লিভার দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লিভারের সুস্থতার উপর সমগ্র মানবদেহের সুস্থতা অনেকাংশ নির্ভর করে। তাই লিভারের যত্ন নিতে হয়। লিভারে সচরাচর হঠাৎ করে বড় ধরণের সমস্যা হয় না। ক্ষুদ্র সমস্যা থেকে ধীরে ধীরে তা জটিল আকার ধারণ করে। সম্প্রতি এক গবেষণায় লিভারের জটিলতায় কিছু লক্ষণ বেরিয়ে এসেছে। আপনার লিভার কতটা সুস্থ, লিভার সঠিকভাবে কাজ করছে কী না, তা আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যদি একটু সচেতনভাবে কিছু বিষয় খেয়াল করেন।
লিভারের জটিলতা বুঝতে অপনাকে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল করতে হবে। যেমন- সামান্য পরিশ্রমে অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়া, কাজে-কর্মে অনীহা বা স্বাভাবিক কাজের প্রতিও অনাগ্রহ তৈরি হওয়া, অতিরিক্ত ঘাম, বিভিন্ন এলার্জি ও ত্বকের সমস্যা, শরীরের হাড়ের নানা জয়েন্ট ও পেশিতে ক্রমাগত ব্যথা, ক্রমাগত চোখে ব্যথা বিশেষ করে চোখের পেছনে ব্যথা করা (মাইগ্রেন), রাগ, ভয়, উৎকণ্ঠা ও উদগ্রীব বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এর সাথে যদি যুক্ত হয় কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বদ হজম বিশেষ করে চর্বিযুক্ত খাদ্য হজম না হওয়া, ওজন বৃদ্ধি, শ্বাস-প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ ইত্যাদি তবে বুঝতে হবে আপনার লিভারে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, বর্তমানে লিভারের জটিলতা তুলনামূলকভাবে বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ এর পেছনের কারণগুলো খুবই সাধারণ। গবেষণায় দুটি কারণ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে- শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং অনিয়মিত ও অনিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইল।
বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন চলে এসেছে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় অনেক কিছুই এখন সহজলভ্য হওয়ায় মানুষের চিন্তাশক্তি যতটা কাজ করে শরীর তার ক্ষিয়দাংশও করে না। অর্থাৎ মানসিক পরিশ্রম যে হারে বেড়ে গেছে, শারীরিক পরিশ্রম সে হারে কমে গেছে। শরীরকে তুলনা করা যায় মেশিনের সাথে। যে কোন মেশিন, যদি তা ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হয়, আস্তে আস্তে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। নিয়ম মেনে নিয়মিত ব্যবহার করলে প্রতিটি মেশিন ভালভাবে চলে। অনুরূপ মানব শরীরকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করতে হয়। শারীরি ঠিক রাখার জন্য, শরীরকে সঠিকভাবে পরিচালিত করার জন্য পরিমিত শারীরিক পরিশ্রম অপরিহার্য। আধুনিক জীবনে এমনই সিস্টেমে মানুষের জীবন অবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে যে, শারীরির পরিশ্রমের কোন সুযোগই মানুষ পাচ্ছে না। দিন দিন লেপটপ বা কম্পিউটারের ঐ একটি নির্দিষ্ট চেয়ার-টেবিলে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে মানুষ। একইভাবে ক্রমশ আমাদের জীবন হয়ে যাচ্ছে অনিয়মিত ও অনিয়ন্ত্রিত। নিদিষ্ট সময়ে খাওয়া, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর কথা মানুষ যেন ক্রমশ ভুলে যাচ্ছে। এমনকি পায়খানা-প্রস্রাবের বেগ আসলেও কাজের চপের কারণ দেখিয়ে অনেকে তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখে। কিন্তু প্রকৃতি কখনো অনিয়ম মানে না। মনে রাখতে হবে, প্রকৃতির সব কিছুই নিয়ন্ত্রিত ও নিয়মতান্ত্রিক। মানব শরীর প্রকৃতির বাইরে নয়। বরং প্রকৃতির প্রকৃষ্ট প্রমাণ মানব দেহ। দেহের ক্ষয়-বৃদ্ধি, সব কিছুই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটে থাকে। এমতাবস্থায় মানুষের লাইফস্টাইল যখন অনিয়ন্ত্রিত হয়, দেহের বিভিন্ন অংশে জটিলতা তৈরি হয়ে যায়। লিভারের নানা জটিলতা বিষয়ে সাম্পতিক গবেষণায় এই তথ্যটি বেরিয়ে এসেছে।
লিভারের জটিলতা বিষয়ে উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো যদি আপনার মাঝে পরিলক্ষিত হয়, দ্রুত লাইফস্টাইল পরিবর্তন করুন, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন