বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে জ্ঞান-বুদ্ধি,বিবেক-বিশ্বাস, নৈতিকতার ভিত্তিতেই সৃষ্টির সেরা বা আশরাফুল মাখলুকাত এর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। তাই মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়ই মানুষ সামাজিক ও নৈতিক জীব। সুখ, শান্তি, তৃপ্তি ও নিশ্চিন্ততা এবং নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ লাভই হচ্ছে মানব জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য, মানব মনের ঐকান্তিক কামনা ও বাসনা। এদিক দিয়ে নারী পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মানব জাতির সৃষ্টির মধ্যে এরাও একটি উদ্দেশ্য এই যে, নারী-পুরুষ জাতি মিলে একটি পরিবার গঠন করবে এবং তার থেকে একটি সভ্যতার বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠিত হবে। এই জন্যেই নারী-পুরুষকে ভিন্ন রূপে সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে পারস্পরিক যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের দৈহিক গঠন ও মনস্তাত্মিক বিন্যাসকে পারস্পরিক ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যেই দাম্পত্য জীবনকে পুরোপুরি উপযোগী করে দেয়া হয়েছে। ইসলাম এমনি এক দাম্পত্য জীবনের নিশ্চয়তা দেয় যেখানে রয়েছে প্রেম-প্রীতি, স্নেহ-মমতা, ভক্তি ভালবাসায় ভরপুর সুন্দর পরিবেশ। ইসলামের দাম্পত্য বিধান এমনই এক আইন বিধান যা সামাজিক বিধান সমূহের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী। ইসলামে এ বিধানের মৌলিক গুরুত্বের দিকে লক্ষ্য রেখে তা অন্তত নির্ভুল বুনিয়াদের উপর রচনা করা হয়েছে। এবং মুসলমানরা দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের দ্বীনের মধ্যে একটি উত্তম, পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ বিধান লাভ করেছিল। এবং তা যে কোন দিক দিয়ে পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের দাম্পত্য বিধানের তুলনায় নিঃসন্দেহে উত্তম বলা যেতে পারে। ইসলামে দাম্পত্য সম্পর্ক এমন সামাজিকতা ও উত্তম নৈতিক আচরণের সর্বোৎকৃষ্ট নমুনা।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহঃ
একজন নারী ও একজন পুরুষ তাদের মধ্যে পরস্পরে যৌন আকর্ষণের যে দাবী তা পূরণের জন্যে আল্লাহ সৃষ্ট যে বিধান সেটাই বিবাহ। ইসলামে নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্যে বিবাহ হচ্ছে একমাত্র বৈধ উপায়। এবং সামাজিক সাংবিধানিক স্কীকৃত একমাত্র বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা। যার ফলে নারী পুরুষের একত্রে বসবাস ও পরস্পরে যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণরূপে বৈধ হয়ে যায়। বিবাহ ছাড়া অন্য কোন পন্থায় নারী পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থপন ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। নারী পুরুষ সৃষ্টি যত পুরাতন,বিবাহ ব্যবস্থাটিও তত পুরাতন এক মানবিক ব্যবস্থা একজন নারী ও একজন পুরুষ বিবাহ সুত্রে আবদ্ধ হয়ে সুশৃংখল ও সুষ্ঠু জীবন যাপনকেই বলা হয় দাম্পত্য জীবন।
দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্যঃ
ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিটি নারী-পুরুষের বিবাহের বয়স হলে তাদের জন্যে অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে বিবাহ সুত্রে আবদ্ধ হয়ে দাম্পত্য জীবন-যাপন করা। একমাত্র বিয়ের মাধ্যমেই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন সম্ভব, তেমনিভাবে যৌন মিলনের স্বাভাবিক অদম্য ও অনিবার্য স্পৃহা সঠিকভাবে পূরণ হতে পারে কেবল মাত্র এই পন্থায় আল্লাহ পাক দাম্পত্য জীবনের এই ব্যবস্থাপনা এজন্যেই করেছেন যে,নারী পুরুষ উভয়ই পরস্পরের নিকট পরম শান্তি, তৃপ্তি ও স্বস্তি লাভ করবে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র আল কুরআনের সুরা আরাফে বলেন,“এবং উহারই সত্তা হইতে উহার জুড়ি বানাইয়াছেন যেন উহার নিকট পরম শান্তি ও স্থিতি লাভ করতে পারে”।(সুরা আরাফ-১৮৯)।
এ আয়াত থেকে বুঝা গেল, স্ত্রী পুরুষের জন্যে এবং পুরুষ স্ত্রীর জন্যে শান্তি স্বরূপ। এর মাধ্যমে একদিকে মানব বংশ সংরক্ষণ এবং মানবীয় সভ্যতা ও তমদ্দুন সৃষ্টির ব্যবস্থা করেছেন। এই ব্যবস্থাপনা যদি না করতেন তাহলে মানব বংশ গরু-ছাগলের মতো সমাজে বৃদ্ধি পেতো। ইহার মাধ্যমে কোন সভ্যতা গড়ে উঠার কল্পনা করা যেত না। তাই আল্লাহ পাক নারী পুরুষের পরস্পর তারা পরস্পরের প্রতি কামনা-বাসনা ও উদ্যম, ব্যাগ্রতা, ব্যাকুলতার এক পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যেন একে অপরের সাথে লাভের পিপাসাই তাদেরকে পরিবার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাধ্য করে। এই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই মানব সভ্যতা গড়ে উঠা সম্ভব।
দাম্পত্য জীবনের মৌলিক দিকঃ
আল্লাহ পাক বিনা উদ্দেশ্যেই বিয়ে এবং দাম্পত্য জীবনের এ ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি করেননি। তিনি তাঁর আপন ইচ্ছায় এই ব্যবস্থাপনা করেছেন। ইসলাম যেনাকে হারাম ঘোষণা করেছে এবং নারী-পুরুষের চরিত্রকে অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা থেকে এবং সমাজকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দাম্পত্য জীবনের এই ব্যবস্থাপনা করে রেখেছেন। আল্লাহ পাক দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের মৌলিক দুটি দিকের বর্ণনা করেছেন।
সুরা আর রূমের মধ্যে তিনি বলেন-“তাঁর নিদর্শন সমূহের মধ্যে ইহাও একটি যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই জাতির মধ্য হইতে স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের নিকট পরম প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও স্বহৃদয়তার সৃষ্টি করে দিয়েছেন”। (রূম-২১) এ আয়াত থেকে দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের মৌলিক দুটি দিক পাওয়া যায়। (১) নৈতিক চরিত্র ও সতীত্বের হেফাজত। (২) ভালবাসা ও আন্তরিকতা।
নৈতিক চরিত্র ও সতীত্বের হেফাজতঃ
আল-কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে রাখলে একথা পরিস্কার হয়ে যায় যে, বিয়ের মাধ্যমেই স্বীয় নৈতিক চরিত্র পবিত্র-পরিচ্ছন্ন ও কলুষমুক্ত রাখা সম্ভব। এবং অবাধ যৌন চর্চার মত চরিত্রহীনতার কাজ থেকে নিজেকে বাঁচানো যায়। এ সম্পর্কে কুরআন মজীদে আল্লাহ পাক বলেন-“এই মুহরিম স্ত্রীলোকদের ছাড়া অন্য সব মহিলা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যেন তোমরা নিজেদের ধন-সম্পদের বিনিময়ে তাদেরকে হাসিল করার আকাংখা কর। তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য এবং অবাধ যৌন চর্চার প্রতিরোধের জন্যে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে”। নিসা-২৪।
এ আয়াতে নৈতিক চরিত্র ও সতীত্বের হেফাজতের জন্যে বিবাহের তাগিদ করা হচ্ছে। চরিত্র ও সতীত্ব হেফাজত করাই হচ্ছে ইসলামে বিয়ের আসল উদ্দেশ্য। ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের দাম্পত্য জীবনের মধ্যে চরিত্র ও সতীত্বের পূর্ণ হেফাজতই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রকৃতপক্ষে ঈমানই মানুষের নৈতিক জীবনে বিল্পব সাধন করতে সক্ষম, মানুষের ভিতরে ঈমানী চেতনাকে জাগ্রত করে ন্যায়-অন্যায়ের ফল হিসেবে পুরস্কার ও তিরস্কার লাভের গভীর বিশ্বাস জম্মানোর মধ্যে দিয়েই নৈতিক মান গঠন করা সম্ভব। মানুষের উন্নত নৈতিকতার প্রতি গভীর অন্তর দৃষ্টিপাত করেই সেক্্রপিয়র বলেছেন-মানুষ! কি অপূর্ব সৃষ্টি! যুক্তিতে মাহন, সৃজনী শক্তিতে অসীম, দৈহিক গঠনে সম্প্রমোদ্রেককারী। কর্ম নৈপুন্যে সে দেবতার মতো, বোধ শক্তিতে বিধাতার মতো। সে পৃথিবীর সৌন্দর্য, প্রাণীকুলের শ্রেষ্ঠতম। মৃত্তিকার সারাংশটুকুর পরিচয় কি এতেই শেষ হয়ে যায়। মানুষের পরিচয় এতটুকু নয়, মানুষই সৃষ্টিজগতে আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের অধিকরী।
কিন্তু আজ আমাদের দেশের দিকে তাকালে মনে হয় এ কথাটি মোটেই সত্য নয়। মানুষ আল্লাহর প্রতিধিত্ব ছেড়ে দিয়ে সে প্রতিনিধিত্ব করছে শয়তানের, দাসত্ব করছে পাশবিক প্রবৃত্তির অথবা পাশ্চাত্যের ভোগবাদীদের। ইসলাম মানুষের চেতনায় সতীত্বকে অমূল্য সম্পদ হিসেবে বদ্ধমুল করতে এবং তা হেফাজত করার জন্য জোর তাগিদ দিয়েছে এবং তা হারালে চিরতরেই হারায়। সতীত্ব যার নিকট যতখানি মূল্যবান, তিনি ততখানি সচেতন হবেন তা হেফাজতের জন্যে। তাই দাম্পত্য জীবনের শৃংখলা, স্থিতিশীলতা ও স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করার জন্য সতীত্ব হেফাজতের প্রতি যত্ববান হওয়া অতীব জরুরী। আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে (সুরা আন-নূরে) মুমিন পুরুষ ও মুমিন মহিলাদের তাকিদ দিয়েছেন-“তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নিযন্ত্রন করে রাখে এবং লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করে। কেননা দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে লজ্জাস্থানের হেফাজত সম্ভব নাও হতে পারে”।
এ আয়াতে দৃষ্টি শক্তিকে নিয়ন্ত্রণের আদেশ করা হয়েছে। বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দৃষ্টিশক্তি নিয়ন্ত্রণ মূলত লজ্জাস্থানের হেফাজতের স্বার্থে। আর দৃষ্টিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই অন্তরের পবিত্রতা রক্ষা করা সম্ভব। লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা, অন্তরে প্রবেশ করে দৃষ্টিশক্তির মাধ্যমে। এজন্যেই যৌনাঙ্গের হেফাজত করার আদেশ দেয়ার পর আল্লাহ পাক এর পুরুস্কারের কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, যারা নিজেদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে, তারা পুরুষ কিংবা নারী হোক-“আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য খুব বেশী করে সওয়াবের ব্যবস্থা করে রেখেছেন”। (আল-কুরআন)
দাম্পত্য জীবনে শৃংখলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সতীত্বের গুরুত্ব যেহেতু অপরিসীম, সেহেতু ইসলাম এটাকে চারিত্রিক পবিত্রতার অবিচ্ছেদ্য অশং মনে করে। কুরআন মজীদে সুরা মুমতাহিনায় আল্লাহ পাক বলেন-“এবং তার প্রতিশ্রুতি দিত এই বলে যে, তার ব্যভিচার করবে না, আর তাদের সন্তান হত্যা করবে না। (আল-কুরআন) এভাবে ইসলাম মানুষের চেতনায় নৈতিক চরিত্র ও সতীত্বকে অমূল্য সম্পদ হিসাবে জাগ্রত করতে এবং তা হেফাজতে আন্তরিক হতে সাহায্য করেছে।
ভালবাসা ও আন্তরিকতাঃ
ইসলামের দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের মৌলিক দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে মানব জাতির উভয় শ্রেণী নারী পুরুষের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হবে ভালবাসা ও আন্তরিকতার ভিত্তিতে। বৈবাহিক সর্ম্পকের সাথে সমাজ ও সভ্যতার যে সমস্ত উদ্দেশ্য সংযুক্ত রয়েছে সেগুলোকে তারা নিজেদের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সফলতার সাথে পূর্ণ করতে পারবে এবং দাম্পত্য জীবনে তারা শান্তি, আনন্দ ও আরাম উপভোগ করতে পারবে। সামাজিক জীবনের মহান উদ্দেশ্য সমূহের পূর্ণতার জন্য শান্তি যোগাবার ক্ষেত্রে দাম্পত্য জীবনে ভালবাসা ও আন্তরিকতার খুবই প্রয়োজন। উল্লেখিত আয়াতে আলোকে চিন্তা করলে জানা যায় যে, ইসলামের দৃষ্টিতে দাম্পত্য জীবনের দর্শনই হচ্ছে ভালবাসা ও আন্তরিকতা। এখানে ভালবাসা বলতে যৌন আকর্ষণ, যৌন প্রেমকে বুঝানো হয়েছে। ইহা নারী পুরুষের মিলনের প্রাথমিক কারণ এবং ইহাই তাদেরকে একে অন্যের সহিত সংযুক্ত করে রেখেছে। দাম্পত্য জীবনে ভালবাসা ও আন্তরিকতা যত বৃদ্ধি পাবে এই জন্যে তারা একে অন্যের প্রতি কল্যাণকামী, সাহনুভতিশীল, দরদী ও সুখ দুঃখের সঙ্গী হিসেবে দাম্পত্য জীবনে জান্নাতী পরিবেশ বিরাজ করবে। একে অন্যের প্রতি তেমন এক সম্পর্ক সৃষ্টি হতে থাকবে যাকে ‘রাহমাত’ বা আন্তরিকতা বলা হয়েছে। দাম্পত্য জীবনে এই সম্পর্ক ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। শেষ পর্যন্ত এমন এক সময়ও আসে তখন যৌন আকর্ষণ,যৌন প্রেমের পরিবর্তে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের জন্য দরদী অনুগ্রহসম্পন্ন ও মেহেরবান হয়ে উঠে। ভালবাসা ও আন্তরিকতা এই দুটি শক্তি আল্লাহ তায়ালা তাদে মধ্যে মিলন বাসনা ও উদগ্র ব্যাকুলতার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর এই মিলন বাসনাই শুধু স্বস্তি ও প্রশান্তি লাভ করতে চায়। এর কারণেই নারী পুরুষ একে অন্যের নিকটবর্তী হতে বাধ্য হয়। এই ভালবাসা ও আন্তরিকতা এমন এক সম্পর্ক গড়ে তুলে যারা ভিন্ন পরিবারে, ভিন্ন পরিবেশে, লালিত পালিত হয়েছিল তাদের মধ্যে এমন এক স্থায়ী বন্ধুত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়। আর এই ভালবাসা ও আন্তরিকতা কোটি কোটি নারী পুরুষ তার বাস্তব ও ব্যক্তিগত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিজেদের জীবনে লাভ করেছে।
রাসুলের (সা) দাম্পত্য জীবন :
একজন মানুষের পারিবারিক জীবনই হচ্ছে সেই মানুষটির সার্বিক পরিচয় প্রকাশ করে। বিশ্বের সকল মানুষের স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের পারিবারিক জীবনকে গোপন করে রাখে। কিন্তু আমাদের প্রিয় নবী (সা) এর স্ত্রীরা জনপ্রতিনিধির মতো স্বামীর জীবনের সকল কথা ও কাজ লক্ষ্য করতেন এবং সেসব কথা সকলের সামনে প্রকাশ করে দিতেন। রাসুলের (সা) জীবনের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য উভয় জীবনই আমাদের সকলের সামনে বর্তমান। তাই আসুন আমরা রাসুল (সা) জীবনী আলোচনা করে দেখি তার দাম্পত্য জীবন কেমন ছিল? রাসুলের (সা) সীরাত থেকে জানা যায় তাঁর দাম্পত্য জীবনে ছিল গভীর ভালবাসা, পারস্পরিক সহমর্মিতা, সীমাহীন আবেগ ও নিষ্ঠা। কঠিন দারিদ্র, অনাহার, তথা সকল প্রতকিুল পরিবেশও তাদের এ মধুর সম্পর্কে একদিনের জন্যও কোন ধরনের ফাটল দেখা যায়নি। ইসলাম যে মানুষের স্বভাবগত নির্মল আবেগ অনুভুতিকে অস্বীকার করেনি তার প্রমাণ পাওয়া যায় রাসুলের (সা) দাম্পত্য জীবনের আচণের মধ্যে। কখনো কখনো তাদেরকে দেখা যায় সাধারণ মানুষের মত আবেগ প্রবণ। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে,রাসুলের (সা) স্ত্রীরা যেমন ছিলেন একজন নবীর স্ত্রী। তেমনি একজন নারীও বটে। আবার রাসুল (সা) যেমন একজন নবী ও রাসুল,তেমনি ছিলেন একজন স্বামীও বটে। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী হিসাবে তাদের এমন বহু আচার-আচরণ ও মান-অভিমানের কথাও ঘটনা বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যা আমাদের জন্য অতি চমকপ্রদ ও শিক্ষনীয়। রাসুলের (সা) দাম্পত্য জীবনের কয়েকটি আচরণ তারই প্রিয়তমা কয়েকজন স্ত্রীর ভাষায় এখানে তুলে ধরেছি।
সুরা আর রূমের ২১ নং আয়াতের বাস্তব চিত্র আমরা দেখতে পাই রাসুলের (সা) দাম্পত্য জীবন। রাসুল (সা) বলেন-তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম। আমি আমার স্ত্রীদের নিকট তোমাদের সকলের চেয়ে উত্তম। আল-হাদীস।
খাদীজার (রা) প্রতি ভালবাসাঃ
খাদীজার (রা) প্রতি রাসুলের (সা) ছিল গভীর ভালবাসা, সহমর্মিতা, সীমাহীন আবেগ ও নিষ্ঠা। খাদীজার (রা) মৃত্যুর পরও রাসুল (সা) প্রায় তাকে স্বরণ করতেন। কি কারণে তিনি রাসুলের সমস্ত হৃদয়ে আসন করে নিয়েছিলেন? কিসের আর্কষনে তাকে বার বার স্মরণ করতেন ? রাসুলের সিরাত থেকে জানা যায় যে, তিনি সর্বপ্রথম ওহী লাভ করার পর তার মনে যে ভীতি ও আতংকের সৃষ্টি হয়েছিল, তার অপনোদনের জন্যে তিনি সর্বপ্রথম খাদীজার (রা) কাছে সব খুলে বলেন-“আমি এই ব্যাপারে নিজের সম্পর্কে বড়ই ভীত হয়ে পড়েছি”।
একথা শুনে তার প্রিয়তমা স্ত্রী বলেছিলেন, প্রিয় স্বামী আমার আল্লাহ পাক আপনাকে কখনই এবং কোন দিন, কোন দিক দিয়ে লজ্জিত করবেন না। কেননা আপনি তো আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন। অপরের বোঝা বহন করে থাকেন, মেহমানদারী, বিপদে সাহায্য করে থাকেন, এজন্য আল্লাহ কখনই শয়তানদের আপনার উপরে বিজয়ী বা প্রভাবশালী করে দিবেন না। এতে আমার কোন সন্দেহ নেই যে, কোন অমূলক ধারণা আপনার উপর চাপিয়ে দিবেন না। আল্লাহ অবশ্যই আপনাকে আপনার জাতির লোকদের হেদায়াতের কাজের জন্যেই বাছাই করে নিয়েছেন।
খাদীজা (রা) সম্পর্কে রাসুলের (সা) কি পরিমাণ প্রেম-ভালবাসা ছিল এই হাদীসে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
আয়িশা (রা) বলেন-“রাসুল (সা) একদিন খাদীজার (রা) প্রশংসা শুরু করলেন এবং দীর্ঘ সময় প্রশংসা করতে থাকলেন। এতে আমার অর্ন্তদাহ হলো। বললামঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা) আপনি একজন কুরাইশ বৃদ্ধা, যার ঠোট লাল এবং যার মৃত্যুর পর দীর্ঘকাল অতিবাহিত হয়েছে, এত দীর্ঘ সময় তার প্রশংসা করছেন। আল্লাহ তো তার চেয়ে ভাল স্ত্রী আপনাকে দান করেছেন। একথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা) চেহারার রং পাল্টে গেল। তিনি বললেন, খাদীজা আমার এমন স্ত্রী ছিল যে,মানুষ যখন আমাকে নবী বলে মানতে অস্বীকার করে, তখন সে আমার প্রতি ঈমান আনে, মানুষ যখন আমাকে মিথ্যাবাদী বলতে চেয়েছে, তখন সে সত্যবাদী বলেছে। এবং মানুষ যখন আমাকে সাহায্য করতে চায়নি, তখন সে তার অর্থ বিত্ত সহকারে আমার পাশে এদে দাড়িয়েছে। আল্লাহ তার মাধ্যমেই আমাকে সন্তান দিয়েছেন। যখন অন্য স্ত্রীরা আমাকে সন্তান থেকে বঞ্চিত করেছেন। বুখারী মুসলিমের একটি হাদীসে আয়িশার (রা) বর্ণনায় নবী করীমের (সা) এরূপ একটি মন্তব্য পাওয়া যায়, রাসুল (সা) বলেছেন- “হে আয়িশা! খাদীজা খাদীজাই, তার কোন তুলনা হয় না। সে ছিল অদ্বিতীয়া”।
খাদীজার (রা) কত যে প্রেম ও ভালবাসা ছিল রাসুলুল্লাহর (সা) প্রতি তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। রাসুলের (সা) সীরাত থেকে দেখতে পাই, মক্কার কাফের ও মুশরিকদের অত্যাচারে তাঁকে তিন বজর বন্দী জীবন বাধ্য হয়ে অতিবাহিত করতে হয়েছে। এমন এক সংকটময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়,রাসুল (সা) ও তার সাহাবীরা (রা) বাধ্য হয়ে গাছের পাতা বাকল ও শুকনো চামড়া আগুনে পুড়িয়ে ক্ষুধা মিটাতে হয়েছে। এই সংকটময় পরিবেশে রাসুলের (সা) একমাত্র জীবন সঙ্গীনী প্রিয়তমা স্ত্রী খাদীজা (রা) কায়মনোবাক্যে তাঁর প্রিয় স্বামীর সেবায় নিয়মিত নিয়োজিত ছিলেন। আরবের শ্রেষ্ঠ ধনীর দুলালী, সেরা সম্পদশালিনী খাদীজা (রা) তাঁর প্রাণপ্রিয় স্বামীর সাথে কত যে কষ্ট ভোগ করেছিলেন এবং এত কষ্ট সহ্য করেও একদিনের জন্যেও স্বামীর সেবায় উদাসীনতা দেখাননি বরং স্বামীকে প্রেরণা যোগাতেন ও উৎসাহের সঞ্চার করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা) অনেক সময় যখন খুবই অবসন্ন ও ভারাক্রান্ত মনে ঘরে ফিরতেন, তখন খাদীজা (রা) কে দেখে তাঁর (সা) চক্ষু শীতল হয়ে যেত। খাদীজার (রা) প্রেম ভালবাসা ও আবেগ মাখা শান্তনার বাণী শুনলে রাসুলের (সা) হৃদয় মন জুড়িয়ে যেত। তিনি আবার নতুন করে উজ্জীবিত হতেন। তাঁর প্রেম-ভালবাসার সিন্ধ স্পর্শে রাসুলের (সা) সমস্ত ক্লান্তি ও গ্লানি মুছে একাকার হয়ে যেত। তিনি তাঁর পবিত্র অন্তরে আবার অসাধারন কর্ম প্রেরণা লাভ করতেন।
আয়িশার (রা) প্রতি ভালবাসা :-
রাসুলুল্লাহ (সা) ও আয়িশার (রা) দাম্পত্য জীবন এবং তাদের মধ্যেকার মধুর সম্পর্কের কয়েকটি ঘটনার চিত্র তুলে ধরছি আয়িশার (রা) ভাষায়। একবার আয়িশার (রা) মাথায় ব্যথা হলো। রাসুলুল্লাহর (সা) তখন অন্তিম রোগ লক্ষণ শুরু হতে চলেছে। তিনি আয়িশা (রা) কে বললেন, তুমি যদি আমার সামনে মারা যেতে আমি নিজ হাতে তোমাকে গোসল দিয়ে কাপন পরাতাম এবং তোমার জন্য দোয়া করতাম। তখন আয়িশা (রা) বললেনঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা) আপনি আমার মৃত্যু কামনা করছেন। যদি এমন হয় তাহলে আপনি তো এই ঘরে নতুন একজন স্ত্রী এনে উঠাবেন। রাসুলুল্লাহ (সা) একথা শুনে মৃদু হেসে দেন।
রাসুলুল্রাহ (সা) আয়িশার (রা) সাথে যখনই পানাহার করার সুযোগ হতো, তখন একই দস্তরখানায় একই থালায় আহার করতেন। পানাহারের মধ্যে প্রেম-প্রীতির অবস্থা এমন ছিল যে, আয়িশার (রা) চোষা হাড় রাসুল (সা) চুষতেন। গ্লাসের যেখানে মুখ লাগিয়ে আয়িশা (রা) পানি পান করতেন, রাসুল (সা) সেখানে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন। রাত্রে ঘরে আলো জ্বলতো না তাই খেতে বসে মাঝে মাঝে উভয়ের হাত একই টুকরো গোস্তের উপর গিয়ে পড়তো এবং ভালবাসার টানাটানি চলতো গোস্তের টুকরা নিয়ে।
একবার এক চলার পথে সফরে আয়িশার (রা) উঠনিটি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে আয়িশা (রা) কে নিয়ে দৌড় দেয়। এতে রাসুলুল্রাহ (সা) এতই অস্থির হয়ে পড়েন। মুখ দিয়ে তখন উচ্চরিত হতে শোনা যায়-ওয়া আরুসাহ, হে আমার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী। কোন এক সফরে আয়িশা (রা) রাসুলুল্লাহ (সা) সফর সঙ্গীনী ছিলেন। চলার পথে এক পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ (সা) সকল সঙ্গীকে আগে চলার নির্দেশ দিলেন। তারপর আয়িশা (রা) কে বললেন, এসো আমরা দৌড়াই দেখি কে আগি যেতে পারে। তখন আয়িশা (রা) ছিলেন হালকা-পাতলা তাই তিনি আগে চলে গেলেন। তার কিছু কাল পরে এমন দৌড় প্রতিযোগিতার সুযোগ আরেক বার আসে। আয়িশা (রা) বলেন, তখন আমি আগের চেয়ে একটু মোট হয়ে গিয়েছিলাম। তাই রাসুলুল্লাহ (সা) আমার আগে চলে যান। তখন রাসুলুল্লাহ (সা) বললেনঃ এ আয়িশা এ হচ্ছে ঐ দিনে বদলা।
একবার ঈদের দিন কিছু হাবশী লোক হেলিয়ে-দুলিয়ে পলোয়ানীর কসরত দেখাচ্ছিল। আয়িশা (রা) স্বামীর নিকট এই খেলা দেখার আবেদন করলেন। রাসুলুল্লাহ (সা) আয়িশা (রা) কে আড়াল করে দাড়িয়ে থাকলেন এবং আয়িশা (রা) সেই খেলা উপভোগ করলে। যতক্ষণ আয়িশা (রা) ক্লান্ত হয়ে নিজেই সরে না গেলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) ততক্ষণ ঠাঁয় দাড়িয়েছিলেন।
আয়িশা (রা) কে খুশী করার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা) মাঝে মধ্যে আয়িশা (রা) কে গল্প শোনাতেন। আবার কখনও কখনও ধৈর্য্য সহকারে আয়িশার (রা) গল্প শুনতেন। রাসুলুল্লাহ (সা) অন্তিম রোগ, শয্যায় বারবার তিনি জিজ্ঞেস করতে লাগলেন আজ কি বার ? সবার বুঝতে আর বাকী থাকলো না যে তিনি আয়িশার (রা) বারির দিনটির অপেক্ষা করছেন। সুতরাং তাঁকে আয়িশার (রা) ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো। ওফাৎ পর্যন্ত তিনি আয়িশার (রা) ঘরে অবস্থান করেন। আয়িশার (রা) রানের উপর মাথা রেখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাসুলে করীম (সা) অনেক সময় আয়িশার (রা) রানের উপর মাথা রেখে শুয়ে যেতেন।
উম্মে সালমার (রা) মন্তব্যের জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, আয়িশার ব্যাপারে তোমরা আমাকে বিরক্ত করবে না। কারণ আয়িশা ছাড়া কোন স্ত্রীর লেপের নিচে আমার উপর ওহী নাযিল হয়নি।
আমর ইবনুল আস (রা) জাতুস সালাসিল যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে রাসুলুল্লাহ (সা) কে একদিন জিজ্ঞেস করেন ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা) এ পৃথিবীতে আপনার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি কে? তিনি বললেন আয়িশা। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলে ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা) আমার প্রশ্ন পুরুষ সম্পর্কে তখন রাসুলে করীম (সা) বললেনঃ আয়িশার গর্বিত পিতা।
উম্মুল মুমিনীন সুফিয়া (রা) বলেনঃ একবার রাসুলুল্রাহ (সা) মসজিদে ইতেকাফরত ছিলেন। আমি কিছু কথা বলার জন্যে রাত্রে তার কাছে গেলাম। আমি ফিরে আসার সময় রাসুলূল্লাহ (সা) আমার সাথে উঠে এলেন, আমকে চম্মুন দিয়ে বিদায় দেবার জন্যে। এ সময় দুজন আনসার সাহাবী আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আমাদের দেখে তারা দ্রুত চলে যাচ্ছিলেন। রাসুল (সা) তাদের ডেকে বললেনঃ তোমরা একটু দাঁড়াও, এ হচ্ছে সুফিয়া বিনতে হুয়াই (আমার স্ত্রী)। বুখারী।
একবার আয়িশা (রা) অতি যতœ সহকারে দরজায় একটি ছবিওয়ালা পর্দা টানালেন। রাসুলুল্লাহ (সা) ঘরে ঢুকতে যাবেন এমন সময় পর্দার প্রতি তার দৃষ্টি পড়লো। সাথে সাথে তার চেহারা মুবারক বিবর্ণ হয়ে গেল। এ দৃশ্য দেখে আয়িশা (রা) সবকিছু বুঝে ফেললেন। তিনি বললেন, প্রাণের স্বামী আমার ক্ষমা করুন। ্আমার অপরাধ কোথায় বলবেন কি? রাসুল (সা) বললেনঃ যে ঘরে ছবি থাকে সেখানে ফেরেস্তা প্রবেশ করে না। একথা শুনার পর আয়িশা (রা) পর্দাটি ছিড়ে ফেললেন। আয়িশা (রা) ও স্ত্রীদের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সীরাত ও হাদীস গ্রন্থে রাসুলুল্লাহ (সা) ও আয়িশার (রা) প্রেম প্রীতির এক চমৎকার দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। আয়িশা (রা) স্বামীর প্রিয়তমা স্ত্রী হওয়া সত্বেও অতি আগ্রহ ভরে অন্যদের চেয়ে বেশী মাত্রায় স্বামীর সান্নিধ্য লাভের প্রত্যাশী ছিলেন। স্বামীর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন তার জ্বলন্ত প্রমাণ পাওয় যায়। আল্লাহ পাক আমাদের প্রিয় নবী (সা) কে যেমনি দুনিয়ার মানুষের হেদায়াতের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছিলেন ঠিক তেমনি তার প্রিয়তমা স্ত্রীদেরকেও একই উদ্দেশ্যে মনোনীত করেছিলেন। তারা যেন তাদের প্রাণপ্রিয় স্বামী নবী করীম (সা) কে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে পারেন। রাসুলে করীম (সা) যেমন ছিলেন উচ্চ বংশের, অভিজাত খান্দানের মানুষ। এইভাবে আল্লাহ পাক তার প্রিয়তমা স্ত্রীদেরকে তাদের নানা বৈশিষ্ট্যের কারণে উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। যাতে উম্মতে মুহাম্মদী তাদের দাম্পত্য জীবন অনুসরণ করবে এবং তাদের বর্ণিত নবী জীবনীর আদর্শ থেকে পথ নির্দেশ লাভ করবে। রাসুলে করীম (সা) যে মহান আদর্শ বাস্তবায়নে সচেষ্ট ছিলেন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীরাও ছিলেন সেই আদর্শের প্রতি সম্পূর্ণ নিবেদিত ও মৃর্ত প্রতীক। তারা তাদের দাম্পত্য জীবনে আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন। তারা পার্থিব জগতের ভোগ বিলাসকে প্রত্যাখান করেন এবং রাসুলের (সা) প্রতি নিবেদিত থেকে তাকে ভালবেসে জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন। রাসুলে করীমের (সা) প্রতি তাদের আনুগত্য ও ভালবাসার উজ্জল নমুনা তা মুসলিম স্ত্রীদের জন্যে বাস্তব দৃষ্টান্ত।
উল্লেখিত ঘটনার আলোকে জানা যায় যে, রাসুলে করীমের (সা) দাম্পত্য জীবনে ছিল গভীর ভালবাসা, পারস্পরিক সহমর্মিতা, সীমাহীন আবেগ ও নিষ্ঠা। রাসুলে করীম (সা) বৈধতার মধ্যে থেকেই তার স্ত্রীদের মনোরঞ্জন করতেন। তাদের সাথে রসিকতাও বৈধভাবে করতেন। স্ত্রীদের নির্দোষ ইচ্ছা আকাংখাই তিনি পুরণ করতেন। তাদের সুখ ও দুঃখের সাথী ছিলেন। সকল বিষয়েই তিনি স্ত্রীদের সাথে আলোচনা করতেন। এমনকি তিনি স্ত্রীদেরকে তার গোপন কথার আমানতদার মনে করতেন।
---------------------অসমাপ্ত