অটিজম কোনো সাধারণ রোগ নয়। এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ রোগ সাধারণভাবে শিশুর মনোবিকাশগত জটিলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
অটিজমের কারণ : অটিজমের একক কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে গবেষকরা যে কারণগুলো অটিজমের জন্য প্রভাবক হিসেবে মনে করেন, তা হলো- জিনগত সমস্যা; রোগজীবাণুর সংক্রমণ; শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ায় গোলমাল এবং পরিবেশগত সমস্যা। বর্তমানে অটিজম বিশ্বে এতই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে, জাতিসংঘ প্রতিবছর ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করছে।
অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কারো কারো মধ্যে বেশি দেখা দিতে পারে। যেমন- মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৪ গুণ বেশি থাকে। পরিবারে কারো অটিজম থাকলে শিশুর অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। গর্ভধারণের ২৬ সপ্তাহ আগে জন্মগ্রহণের ফলে শিশু অটিস্টিক হতে পারে। বেশি বয়সে সন্তান ধারণে অটিজমের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
অটিজমের লক্ষণ : অটিস্টিক শিশুদের বিকাশে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বা ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। ১. সামাজিক; ২. ভাষাগত ও ৩. আচরণগত। এ লক্ষণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকভাবে প্রকাশ পায়। দুটি অটিস্টিক শিশুর ক্ষেত্রে লক্ষণের ব্যাপক হেরফের হতে পারে। অনেকেই খুব অল্প বয়সে লক্ষণ দিয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ প্রথম কয়েক মাস বা বছর স্বাভাবিক বিকাশ লাভ করে। তারপর হঠাৎ আক্রমণের শিকার হয়, গুটিয়ে যায় বা ভাষাজ্ঞান হারিয়ে ফেলে, যা আগে অর্জন করেছিল। উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষণ হলো-
সামাজিক : নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না; চোখে চোখ রাখে না বা কম রাখে; মাঝে মধ্যে কথা শোনে না বলে মনে হয়; অটিস্টিক শিশু সমবয়সীর সঙ্গে সাধারণত সম্পর্ক গড়ে তোলে না; কিছু শিশু সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে, অন্যের প্রতি কোনো আগ্রহ দেখায় না।
ভাষাগত : দুই বছরেরও পর কথা বলা শুরু করে; অতীতে দেখা শব্দ বা কথা ভুলে যায়; অস্বাভাবিক স্বর বা আওয়াজে কথা বলে; কখনো দেখা যায় একই শব্দ বারবার করে সে উচ্চারণ করে যাচ্ছে।
আচরণগত : একই আচরণ বারবার সে করতে থাকে। যেমনÑ হাত নাড়ানো, হাত দেখা, একইভাবে ঘোরা; বিভিন্ন জিনিস সারিবদ্ধভাবে সাজানো; তারা নিজস্ব রুটিন মেনে চলতে ভালবাসে। দৈনন্দিন কোনো রুটিনের হেরফের হলে তারা অস্থির হয়ে যায়; কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ রেগে যায়, হাসে, কাঁদে বা ভয় পায়। অনেক সময় নিজের শরীরে বা অন্যকে কামড় দেয় বা আঘাত করে।
অটিস্টিক সম্ভাবনাময় শিশু : বেশিরভাগ অটিস্টিক শিশু অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হয়। প্রতি ১০ জন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে একজনের ছবি আঁকায়, গানে, গণিতে বা কম্পিউটারে প্রচ- দক্ষতা থাকে। অটিস্টিক শিশুকে ঠিকমতো পরিচর্যা করলে হয়ে উঠতে পারে একজন মহাবিজ্ঞানী। অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা, মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন, আইজেক নিউটন অটিস্টিক ছিলেন।
বাংলাদেশের অটিস্টিক পরিস্থিতি : সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে দেড় লাখের মতো অটিজম আক্রান্ত মানুষ আছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তনয়া সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম বিশেষজ্ঞ এবং গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন। তিনি বাংলাদেশের অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে ব্যাপক উদ্যোগ ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। সম্প্রতি জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাভুক্ত দেশগুলো অটিস্টিকদের পরিচর্যা নিয়ে বাংলাদেশের একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
লেখক : অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন