ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৬

আতঙ্কের জনপদ ঝিনাইদহ : তুলে নেয়ার পর লাশ মিলেছে ২৩ জনের


ছেলের চিৎকার শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন মা। দেখেন- ছেলের হাতে হাতকড়া। পাশে দুটি মোটরসাইকেল। চালকের আসনে দুজন। আরও দুজন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে আছেন তার একমাত্র ছেলেকে। মা কিছুই বোঝেন না। জড়িয়ে ধরেন ছেলেকে। আর্তনাদের সঙ্গে আগন্তুকদের জিজ্ঞেস করেন তোমরা আমার ছেলেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? অনুনয়-বিনয় করে বলেন, আমার ছেলেকে রেখে যাও। কিন্তু সেই মায়ের আর্তনাদ আর অনুনয়-বিনয়ে মন গলেনি তাদের। নিজেদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে দ্রুত এলাকা ছাড়ে মোটরসাইকেল বাহিনী। পরে ২৬ দিন নিখোঁজ থাকার পর ছেলের গুলিবিদ্ধ লাশ মিলেছে বুধবার। এ ধরনের ঘটনা এখন নিয়মিতই ঘটছে ঝিনাইদহে।
গত ১৮ই মার্চ। দুপুর বেলা। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপালী গ্রামে এই মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিখোঁজ হন আবুজার গিফারী নামে অনার্সপড়ুয়া ছাত্র। শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এখন সেই মা-ও শয্যাশায়ী। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মা এখন পাগলপ্রায়। বাবা নূর ইসলাম কালীগঞ্জ বাজারের সেলুন ব্যবসায়ী। তিনিও ভেঙে পড়েছেন একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে। লাশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত সারাক্ষণ ডুবে ছিলেন ছেলের চিন্তায়। ছুটেছেন প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে। যে যা বলেছেন তাই শুনেছেন। তবুও লাভ হয়নি কোনো। এদিকে একইদিনে একই ভাগ্যবরণ করেছেন অনার্সপড়ুয়া আরও এক মেধাবী ছাত্র শামীম। তার বাড়ি একই উপজেলার বাকুলিয়া গ্রামে। তার পরিবারও বিপর্যস্ত। গত ২৪শে মার্চ নিখোঁজ হয়েছিলেন শামীম। তার গুলিবিদ্ধ লাশও মিলেছে আবুজার গিফারীর সঙ্গেই। এই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গত তিন বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর লাশ হয়েছেন আরও ২১ জন।
২৭ অপহরণ, মিলেছে ২৩ জনের লাশ: ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে যাদের লাশ পাওয়া গেছে তারা হলেন- রফিকুল ইসলাম (৩৭), ইউসুফ আলী বিশ্বাস (৪০), উজ্জ্বল হোসেন (৩২), আসাদুল ইসলাম (৩০), মফিজুল হক, এনামুল হক বিশ্বাস (৫৫), ইউপি সদস্য হাফেজ আবুল কালাম (৩৮), হাদিউজ্জামান হাদি (৪০), সোহাগ সরদার (৩০), মইনুদ্দিন, গোলাম আজম ওরফে পলাশ (২৮), দুলাল হোসেন (২৯), মিরাজুল ইসলাম, তৈমুর রহমান তুরান (৩৫), ছব্দুল হোসেন (৪৫), এনামুল হোসেন (২৩), রবিউল ইসলাম রবি (৪৭), শরিফুল ইসলাম নজু, আবু হুরাইরা (৫২), হাফেজ জসিম উদ্দীন। একজনের লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ লাশ পাওয়া যায় আবুজার গিফারী ও শামীম মাহমুদ নামে অনার্সপড়ুয়া দুই ছাত্রের। নিখোঁজ রয়েছেন আইয়ুব, আজাদ হোসেন এবং মোফাজ্জেল হোসেন এবং একাদশ শ্রেণির ছাত্র মহিউদ্দিন সোহান।
আতঙ্কের জনপদ: এ অবস্থায় আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে পুরো জেলা। এসব অপহরণ বা তুলে নেয়ার ঘটনা বেশির ভাগ প্রকাশ্যে ঘটলেও ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে চান না। চাপালী গ্রামের আবুজার গিফারী যশোর এমএম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের ছাত্র। তিনি এবার ৩য় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আগেই এই ঘটনার শিকার হলেন। গিফারীর পিতা মো. নূর ইসলাম জানান, ঘটনার দিন (১৮ই মার্চ) জুমার নামাজের পর বাড়ি ফিরছিল। বাড়ির কাছাকাছি এলে দুই মোটরসাইকেলে করে চার ব্যক্তি তার ছেলেকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতকড়া পরায়। এ সময় সে চিৎকার দিলে বাড়ির ভেতর থেকে তার মা বেরিয়ে আসেন। ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে তিনি জড়িয়ে ধরেন। তাকে ধাক্কা দিয়েই অস্ত্রধারীরা গিফারীকে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যায়। নূর ইসলাম বলেন, এ ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি থানায় যান। কিন্তু তারা অস্বীকার করে। পরদিন জিডি করতে গেলে তারা জিডির কপি রেখে দেয়। ডিউটি অফিসার জানান, ওসির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু জিডি এন্ট্রি করেনি। পরে ওসির কাছে গেলে তিনি জানান, বিষয়টি নলেজে আছে। এদিকে অসহায় ওই পিতা ছেলেকে ফিরে পেতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। এ ঘটনায় তিনি এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। ছেলেকে ফেরত পেতে তিনি ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কাছে আবেদনও করেছিলেন। আশ্বাসও পেয়েছেন কোনো কোনো জায়গা থেকে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে অবেশেষে মিলেছে লাশ। গত ২৫শে মার্চ একই কায়দায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র বাকুলিয়া গ্রামের শামীমকে। শামীমের পিতা রুহুল আমিন জানান, ঘটনার দিন তার ছেলে মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের পাশে একটি ফার্নিচারের দোকানে পত্রিকা পড়ছিল। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে চার ব্যক্তি এসে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে নিখোঁজ ছিল ছেলে। রুহুল আমিন বলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে জানিয়েছেন, তাদের কোমরে পিস্তল এবং সাদা চেইন ছিল। পরে তিনি থানা পুলিশের কাছে গেলে থানা ডিজি নেয়নি। র‌্যাব অফিসেও খোঁজ নিয়েছেন। তারাও জানিয়েছিলেন এ বিষয়ে কিছু জানে না। এদিকে রোববার একই উপজেলার ইশ্বরবা গ্রামের মহসিন আলীর ছেলে মহিউদ্দিন সোহানকে তার নিজ গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়দানকারীরা। এলাকাবাসী জানায়, ইজিবাইকে করে চার ব্যক্তি এসে তাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়।
জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে চাইলে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মো. আলতাফ হোসেন সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা বলতে চাননি। তিনি বলেন, এখানে স্থানীয় সাংবাদিক আছে। আপনি যেকোনো ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। আপনার সঙ্গে কেন আমি কথা বলবো? সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে কালিগঞ্জের তিন শিক্ষার্থীর প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলেই তিনি বলেন, আমি কিছু বলতে পারবো না। এই বলে তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন