(১) "একমাত্র ধর্মীয় স্বীকৃত আলেমরাই ফতোয়া দিতে পারবেন এবং ধর্মীয় স্বীকৃত আলেম ছাড়া অন্য কেউ কোন ফতোয়া দিলে তা অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে" - উল্লেখ করে ২০১১ সালের ১২ মে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ রায় দেয়।
(২) অথচ সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের অবমাননা করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত দিনব্যাপী বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ফতোয়া জারী করে বলেছেন, ‘বৈশাখ বরন ঈমানের অঙ্গ।’
তার এই অবৈধ ফতোয়া জারী সকল প্রচার মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হলেও তথ্যমন্ত্রী অদ্যাবধি তা অস্বীকারও করেন নাই। যা তার বক্তব্যকে সমর্থনের জন্য যথেস্ট।
(৩) সর্বোচ্চ আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, "আলেম-ওলামারাই ফতোয়া দেবেন। ফতোয়ার নামে কারো সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা যাবে না।"
২০০১ সনের জানুয়ারি মাসে বিচারপতি গোলাম রব্বানী ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ ফতোয়া নিষিদ্ধ করে দেয়া রায়ে বলেছিলেন, "কেউ ফতোয়া দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯ ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে ।"
(৪) দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর দীর্ঘদিন ধরে অসংখ্য মানুষকে ফতোয়া দেবার অপরাধে জেলে যেতে হয়েছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে ফতোয়া দেয়ার অভিযোগে ৩ জনের শাস্তি হয়েছে।
এই অপরাধে খোদ আওয়ামী লীগের নেতারাও বাদ যায় নি। ফতোয়ার অভিযোগে বরিশাল নগরীর ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা আউয়াল মোল্লাকে গ্রেফতার পর্যন্ত করে কাউনিয়া থানা পুলিশ।
আলেম, উলামা, পীর, মাশায়েখদের ওপর ফতোয়ার অভিযোগে পুলিশ দিয়ে হামলা ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ মিছিল ও প্রতিবাদ পযর্ন্ত করতে হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের ৫০১জন মুফতিকে।
(৫) অবৈধ ফতোয়া দেবার অপরাধে সবাইকে যদি জেলে যেতে হয়, তাহলে একই অপরাধে তথ্যমন্ত্রী ইনু কেন জেলে যাবে না ?(৬) দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় মানা সরকার ও পুলিশসহ প্রজাতন্ত্রের সকল কমর্কতা-কর্মচারীর উপর বাধ্যকর।
তাই অন্যান্যদের বেলায় যেরকম তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে জেলে প্রেরন করা হয়েছে, তথ্যমন্ত্রী ইনুকেও একইভাবে গ্রেফতার করা হোক।
'আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান' - সংবিধানের এই বিধানটি ইনুর ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য হওয়াটাই ন্যায়বিচারের পুর্বশর্ত।
(৭) তবে পুলিশ ও সরকার যদি ইনুকে গ্রেফতার করতে সাহস না দেখায়, হাইকোর্ট সুয়োমটো রুল জারি করেও তাকে গ্রেফতারের নির্দেশনা দিতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিলের শুনানিকালে একটি বড় প্রশ্ন উঠেছিল পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে হাইকোর্ট সুয়োমটো রুল জারি ও তার ওপর ভিত্তি করে রায় দিতে পারে কিনা ?
এ ব্যাপারে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের রায়ে বলা হয়েছে, 'একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার বাধাগ্রস্ত হলে হাইকোর্ট সে ক্ষেত্রে সুয়োমটো রুল ইস্যু করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, পোস্ট কার্ড এবং লিখিত উপাদান আবেদনপত্র হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে।'
(৮) তাই তথ্যমন্ত্রী ইনুর বিরুদ্ধে সুয়োমটো রুল ইস্যু করে তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি দিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বাস্তবায়ন করতেও কোন বাধা নাই।
..........বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও কলামিষ্ট .........ড তুহিন মালিক ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন