বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ মাথাব্যথা একটি জটিল উপসর্গ। যে কোন বয়সে যে কারো মাথাব্যথা হতে পারে। বিভিন্ন প্রকারের মাথাব্যথার একটি হলো মাইগ্রেন। যা সাধারণ ভাষায় আধকপালি মাথাব্যথা হিসেবে পরিচিত।
কারণ : রক্তবাহী শিরাগুলো যদি কখনো মস্তিষ্কে ঠিকমত রক্ত সরবরাহ করতে না পারে, তখন মাথাব্যথা শুরু হয়। এই মাথাব্যথাকে মাইগ্রেন বলে। সেরেব্রাল কর্টেক্সের বিভিন্ন অংশে রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়াই এর মূল কারণ। আবার কখনো রক্তবাহী শিরাগুলো মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্ত সরবরাহ করে, তখন তীব্র মাথাব্যথা হয়। মাইগ্রেনের সাথে এর পার্থক্য বুঝতে হবে। এ ব্যথা মাইগ্রেনের ব্যথার চেয়ে অনেক তীব্র। শতকরা প্রায় ১৫ভাগ লোক মাইগ্রেনের সমস্যায় ভোগেন। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের এ জাতীয় মাথাব্যথা বেশি হয়। মাইগ্রেন ১৫বছর বয়স থেকে শুরু হয়ে প্রায় ৫০বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় মাইগ্রেনের জন্য অনেকগুলো কারণকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন-
বংশগত : মাইগ্রেনে বংশগত প্রভাব বিষয়ে গবেষণা করেছেন মাইকেল ফেরি’র নেতৃত্বে নেদারল্যান্ডের লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির একদল নিউরো-গবেষক। তাঁরা প্রথমে ১জন মাইগ্রেন রোগীর দেহ থেকে মাইগ্রেনের সাথে সংশ্লিষ্ট জিন পৃথক করেন। দেখা গেল, পরবর্তীতে রোগীর আর মাইগ্রেনের সমস্যা হয় নি। অর্থাৎ রোগী ভাল হয়ে গেছে। এভাবে তাঁরা ১০টি পরিবারের ৬০জন সদস্যের উপর গবেষণা চালিয়ে সফল হয়েছেন। এ গবেষণা থেকে মাইগ্রেনে বংশগত প্রভাব প্রমাণিত হয়।
টেনশন, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা : কর্মস্থল, ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিষয়, যে কারণেই হোক, যারা টেনশন, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতায় ভোগেন তারা মাইগ্রেনে ভোগতে পারেন। টেনশন ও অস্থিরতায় মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে যায়। এর ফলে অক্সিপিটাল এবং প্যারাইটাল নামক মস্তিষ্কের দুটি অংশের কার্যকারিতায় বিঘ্ন ঘটে। এর ফলে মাথা ব্যথা শুরু হতে পারে।
আবেগ : যারা অতিমাত্রায় আবেগ প্রবণ, মাইগ্রেনে তারা অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ। আবেগের সাথে মস্তিষ্কের সম্পর্ক নিবিড়।
জন্মবিরতিকরণ বড়ি : মাইগ্রেন বা আধকপালি মাথাব্যথায় পুরুষের তুলনায় মেয়েরা বেশি ভোগে। মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের পরিচালিত এক গবেষণায় এমনই তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁরা ১০০জন মহিলার উপর গবেষণা চালিয়েছেন। দেখা গেছে যারা দীর্ঘদিন ধরে জন্মবিরতিকরণ বড়ি সেবন করে থাকে, যাদের নিয়মিত মাসিক হয় না, তারাই বেশি আক্রান্ত হয়। গবেষণায় এটাও দেখা গেছে যে, অনেকের ব্যথা মাসিক শুরুর প্রাক্কালে হয়। কিছু যৌন হরমোনও এর জন্য দায়ী।
পরিবেশ : অপরিকল্পিত নগরায়ন, গাড়ির কালো ধূয়া, বর্জ্য পদার্থ ইত্যাদির ফলে পরিবেশ দূষণ ঘটে। যা আমাদের দেহ-মনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এই প্রভাবের একটি কুফল হল মাইগ্রেন। মাইগ্রেন বিষয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরে বসবাসকারীদের মধ্যে মইগ্রেনের সমস্যা বেশি। কারণ গ্রামের পরিবেশ শহরের তুলনায় অনেক বেশি নির্মল ও পরিচ্ছন্ন।
কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইলের স্কিনে একটানা দীর্ঘক্ষণ থাকিয়ে থাকাও মাইগ্রেনের একটি কারণ। দীর্ঘ ভ্রমণ, ক্ষুধা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলেও মাইগ্রেন হতে পারে। খাদ্যের মধ্যে চকলেট, মদ, পনির ইত্যাদি মাইগ্রেন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
লক্ষণ : মাইগ্রেনে নিম্নবর্ণিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়-
ব্যথা সাধারণত মাথার এক পাশে বা এক দিকে শুরু হয়। যাকে আমরা সাধারণ ভাষায় আধকপালি মাথাব্যথা বলি। তবে, ব্যথা সমস্ত মাথা জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মাথাব্যথার সাথে বমিভাব। কখনো কখনো বমি হয়।ব্যথার সাথে এক ধরণের ঝিমধরা অনুভূতি থাকে।
ব্যথার সময় চোখের সামনে রঙিন আলোচ্ছটা দেখে। দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়। এ সময় রোগী আলো, শব্দ ও কোলাহল সহ্য করতে পারে না, এসবে অতিমাত্রায় অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে।
যে কোন বিষয়ে বিরক্তি ও বিষন্নভাব।শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
ব্যথা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
মাইগ্রেনে স্নায়ুবিক উপসর্গ খুব একটা থাকে না।
বৃদ্ধি : যারা সর্দি-কাশি বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাদের মাইগ্রেনের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।
একইভাবে প্রচণ্ড গরমে পরিবেশ যখন উত্তপ্ত থাকে, এবং তীব্র শীতে বিশেষ করে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে বৃদ্ধি পায়।
প্রতিরোধে করণীয় : ধূলাবালি, প্রচণ্ড গরম ও তীব্র শীতে সতর্কভাবে চলতে হবে। কুয়াশা ও রাস্তার ধূলাবালি এড়িয়ে চলতে হবে। চলাফেরার সময় মাস্ক বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম দরকার। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং ঘুম হতে হবে নির্বিঘ্ন ও পরিমিত। ঠিকমত ঘুম হলে এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারলে ব্যথা চলে যায়। মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় এ জাতীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে। দুশ্চিন্তা কমাতে হবে। দীর্ঘ জার্নি পরিহার করতে হবে। মহিলাদের জন্মবিরতিকরণ বড়ি বাদ দিয়ে জন্মবিরতিকরণে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত ধূমপান করে, তারা মাইগ্রেনের সমস্যায় বেশি ভোগে। তাই ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে। টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইলের স্কিনের আলো পর্যাপ্ত রাখতে হবে। কম আলোয় কাজ করা এবং একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজ করা দুটোই পরিহার করতে হবে। ব্যথা শুরু হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। পানি পান করলে ব্যথা কমে যায়। মুখমণ্ডল ও ঘাড়ে ঠাণ্ডা পানি লাগালে ব্যথা কমে যায়। এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান ওজু একটি উত্তম ব্যবস্থা। যদি কিছু দিন পর পর মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দেয় এবং ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চেম্বার : হোমিও হেলথ হোম, বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম।
E-mail : nayeemquaderctg@gmail.com
মোবাইল : ০১৮১৯ ৩৯৮ ৩৩৮
মোবাইল : ০১৮১৯ ৩৯৮ ৩৩৮
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন