিষয়টি গুরুত্বসহ মনে রাখা উচিত।
ওয়াজিব বিয়ে :- যখন শারীরিক চাহিদা থাকে। তার এই পরিমাণ সামর্থ থাকে যে প্রতিদিনের খরচ প্রতিদিন উপার্জন করে খেতে পারে। তখন বিয়ে করা ওয়াজিব। এ অবস্থায় বিয়ে থেকে বিরত থাকলে গুণাহগার হতে হবে। অর্থাৎ বলা হচ্ছে না যে, বিয়ে করতে গেলেই তাকে লাখ লাখ টাকার বান্ডেল নিয়ে নামতে হবে? কথিত ওয়ালিমার নাম করে গরু মেরে খাওয়াতে হবে এবং স্বামার্থ থাকুক আর নাই থাকুক লক্ষ টাকার নিচে মোহোরানা না হলে চলবে না।
ফরজ বিয়ে :- যদি সামর্থ থাকার সাথে সাথে শারীরিক চাহিদা এতো বেশি থাকে যে, বিয়ে না করলে ব্যাভিচার বা হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তখন বিয়ে করা ফরজ। ব্যাভিচারের আওতায় যেগুলো পড়ে তা হলো- কুদৃষ্টি, পর্নগ্রাফী আসক্ততা, অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক বা লিভটুগেদার, হস্ত মৈথুনের মতো হারাম কাজ ইত্যাদি।
নিষিদ্ধ বিয়ে :- যদি কারো আশঙ্কা হয় সে স্ত্রীর অধিকার আদায় করতে পারবে না। চাই তা দৈহিক হোক বা আর্থিক হোক। তার জন্য বিয়ে করা নিষিদ্ধ।
কিন্তু অবস্থা যদি এমন হয় যে কোনো পুরুষ এতটাই অসামার্থ যে, সে একে বারে নি-স্বম্বল, অক্ষম। নিজের মাথা গোজার মতো এতটুকু ঠাই নেই, তবে এক্ষত্রে তাকে রোজা রাখতে হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বিয়ের ইচ্ছে থাকলেও সক্ষম পুরুষে বিয়ে না করে রোজা রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে হাদিসে। কারণ রোজা দৈহিক কাম-উত্তেজনা দূর করে। তবে এ সময় সক্ষমতা অর্জনের জন্য বেশি বেশি কাজ ও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।

বাঁচতে হলে করতে হবে বিয়ে.....?

স্বাস্থ্য ডেস্ক নিউজ ইভেন্ট ২৪ ডটকম/ ০৯ মে ২০১৩ এ একটি নিউজ পড়েছিলাম, বাঁচতে হলে করতে হবে বিয়ে.....?
খবর হলো বিয়ে করলে নাকি দীর্ঘ জীবন বেঁচে থাকা যায়। মৃত্যু ঝুঁকিকেও অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। অবশ্যই বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক থাকতে হবে। সম্প্রতি মার্কিন গবেষকরা নতুন এক গবেষণার পর এমন তথ্যই জানালেন। নতুন এ গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনার ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও গবেষক ইলিন সিয়েগলার ও তার সহযোগী গবেষকরা।
ইলিন বলেন, মাঝবয়সে একজন সঙ্গী বা সঙ্গিনী থাকলে সুরক্ষিত থাকার সম্ভাবনাই বেশি। এ বয়সে একাকীত্ব মানুষকে ক্রমেই আশা ও ভবিষ্যতের প্রতি আস্থাহীন করে তোলে। একজন মানুষের সার্বিক জীবনধারণ প্রক্রিয়ার ওপর বিয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিবাহিত জীবনে যারা সুখী তারা স্বাভাবিকভাবেই স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন। ৪০ বছর বয়সের পর একাকী থাকা, সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে হারিয়ে নতুন করে বিয়ে না করা অসময়ে মৃত্যুর ঝুঁকিকে বাড়িয়ে দেয়। এমনকি ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত পৌঁছানোটাও দুষ্কর হয়ে যায়। বিবাহিত যে ব্যক্তিদের ধূমপান বা অ্যালকোহলের বদভ্যাস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও অবিবাহিতদের তুলনায় মাঝবয়সে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ২ দশমিক ৩ গুণ বেশি। তাদের বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যাটাও বেশি ও স্বামী-স্ত্রী যতœ নিতে পরস্পরকে উৎসাহিত করেন। অন্যদিকে মাঝবয়সের ঠিক আগে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটলে ও একাকী থাকার সিদ্ধান্ত নিলে তা আয়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কারণ তখন একাকীত্ব গ্রাস করে। মানুষ বিষণ্নতায় ভুগতে শুরু করে।

বে-নামাযীকে বিয়ে করা যাবে কি না?

রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেন ঃ
بَيْنَ الرَّجُلِ والْكُفْرِ والشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلاَةِ
অর্থ ঃ “মুসলিম বান্দা এবং কাফির ও মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত পরিত্যাগ করা।”
তিনি সালাত পরিত্যাগ করার ব্যাপারে আরও বলেছেন ঃ
الْعَهْدُ الَّذِيْ بّيْنَناَ وَبَيْنَهُمْ الصّلاَةُ فَمَنْ تَرِكَهاَ فَقَدْ كَفَرَ
অর্থ ঃ “তাদের মাঝে এবং আমাদের মাঝে চুক্তি হচ্ছে সালাতের, যে ব্যক্তি সালাত পরিত্যাগ করবে সে কাফির হয়ে যাবে।” (আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ)
মুসলিম নারীদের বিবাহের ব্যাপারে আল্লাহ্ পাক বলেছেন ঃ
وَلاَ تَنكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتّٰى يُؤْمِنَّ وَلأَদ্ধمَةٌ مُؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ
“আর তোমরা মুশরিক নারীদেরকে বিবাহ করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান গ্রহণ করে। অবশ্যই মুসলিম ক্রীতদাসী মুশরিক নারী অপেক্ষা উত্তম যদিও তাদেরকে তোমাদের ভাল লাগে।” (সূরা বাক্বারা ঃ ২২১)
এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক আরও বলেছেন ঃ
فَإِنْ عَلِمْتُمُوهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلاَ تَرْجِعُوهُنَّ إِلَى الْكُفَّارِ لاَ هُنَّ حِلٌّ لَهُمْ وَلاَ هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ
“যদি তোমরা জান যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফিরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফিরদের জন্য হালাল নয় এবং কাফিররা এদের জন্য হালাল নয়।” (সূরা মুমতাহিনা ঃ ১০)
নবী কারীম (সাঃ) এর সাহাবীগণ সালাত্ ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফির মনে করতেন না। এই দলীলগুলো থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি যারা সালাত্ পরিত্যাগ করল বা সালাত্ কায়েম করল না- তারা মুশরিক বা কাফির। মুশরিকদের জন্য বেহেশত হারাম।
উল্লেখিত বিষয়ে রাসূলে করীম (সাঃ) আরও বলেছেন :
من ترك الصلاة متعمدا فقد كفر جهارا.
অর্থ ঃ “যে ব্যক্তি ইচ্ছে করে সালাত ছেড়ে দিল, সে কুফরী করল, অর্থাৎ সে কাফির হয়ে গেল।” (সহীহ নামায পৃঃ ১২)
এ আয়াতগুলোর ভিত্তিতে মুসলমানগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, কোন মুসলিম নারীর সাথে কাফিরদের বিবাহ বৈধ নয়। অতএব কোন অভিভাবক যদি নিজ মেয়ে বা নিজের অধীনের কোন মেয়ের বিবাহ সালাত্ ত্যাগকারী ব্যক্তির সাথে সম্পন্ন করে তবে সূরা মুমতাহিনার ১০ আয়াত অনুযায়ী সে বিবাহ বিশুদ্ধ হবে না। এ বিবাহের মাধ্যমে উক্ত নারী তার জন্য বৈধ হবে না। সে ক্ষেত্রে জন্ম নেয়া সন্তানও বৈধ সন্তান হবে না। আল্লাহ পাক আল কুরআনে বলেছেন ঃ অর্থঃ “মুমিন নারী মুমিন পুরুষের জন্য বৈধ।” সূরা বাকারাহ- ২২১ নং আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে মুশরিক নারী ও মুশরিক পুরুষকে ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসী অপেক্ষা খারাপ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এবং তারা যত মনোমুগ্ধকরই হোক না কেন তাদের সাথে মুমিনের বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
কুরআন ও হাদীসের উল্লেখিত বানী থেকে পরিষ্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে যে, বে-নামাযীর সাথে বিয়ে দেয়া বা করা যাবে কি না?

বিয়ে পুর্ব পরিকল্পনা ঃ-

সুন্দর সংসার গড়ার জন্য বিবাহ পূর্ব পরিকল্পনা এবং পিতা মাতার অন্তর থেকে এবং অভিজ্ঞতার আলোকে প্রদান কৃত দোয়া খুবই প্রয়োজন। তাই প্রেমের বিয়ে গড়াব পরিকল্পনা পরিহার করুন। কেননা পর্দা রক্ষা করে কখনো প্রেম করা সম্ভব হয় না। নফসের খায়েসে পড়ে যদি প্রেম করেও ফেলেন তবুও পিতা- মাতার অবাধ্য হয়ে প্রেমিক- প্রেমিকা নিজেরাই বা বন্ধু-বান্ধবের সহযোগীতায় বিয়ে পর্ব সমাপ্ত করবেন না। পিতা মাতাকে বুঝাতে চেষ্ঠা করুন। তারাই আপনাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসেন। আর প্রেম পর্ব চলাকালে প্রেমের সাক্ষাতে কখনো মিথ্যার আশ্রয় নিবেন না। আপনি যা তাই তাকে বলুন। বিয়ের পর যদি আপনার অধিকাংশ কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে এই বিয়ের শেষ পরিনতি বিচ্ছেদ। ব্যতিক্রম খুব কমই হয়। তাই পিতা মাতার পছন্দে পয়গাম পাঠিয়ে বিয়ে করাই উত্তম বিয়ে।
পাত্র-পাত্রীর দেখার রীতি :-
মানব-মানবীর মিলনে যে সুখময় সংসার, এর রয়েছে অনেকগুলো পূর্বশর্ত। নিছক ভোগ চাহিদা পূরণের জন্য তো বিয়ে নয়, বরং এ এক অমূল্য বাঁধন। বিয়ে পরবর্তী জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার মধুময় সম্পর্ক অটুট রাখার ক্ষেত্রে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর পরস্পরকে দেখে নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জীবনের এ অমূল্য অধ্যায় সম্পর্কে মানবতার ধর্ম ইসলাম উদাসীন নয়। এর প্রমাণ- স্বয়ং প্রিয়নবী (সা:) আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন বিয়ের আগে নিজের জীবনসঙ্গীকে দেখে নেওয়ার জন্য, বেছে নেওয়ার জন্য।
রাসূল (সা:) বলেছেন, নারীর চারটি বিষয় দেখে মানুষ বিয়েতে আগ্রহী হয়। তার ধন-সম্পদ, তার মর্যাদা ও আভিজাত্য, তার রূপ-সৌন্দর্য, তার দ্বীন। তবে তোমরা নারীর দ্বীনকে প্রাধান্য দিও। (বুখারী ও মুসলিম)
বুখারী, মুসলিম, তিরমিযীসহ অন্যান্য বর্ণনায় হযরত মুগিরা বিন শোবা (রা:) বলেন, আমি রাসূলের (সা.) কাছে গিয়ে এক নারীকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। তিনি আমাকে বললেন, আগে যাও, তাকে দেখে নাও। কারণ এ দেখাদেখি তোমাদের বন্ধনকে অটুট রাখতে সহায়ক। (বুখারী-৪৮৩৩, তিরমিযী-১০৮৭, মুসলিম-১৪৩৪)
ইবনে মাজাহ এবং আহমদের বর্ণনায় মুহাম্মদ বিন মাসলামাহ (রা:) বলেন, আমি রাসূলকে (সা:) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ পাক যখন কারো মনে কোনো নারীকে বিয়ের জন্য ইচ্ছা ঢেলে দেন, তখন ওই পুরুষের জন্য তার পাত্রীকে দেখে নেওয়ায় কোনো ক্ষতি নেই।
ইমাম আহমদের বর্ণনায় একটি হাদীস থেকে জানা যায়, বিশেষ প্রয়োজনে পাত্রীকে না জানিয়ে তাকে দেখে নেওয়া যাবে। তবে অগোচরে হোক কিংবা পাত্রীর সামনা সামনি হোক- সব সময় কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
ইসলামী শরীয়তের বিশেষজ্ঞ উলামায়ে কেরাম পাত্রী দেখাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তবে কনের কোন কোন অংশ দেখা যাবে, তা নিয়ে সামান্য মতভেদ থাকলেও প্রায় সবাই একমত যে, পাত্রের জন্য পাত্রীর শুধু চেহারা এবং দু’হাত দেখা যাবে। একাকী মেয়ে এবং ওই ছেলেকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার বৈধতা ইসলামে নেই। কারণ তখনও তারা একে অপরের জন্য বেগানা (গায়ের মাহরাম)। বরং দেখাদেখির সময় সঙ্গে মুরব্বি অথবা অল্পবয়সী কেউ উপস্থিত থাকা প্রয়োজন। তাই সবচেয়ে উত্তম হল, বিয়ের আগে প্রথমে পাত্রীর দ্বীনদারি জীবনযাপন সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া। এ ব্যাপারে আশাব্যঞ্জক সংবাদ পাওয়া গেলে তারপর মহান আল্লাহ পাকের কাছে সাহায্য চেয়ে কনে দেখার পয়গাম পাঠানো। যদি পাত্রী পক্ষ এ ছেলের ব্যাপারে নিজেদের সম্মতি প্রকাশ করে তখন দেখতে যাওয়া। নিজের বিশ্বস্ত কোনো নারী যেমন মা অথবা বোনের মাধ্যমে ওই মেয়ের চরিত্র এবং গঠন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া ভালো। তারপর উভয়ে উভয়ের পছন্দ হলে বিয়ের প্রস্তাাব এবং অতঃপর শুভ বিবাহ।
পাত্র-পাত্রী দু’জনই দু’জনের জন্য উপযুক্ত এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক হতে পারে, এমন সম্ভাবনা থাকলে তখনই কেবল পাত্রীকে দেখার প্রস্তাব দেওয়া যাবে। পাত্র কিংবা পাত্রী- কারো পক্ষ থেকে যদি কোনোই সম্ভাবনা না থাকে, তবে এমন ক্ষেত্রে পাত্রী দেখার আয়োজন করা উচিত নয়। পাত্রী দেখার সময় পাত্র বা ছেলের মনে যেন কোনো কু-ধারণা কিংবা কামনা না থাকে। ছেলেরও এ ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি থাকা দরকার যে, মেয়েটিকে পছন্দ হলে সে তাকেই বিয়ে করবে। শুধু দেখার জন্য দেখা নয়। দেখার মজলিসে অন্য কোনো পুরুষ যার সঙ্গে মেয়ের দেখা সাক্ষাত জায়েজ নেই, এমন কেউ থাকা যাবে না। চাই সে ছেলের বাবা কিংবা মামা-চাচা যেই হোন না কেন। পাত্রী মাথা নিচু করে বসে থাকবে আর পাত্র তাকে দেখবে- মুরব্বিরা তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করবে, পাত্রীকে হাঁটতে বলা হবে, হাসতে বলা হবে- এসব কাম্য নয়। নারী বিয়ের পণ্য নয় যে তাকে এভাবে সবার সামনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, পাত্রীও তার পাত্রকে দেখে নিতে পারবে। তাই ছেলের চেহারা এবং গঠন দেখার অধিকার রয়েছে পাত্রীর। হযরত উমর (রা:) বলতেন, বিয়ের আগে পুরুষের যেমন নারীর কিছু বিষয় দেখে নেওয়ার রয়েছে, তেমনি নারীরও অধিকার রয়েছে তার সঙ্গীকে দেখে বেছে নেওয়ার।
মনে রাখতে হবে, মেয়ের গুণাগুণ ও মেজাজ মর্জি সম্পর্কে জানতে হলে অন্দর মহলের নারীদের মাধ্যমে আগে থেকেই খোঁজ খবর নেওয়া ভালো। সবকিছু ঠিকঠাক হলে তারপর পাত্রী দেখার আয়োজন। এর আগে নয়। কারণ মেয়ে দেখা তো আর ছেলে খেলা নয়। তবে প্রথমবার দেখে আসার পরও যদি কোনো সন্দেহ কিংবা সংশয় অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সুরাহা করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে আবারও পাত্রীকে সামনা সামনি দেখার অবকাশ ইসলামে রয়েছে।
পাশাপাশি পাত্রীর আসল রং আড়াল করার উদ্দেশে অথবা অন্য কোনো দোষ ঢেকে রাখার জন্য ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়। মানুষ হিসেবে স্রষ্টা যেভাবে যাকে সৃষ্টি করেছেন, সেটিই তার জন্য মঙ্গলময়। বিয়ের মজলিসে সামান্য লুকোচুরি পরবর্তী জীবনে অসামান্য বিবাদ ও অসহনীয় দ্বন্ধ বয়ে আনার কারণ হয়ে থাকে। এমনটি কারো কাম্য নয়।
আরেকটি বিষয়ে রাসূল (সা:) আমাদের সতর্ক করেছেন। ধরুন কোনো ছেলের সঙ্গে একটি মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছে কিংবা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এমন সময়ে অন্য কেউ যেন সেখানে প্রস্তাব না পাঠায়। যখন নিশ্চিত জানা যাবে যে ওই প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে কিংবা প্রত্যাহার করা হয়েছে, তখনই নতুন কেউ সেখানে পয়গাম পাঠাবে। 
বুখারী, মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীসের গ্রন্থে বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন অন্যের বিয়ের কথাবার্তা চলার সময় নতুন করে প্রস্তাব না পাঠায়। পাত্রীকে দেখতে আসা উপলক্ষে মিষ্টিমুখ কিংবা খাবারের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে একে উপলক্ষ করে যেন নারী-পুরুষের বেপর্দা সমাগম না হয়, সেদিকেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
পবিত্র কুরআনের একটি বৃহৎ এবং পূর্ণাঙ্গ সূরার নাম আল্লাহ পাক নারীদের (সূরা নিসা) নামে রেখেছেন। ইসলামই সর্বপ্রথম শিখিয়েছে, নারী কোনো পণ্য নয়। ভোগের বৃত্ত থেকে নারীকে মুক্ত করেছে ইসলাম। করুণার দৃষ্টি থেকে রেহাই দিয়ে প্রিয়নবী (সা:) নারীদের সবচেয়ে সম্মানিত অবস্থানে বসিয়েছেন। কাজেই পাত্রী দেখার আয়োজনে যেন কোনোভাবেই তার অধিকার ক্ষুণœ না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা সচেতন মুসলমানের কর্তব্য।
বর পক্ষের সম্পদের প্রভাবে মোহগ্রস্ত হয়ে যে বাবারা নিজের মেয়ের সম্মতি ছাড়াই তাকে তুলে দেয়, তারপর জীবনভর দু’জনের সংসারে লেগে থাকা মনোমালিন্যের দায়ভার তিনি কীভাবে এড়িয়ে যাবেন! মেয়ের মুখ বুঁজে সব সয়ে যাওয়া মানে আল্লাহ পাকের কাছে পার পাওয়া নয়। সে হিসেব বড়ই কঠিন। মানব-মানবীর মিলনে যে সুখময় সংসার, এর রয়েছে অনেক গুলো পূর্বশর্ত। নিছক ভোগ-চাহিদা পূরণের জন্য তো বিয়ে নয়, বরং এ এক অমূল বাঁধন। বিয়ে পরবর্তী জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার মধুময় সম্পর্ক অটুট রাখার ক্ষেত্রে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর পরস্পরকে দেখে নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। 
জীবনের এ অমূল্য অধ্যায় সম্পর্কে মানবতার ধর্ম ইসলাম উদাসীন নয়। এর প্রমাণ- স্বয়ং প্রিয়নবী (সা:) আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন বিয়ের আগে নিজের জীবনসঙ্গীকে দেখে নেওয়ার জন্য, বেছে নেওয়ার জন্য।
রাসূল (সা:) বলেছেন, নারীর চারটি বিষয় দেখে মানুষ বিয়েতে আগ্রহী হয়। তার ধন-সম্পদ, তার মর্যাদা ও আভিজাত্য, তার রূপ-সৌন্দর্য, তার দ্বীন। তবে তোমরা নারীর দ্বীনকে প্রাধান্য দিও। (বুখারী ও মুসলিম)
বুখারী, মুসলিম, তিরমিযীসহ অন্যান্য বর্ণনায় হযরত মুগিরা বিন শোবা (রা:) বলেন, আমি রাসূলের (সা:) কাছে গিয়ে এক নারীকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। তিনি আমাকে বললেন, আগে যাও, তাকে দেখে নাও। কারণ এ দেখাদেখি তোমাদের বন্ধনকে অটুট রাখতে সহায়ক। (বুখারী-৪৮৩৩, তিরমিযী-১০৮৭, মুসলিম-১৪৩৪)
ইবনে মাজাহ এবং আহমদের বর্ণনায় মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ (রা:) বলেন, আমি রাসূলকে (সা:) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ পাক যখন কারো মনে কোনো নারীকে বিয়ের জন্য ইচ্ছা ঢেলে দেন, তখন ওই পুরুষের জন্য তার পাত্রীকে দেখে নেওয়ায় কোনো ক্ষতি নেই।
ইসলামী শরীয়তের বিশেষজ্ঞ উলামায়ে কেরাম পাত্রী দেখাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তবে কনের কোন কোন অংশ দেখা যাবে, তা নিয়ে সামান্য মতভেদ থাকলেও প্রায় সবাই একমত যে, পাত্রের জন্য পাত্রীর শুধু চেহারা এবং দু’হাত দেখা যাবে। একাকী মেয়ে এবং ওই ছেলেকে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার বৈধতা ইসলামে নেই। কারণ তখনও তারা একে অপরের জন্য বেগানা (গায়ের মাহরাম)। বরং দেখাদেখির সময় সঙ্গে মুরব্বি অথবা অল্পবয়সী কেউ উপস্থিত থাকা প্রয়োজন।
তাই সবচেয়ে উত্তম হল, বিয়ের আগে প্রথমে পাত্রীর দ্বীনদারি জীবন যাপন সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া। এ ব্যাপারে আশাব্যঞ্জক সংবাদ পাওয়া গেলে তারপর মহান আল্লাহ পাকের কাছে সাহায্য চেয়ে কনে দেখার পয়গাম পাঠানো। যদি পাত্রী পক্ষ এ ছেলের ব্যাপারে নিজেদের সম্মতি প্রকাশ করে তখন দেখতে যাওয়া। নিজের বিশ্বস্ত কোনো নারী যেমন মা অথবা বোনের মাধ্যমে ওই মেয়ের চরিত্র এবং গঠন সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া ভালো। তারপর উভয়ে উভয়ের পছন্দ হলে বিয়ের প্রস্তাব এবং অতঃপর শুভ বিবাহ।
ইমাম আহমদের বর্ণনায় একটি হাদীস থেকে জানা যায়, বিশেষ প্রয়োজনে পাত্রীকে না জানিয়ে তাকে দেখে নেওয়া যাবে। তবে অগোচরে হোক কিংবা পাত্রীর সামনাসামনি হোক- সবসময় কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সবার সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
পাত্র-পাত্রী দু’জনই দু’জনের জন্য উপযুক্ত এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক হতে পারে- এমন সম্ভাবনা থাকলে তখনই কেবল পাত্রীকে দেখার প্রস্তাব দেওয়া যাবে। পাত্র কিংবা পাত্রী- কারো পক্ষ থেকে যদি কোনোই সম্ভাবনা না থাকে, তবে এমন ক্ষেত্রে পাত্রী দেখার আয়োজন করা উচিত নয়।
পাত্রী দেখার সময় পাত্র বা ছেলের মনে যেন কোনো কুধারণা কিংবা কামনা না থাকে। ছেলেরও এ ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি থাকা দরকার যে, মেয়েটিকে পছন্দ হলে সে তাকেই বিয়ে করবে। শুধু দেখার জন্য দেখা নয়। দেখার মজলিসে অন্য কোনো পুরুষ যার সঙ্গে মেয়ের দেখা সাক্ষাত জায়েজ নেই, এমন কেউ থাকা যাবে না। চাই সে ছেলের বাবা কিংবা মামা-চাচা যেই হোন না কেন।
পাত্রী মাথা নিচু করে বসে থাকবে আর পাত্র তাকে দেখবে- মুরব্বিরা তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করবে, পাত্রীকে হাঁটতে বলা হবে, হাসতে বলা হবে- এসব কাম্য নয়। নারী বিয়ের পণ্য নয় যে তাকে এভাবে সবার সামনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে হবে। ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, পাত্রীও তার পাত্রকে দেখে নিতে পারবে। তাই ছেলের চেহারা এবং গঠন দেখার অধিকার রয়েছে পাত্রীর। হযরত উমর (রা:) বলতেন, বিয়ের আগে পুরুষের যেমন নারীর কিছু বিষয় দেখে নেওয়ার রয়েছে, তেমনি নারীরও অধিকার রয়েছে তার সঙ্গীকে দেখে বেছে নেওয়ার।
মনে রাখতে হবে, মেয়ের গুণাগুণ ও মেজাজ মর্জি সম্পর্কে জানতে হলে অন্দও মহলের নারীদের মাধ্যমে আগে থেকেই খোঁজ খবর নেওয়া ভালো। সবকিছু ঠিকঠাক হলে তারপর পাত্রী দেখার আয়োজন। এর আগে নয়। কারণ মেয়ে দেখা তো আর ছেলেখেলা নয়। তবে প্রথমবার দেখে আসার পরও যদি কোনো সন্দেহ কিংবা সংশয় অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সুরাহা করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে আবারও পাত্রীকে সামনাসামনি দেখার অবকাশ ইসলামে রয়েছে।
পাশাপাশি পাত্রীর আসল রং আড়াল করার উদ্দেশে অথবা অন্য কোনো দোষ ঢেকে রাখার জন্য ছল-চাতুরীর আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়। মানুষ হিসেবে স্রষ্টা যেভাবে যাকে সৃষ্টি করেছেন, সেটিই তার জন্য মঙ্গলময়। বিয়ের মজলিসে সামান্য লুকোচুরি পরবর্তী জীবনে অসামান্য বিবাদ ও অসহনীয় দ্বন্দ্ব বয়ে আনার কারণ হয়ে থাকে। এমনটি কারো কাম্য নয়।
আরেকটি বিষয়ে রাসূল (সা:) আমাদের সতর্ক করেছেন। ধরুন কোনো ছেলের সঙ্গে একটি মেয়ের বিয়ের কথাবার্তা চলছে কিংবা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এমন সময়ে অন্য কেউ যেন সেখানে প্রস্তাব না পাঠায়। যখন নিশ্চিত জানা যাবে যে ওই প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে কিংবা প্রত্যাহার করা হয়েছে, তখনই নতুন কেউ সেখানে পয়গাম পাঠাবে। বুখারী, মুসলিমসহ অন্যান্য হাদীসের গ্রন্থে বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন অন্যের বিয়ের কথাবার্তা চলার সময় নতুন করে প্রস্তাব না পাঠায়।
পাত্রীকে দেখতে আসা উপলক্ষে মিষ্টিমুখ কিংবা খাবারের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে একে উপলক্ষ করে যেন নারী-পুরুষের বেপর্দা সমাগম না হয়, সেদিকেও সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
পবিত্র কুরআনের একটি বৃহৎ এবং পূর্ণাঙ্গ সূরার নাম আল্লাহ পাক নারীদের (সূরা নিসা) নামে রেখেছেন। ইসলামই সর্বপ্রথম শিখিয়েছে, নারী কোনো পণ্য নয়। ভোগের বৃত্ত থেকে নারীকে মুক্ত করেছে ইসলাম। করুণার দৃষ্টি থেকে রেহাই দিয়ে প্রিয়নবী (সা:) নারীদের সবচেয়ে সম্মানিত অবস্থানে বসিয়েছেন। কাজেই পাত্রী দেখার আয়োজনে যেন কোনোভাবেই তার অধিকার ক্ষুণ্ন না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা সচেতন মুসলমানের কর্তব্য।
বর পক্ষের সম্পদের প্রভাবে মোহগ্রস্ত হয়ে যে বাবারা নিজের মেয়ের সম্মতি ছাড়াই তাকে তুলে দেয়, তারপর জীবনভর দু’জনের সংসারে লেগে থাকা মনোমালিন্যের দায়ভার তিনি কীভাবে এড়িয়ে যাবেন! মেয়ের মুখ বুঁজে সব সয়ে যাওয়া মানে আল্লাহ পাকের কাছে পার পাওয়া নয়। সে হিসেব বড়ই কঠিন।
পয়গাম পাঠানোর পুর্বে আল্লাহর সাহায্য কামনা ঃ-
কোন মেয়েকে যদি পছন্দ হয় এবং তাকেই যদি বিয়ে করার মনস্ত করেন বা আপনার পিতা মাতা কোন মেয়ের কথা বলে তাহলে তা কারো নিকট প্রকাশ না করার পুর্বে ভালভাবে অযু করে দু’রাকাত নফল নামাজ বা সম্ভব হলে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে সালাম ফিরানোর পর সুরা ফাতিহা পাঠ বা আল্লাহ তায়া’লার প্রশংসা মূলক কথা বলে এই দোয়াটি পড়বেন।
"হে আল্লাহ, তুমি সক্ষম, আমি সক্ষম নই। তুমি জান, আমি জানিনা। তুমি অদৃশ্যের জ্ঞান রাখ, অদৃশ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞত। তুমি জান যে অমৃক (যাকে বিয়ে করতে চান তার নাম বলুন) আমার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের দিক দিয়ে কল্যাণকর তবে তাকে আমার জন্য নিদিষ্ট কর। আর সে ছাড়া অন্য কোন মহিলা দুনিয়া ও আখিরাতের দিক দিয়ে আমার জন্য মঙ্গলজনক হয় তাহলে তাকে আমার জন্য নিদিষ্ট করো। (সহী আল বোখারী ও তিরমিজী)। তার পর পয়গাম পাঠান এবং আল্লাহর উপর দৃঢ় ভরসা রাখুন। আর দুই পরিবারের মাঝখানে বন্ধন রাকারীকে বলবেন কোন প্রকার প্রতারনার আশ্রয় যেন না নেওয়া হয়।
বাস্তবে আমাদের সমাজে এমন টাই দেখা যায়। স্বাবলম্বী পুরুষরা বিয়ে না করার কারণে যৌবনের তাড়নায় লিপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধে। ব্যভিচারের মতো নিকৃষ্ট কাজে জড়িয়ে পড়তেও দ্বিধা করছে না। অথচ যথা সময়ে বিয়ে রুখতে পারে ভয়ঙ্কর এসব অপরাধকে। সুতরাং একজন সামর্থবান পুরুষকে অবশ্যই যথা সময়ে বিয়ে করা উচিত। কোনো অজুহাতে এ থেকে বিরত থাকলে দুনিয়ার নানা রকম ফেৎনা ও ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে হবে। আর যারা ইসলামি আন্দলোন করছেন বা রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রত উদ্দেশ্যে বলবো আগে নিজেদের জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করুন, নইলে রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলেও আপনার ঐ ইসলাম আপনার জীবনে কোনো কাজে আসবে না।

লেখক :- সভাপতি, বিশ্বনাথ কেন্দ্রীয় সাহিত্য সংসদ এবং ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাসিক বিশ্বনাথ ডাইজেস্ট।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন