শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সরকার এ সেক্টরকে একেবারে ঢেলে সাজানোর নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পাঠক্রম থেকে শুরু করে উত্তরপত্র মূল্যায়ন পর্যন্ত সব কিছুতেই পরিবর্তন আনা হবে। উন্নত দেশের আদলে দেশীয় পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই শুরু হয়েছে এই সংস্কার কার্যক্রম। বর্তমান সরকার প্রথম জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে যতটা বাহবা কুড়িয়েছে, তার চেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে পঞ্চম শ্রেণি, অষ্টম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষার নামে পাবলিক পরীক্ষা প্রবর্তন করে। এ ছাড়া সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করেও এর সুফল খুব একটা পায়নি। পরীক্ষাগুলোয় জিপিএ-৫ প্রাপ্তির রেকর্ডের সূচক যতটা ঊর্ধ্বমুখী, বিপরীতে শিক্ষার মান ততটাই নিম্নগতি বলে সমালোচিত। এর ফলে গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের চিন্তা শুরু হয়। এর বাস্তবায়নে পাঠক্রম, পাঠ্যসূচি, পাঠ্যপুস্তক, পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতিতে সংস্কার নিয়ে ভাবছে সরকার। শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং সংস্কারের জন্য পরামর্শ ও মতামত নেওয়া হচ্ছে দেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, শিক্ষক এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের। পর্যায়ক্রমে সভা, সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র আমাদের সময়কে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কক্সবাজারে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বাংলাদেশে প্রকৌশল জগতে বরেণ্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ অনেক শিক্ষাবিদ, শিক্ষক এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা ওই সেমিনারে অংশ নেবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদ এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, গতানুগতি শিক্ষার মান উন্নয়নে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের খ্যাতিমান শিক্ষাবিদসহ যারা শিক্ষার সঙ্গে আছেন তাদের পরামর্শ-মতামত নেওয়া হবে। শিক্ষায় অংশ্রগ্রহণ সন্তোষজনক আছে। আমাদের এখন শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করতে হবে। এজন্য এই আয়োজন। তিনি বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে যে কোনো সংস্কারে মন্ত্রণালয় একক সিদ্ধান্ত নেবে না। সংস্কারে যা কিছু পরিবর্তন-পরিমার্জন হবে সবার মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে হবে। সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রফেসর ইমেরিটাস ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, এখন তো শিক্ষার্থী বলা যায় না, পরীক্ষার্থী সবাই। শিক্ষার উন্নয়ন ঘটাতে হলে আগে গোড়ায় হাত দিতে হবে। বের করতে হবে কোথায় সমস্যা? তারপর সমাধান। শিক্ষায় জিপিএ-৫ দিচ্ছে ঠিকই; প্রকৃত শিক্ষার মান বাড়েনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসেও পাবলিক পরীক্ষা সংস্কার বিষয়ে কক্সবাজারে একটি কর্মশালা হয়। আগামী ২১ নভেম্বর এনসিটিবিতে অনুষ্ঠিত হবে পাঠক্রম, পাঠ্যপুস্তক সংক্রান্ত সভা। এ ছাড়া গতকাল জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা করেছে মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন সংস্কার আসতে পারে যেসব ক্ষেত্রে। পাঠক্রম : শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল সক্ষমতা বিকাশের সুযোগ বৃদ্ধি করতে সরকার পুরনো পাঠক্রম পরিমার্জন করে ২০১৩ সালে। বিদ্যমান পাঠক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে না। এই পাঠক্রম মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গি, নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য করা হয়েছে। পরিমার্জনে প্রাধান্য দেওয়া হবে দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তোলার উদ্দেশ্য। এর আগে ১৯৭৬ সালে এবং ১৯৯৬ সালে দুবার শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়। পাঠ্যসূচি : বিদ্যমান পাঠ্যপুস্তকগুলোয় কোন কোন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক দীর্ঘ পাঠ্যসূচি রয়েছে। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন মহল এ নিয়ে সমালোচনা করছে। অনেকে পাঠ্যসূচি কমিয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিভেদে স্বল্পপরিসরে সহজ পাঠ্যসূচি তৈরির পরামর্শ দিয়েছে সরকারকে। এসব বিষয় বিবেচনা করে সরকার পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তনের চিন্তা করছে। পরিমার্জন করে যুগোপযোগী বিষয় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্র্ভুক্ত করা হবে। পাঠ্যপুস্তক : শিক্ষার্থীদের বইয়ের বোঝা কমিয়ে আনতে পাঠ্যবইয়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আধিক্য লেখা বাদ দেওয়া হবে। সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় রচিত হবে পাঠ্যপুস্তক। বিজ্ঞান, গণিত এবং ইংরেজি বিষয়ে সহজ ভাষায় কীভাবে পাঠ্যপুস্তক রচনা করা যায় সে বিষয়ে বিষয়ভিত্তিক লেখকদের পরামর্শ নেওয়া হবে। বানানরীতি, নির্র্ভুল পাঠ্যবই তৈরির জন্য এনসিটিবির সংশ্লিষ্টদের আরও দক্ষ করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারণ বিগত কয়েক বছর পাঠ্যপুস্তকে ভুল তথ্য, বানান, কঠিন ভাষায় লেখা বিজ্ঞান, গণিত এবং ইংরেজির বিষয়ে নানা মহলের অভিযোগ ছিল। বইয়ে অনুশীলন মুখস্থ বলতে পারা কোনো শিক্ষার্থীদের দক্ষতা নয়; দক্ষতা হচ্ছে শিক্ষার্থী যদি নিউটনের সূত্র বুঝতে পারে। এ কারণে উদাহরণ দিয়ে বোঝানো হবে রচয়িতাদের কাজ। পরীক্ষাগ্রহণ : দেড়-দুই মাস সময় নিয়ে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। এভাবে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। পরীক্ষা নিয়ে আবার শিক্ষা প্রশাসনেরও বছরের অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। উন্নত দেশে দশ-বারোটি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় না। সেখানে শুধু গণিত, মাতৃভাষা, ইংরেজি, বিজ্ঞানে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। বাকি বিষয়গুলো ক্লাসে মূল্যায়ন করা হয়। এভাবে ক্লাসে পাঠ নেওয়ার সময় বেড়ে যায় শিক্ষার্থীদের। আমাদের বিদ্যমান পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কার করে ক্লাসে নানাবিধ সূচকে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে পাবলিক পরীক্ষার বিষয় কমানোর চিন্তা করা হচ্ছে। উত্তরপত্র মূল্যায়ন : বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে পাবলিক পরীক্ষায় ভালো শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র ভুল মূল্যায়নে অকৃতকার্য হয়। পরীক্ষকরা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গিতে। ফলে একই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীরা ভিন্ন-ভিন্ন নম্বর পাচ্ছে। এমন ত্রুটি-বিচ্যুতি সরকার চিহ্নিত করে অভিন্ন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়নের বিষয়টি সামনে আনছে। অতিসম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন বোর্ডে নির্দেশনা দিয়েছে এ বিষয়ে। এখন থেকে প্রশ্নপ্রণেতারা প্রশ্নপত্রের সঙ্গে নমুনা উত্তর ও নম্বর প্রদান নির্দেশিকা প্রণয়ন করবেন। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন : সম্প্রতি প্রশ্নপত্র প্রণয়ন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড। সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে পারেন না অনেক শিক্ষক। এতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে। অন্যদিকে শিক্ষকরা শর্টকাট পদ্ধতি বেছে নিয়ে বাজারের বিভিন্ন গাইডবই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দিচ্ছেন পাবলিক পরীক্ষায়। এভাবে শিক্ষার্থীদের গাইডবইয়ের প্রতি আসক্তি তৈরি করছেন শিক্ষকরা। অন্যদিকে কার্যকর হচ্ছে না সৃজনশীলতা। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে সরকার প্রশ্নব্যাংক গঠনের চিন্তা করছে। এর পরীক্ষামূলক কাজ করছে একটি শিক্ষাবোর্ড। পাঠদান : কোন শ্রেণিতে কোন বিষয়ে কতটি ক্লাস হবে তার ওপর নির্ভর করে সেই শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের সূচি-পৃষ্ঠা। একটি ক্লাসের সময় ৫০ মিনিট ধরা হলেও অর্ধেক সময়ের আগে অনেক শিক্ষক ক্লাসরুম ত্যাগ করেন। পাঠদানেও কার্যকর পদ্ধতি এবং মনিটরিং নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। শ্রেণির বিভিন্ন স্তরে বিষয় কাঠামো ও ক্লাস বণ্টনে আরও উন্নয়ন করা যায় কিনা ভেবে দেখা হবে। দেখা যায়, এখন বিষয়ভিত্তিক শ্রেণিতে কোনো বিষয়ে বছরে ৭০টি ক্লাস আবার কোনো বিষয়ে ১৭৪টি ক্লাস হয়। ক্লাসের পাঠদান সূচি করার সময় বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে সরকারি ছুটি, পরীক্ষাকালীন ক্লাস বন্ধ এসব দিন হিসাব করা হয়। মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য ক্লাসে যথাযথ পাঠদান একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।
Syed Shahadat Hossainইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স
লেবেল
- খবর
- মতামত- বিশ্লেষণ
- বিবৃতি
- রাজনীতি
- প্রেস বিজ্ঞপ্তি
- আন্তর্জাতিক
- প্রচ্ছদ
- আইনশৃঙ্খলা
- শোক সংবাদ
- বিবিধ
- স্মৃতি
- আইন-আদালত
- জাতীয় সংসদ নির্বাচন
- শিক্ষা
- ডেমোক্রেসি
- ইসলাম
- স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান
- অর্থনীতি
- ইসলামী আন্দোলন
- সাহিত্য-সংস্কৃতি
- হাদীসের বাণী
- শীতবস্ত্র বিতরণ
- সভ্যতা
- ইতিহাস
- গল্প
- মিডিয়া
- শোকবাণী
- খেলাধুলা
- জাতীয়
- IIUC News
- চিঠি
- কৃষি
- দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
- প্রবাস
- গবেষণা
- আবিস্কার
- কুরআন
- সম্পাদকীয়
- বাণী
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- সাইবার ক্রাইম
- দারসুল কুরআন
- ব্রেকিং নিউজ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন