ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৭

বেশি দিন বাঁচতে, পেটে ঘুমাবেন না। পেটে ঘুমানোকে স্বয়ং আল্লাহ ঘৃনা করেন


বাংলাদেশ বার্তাঃ  বেশি দিন বাঁচতে চাইলে পেটে ঘুমাবেন না। একদিন হযরত মুহম্মদ (সা) ইয়াসি ইবনে তিকফা নামে এক ব্যক্তিকে পেটে ভর দিয়ে উপুর হয়ে মাটিতে ঘুমাতে দেখে ডেকে তুলে বললেন, এটা ঘুমানোর সম্পূর্ণ ভুল পদ্ধতি, যেটাকে স্বয়ং আল্লাহ ঘৃণা করেন।
শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে নয়, পেটে ঘুমাতে সাবধানবাণী উচ্চারণ করছে বিজ্ঞানও। এ বিষেয়ে নিজ অভিজ্ঞতার কথা সম্প্রতি বর্ণনা করেছেন পানামার এক শিক্ষক। ওই শিক্ষক জানান, পানামাতে ইসলামী শিক্ষা ও শিষ্টাচারের উপর পাঠদানের সময় তিনি পেটে ঘুমানো প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের বলছিলেন। তখন শিক্ষার্থীরা তার কাছে জানতে চায়, ‘কেন উপুর হয়ে ঘুমানো যাবে না?’ শিক্ষার্থীদের ওই প্রশ্নের তাৎক্ষণিক কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলেননা ডাক্তার। যদিও তিনি শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে ধর্মীয় দৃষ্টিকোনের সাহায্য নেন। বলেন, ‘এ বিষয়ে বিশ্ব নবী বলেছেন, এটা আল্লার কাছে খুবই অপছন্দের।’
ওই ঘটনার পরই বিমানে চড়ে পানামা থেকে গায়ানা যচ্ছিলেন ওই ডাক্তার। বিমানে পাওয়া একটি ম্যাগাজিনে ‘মেরুদন্ডের সর্বশেষ উন্নত চিকিৎসা শাস্ত্রে কিভাবে একটি নষ্ট ও চূর্ণ স্পাইনালকে কোন বড় সমস্যা ছাড়াই মোকাবেলা করা যায়’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধে চোখ পড়ে তার। আর প্রবন্ধের শুরুতেই লেখা ছিলো- এখানে মেরুদন্ডের সমস্যা থেকে বাঁচতে পেটে ঘুমানো যাবে না। এর কারণ হিসেবে ডাক্তাররা ব্যাখ্যা করলেন, মেরুদন্ডের হাড় এতোটাই ভারী যে, সমগ্র শরীরকে এটা বহন করে। তাই যখন আমরা উপুর হয়ে ঘুমাই তখন পেটের অভ্যন্তরে থাকা নরম টিস্যু, নাড়িভুঁড়ি, অঙ্গ, পাকস্থলি, ফুসফুস সব সামনের দিকে চলে আসে। ফলে মেরুদন্ড একপাশে বা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। যেটা মানুষের দীর্ঘদিন ও সুস্থ্যভাবে বাঁচার প্রধান অন্তরায়। প্রায় ১৪০০ বছর আগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি না ঘটলেও নবী (সা) তখন যেটা বলেছিলেন, সেটার ইতিবাচক ও পূর্ণাঙ্গ ব্যাখা দিয়েছে বিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে একদল চিকিৎসক মা-বাবাদের পরামর্শ দেন, শিশুদের পেটে ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করবেন না। প্রবন্ধের একটি পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা দিক নির্দেশনাটি অনুসরণ করেছে তাদের মধ্যে মৃত্যু হার শতকরা ৬৮ ভাগে নেমে এসেছে।

উৎস- আমাদের সময়।

প্যানেল পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা: বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি (ল্যাব) নির্বাচন ২০১৭

বাংলাদেশ বার্তাঃ  বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি (ল্যাব) নির্বাচন ২০১৭ উপলক্ষে ড. নাসির উদ্দিন মিতুল-অহিদুজ্জামান লিটন-মহিউদ্দিন পরিষদের প্যানেল পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা জেলা পরিষদ মিলনায়তন চট্টগ্রাম এ ১৭ নভেম্বর সকাল ১০:০০ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এম. নাসির উদ্দিন মুন্সির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্যানেল পরিচিতি ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার জনাব মোঃ আবদুল মান্নান।  
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম এর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সমিতির সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। পুরো অডিটোরিয়ামটি কানায় কানায় ভরে অনেকে দাঁড়িয়ে থেকে অনুষ্ঠান উপখোগ করেছেন এবং বক্তব্য শুনেছেন। ড. নাসির উদ্দিন মিতুল নিজের ফেইজবুক স্ট্যাটাসে অনুষ্ঠান সম্পর্কে তার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন নিম্নরূপ ভাষায়। ড. নাসির উদ্দিন মিতুল এর অনুভূতি হুবহু তুলেধরা হলোঃ

”শপথ নিয়েছি এ পেশাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবো আমি। তারপর হবো ইতিহাস। কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না। কারণ মায়ের মতো করেই যে আমি আমার এ পেশাকে ভালবাসি। মেয়ের বায়নার মতোই যে আমি কানে নিই আমার অবহেলিত পেশাজিবীদের কথা। আর তাইতো যে ভালবাসা আপনারা আমার ও আমার প্যানেলের প্রতি দেখিয়েছেন, তার মুল্য আমি দিবই ইনশাল্লাহ। ভোটের মারপ্যাচ আমি বুঝি না। বুঝতেও চাইনা। জিতলেই রাজা, না জিতলে সব ছেড়ে ছুড়ে বসে থাকবো- এমনটি আমায় ভাববেন না। আপনি কিংবা আপনারা (অন্য পেশার)- আমার এ বঞ্চিত পেশাজিবীদের যতই অবজ্ঞা অবহেলা করুন না কেনো- আজ যখন চট্টগ্রামের প্রায় ১৬ টি স্বনামধন্য কলেজের অধ্যক্ষগন একযোগে স্বীকার করলেন যে ডীন মহোদয় না ডাকলে জীবনে হয়তো অজানাই থেকে যেতো যে লাইব্রেরিয়ান তথা তথ্য পেশাজীবীদের এরকম সুসংগঠিত একটি পেশাজীবী সংগঠন আছে! আমিতো এটুকুনই আপনাদের শুনিয়ে অধ্যক্ষ মহোদয়গনের কানে পৌছাতে চেয়েছিলাম।
এটাইতো ছিল আমার মুল ম্যাসেজ। প্রিয় পেশাজীবীগন, আপনাদের অনেকের অনেক কষ্ট, সীমাবদ্ধতা আমি জানি। তা সত্ত্বেও কি আশ্চর্য এক আত্মবিশ্বাস সকলের আমার প্রতি। পুরো অডিটোরিয়ামটি কানায় কানায় ভরে অত:পর দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে আপনারা শুনেছেন আমার কথা, আমাদের কথা। এমনকি বিকেল গড়িয়ে গেলেও হাতিয়া, সন্দীপ, কুতুবদিয়া, রাংগুনিয়া সহ প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা আপনারা একটুকুও ক্লান্তির লেশ মাত্র দেখাননি। আপনাদের এ স্বপ্ন পুরণে সদা কাজ করতে পারি, সে দোয়া করবেন। ধন্যবাদ আনোয়ার ও তার টিমকে। ধন্যবাদ উপস্থিত সকল অধ্যক্ষ মহোদয়গনকে। প্রানঢালা শুভেচ্ছা চট্টগ্রামের মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার স্যারকে যার মেহমান হয়ে আমি ও আমার প্যানেল সার্কিট হাউজ থেকে শুরু করে ভেন্যু সহ সকল সুবিধা পেয়েছি। অসংখ্য ধন্যবাদ আমার বাল্যবন্ধু বাংলাদেশ নেভী কমান্ডার আশরাফকে যিনি পতেঙ্গা নেভাল একাডেমিতে নিয়ে গিয়ে আমাদের সকলকে সমুদ্র দেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সবশেষে বোটক্লাবে আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ হলে বিদায় নিয়ে রাত ৯টায় USBangla ফ্লাইটে ঢাকা রওয়ানা হই। উল্লেখ্য, আজ সকালে এই একই ফ্লাইটে চট্টগ্রামে আসি। মনে রাখার মতো একটি প্রোগ্রাম করলাম। ভালো থাকবেন সকলে।”

বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৭

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য দলীয় টার্গেট বাড়িয়ে ৫২ থেকে ৬২ করেছে জামায়াত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য দলীয় টার্গেট বাড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিমতের ভিত্তিতে আসন সংখ্যা ৫২ থেকে বাড়িয়ে ৬২ করেছে দলটি। এরই মধ্যে দলের ‘নির্বাচন কমিশন’ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনসংযোগ বাড়ানো ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের ১৩টি সাংগঠনিক ও সাতটি অঞ্চলের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
জামায়াতের দায়িত্বশীলরা জানান, চূড়ান্তভাবে কী পরিমাণ আসনে দলীয় প্রার্থী দেবে জামায়াত—এ সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে নির্বাচনে গেলে শেষপর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণ নাও হতে পারে জামায়াতের। এ ক্ষেত্রে ২০০১ সালে ৩১টি, এর মধ্যে জোটবদ্ধভাবে ৩০ টি এবং এককভাবে একটি। ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩৯টি আসনে জোটগত সমর্থন পেলেও চারটি থেকে দলীয়ভাবে করে। চারটি একক আসনের মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবারগঞ্জ-৩, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর। তবে এবার এই সংখ্যাটি আরও কমতে পারে। ২০০৮ সালে সিরাজগঞ্জ ও চট্টগ্রামের একটি আসনে প্রার্থী দেয় জামায়াত। আসন সংখ্যা কমানো-বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে এখনই চিন্তিত না হয়ে প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে জামায়াতের নির্বাচন কমিশন থেকে।
সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত প্রায় একমাস আগেও ৫২টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল জামায়াতের। তবে শেষ একমাসে তৃণমূলের অভিমতের ভিত্তিতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২-তে। এর মধ্যে শুধু বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলে ৮টি আসনে প্রার্থিতা দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। কেন্দ্রের ‘নির্বাচন কমিশন’এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই এই সংখ্যাটি নির্ধারিত হয়েছে।
দলটির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বর্তমানে জামায়াতের একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম এই কমিটির চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ইজ্জত উল্লাহ সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। কমিটিতে আরও কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। তৃণমূলের অভিমত নিয়ে এই ‘নির্বাচন কমিটি’ প্রার্থী অনুমোদন করে।
গত ১৬ নভেম্বর জামায়াতের বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘জামায়াত সাংগঠনিক কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত। আর গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাচন নিয়েও প্রস্তুতি আছে।’
১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিএনপি-জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকেও খালেদা জিয়াকে জামায়াত নেতা আবদুল হালিম গণসংযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন। ওই বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়েও পরিকল্পনা জোরদার করতে প্রস্তাব দেওয়া হয় জামায়াতের পক্ষ থেকে।
জামায়াতের চট্টগ্রাম বিভাগীয় অঞ্চলের একজন দায়িত্বশীল নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিকভাবেই প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত আসনগুলোয় কাজ এগিয়ে নিতে, জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলীয় ‘নির্বাচন কমিশন’-এর পক্ষ থেকে।’
জামায়াতের একাধিক সূত্র জানায়, প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই জামায়াতের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা তাদের নির্বাচনি এলাকাগুলো সফর করে এসেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের কোনও দায়িত্বশীলই স্বপরিচয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মজলিসে শুরার সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কত আসনে ভোট করব, জামায়াত কয়টি আসনে প্রার্থী দেবে, এখনও ঠিক হয়নি। আগে নির্বাচনের সময় আসুক, এরপর দলের নীতিনির্ধারকরা ঠিক করবেন।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

মরিশাস আফ্রিকার ক্ষুদ্রতম একটি দেশ যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে (শিক্ষার) শেষ স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে

বাংলাদেশ বার্তাঃ মরিশাস আফ্রিকার ক্ষুদ্রতম একটি দেশ। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে (শিক্ষার) শেষ স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে। এমনকি ছাত্র-ছাত্রীদের বাসা থেকে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার খরচও রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে বহন করা হয়। মরিশাসে নাগরিকদের শিক্ষাদানকে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়না। সেখানে শিক্ষা বিক্রি করা হয়না। বরং রাষ্ট্র কতৃক নাগরিকদের শিক্ষাদানকে সেবা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তা বিনা মূল্যেই প্রদান করা হয়।
• ক্ষুদ্র রাষ্ট্র মরিশাসে সকল নাগরিকদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা এবং সাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়। এমনকি হার্ট সার্জারির মত ব্যয়বহুল চিকিৎসাও এর অন্তর্ভুক্ত। নাগরিকদের সাস্থ্যসেবায় ব্যাবসায়ীদের ( দৌরাত্ন) পরিলক্ষিত হয়না।
• আপনি জানেন কি? মরিশাসের মোট জনসংখ্যার ৯০% তাদের নিজস্ব মালিকানাধীন বাড়িতে বসবাস করে। কোন পরিবার কিংবা বাস্তচ্যুত নেই।এমন অভিযোগ কেউ কখনও করেনি যে জমির মূল্য এবং নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য ঊর্ধমুখি।
• মরিশাসে নাগরিকদের গড় মাথাপিছু আয় ১৯৬০০ ডলার। অবশ্য তারা এই ব্যাপারে গর্ব করেনা যে, তারা আফ্রিকার সর্বাধিক মাথাপিছু আয় সম্পন্ন দেশ।
• গণপ্রজাতন্ত্রী মরিশাস আফ্রিকা অঞ্চলের সম্পদশালী দেশ। যদিও তাদের তেল, খনিজপদার্থের মত প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। তাদের প্রধান আয়ের উতস হল তাদের মানব সম্পদ । অতঃপর কৃষি কাজের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানী এর প্রধান আয়ের উৎস।
• বাজেটে সামরিক খাতকে গৌণ ধরে শিক্ষা, সাস্থ্য এবং নাগরিক সেবাকেই মূখ্য হিসেবে ধরা হয়েছে।
• মরিশাসের রাষ্ট্রপ্রধান ডঃ আমিনাহ জৈব রসায়নে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বলেনঃ “রাজনিতি আমাকে পছন্দ করেছে, আমি রাজনীতি করতে চাইনি”। ডঃ আমিনা গারিব ফাক্বিম বিশটির ও অধিক গ্রন্থের রচয়িতা এবং জীববিদ্যার উপর তাঁর আটটি গবেষণাপত্র রয়েছে।
মরিশাসে মুসলিমরা সংখ্যালঘু। কারণ মোট জনসংখ্যার ১৭ ভাগ মাত্র মুসলিম। এতদসত্ত্বেও দেশের জনগণ মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানই পছন্দ করেছেন। দেশের জনগণ তাদের অধিকার এবং কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতার ভিত্তিতে সমাজে শান্তিতে বসবাস করছে।

অনুবাদ:Muhib khan

মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৭

জামায়াত ই ইসলামী কি ব্যর্থ সংগঠন???

.গত ২৬ আগস্ট জামায়াতের ৭৬ বছর পূর্ণ হয়। অনেকেই দাবী করছেন এই বিশাল সময়ে জামায়াতের অর্জন সামান্য। আবার অনেকেই বলছেন জামায়াত ব্যর্থ। সাধারণত তারা নিন্মোক্ত কারণগুলো দেখিয়ে ব্যর্থ বলতে চান।
১. বাংলাদেশের ফ্রন্টলাইনের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো দল হওয়া সত্ত্বেও তারা এখনো গণমানুষের দলে পরিণত হতে পারেনি।
২. জামায়াত তার ৭৬ বছরের রাজনীতিতে এককভাবে কখনোই ক্ষমতার স্বাদ পায় নি।
৩. ৭৬ বছরে জামায়াত তিনবার নিষিদ্ধ হয়েছিল। এতে জামায়াতের অপরিপক্কতা প্রকাশিত হয়।
৪. ৭১ সালে জামায়াত ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৫. এত বছর রাজনীতি করার পর তারা এখন তাদের সব মূল নেতাদের হারিয়েছে জঘন্য সব অপরাধের দায়ে।
এরকম আরো কারণ দেখিয়ে আপনি বলতেই পারেন জামায়াত ব্যর্থ।

কিন্তু আসলে কি তাই?
বস্তুত সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ভর করে উদ্দেশ্য-লক্ষ্যের উপর। একটি দল হিসেবে জামায়াতের চূড়ান্ত লক্ষ্য কি? সেটাই বলে দিবে জামায়াত কতটুকু ব্যর্থ।
জামায়াতের মূল ও চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন। আর সেই সন্তুষ্টি অর্জন হবে কুরআন হাদীস অনুসারে মানুষের সার্বিক জীবনের পূনর্বিন্যাস সাধনের মাধ্যমে।
জামায়াত যুগে যুগে উপমহাদেশে এমন সব জানবাজ মানুষ তৈরী করে যাচ্ছে যারা ইকামাতে দ্বীনের কাজে নিজের জীবন উৎসর্গকে সাফল্যের সিংহদ্বার মনে করে। জামায়াতের আছে অনন্য সাতটি বৈশিষ্ট্য যা জামায়াত কে তার লক্ষ্য অর্জনকে সহজ করে দিচ্ছে।
১. জামায়াতের বিপ্লবী দাওয়াত। জামায়াত দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মানুষকে আহ্বান করে না। দুনিয়ার কোন সফলতার লোভ দেখায় না। একান্ত পরকালীন সাফল্যের কথা সামনে নিয়ে আসে, যেভাবে আল্লাহর রাসূল দাওয়াত দিয়েছেন।
২. ইসলামী সমাজ গঠনের উপযোগী ব্যক্তিগঠন পদ্ধতি। জামায়াত মনে করে ব্যক্তিগঠনের জন্য তিন ধরণের যোগ্যতা লাগবে।
এক, ঈমানী যোগ্যতা।
দুই, ইলমী যোগ্যতা।
তিন, আমলী যোগ্যতা।
যোগ্যতা হাসিলে কঠোর প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছে সংগঠনটি।
৩. জামায়াত ইসলামীর তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি একটি তাকওয়া ভিত্তিক সংগঠন। জামায়াত কোন লোককে দায়িত্ব প্রদানকালে তাকওয়ার বিষয়টি সামনে রাখে।
৪. জামায়াতের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে “নেতৃত্ব সৃষ্টির পদ্ধতি”। অসাধারণ এই পদ্ধতিতে নেতৃত্ব বা পদলোভীদের কোন স্থান নেই।
৫. ক্ষমতা দখলের রাজনীতি করে না জামায়াত। জামায়াত ইসলামী সূরা নূরের ৫৫ নং আয়াতকে সামনে রেখে বিশ্বাস করে, ইসলামী সরকার চালানোর যোগ্য কর্মীবাহিনী তৈরী হলে আল্লাহ পাক সরকারী দায়িত্ব দেয়ার পথ করে দিবেন।
৬. জামায়াতের অর্থের উৎস জামায়াতের দায়িত্বশীল, কর্মী এবং শুভাকাংখীরা। জামায়াত বাইরের অন্য কারো অর্থে চলে না। কারো ক্রীয়ানক হিসেবে কাজ করে না।
৭. বিরোধীদের প্রতি জামায়াতের আচরণ। জামায়াত তার বিরোধীদের মধ্যে যারা অশালীন ও অভদ্র ভাষা প্রয়োগ করে তাদের করুণার পাত্র মনে করে। জামায়াতের দাওয়াত আদর্শ ও কর্মসুচীর বিরুদ্ধে বেচারাদের কিছু বলার সাধ্য নেই বলে বেসামাল হয়ে গালাগালি করে মনের ঝাল মেটানোর চেষ্টা করে। জামায়াত তাদের হিদায়াতের জন্য দোয়া করে।
আর যারা মিথ্যা সমালোচনা করে অপবাদ দেয়, জামায়াত প্রয়োজন মনে করলে সেই সমালোচনা যুক্তি দিয়ে খন্ডন করে।
সুতরাং যারা শুরুর কয়েকটি পয়েন্ট দেখিয়ে জামায়াতকে ব্যর্থ বলতে চাইবেন তাদের প্রতি আমাদের বিনীত বার্তা, আপনারা যেগুলোকে সফলতা মনে করেন আমরা সেগুলোকে চূড়ান্ত সফলতা মনে করি না।সেগুলো আমাদের মূল লক্ষ্যও নয়।

আর তাছাড়া আমরা এও বিশ্বাস করি, মুমিনের দুনিয়ার জীবনে ব্যর্থতা হল আল্লাহর আনুগত্য করতে না পারা। আর কোন কিছুকেই ব্যর্থতা মনে করি না। দুনিয়ার জীবনের কষ্ট, ক্ষমতা পাওয়া বা না পাওয়া সবগুলোকেই আমরা পরিক্ষা বলেই গন্য করি। পৃথিবীর অধিকাংশ নবী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পাননি। নূহ আঃ ৯৫০ বছরের দাওয়াতে মাত্র একশত ষাট জনকে ইসলামের পথে আনতে পেরেছেন। তাই বলে কি নূহ আঃ ব্যর্থ?
হিদায়াত আল্লাহর কাছে। আমাদের কাজ হল চেষ্টা করে যাওয়া। জামায়াতের অন্যতম সফলতা হল, জামায়াত শয়তানের প্রোপাগান্ডাকে চ্যালেঞ্জ করে বর্তমান পৃথিবীতে ইসলামের আবশ্যকতা উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমান পৃথিবীতে ইসলামবিরোধীদের একটা বড় প্রোপাগান্ডা হল চৌদ্দশত বছর আগের ইসলামের বিধানগুলো এখন নাকি কার্যকর না। জামায়াতে ইসলামী এটা ইতিমধ্যে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ সকল সেক্টরে ইসলামী বিধান শুধু কার্যকর নয় বরং অত্যাবশ্যকীয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন। সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে রাখুন। আমিন।
আহমেদ আফগানির ব্লগ থেকে

সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭

আমি জামায়াতে ইসলামী না করেও কেন তাদের প্রতি মুগ্ধ: অধ্যাপক আনিসুর রহমান

বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতিতে সবচেয়ে দ্রুত জনপ্রিয় দলে পরিনত হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী!কিন্তু কেন? ভার্সিটিতে যান,শিবিরের সহযোগিতা পাবেন।ইসলামী ব্যাংকে যান আপনাকে তারা পরিপূর্ণ হেল্প করবে। রাস্তায় বিপদে পড়ুন তারা আপনাকে উদ্ধার করবে। আপনার প্রিয়জনের মূমুর্ষ অবস্থায় তারা রক্ত দেবে।বন্যার্তদের তারা ত্রাণ দেবে। যেকোন মানবিক ইস্যু নিয়ে তারা রাজপথ মাতাবে।
শুধু আপনার কথাগুলি তাদের বলেই দেখুন।কখনো তার বিনিময়ে অর্থ নেবেনা। শুধু আপনাকে আল্লাহর রাস্তার দাওয়াত দিয়ে যাবে। কিন্তু তারা রাজাকার, তারা সন্ত্রাসী। বাংলাদেশে যত অপকর্ম হয় সবকিছুর নাটের গুরু তারাই।এই কথাগুলো তাদেরই শুনতে হবে।যতক্ষণ আপনি সত্যের সন্ধান না করবেন। সবাই ভাল করেই জানেন, কেন প্রগতিশীলরা জামায়াতকে অপছন্দ করে? জামায়াত এককভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় গেলে মাত্র ৫ বছরে দেশ থেকে দূর্নীতি, অশ্লীলতা ,ভেদাভেদ ইত্যাদি বিতাড়িত হবে।
কিন্তু আমাদের শত্রু প্রতিবেশী রাষ্ট্রটি এটা হতে দেবে না।তারা চায় তাদের চারপাশের দেশগুলোতে সবসময় গন্ডগোল লেগে থাকুক, আর মুরব্বীয়ানা দেখিয়ে তারা তার ফায়দা নেবে।আপনি আপনার এলাকার জামায়াত কর্মীকে কখনো অন্যায় করতে পেয়েছেন? কেন আপনি প্রচার যন্ত্রে বিভ্রান্ত হয়ে তাদেরকে খারাপ বলে থাকেন? আপনার পরিবারে যা কিছু হোক না কেন যৌথ পরিবারটি ভেঙ্গে যেতে দিতে আপনার মন চাইবে না।আপনার প্রতিবেশী কিন্তু ভাঙ্গনে ইন্ধন যোগাবে। আপনার ঘরের একজন সদস্যকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে সে এটা করবে।হয়তো পরবর্তীতে আপনি এটা অনুধাবন করতে পারবেন।
ভারত ঠিক একই কাজটি করছে ৭১’এ।আর তখনকার দেশপ্রেমিক জামায়াতকে এখন বহন করতে হচ্ছে রাজাকার উপাধী! আপনার নিজের ব্যস্ততায় আপনি দল হিসেবে জামায়াতের ভাল কর্মকান্ডের খোজঁ নেন না।কিন্তু না বুঝেই অপবাদ ঠিকই দেন,এটা কি হুজুগে হলোনা? বেশকিছুদিন আগে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে ছাত্রশিবির আন্দোলন করেছে। শিক্ষা খাতে ভ্যাট বাতিলের জন্যে সে আন্দোলন। আপনার মূল্যায়ন কি? আপনার পছন্দের সংগঠনটি কি বন্যার্তদের পাশে দাড়িয়েছে? মানুষকে অস্বাভাবিকভাবে যে হত্যা করা হচ্ছে, কে তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে? এমন অনেক না বলা উত্তম কাজের জন্যে আপনি কি কখনো জামাত শিবিরকে বাহবা দিয়েছেন? অথচ, যেই অপবাদটিকে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আপনার এত ক্রোধ, তা শুধুমাত্র একটি প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই না আন্তর্জাতিক আদালত নয়, আপনার বিবেকের আদালতে বিচার করুন!!  Curtesy Telegraph 

রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৭

ছাপাখানা খুলে দিন - মাহমুদুর রহমান

দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রায় পাঁচ বছর ধরে পত্রিকাটি বন্ধ করে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট আমাদের পক্ষে রুল জারি করলেও রুলের নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমারদেশ প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। এর ফলে পত্রিকার পাঁচশতাধিক সাংবাদিক কর্মচারী চাকরিহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পত্রিকা পরিচালনা এবং সম্পাদনা ব্যতিত আমার অন্য কোন পেশা নেই।
শুক্রবার, নভেম্বর ২৪, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি পত্রিকার সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, সিনিয়র সহকারী সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, নগর সম্পাদক এম আবদুল্লাহ, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ সহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এবং পত্রিকার সাংবাদ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ‘ফ্রি, ফেয়ার এন্ড ফাংশনাল জুডিশিয়ারি’ না থাকলেও অনন্যোপায় হয়ে আমরা আদালতের কাছেই গেছি। রিট দায়ের করেছি। আদালতকে বলেছি ছাপাখানায় তালা দিয়ে রাখার কোন এখতিয়ার পুলিশের নেই। পাঁচ বছর ধরে যে মামলাটি চার্জশিট দেয়া হয়নি, সেই মামলাকে উপলক্ষ করে আমারদেশের মত একটি অতি জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক এভাবে বন্ধ করে রাখা যায় না। একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন স্থাবর সম্পত্তি কোন আইনে পুলিশ এভাবে বছরের পর বছর দখল করে রাখতে পারে না। কেন আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানার তালা খুলে মালিককে তা বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমারদেশ পত্রিকার যে ঋণ বর্তমান মালিক পক্ষ কোন দিন গ্রহণ করেননি, সেই ঋণের দাবিতে একটি বেসরকারী ব্যাংককে দিয়ে ক্ষমতাসীন মহল বেআইনিভাবে আমাদের বন্ধ ছাপাখানা নিলামে উঠানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আদালত কত বিষয়ে রুল ও আদেশ দিচ্ছেন। কিন্তু আমারদেশ এর রুলটি নিষ্পত্তি করে কেন বিপুল সাংবাদিক কর্মচারীর রুটি-রুজির সুযোগ করে দিচ্ছে না বুঝে আসে না।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল ক্ষমতাসীন সরকার কর্তৃক দ্বিতীয় দফায় পত্রিকাটি আক্রমণের শিকার হয়। আজ দীর্ঘ চার বছর সাতমাস ধরে পত্রিকাটি বন্ধ। আমাকে আমারদেশ অফিস থেকে গ্রেপ্তার করে দ্বিতীয় দফায় প্রায় চার বছর বন্দী করে রাখা হয় এবং রিমান্ডে নির্যাতন করা হয়। স্কাইপ কেলেঙ্কারি ফাঁস করার অভিযোগে আমারদেশ এর মাথার উপর ৫৭ ধারার মামলার খড়গ প্রায় পাঁচ বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখার মাধ্যমে বেআইনিভাবে পত্রিকার ছাপাখানা তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। অথচ একই সংবাদ ছাপার কারণে লন্ডনের ইকনোমিস্ট পত্রিকার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয় এবং পরে ওই মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। তিনি বলেন, আমারদেশ সত্য রিপোর্ট এবং জাতীয় স্বার্থের বিষয়গুলো তুলে ধরার কারণেই সরকারের প্রতিহিংসার স্বীকার হয়েছে। আমরা আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছি এবং দেশবাসীর কাছে তাদের প্রিয় পত্রিকা প্রকাশে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি মহামান্য হাইকোর্ট আমারদেশ এর রুল নিষ্পত্তি করে অবিলম্বে পত্রিকাটি প্রকাশের সুযোগ করে দেবেন।

আগামী নির্বাচনের আগে অনুগত রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান ও প্রধান বিচারপতি খুজছেন শেখ হাসিনা -অলিউল্লাহ নোমান

আগামী ২০১৮ সালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য। জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। এতে আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারীতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এদিকে আগামী এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি হিসাবে অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহন করেছিলেন। সুতরাং আগামী ২৪ এপ্রিলে তাঁর মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে। এর আগেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে আগামী জুনে শেষ হবে বর্তমান সেনা প্রধান মেজর জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হকের মেয়াদ। ইতোমধ্যে বিতর্কিত পদত্যাগের কারনে প্রধান বিচারপতির পদটি শূন্য রয়েছে। এই পদটি চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দিয়ে। রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপত ও সেনাপ্রধান পদ পূরনে খুবই সতর্কতার সাথে এগুচ্ছে সরকার। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দিয়ে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের নজির বাংলাদেশে নেই। এরশাদ যামানায় একবার সর্বোচ্চ ১২দিন এই পদে ভারপ্রাপ্ত ছিলেন। এছাড়া আর কখনো এই পদে এত দীর্ঘ সময় ভারপ্রাপ্ত থাকার উদাহরণ নেই। সরকার নিজের বিশ্বস্থতায় উত্তীর্ণ একজনকে এ পদে বসানোর লক্ষ্যে কাল ক্ষেপন করছেন। কারন নির্বাচনকালীন ও পরবর্তিতে কোন সঙ্কটের সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি ও সেনা প্রধানের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিতে চায় সরকার। ২০০৭ সালে প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের মত একজন দুর্বল চিত্তের রাষ্ট্রপতির বদৌলতেই অতি সহজে জরুরী আইন জারি করা সম্ভব হয়েছিল। এই জরুরী আইনের আওতায় বিএনপিকে তছনছ করা হয়। তখন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমদ সবকিছুতেই সায় দিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ এরকম দুর্বল চিত্তের অনুগত কাউকে রাষ্ট্রপতি বানাতে চায় না। যে কোন রকমের রাজনৈতিক সঙ্কটে যাতে তাদের সহায়ক ভুমিকা পালন করেন এমন একজনকেই রাষ্ট্রপতি বানাবে আওয়ামী লীগ।

কে হতে পারেন পরবর্তি রাষ্ট্রপতি? এই প্রশ্ন বিশ্লেষকদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু শেখ হাসিনা হয়ত: তাঁর নিশানা ঠিক করে রেখেছেন। শেখ হাসিনাই জানেন আগামী বছরের এপ্রিলে কাকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে মনোনয়ন ঘোষণা করবেন। এই পদটিতে বসার জন্য সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ মরিয়া দীর্ঘদিন থেকে। পুনরায় রাষ্ট্রপতি পদে বসে স্বৈরশাক তকমাটি দূর করতে চান তিনি। বিভিন্ন জোটে যোগদানের সময় রাষ্ট্রপতি পদটি থাকত তাঁর অন্যতম শর্ত।

জাতীয় নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতির ভুমিকা ও ক্ষমতা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা বাড়িয়ে বিরোধী জোটের সাথে সমঝোতার কথা শোনা যায়। যদিও সবই এখনো বাতাসি আলোচনা। কোনটারই জোড়ালো কোন ভিত্তি নেই। একটি বিষয় জোর দিয়েই বলা যায় শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে থেকেই নির্বাচন দেবেন। যদি বিরোধী জোট জোড়ালো আন্দোলনের মাধ্যমে বেশি চাপ সৃস্টি করে তখন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর কথা উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেই রাষ্ট্রপতির হাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা অর্পনের প্রস্তাব উঠতে পারে বিভিন্ন মহল থেকে। তাই রাষ্ট্রপতি বানানোর আগে দশবার চিন্তা করবেন শেখ হাসিনা। কারন শেখ হাসিনা যাকে চাইবেন তিনিই রাষ্ট্রপতি হবেন। এতে কোন সন্দেহ নাই। জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরীষ্ট দলের নেতা তিনি। জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরীষ্ট ভোটেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

১০৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা বিচার বিভাগ থেকে রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন। সবাইকে তাক লাগিয়ে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদকে তখণ রাষ্ট্রপতি বানানো হয়েছিল। বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ ছিলেন অত্যন্ত নীতিবান মানুষ। পরবর্তিতে শেখ হাসিনাকে মাশুল দিতে হয়েছে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনা শুরু হলে দেখা যায় ভরাডুবি হচ্ছে আওয়ামী লীগের। তখন রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করা হয়েছিল সেই ফলাফল ঘোষণা বন্ধ রাখতে। এমনকি নির্বাচন বাতিল করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদকে। এনিয়ে পরবর্তিতে কথাও উঠেছিল। শাহাবুদ্দিন আহমদ দৃঢ় অবস্থানে থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। যদিও এনিয়ে টেলিফোনে অনেক কথা শুনতে হয়েছিল শাহাবুদ্দিন আহমদকে। নীতি ও ভীতির কারনে শাহাবুদ্দিন আহমদ পরবর্তিতে আর মুখ খুলেননি এনিয়ে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনার অনুগত ও পরিক্ষীত আওয়ামী লীগার বিচারপতি (?) খায়রুল হক রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের ভয় শেখ হাসিনার মাথা থেকে সরে গেলে খায়রুল হকই রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। খায়রুল হকও পদটি পাওয়ার জন্য নানা কৌশলে তদবীর করছেন। তিনি তদবীরে এও বলছেন কোন কারনে সরকার পরিবর্তন হলে তাঁকেও কঠিন মাশুল গুনতে হবে। এজন্য রাষ্ট্রপতি পদটি হচ্ছে তাঁর নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে উপযোগী জায়গা। এই পদে না বসতে পারলে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশ ত্যাগ করা লাগবে। এজন্য যে কোন মূল্যে রাষ্ট্রপতি পদে বসতে চান তিনি। মুন সিনেমা হলের মামলায় পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করা, প্রধান বিচারপতি পদ থেকে অবসরের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা হচ্ছে খায়রুল হকের অবদান। এর বাইরেও বিচারপতি পদে শপথ নিয়েই প্রথম দিবস থেকে বসেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার আপিল শুনানীতে। পরপর চারটি বেঞ্চ আপিল শুনানী করতে বিব্রত প্রকাশ করেছিল তখন। এক পর্যায়ে হাইকোর্ট বিভাগের কর্মরত বিচারপতি মো: রুহুল আমিন শুনানী করতে সম্মত হন। তাঁর সাথে জুনিয়র বিচারপতি হিসাবে বসতে রাজি হয়েছিলেন খায়রুল হক। তাই বিচারপতি পদে শপথ নেওয়ার দিন থেকেই রুহুল আমিনের সাথে দ্বৈবেঞ্চে বসানো হয়। সেই দিন থেকেই শুরু হয় শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার আপিল শুনানী। শুনানী শেষে রুহুল আমিন ৫জন আসামীকে বেকসুর খালাস দেন। কিন্তু খায়রুল হক নি¤œআদালতে দন্ডপ্রাপ্ত সকলের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন। এর পর থেকে নানা বিষয়ে রাজনৈতিক চিন্তা ও আদর্শে প্রশ্ন জড়িত যে কোন ইস্যুতে আওয়ামী লীগের পক্ষেই রায় দিয়ে গেছেন খায়রুল হক। সেই অবদানের প্রতিদান হিসাবে তিনি এখন রাষ্ট্রপতি পদটি দাবী করেছেন শেখ হাসিনার কাছে।
এর বাইরে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সৈয়দ আশরাফের নাম রাষ্ট্রপতি পদের জন্য শোনা যায়।

কে হচ্ছেন সেনা প্রধান:

বাতাসে নানা গুজব ভাসছে। যে কোন সময় বর্তমান সেনা প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। এমন কথা এখন চাউড় রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। বর্তমান সেনা প্রধান মেজর জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক ২০১৫ সালের ২৫ জুন দায়িত্ব গ্রহন করেছিলেন। আগামী জুনে তাঁর চাকুরির মেয়াদ শেষ হবে। এর আগেই তাঁকে সরিয়ে হচ্ছে এমনটাই এখন শোনা যায়। সরিয়ে তাঁকে রাষ্ট্রদূত বা অন্য কোন পদে নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে তাঁর সাথে সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে সেইটাই বলাবলি হচ্ছে চারদিকে। বর্তমান সেনাপ্রধানকে সরিয়ে শেখ হাসিনা ও ইন্ডিয়ার অতিবিশ্বস্থ একজনকে বসানোর চিন্তা করা হচ্ছে। সেই দিক থেকে সেনা প্রধান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ঢাকার ৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর ভাই লে. জেনারেল আজিজ আহমদ। বর্তমানে তিনি সেনা বাহিনীর আর্টডক আর্মি ট্রেইনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড)-এর কমান্ডিং অফিসার (জিওসি)।

লে.জেনারেল আজিজ আহমদের বড় ভাই আনিস আহমদে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের মিজান কমিশনারের ছোট ভাই কামাল হত্যা মামলার আসামী। নি¤œ আদালতের বিচারের ফাঁসির দন্ডাদেশ হয়েছে। পলাতক হিসাবে মালয়েশিয়ায় জীবন যাপন যাপন করছেন। আরেক ভাই হারিছ আহমদ। চার দলীয় জোট সরকারের আমলে প্রকাশিত ১৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাভু একজন হলেন হারিছ আহমদ। একটি হত্যা মামলায় তাঁরও ফাঁসির আদেশ হয়। বর্তমানে পলাতক জীবন যাপন করছেন। তিনিও মালয়েশিয়ায় রয়েছেন বলে জানা যায়। আরেক ভাই তোফায়েল আহমদ জোসেফ। বর্তমানে কারাগারে আটক। একটি হত্যা মামলায় তাঁরও ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। হাইকোর্ট ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। পরবর্তিতে আপিল বিভাগ দন্ড কমিয়ে তাঁকে যাবজ্জীবন করা হয়। লে. জেনারেল আজিজ আহমদ ছাড়া বাকী ৩ ভাই হত্যা মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামী। তিনি বিজিবির মহাপরিচালক হিসাবে থাকার সময় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন সরকার বিরোধী আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনার বিশ্বস্থতার পরিচয় দেন। এছাড়া সীমান্ত রক্ষ্মিবাহিনীকে ইন্ডিয়ার অনুগত হিসাবে তৈরি করতে তাঁর রয়েছে বিশেষ ভুমিকা। এখানেও তিনি ইন্ডিয়ার বিশ্বস্থতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মনে করা হচ্ছে।

সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে লে. জেনারেল আজি আহমদ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন ৩ বছর। তখন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার কথা শোনা যায়। তারপরও মনে করা হয় আজি আহমদ শেখ হাসিনার অনুগত্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মনে করা হয়। পারিবারের ৩ ভাই শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকাভুক্ত এবং সর্বোচ্চ দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হওয়ায় আজিজ আহমদের বিষয়ে নানা আপত্তিও শোনা যায়।

কে হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি
গত ২ অক্টোবর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহাব মিঞা। দীর্ঘ সময়ে ভারপ্রাপ্ত হিসাবে দায়িত্ব পালন করে তিনি রেকর্ড সৃস্টি করছেন। সংবিধান অনুযায়ী যদিও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের এখতিয়ার হচ্ছে রাষ্ট্রপতির। কিন্ত বর্তমান বাস্তবতায় দখলদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার বাইরে কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই। শেখ হাসিনা যাকে চাইবেন রাষ্ট্রপতির ইচ্ছার বহি:প্রকাশ সেটাই ঘটবে। মোষ্ট সিনিয়র হিসাবে বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিঞাই প্রধান বিচারপতি হিসাবে মনোনয়ন পাওয়ার কথা। তিনি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ লাভ করেছিলেন। এর আগে আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের নির্বাচনে সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে তাঁকে আপিল বিভাগে নিয়োগ দেন। সুতরাং তিনিও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিবারেরই পরীক্ষিত সদস্য। দ্বিতীয় সিনিয়র হিসাবে রয়েছেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনিও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আমলে হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত। আপিল বিভাগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকে নিয়োগ দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত শেষ হাসিনা যাকে চাইবেন তিনিই হবেন প্রধান বিচারপতি।

শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭

আপসহীন সৈনিক আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ -অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ বার্তাঃ জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ভাইয়ের সাথে দীর্ঘদিন ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্ব পালন করার সুযোগ হয়েছিল। ফলে তাকে কাছ থেকে দেখার ও একসাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের একজন মর্দে মুজাহিদ। অন্যায়ের ব্যাপারে ছিলেন আপসহীন এক সৈনিক। ভয়-ভীতি লোভ-লালসা থেকে অনেকটাই মুক্ত ছিলেন তিনি।

জনাব আলী আহসান মুজাহিদ পর্যায়ক্রমে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী আমীর, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর এসব দায়িত্ব পালন কালে তাকে খুবই কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। খুব সংক্ষেপে তাকে যেভাবে পেয়েছি।

তিনি খুবই সাদাসিধা জীবনযাপন করেছেন। সাধারণ খাবার-দাবার, সাধারণ পোশাকই পছন্দ করতেন। খাবারের সাথে কাঁচামরিচ, আচার-চাটনি দিয়ে বেশ মজা করে চিবিয়ে সময় ধরে খেতেন। গাছগাছড়া ভেষজ দ্রব্যাদির গুণাগুণ সম্পর্কে যথেষ্ট অভিজ্ঞ ছিলেন এবং তা আমল করতেন।

সাংগঠনিক নিয়মশৃঙ্খলার ব্যাপারে খুবই শক্ত ও কঠোরতা মেনে চলতেন । যে কোনো জটিল ও তুলনামূলক শক্ত ও কঠিন বিষয়গুলো মীমাংসার জন্য তাকেই পাঠানো হতো এবং তিনি তা করতে পারতেন।

তিনি খুবই আমানতদার ছিলেন। সংগঠনের বায়তুলমালকে খুব ভালোভাবে হেফাজত করতেন। সাংগঠনিক জীবনে ও সরকারের মন্ত্রণালয়ে থাকাকালীন সমানভাবে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করে গেছেন।

তিনি খুব সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। সত্যিকারভাবেই শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন এমনই একজন ভয়ডরহীন সাহসী মানুষ। জল্লাদ যখন তাকে জমটুপি পরাতে চাইলেন, তিনি তখন জল্লাদকে বললেন, আমাকে জমটুপি পরানোর প্রয়োজন নাই, জমটুপি তো তাদের জন্য, যারা মৃত্যুভয়ে ভীত। আমার মাঝে মৃত্যুকে নিয়ে কোনো ভীতি নেই। আমি স্থির এবং স্বাভাবিক আছি। শহীদি মৃত্যু আমার আরাধ্য ছিল, আমার লক্ষ্য ছিল। আমি তো সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।
ইনসাফ, নিরপেক্ষতা ও সততাকে তিনি জীবনের সকল ক্ষেত্রে পালন করার চেষ্টা করে গেছেন। দলীয় লোকের ক্ষেত্রেও তিনি একই নীতি অনুসরণ করে গেছেন। নির্লোভ ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সদা সতর্ক থাকতেন।

আলী আহসান মুজাহিদ ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার পশ্চিম খাবাসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মাওলানা আবদুল আলী ছিলেন বৃহত্তর ফরিদপুরের প্রখ্যাত আলেম ও কুরআনের মুফাসসির। পিতার কাছেই মুজাহিদের শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি। প্রথমে তিনি ফরিদপুরের ময়েজউদ্দিন হাইস্কুলে ভর্তি হন।

ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করে ১৯৬৪ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। সে সময় ১৯৬৫ সালে স্বৈরশাসনবিরোধী ছাত্ররাজনীতি করার কারণে দু’বার কারাবরণ করেন তিনি। এরপর আলী আহসান মুজাহিদ ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন ও ইসলামী ছাত্রসংঘের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

প্রথমে ঢাকা জেলা ছাত্রসংঘের সভাপতি ও পরে পূর্ব-পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালে মুজাহিদকে পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। মুজাহিদের পিতা মাওলানা আবদুল আলী জামায়াতে ইসলামী থেকে ১৯৬২ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। তাদের আদি বাড়ি ছিল মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে। পদ্মার ভাঙনে হরিরামপুরে তাদের গ্রামটি বিলীন হলে তারা ফরিদপুরে যান।

মুজাহিদ ভাইয়ের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবির বলেন, আলী আহসান মুজাহিদ এই দরিদ্র দেশের একজন মন্ত্রী হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। জীবনের সকল ক্ষেত্রেই তিনি মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। এমনকি সরকারের মন্ত্রী হওয়ার পরও তিনি তার সেই মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। দরিদ্র এই দেশে যেখানে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে অধিকাংশ ব্যক্তিই অনিয়ম আর দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন, সেখানে মুজাহিদের বিরুদ্ধে বিরোধীপক্ষ থেকে সামান্যতমও অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির কোনো অভিযোগ কেউ তুলতে পারেননি।

তার ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর ইবনে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের লিখার মাধ্যমে ও শহীদের বক্তৃতায় জীবনের মজবুত দিকগুলো ফুটে উঠেছে মনে করে তা এখানে উল্লেখ করা হলো।
বর্তমানে পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের রজনীগন্ধা সেলের একেবারে ডান কোনায় ৮নং সেলে তিনি, শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা ও শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সেই ঘরটিতেই ছিলেন।

তিনি ছোট রুমের মাটিতে জায়নামাজের ওপর শুয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। মাথার নিচে কোনো বালিশও ছিল না।
পরিবারের সদস্যদের দেখে বললেন, ও তোমরা এসেছ। আলহামদুলিল্লাহ জেল কর্তৃপক্ষ আমাকে তো কিছু জানায়নি। তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ। আল্লাহর ওপর কত ভরসা থাকলে সবকিছুকেই স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া যায়।

সকলের সাথে হাত মেলালেন, আলাদা আলাদা করে প্রত্যেককে কাছে ডেকে তার সাথে হাত মিলাতে শুরু করলেন। একে একে সবাই শিকের ভেতর দিয়ে হাত মেলালেন। প্রত্যেকের খোঁজখবর নিলেন। শেষ করে বললেন, কারও সাথে মুসাফাহ করা বাদ যায়নি তো? সকলের হকের ওপর খিয়াল রেখেছেন।

একটা আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হতে যাচ্ছিল। কিন্তু তিনি পরিবেশ সামলিয়ে নিয়ে বললেন, কান্নাকাটির দরকার নেই। আমি কিছু কথা বলবো।
মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তেও তিনি তেজদীপ্ত বলিষ্ঠ কণ্ঠে কথা বলতে পেরেছেন। তিনি অত্যন্ত স্বভাবসুলভ কণ্ঠে, মাথা উঁচু করে অনেকটা ভাষণের ভঙ্গিমায় শুরু করলেন, নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, আসসালাতু আসসালামু আলা সাইয়্যেদুল মুরসালীন। ওয়ালা আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমাইন।

আম্মা বা’আদ বলে কথা শুরু করলেন আল্লাহ তা’আলার কাছে শুকরিয়া পেশ করে। বিপদের মধ্যেও জেল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিলেন যে তারা এই সাক্ষাতের সুযোগ করে দিয়েছেন।

হায়াত-মউতের মালিক আল্লাহ, সরকারের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না- আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য, আমার পরিবার, সংগঠন ও দেশবাসীর কাছে কাপুরুষ প্রমাণ করার জন্য দিনভর রাষ্ট্রীয়ভাবে এই ক্ষমা চাওয়া মিথ্যাচারের নাটক করা হয়েছে। এই জালিম সরকারের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি নির্দোষ, নির্দোষ এবং নির্দোষ। আজ তারা অন্যায়ভাবে হত্যা করতে যাচ্ছে।

তোমরা শুনে রাখো, তোমরা চলে যাওয়ার পর আজ যদি আমার ফাঁসি কার্যকর করা হয়, তাহলে তা হবে ঠান্ডা মাথায় একজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা। তোমরা প্রতিহিংসাপরায়ণ হবে না। তোমাদের কিছুই করতে হবে না। আজ আমার মৃত্যুদ- কার্যকর করার পর এই অন্যায় বিচারিক প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিচার আল্লাহর দরবারে শুরু হয়ে যাবে, বিচার শুরু হয়ে গেছে।

আল্লাহর রহমতে আমি পবিত্র মক্কা নগরীতে ওমরা করেছি অসংখ্যবার। আর হজ করেছি ৭ থেকে ৮ বার। আমার বাবার কবর পবিত্র নগরী মক্কায় জান্নাতুল মাওয়াতে। সেখানে তার কবর উম্মুল মুমেনীন খাদিজার (রা.) পাশে, বেশ কয়েকজন সাহাবীর কবর আছে আলাদা ঘেরাও করা, তার ঠিক পাশে। এখানে অনেক নবী-রাসূলের কবরও আছে। আমি এই পর্যন্ত যতবার ওমরা করেছি, যাদেরই সাথে নিয়েছি তাদের প্রত্যেককেই সেই কবর দেখানোর চেষ্টা করেছি।

সকলকে অসিয়ত করেন- তোমরা নামাজের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস থাকবা।
তোমরা সব সময় হালাল রুজির ওপর থাকবা। কষ্ট হলেও হালাল রুজির ওপর থাকবা। আমি ৫ বছর মন্ত্রী ছিলাম, ফুল ক্যাবিনেট মন্ত্রী ছিলাম। আল্লাহর রহমতে, আল্লাহর রহমতে, আল্লাহর রহমতে আমি সেখানে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে, পরিশ্রম করে আমার দায়িত্ব পালন করেছি। কেউ আমার ব্যাপারে বলতে পারবে না যে, আমি অন্যায় করেছি। অনেক দুর্নীতির মধ্যে থেকেও আমার এই পেটে (নিজের শরীরের দিকে ইঙ্গিত করে) এক টাকার হারামও যায়নি। তোমরাও হালাল পথে থাকবা। তাতে একটু কষ্ট হলেও আল্লাহ বরকত দেবেন।

আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে মিলেমিশে চলবে। হাদীসে আছে, আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রতিবেশীর হক আদায় করবে। আমরা ভাইদের মধ্যে কোনো সম্পত্তি নিয়ে কখনো ঝামেলা হয়নি। তোমরাও মিলেমিশে থাকবে। এসব নিয়ে কোনো সমস্যা করবা না। শান্তির জন্য কাউকে যদি এক হাত ছাড়তেও হয়, তা-ও কোনো ঝামেলা করবে না, মেনে নেবে।

বেশি বেশি করে রাসূল (সা.)-এর ও সাহাবীদের জীবনী পড়বে। আমি জানি, তোমরা পড়েছো, কিন্তু তা-ও বার বার পড়বে। বিশেষ করে পয়গম্বর-এ-মুহাম্মদী, মানবতার বন্ধু হজরত মুহাম্মদ (সা.), সীরাতে সারওয়ারে আলম, সীরাতুন্নবী, সীরাতে ইবনে হিশাম, রাসূলুল্লাহর বিপ্লবী জীবন, সাহাবীদের জীবনী।

আমি আমার সন্তানদের ওপর সন্তুষ্ট। তোমাদের ভূমিকার ব্যাপারে সন্তুষ্ট।
আইনজীবীদের আমার ধন্যবাদ ও দোয়া বলবে। তাঁরা অনেক পরিশ্রম করেছেন। তাদের ভূমিকার ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট। আইনজীবীরা যেভাবে পরিশ্রম করেছেন, অবিশ্বাস্য। তারা সাহসিকতার সাথে এই আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন।

জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবির দুটি বড় নেয়ামতÑ আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মতো এত বড় নেয়ামত দুনিয়াতে আর একটিও নেই। আমার জানামতে, এই সংগঠন দুটি পৃথিবীর মধ্যে সেরা সংগঠন। এই সংগঠনের ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট। গত কয়েক বছরে অনেক নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন, হাজার হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছেন, আমার মতো জেলখানায় আছেন কয়েক হাজার মানুষ। বিশেষ করে ইসলামী ছাত্রশিবির বিগত ৫ বছরে যে ভূমিকা রেখেছে, যে সেক্রিফাইস করেছে, তা অতুলনীয়।

আমার শাহাদাত এই দেশে ইসলামী আন্দোলনকে সহস্রগুণ বেগবান করবে এবং এর মাধ্যমে জাতীয় জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ।

তোমাদের আম্মাকে দেখেশুনে রাখবে। সে আমার চেয়ে ভালো মুসলমান, ভালো মনের মানুষ। এই ব্যাপারে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি। তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে তার সম্মানীত শ্বশুর-শাশুড়িকে স্মরণ করেন। শাশুড়ি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, শাশুড়ি তো মায়ের মতোই। আপনি আমাকে যেভাবে স্নেহ করেছেন, তার কোনো তুলনা হয় না।

আমার জানামতে, শহীদের মৃত্যু কষ্টের হয় না। তোমরা দোয়া করবে, যাতে আমার মৃত্যু আসানের সাথে হয়। আমাকে যেন আল্লাহর ফেরেশতারা পাহারা দিয়ে নিয়ে যান।
তিনি পুত্রবধূসহ সকলকে উদ্দেশ করে বলেন, আমি তোমাদের প্রতি ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও।
মোনাজাতের মধ্যে তিনি জালিমের ধ্বংস চেয়েছেন। আল্লাহ যেন তার রহমতের চাদর দিয়ে তার পরিবারকে ঢেকে রাখেন।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ- জেল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের সাথে আমার কোনো ভুল আচরণ হলে আপনারা আমায় মাফ করে দেবেন। নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার সেবকদের তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন এবং তার নিজের পিসির টাকাগুলো সেবকদের প্রয়োজন মাফিক বণ্টন করে দেন এবং সেই ব্যাপারে জেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

দুআ ও সালাম- নিজামী ভাই ও সাঈদী ভাইসহ আরও যারা আছেন, সবাইকে তিনি সালাম পৌঁছে দিতে বলেন। দেশবাসীকে তিনি সালাম দেন এবং সকলের কাছে দোয়া চান। সব শেষে তিনি তার শাহাদাত কবুলিয়াতের জন্য দোয়া করেন। এরপর তিনি সকলের সাথে একে একে হাত মিলিয়ে বিদায় জানান।”

সাধারণ মানুষের অনুভূতি ফুটে উঠেছে সংগ্রাম রিপোর্টার শহীদুল ইসলামের কলম থেকে, তা থেকে কিছু এখানে পেশ করা হলো-

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ একজন সত্যিকার অর্থেই মর্দে মুজাহিদ, তিনি আল্লাহর রাহে নিবেদিত একজন পরীক্ষিত সৈনিক। তিনি এই জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য সারাটি জীবন ছিলেন নিবেদিত। এটাই তার অপরাধ! তাই জীবন দিয়ে শিখিয়ে গেলেন কীভাবে হাসতে হাসতে, কলেমা পড়তে পড়তে দৃঢ়পদে ফাঁসির মঞ্চে এগিয়ে যেতে হয়।

ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুরে নিজের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা ও মসজিদসংলগ্ন আবদুল আলী ফাউন্ডেশনের জমিতে দাফন সম্পন্ন হয় শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের। একইদিন এক স্থানেই ৫টি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো সারাদিন সর্বস্তরের মানুষ এসেছেন প্রিয় নেতার কবর জিয়ারত করতে। অঝোরে কেঁদেছে মানুষ এই প্রিয় মানুষটির জন্য। আল্লাহ যেন তাঁর শাহাদাত কবুল করে নেন, আর তাঁর প্রতি ফোঁটা রক্ত যেন বাংলার জমিনকে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজে লাগে।

অশীতিপর এক বৃদ্ধ অঝোরে কেঁদেছেন মুজাহিদের রুহের মাগফিরাতের জন্য। তার চোখের পানি মুখ থেকে গড়িয়ে শ্বেতশুভ্র দাড়ি ভিজে টপ টপ করে পড়ছিল পাঞ্জাবিতে। তিনি কোনোভাবেই কান্না থামাতে পারছিলেন না। কথা বলছিলেন ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে। বলেন, বাবা মুজাহিদকে কোলেপিঠে মানুষ করেছি, আমাদের সামনেই বড় হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই সে ছিল বিনয়ী। সবসময় মুরব্বিদের সম্মান করতো। তার কথা- যে মানুষটি কখনো কাউকে কষ্ট দেয়নি, যে মন্ত্রী থেকেই কোনো দুর্নীতির আশ্রয় নেয়নি তাঁকেই কিনা ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হলো! এ কেমন বিচার?

পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারায় ১৫৩-১৫৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! সবর ও নামাজের দ্বারা সাহায্য গ্রহণ করো, আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন। আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না। এই ধরনের লোকেরা আসলে জীবিত। কিন্তু তার সম্পর্কে তোমাদের কোনো চেতনা থাকে না। আর নিশ্চয়ই আমি ভীতি, অনাহার, প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানি হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো। এ অবস্থায় যারা সবর করে এবং যখনই কোনো বিপদ আসে বলে আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে ।” গায়েবানা জানাজায় আসা মানুষের অনেকেই পবিত্র কুরআনের এই বাণীর ভিত্তিতেই বলেছেন, মুজাহিদের মৃত্যু হয়নি। তিনি আল্লাহর কাছে বিরাট মর্যাদা লাভ করেছেন। তার রেখে যাওয়া আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এই হত্যার বদলা নিতে হবে। এই শপথেই বলিয়ান হয়ে তারা বিদায় নিয়েছেন প্রিয় নেতার কবর জিয়ারত শেষে।

পরিবারের সাথে সাক্ষাতে শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ দৃঢ়ভাবেই বলেছিলেন, ফাঁসি দেয়া হোক আর যাই হোক, বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন চলবে এবং এদেশে ইসলামী আন্দোলন বিজয়ী হবেই ইনশাআল্লাহ। আর শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা বলেছিলেন, আমার রক্তকে কর্মীরা যেন দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে লাগায়।

শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও তার সঙ্গী শহীদগণ শহীদি মর্যাদা লাভের মাধ্যমে মূলত এই জমিনে ইসলামের বিজয়ের বীজ বপন করে গেছেন। আজ সে বীজকে বিকশিত করার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। মহান রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে তাওফীক কামনা করছি শহীদদের প্রকৃত উত্তরসূরি হিসেবে আমরা যেন ইসলামী আন্দোলনকে বিজয়ী করতে ও ইনসাফভিত্তিক একটি সমাজ কায়েম করতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের প্রিয় ভাই আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ সকল শহীদের শাহাদাত কবুল করুন- আমীন, সুম্মা আমীন।

লেখক : ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত ও সাবেক এমপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

উৎস: সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, ১৮ নভেম্বর ২০১৬ইং

জনাব মোহাম্মাদ হোসাইন খানের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ


বাংলাদেশ বার্তাঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রবীণ রুকন কুমিল্লা উত্তর সাংগঠনিক জেলার দেবীদ্বার উপজেলার মিঠাপুকুরিয়া গ্রাম নিবাসী জনাব মোহাম্মাদ হোসাইন খান ৮০ বছর বয়সে গত ২৩ নভেম্বর দুপুর সোয়া ১২টায় বার্ধক্যজনিত রোগে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি স্ত্রী, ৫ পুত্র ও ১ কন্যাসহ বহু আত্মীয়-স্বজন রেখে গিয়েছেন। গত ২৩ নভেম্বর বাদ এশা নামাজে জানাজা শেষে মরহুমকে নিজ গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে।

শোকবাণী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রবীণ রুকন কুমিল্লা উত্তর সাংগঠনিক জেলার দেবীদ্বার উপজেলার মিঠাপুকুরিয়া গ্রাম নিবাসী জনাব মোহাম্মাদ হোসাইন খানের ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আজ ২৪ নভেম্বর ২০১৭ এক শোকবাণী প্রদান করেছেন।

শোকবাণীতে তিনি মরহুমের জীবনের সকল নেক আমল কবুল করে তাকে জান্নাতবাসী করার জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের কাছে দোয়া করেন এবং মরহুমের শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন।

বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৬ নভেম্বর সারা দেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা

বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেশের মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগণের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের শামিল

বাংলাদেশ বার্তাঃ আগামী ১লা ডিসেম্বর থেকে বিদ্যুতের মূল্য প্রতি ইউনিটের জন্য গড়ে ৩৫ পয়সা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ঘোষণার প্রতিবাদে এবং এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আজ ২৪ নভেম্বর প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অন্যায় ও অযৌক্তিক। এ সিদ্ধান্ত দেশের মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগণের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের শামিল।


ভোক্তা জনগণের মতামত উপেক্ষা করে সরকার ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের মূল্য গড়ে ৩৫ পয়সা বা গড়ে শতকরা ৫.০৩ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আগামী ১লা ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করার যে ঘোষণা দিয়েছে তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বর্তমান সরকারের আমলে এ পর্যন্ত মোট ৮বার বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানী তেলের দাম কমছে সেখানে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কোন যুক্তি নেই। মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করার জন্যই সরকার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ফলে সরকারের আয় বাড়বে ১৭০০ কোটি টাকা।

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের তীব্র কষাঘাতে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র জনগণের এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। তার উপর আবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিয়ে সরকার জনগণের উপর বোঝার উপর শাকের আটি চাপিয়ে দিয়েছে। বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর ফলে নিত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ও বাসা ভাড়া আরো বাড়বে এবং কৃষি ও শিল্প খাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। ফলে দেশের উৎপাদন ব্যাহত হবে।

বর্তমান সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার নয়। কাজেই এ সরকার জনগণের স্বার্থ, সুবিধা, অসুবিধা ও সুখ-দু:খের কথা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে না। সরকারের লক্ষ্য জনগণকে শোষণ করে জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে শক্তির জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকা। এ কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকারের নিকট থেকে জনগণের কোন কল্যাণ আশা করা যায় না।

অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির এ গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবীতে আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আগামী ২৬ নভেম্বর রোববার সারা দেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করছি।
ঘোষিত এ কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার জন্য আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সকল শাখার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং দল-মত নির্বিশেষে দেশবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।”

নির্বাচন কমিশন তো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের এতো ভয় কিসের?

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করা সম্ভব না হলে যে সুষ্ঠু নির্বচান করা সম্ভব নয় সে কথা নতুন করে বলার অপেক্ষ রাখে না। বিষয়টি তো নির্বাচন কমিশনও জানে। তাহলে তারা এবিষয়ে কাজ করছে না কেন? সব দলকে সমানভাবে নির্বাচনী কাজকর্ম, মিছিল-মিটিং করার সুরযাগ না দেয়া হলে কেন তারা বলছে না, এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টির কাজের ব্যত্যয় ঘটছে। কমিশন তো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তাদের এতো ভয় কিসের? তারা বলুক কোনো মন্ত্রী সরকারী প্রটোকল ব্যবহার করে সরকারী নিরাপত্তা নিয়ে সভা করে দলীয় কাজ করলে বা দলীয় মার্কায় জনসমর্থন চাইলে সে কাজটি বৈধ হবেনা এবং এ ব্যাপারে ওই মন্ত্রীকে চিঠি লিখে তো সতর্ক করতে পারেন। এক দল সরকারী প্রটোকল ও সরকারী নিরাপত্তা নিয়ে সরকারী খরচে দলীয় কর্মকান্ড চালাবে, আরেক দল দলীয় খরচেও তা না করতে পারলেকমিশিন কিভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করেছে দাবি করবে? আর এমন দাবি করলে তা কেউ মানবে কি?

ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতার, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭

ঘুরে এলাম পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম আশরাফ আল দীন

বাংলাদেশ বার্তাঃ কোলকাতার দমদম বিমানবন্দর থেকে আসামের শিলচরের উদ্দেশ্যে আমাদের বিমান আকাশে উড়াল দিলো জ্যৈষ্ঠের এক আলো ঝলমল সকালে। অল্প কিছু যাত্রী নিয়ে ছোট্ট একখানা বিমান! ভালই লাগছিল! এ যেন খেলনা বিমানে চড়ে খোকা-খুকুদের আকাশ-যাত্রা! আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে আকাশের প্রাঙ্গণটা অন্তহীনতার একটি নমুনা মাত্র! বিশাল এই আকাশেরই কোথাও চিরিক দেয়া রোদের খেলা আবার কোথাও মেঘ-বালিকাদের জমজমাট মেলা! নানা প্রকারের মেঘ, নানা বর্ণেরও! কিছু মেঘ উজ্জ্বল হাসি ছড়ায়, আমাদের মনটাকে সুখবোধে ভরে দেয়! আবার ছিঁদকাঁদুনে কিছু মেঘ যেন সুযোগ পেলেই কেঁদে-কেটে পৃথিবী ভাসায়! শ্যামল বরণ ওসব মেঘের মেয়েরা খুব বেশী উঁচুতে উড়তে পারে না! জলের ভারে ওরা নেমে আসে অনেক নীচে। আমাদের কোলে নিয়ে ভারতীয় স্পাইস জেট-এর ছোট্ট বিমানখানা মেঘমূক্ত আকাশের পরিচ্ছন্ন অঙ্গন ছেড়ে বড্ড আহ্লাদে ভাসতে ভাসতে ক্রমশঃ একদল কালো মেঘের দিকেই ছুটে গেল যেন! প্রথমে চোখে পড়লো আমাদের আশেপাশে ও নীচে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো শাদা শাদা মেঘ! রোদ পিছলে যাওয়া কিছু মেঘকে মনোহর লাগছিল দেখতে! এরপর দৃশ্যমান হলো জল-টলমলে কিছু কালো মেঘ! বাহ! বাহ! বলতে বলতে আমরা মহা উৎসাহে মেঘের ছবি তুলছি! প্লেনের জানলা দিয়ে দৃশ্যমান মেঘের ছবি! হুঁশ হলো যখোন পুরো বিমানটা দু’তিনটে ঝাঁকুনি খেল আর পাইলটের কেবিন থেকে ভেসে এলো সতর্ক বার্তা! সিট-বেল্ট বেঁধে নিতে হবে আর সোজা হয়ে বসতে হবে!

ততক্ষণে আমরা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে আসামের আকাশে উড়তে শুরু করেছি! আসাম পাহাড়ী প্রদেশ। পাহাড়ের সাথে মেঘের সখ্যতা আজন্ম-লালিত বলা যায়! তা বলে, তাদের সেই সখ্যতা আমাদের বিমানযাত্রাকে বিপজ্জনক পর্যায়ে ঠেলে দেবে, তা বুঝতে পারিনি! তবে, ব্যাপারটা ভালভাবেই টের পেতে আমাদের খুব বেশী সময় লাগলো না! বিমান বাম্পিং করতে থাকলো পুরো দমে! যাত্রীদের মধ্যে ভয়-কাতরতার আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠলো! কারো কারো বমির শব্দ সেই ভয়কে আরো গাঢ় করে তুললো! ঠোঁট নড়ছে প্রায় সবারই! সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছে সবাই প্রগাঢ় আন্তরিকতায়! ‘প্রভু! এবার অন্ততঃ বিপদ থেকে রক্ষা করো! ছেড়ে দাও আমি অসহায়কে!’ আমার ধারণা, পাহাড়ের মতো বিশালাকৃতির এসব জমাটবাঁধা কালো মেঘের ভেতর কিছু কিছু শূন্যস্থান বা খালি পকেট হয়তো থাকে যেখানে কোন হাওয়া থাকে না, যাতে ভর করে বিমান উড়তে পারে! ওই খালি পকেটগুলোতে এলে বিমান যেন একটুখানি ‘ফ্রি-ফল’ করে! ব্যাপারটা বড্ড অ¯^স্থিকর! ওই সামান্য সময়টুকুতেই পেটের ভেতর যা কিছু আছে তার সবই গুলিয়ে উঠে ছুটে বেরিয়ে আসতে চায় মুখ দিয়ে! ঢোক গিলে গিলে শান্ত থাকার চেষ্টা করছি আর মুখে জারী হয়ে গেছে নানা প্রকার দোয়া-দরূদ! বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে! বিমানের কাঁচের জানলায় পানির ফোঁটা দেখতে পাচ্ছি। ঘণ মেঘের ধোঁয়াটে আবরণ জড়িয়ে রেখেছে আমাদের বিমানকে চতুর্দিক থেকে! ছোট্ট বিমানখানার এত বেশী কাঁপুনি-ঝাঁকুনি আর ফ্রি-ফল চরম অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে প্রতিটি যাত্রীকে! মনে হচ্ছিল, এখুনি এই খেলনা-বিমান গোত্তা খেয়ে ভেঙ্গে পড়বে জমিনের উপর! আমি অন্ততঃ এধরণের বাম্পিংয়ের মুখোমুখি হইনি কখনো। জানলার পাশেই বসে ছিলাম! ‘আর কত পথ বাকী!’ বুঝার আশা নিয়ে অসহায় দৃষ্টি রাখলাম নীচের দিকে। অবাক হয়ে দেখলাম, অল্প নীচেই পাহাড়ের চূড়াগুলো চোখে পড়ছে! আমার দৃষ্টি খুঁজে ফিরছিল এয়ারপোর্ট ধরণের কোন স্থাপনা! নাহ্! তেমন কিছু চোখে পড়লো না! আমার পাশে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ঠ শিক্ষাবীদ, সমাজ-সংগঠক ও আলেম জনাব মোহাম্মদ নুরুদ্দিন। লেখালেখিতেও বেশ সচল তাঁর হাত! ছোটদের জন্যে বেশ কিছু বই লিখেছেন। আমি তাঁর সাথে আলাপ জুড়ে দিলাম, মূলতঃ নিজেকে হালকা করার জন্যে। অন্তর জুড়ে তো আল্লাহ নামের জিকির চলছেই! হাফেজ মুনির ভাই ছিলেন একই সারিতে অন্য আসনে। একটু বড় করেই আল্লাহর নাম নিচ্ছিলেন। তাঁর কাছেই জেনেছিলাম যে, বিমান যত ছোটই হোক না কেন আর যত বেশী বাম্পিংই করুক না কেন, যদি রোটার বা পাখা বন্ধ না হয় তাহলে কোন ভয় নেই; সে কখনো দড়াম করে ঢিলের মতো ভূমিতে গিয়ে আছড়ে পড়বে না! এধরণের তথ্য সাহসের মাত্রাটা বাড়িয়ে দেয়, নিঃসন্দেহে! একটু পরেই আমাদের বিমান মেঘের অনেক নীচে নেমে এসে ল্যান্ড করার জন্যে উড়তে থাকলো আর ভয়াল দুঃস্বপ্নের মতো হঠাৎ করেই আমাদের সকল অস্বস্থি শেষ হয়ে গেল! আলহামদুলিল্লাহ। খারাপ আবহাওয়ার জন্য আধ ঘন্টা বাড়তি সময় উড্ডয়নের পর ল্যান্ড করলো আমাদের বিমান। শিলচর এয়ারপোর্টকে বড্ড সাদামাটা গ্রামীন বিমান বন্দর বলা যায়! স্থাপনা বলতে একতলা কয়েকটি ঘর। এটি ভারতের আভ্যন্তরীণ রুটের একটি এয়ারপোর্ট। মনে পড়লো চীনের বিভিন্ন প্রদেশে ঘরিতে গিয়ে দেখা সেদেশের আভ্যন্তরীণ রুটের এয়ারপোর্টগুলোর কথা। ওখানকার প্রতিটি এয়ারপোর্টই আধুনিক, সুন্দর ও পরিসরের দিক থেকে অনেক বড়! সেই তুলনায় এখানকার এয়ারপোর্টগুলোর কোন উজ্জ্বলতা নেই; বড্ড মলিন!

আসামে আমরা এসেছি আল কোরআন একাডেমি লন্ডনের ‘বিশ্বব্যাপী কোরআন বিতরণ কর্মসূচী’র অংশ হিসেবে পবিত্র কোরআন মজিদের সহজ সরল বাংলা অনুবাদ বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্যে। এয়ারপোর্টে যারা অভ্যর্থনা জানালেন তাদের আন্তরিকতা ও কথাবার্তায় মনে হলো আমরা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের কোন আত্মীয়-বাড়ীতে বেড়াতে এসেছি। একেবারেই দেশজ প্রাণখোলা অভ্যর্থনা। একবারও মনে হয়নি আমরা ভিন্ন একটি দেশে এসেছি এক অচেনা জায়গায়! আকাশ মেঘলা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে বেশ কয়েক মাইল দীর্ঘ জীর্ণদশার রাস্তা পেরিয়ে স্থানীয় কন্সট্রাকশন ব্যবসায়ী জনাব আবদুল মুকিত টোপাদারের আলীশান বাড়ীতে মেহমান হলাম আমরা। তিনি আসামের নামকরা পুস্তক প্রকাশক রহমানিয়া বুক ডেপোর মালিক জনাব লুৎফর রহমানের বেয়াই। লুৎফর রহমান সাহেব আবার স্থানীয় সমাজ-সংগঠকদের একজন। দুই বেয়াই মিলে আমাদের সঙ্গ দিলেন সারাক্ষণ। প্রথমে নাস্তা ও পরে দুপুরের খাবারের আয়োজনে তাদের অন্তরের ধনাঢ্যতা আমাদের মুগ্ধ করলো। অনেকেই এলেন আমাদের সাথে মোলাকাত ও গল্প করার জন্যে! কেউ কেউ মূখর হয়ে বল্লেন এতদঞ্চলের মুসলমান সংখ্যা গরিষ্ঠতার কথা! দুই সহোদরের নামে জকিগঞ্জ ও করিমগঞ্জ নামকরণ হয়েছে তা’ও শুনলাম। করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দি-কাছার নিয়ে বিশাল এলাকায় বিপুল সংখ্যক মুসলমানের বাস। কিন্তু দারিদ্র এদের নিত্য সঙ্গী; শিক্ষার আলোর প্রভাব মোটেও প্রখর হতে পারেনি আর তাই, মূলতঃ দারিদ্র ও অশিক্ষা-কুশিক্ষার কারণে, মুসলমান সমাজ নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে- ঐক্য নেই! পীর আর মাজার ভক্ত, তবলীগ, নাদওয়াতুত তামীর, জামাতে ইসলামী আর দেওবন্দ ইত্যাদি নানা মত ও পথে বিভক্ত হয়ে আছে মুসলমান সমাজ। খাওয়া-দাওয়ার ফাঁকে ফাঁকেও গল্প হলো অনেক। কোরআন বিতরণের প্রথম অনুষ্ঠানটা হবে শিলচর শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদে, বা’দ যোহর। ভুঁড়ি-ভোজনের পর দুইখানা গাড়ীতে আমরা সেই মসজিদে পৌঁছালাম। সবাই চেনে ‘বড় মসজিদ’ হিসেবে। নামাজের পর যথারীতি ঈমাম সাহেব ঘোষণা দিলেনঃ ‘নামাজ শেষে মসজিদের দোতলায় পবিত্র কোরআনের উপর এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে যোগ দেয়ার জন্যে সুদূর লন্ডন থেকে আল কোরআন একাডেমি লন্ডনের চেয়ারম্যান ডঃ হফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ তশরিফ এনেছেন এবং বাংলাদেশ থেকেও কয়েকজন মেহমান এসেছেন। আপনারা সকলেই আমন্ত্রিত।’

মসজিদের দোতলার পরিসর অনেক বড়। ‘কোরআন সেমিনারে’র ব্যানার ঝুলিয়ে, মাইক লাগিয়ে বেশ ভালই ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেখতে দেখতে অনেক লোকের সমাগম হলো। বাংলাদেশ থেকে আগত মিডিয়া এক্সপার্ট জনাব আবদুর রাজ্জাক ক্যামেরা ও মিডিয়ার বিষয়টা দেখভাল করছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখলেন জনাব লুৎফর রহমান এবং কয়েকজন স্থানীয় মুরুব্বী। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত মেহমান জনাব মোহাম্মদ নুরুদ্দিনের পর আমাকেও কিছু কথা বলতে হলো। কোরআন নিয়ে তো নতুন কিছুই বলার নেই! কোরআন কেন আল্লাহ পাঠালেন আর কোরআনের প্রতি সুবিচার করতে হলে আমাদের প্রত্যেককে কী কী করতে হবে, এটুকু বলতে গেলেই তো অনেক কথা বলা হয়ে যায়! কোরআন যে তাবিজ-তুমারের বই নয়, এর প্রতিটি কথা যে জানার ও মানার জন্যে সেকথা বিশেষতঃ বাংলাভাষী লোকদের স্মরণ করিয়ে দেয়া অত্যন্ত জরুরী! এরপর অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ডঃ হফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ বক্তব্য রাখলেন। তিনি তাঁর হৃদয়-ঘণিষ্ঠ ‘কোরআন বিতরণ’ প্রোগ্রাম নিয়ে কথা বল্লেন। আর বল্লেন, কোরআন পড়ার কথা, কোরআন বুঝার কথা এবং জীবনের সুখ-শান্তি ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোরআনের আলোকে জীবন গড়ার কথা। মসজিদ ভর্তি শ্রোতা একাগ্রচিত্তে তাঁর কথাগুলো শুনলো। এরপর কোরআন বিতরণের সময় দেখা গেল, তাঁর অনুবাদকৃত কোরআন তাঁরই হাত থেকে গ্রহণ করার জন্যে প্রতিটি মানুষের সে কি আগ্রহ!

শিলচর বড় মসজিদের অনুষ্ঠান শেষ করে বিকেল সাড়ে তিনটায় আমরা বের হলাম বদরপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আমাদের গাড়ী ধীরে ধীরে শিলচর শহর ছেড়ে প্রধান সড়কে উঠে এলো। শিলচর কাছার জেলার প্রধান শহর। বারাক নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা অনেক বড় আয়তনের এই শহরের পুরোটা দেখা হয়নি; অংশ বিশেষ আমার চোখে পড়েছে মাত্র। তা’তে মনে হলো দারিদ্রের ছোঁয়া সব কিছুতেই! রাস্তা-ঘাট, বাড়ী-ঘর, অফিস-আদালত এবং সব রকম যানবাহনের মধ্যে! আধুনিকতার ছোঁয়াহীন তৃত্বীয় বিশ্বের জনবহুল একটি জেলা-শহর! উন্নয়নের লক্ষ্যে অনেক কাজ করার আছে এই মানুষগুলোর জন্যে। প্রধান সড়কের অবস্থাও ততৈবচঃ! দীর্ঘ পথের দুইপাশে যতটা না জনবসতি তার চে’ বেশী উঁচু-নীচু টিলা ও পাহাড়! বাংলাদেশের সিলেট জেলার সীমান্তরেখা নানারকম বক্রতায় সমšি^ত হয়েছে আসামের করিমগঞ্জ ও কাছার জেলার সাথে। আজন্ম প্রতিবেশী। বাঙ্গালী মুসলমান প্রধান কাছার-করিমগঞ্জের লোকেরা খুব সহজেই সীমান্তরেখা পার হয়ে সিলেটের আত্মীয়-বাড়ীতে বেড়াতে যায়! ওরাও আসে। পাসপোর্ট-ভিসার হাঙ্গামা ওরা করে না। এমনটা আগেও হতো, এখনো হয়। তবে, ইদানিং কড়াকড়িটা বাড়িয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সীমান্তে দিয়েছে কাঁটাতারের বেড়া!
আমরা চলতে থাকলাম বদরপুরের দিকে। পথে একটি দোকানে চা-মিষ্টি খেলাম। বিকেলের রোদ গায়ে লাগছে আর হাওয়াটাও বেশ গরম! বদরপুরের আল আমিন একাডেমী পৌঁছালাম সূর্য্য ডোবার একটুখানি আগে, বিকেল সোয়া পাঁচটায়। পথে কোন মসজিদ চোখে পড়েনি যেখানে নামাজ পড়তে পারি! মুসলমান-প্রধান জনপদের জন্যে ব্যাপারটা মানানসই মনে হয় নি। তাড়াহুড়ো করে আছর আদায় করলাম একাডেমীর মসজিদে এবং একটু পরেই মগরেব পড়লাম। এর মধ্যেই নানা পদের ফল দিয়ে আমাদের নাস্তার ব্যবস্থা করা হলো। আল আমিন একাডেমী মুসলমানদের পরিচালিত একটি আবাসিক স্কুল। পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ছোঁয়া আছে বলেই এই প্রতিষ্ঠান খুব ভালো রেজাল্ট করে চলেছে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই, বছরের পর বছর। এশার আগেই কোরআন বিতরণ অনুষ্ঠান হলো তিন তলা মসজিদের দোতলায়। স্থানীয় অনেক গণ্যমান্য লোক ও শিক্ষকমন্ডলী উপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষা শেষে স্কুলের ছুটি চলছে, তাই ছাত্ররা নেই। অনুষ্ঠানে বিতরণ-পূর্ব বক্তব্যে স্থানীয় বিশিষ্ঠ ব্যক্তিদের আহ্বান জানানো হলো ‘কোরআন বিতরণ কর্মসূচী’তে আপন আপন সক্ষমতা অনুযায়ী প্রত্যেককে সংশ্লিষ্ঠ হওয়ার জন্যে। কোরআন বিতরণ তো প্রত্যেক মুসলমানেরই আপন কাজ! আমাদের বক্তব্যের পর, স্থানীয়দের বক্তব্যও শোনা হলো। রাজনীতি-সম্পৃক্ত একজন স্থানীয় নেতা কোরআন বিতরণের কাজকে তাঁদের এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। বল্লেন, বর্তমান অশান্ত বিশ্বে শান্তি ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে কোরআন-মুখী হওয়ার বিকল্প নেই। খুব আগ্রহ ও ভক্তি সহকারে সমাগতরা প্রত্যেকে এক কপি কোরআন গ্রহণ করলেন। আল কোরআন একাডেমী লন্ডনের কোরআন বিতরণের এই জনসেবামূলক কাজটাকে আমার কাছে খুবই সময়োপযোগী বলেই মনে হয়। এই প্রতিষ্ঠান নেপালে নেপালী ভাষায় অনুদিত কোরআন, উর্দুভাষীদের জন্যে উর্দুভাষায় অনুদিত কোরআন এবং পাশ্চাত্যের লোকদের জন্যে ইংরেজী ভাষায় অনুদিত কোরআন বিতরণ করে আসছে বেশ ক’বছর ধরে। আর সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের মধ্যে প্রায় বিশ কোটি কোরআন বিতরণের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। এবারের সফরটাও সেই লক্ষ্যেরই পরিপূরক!

পরদিন ফজর পড়েই আমরা গাড়ীতে চাপলাম। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শিলচর শহরকে পাশ কাটিয়ে আমরা শিলচর বিমানবন্দর পৌঁছালাম। বিমানবন্দরের বাইরেই একটি ঝুপরি দোকানে বসে চা-নাস্তা সারলাম। এখানে মানসম্মত দোকান এটাই! আশার কথা হলো, এবারের বিমানটা আকৃতিতে অনেক বড়। বড় বিমানগুলো মেঘের অনেক উপরে উঠে চলাচল করে এবং স্বাভাবিকভাবেই এর স্থিরতা অনেক বেশী। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বড় আকারের বিমানে চড়ে সাদা-কালো সব রকমের মেঘ ফুঁড়ে কোন রকম তকলিফ ছাড়াই আমরা দমদম পৌঁছে গেলাম, আলহামদুলিল্লাহ। রানওয়েতে বিমানের টেক্সিয়িং-এর সময় নুরুদ্দিন ভাই আঙ্গুল উঁচিয়ে তাঁর বাড়ীটা দেখালেন। বিমানবন্দরের সীমানা দেয়ালের ঠিক অপর পাশে ছবির মতো একখানা বাড়ী! আমি বল্লামঃ বাহ্! সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সের ঝক্কিটা না থাকলে, এক লাফেই তো যাওয়া যেত! নুরুদ্দিন ভাই হাসলেন এবং বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে নানা পথ ঘুরে ঠিক ওই বাড়ীতেই নিয়ে গেলেন আমাদের সকলকে। 

খুব অল্প সময়ে আপন করে নিতে পারেন নুরুদ্দিন ভাই। গতকাল সকালে আমি আর আবদুর রাজ্জাক ভাই কলকাতার অত্যাধুনিক ‘নেতাজী সুবাস চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে পৌঁছালে আমাদের আনার জন্যে গাড়ী পাঠিয়েছিলেন নুরুদ্দিন ভাই। আমরা উঠলাম দমদম এলাকার একটি হোটেলে। তিনি এসে সেখানে দেখা করলেন এবং আমাদের নিয়ে বেরুলেন। দমদম থেকে নতুন সড়ক ধরে কলকাতার শহর-কেন্দ্রে যাওয়ার পথে তিনি আমাদের কোথায় নতুন শহর হয়েছে আর কোথায় উড়াল-সড়ক হয়েছে তা বর্ণনা করলেন। ধর্মতলার আগেই তালতলা। এর আগে যে এলাকাটা পার হলাম তাকে উন্নয়ন-বঞ্চিত একটি ভুতুড়ে এলাকার মতো মনে হলো আমার কাছে। শহরের প্রায় মধ্যিখানে এমনটা হলো কেন? নুরুদ্দিন ভাই বল্লেন, এটা ছিল প্রাচীনকাল থেকেই মুসলমান-প্রধাণ এলাকা। পাকিস্তান ও ভারত স্বাধীন হওয়ার মাত্র এক বছর আগে উনিশশ’ ছেছল্লিশ সালে যে বিরাট দাঙ্গা হয়েছিল এটাই সেই এলাকা! অনেক মুসলমান নিহত হয়েছিল উগ্র-হিন্দুদের হাতে! বাকীরা নিজেদের বাড়ী-ঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল প্রাণ নিয়ে। অনেকেই আর কখনো ফিরে আসেনি। যারা ফিরেছে তারাও হিন্দু পান্ডাদের ভয়ে নিরাপত্তা পায়নি! আমি অবাক হয়ে বল্লাম, স্বাধীনতার সত্তর বছর পর এখনো কি কোন নিরাপত্তা নেই? নুরুদ্দিন ভাই কোন জবাব দিলেন না! বাড়ী-ঘর ফাঁকা পড়ে আছে। অবৈধভাবে দখল করে আছে অনেক হিন্দু মাস্তান। আইনগত ভিত্তি নেই বলে দালান-কোঠা গড়ে বড় আকারের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। এভাবেই চলছে ‘গণতান্ত্রিক স্বাধীন ভারতে’ মুসলমানদের হালহাকিকত! ইতিহাসে পড়েছি, ছেছল্লিশে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল পশ্চিমবঙ্গে। সবচেয়ে কুখ্যাত দাঙ্গাটা হয়েছিল কলকাতায়! আমি এখন সেই জায়গায় হাজির! হাজার হাজার মুসলমানকে কচু-কাটা করেছিল উগ্র হিন্দুরা! হোসেন শহীদ সহরোয়ার্দীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে দাঙ্গা থেমেছিল। কিন্তু মুসলমানদের যে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তাতো আমি এখনো সচক্ষে দেখতে পাচ্ছি! হিন্দু-প্রধান পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় মুসলমান-প্রধান পূর্ববঙ্গে (অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে) কোন দাঙ্গাই হয়নি! নোয়াখালীতে যে দাঙ্গার খবরে গান্ধী নিজেই ছুটে এসেছিলেন তাতে একজন মাত্র নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছিল! ভালো লাগলো এই কথা ভেবে যে, আমাদের অঞ্চলে সংখ্যালঘু হিন্দুরা সেকালেও নিরাপদে ছিল এবং এখনো আছে বহাল-তরবিয়তে, মহাসুখে! এনিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি। আমাদের গাড়ী এগোচ্ছে। তালতলায় একটি বাড়ী দেখিয়ে নুরুদ্দিন ভাই বল্লেন, এই বাড়ীতে বসেই কাজী নজরুল বিদ্রোহী কবিতা লিখেছিলেন। কিন্তু দুঃখের কাহিনী হচ্ছে, ভাড়া আদায় করতে না পারায় বাড়ীওয়ালা তাঁকে সেই বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল! আর্থিক অনটনের এসময়েই তিনি পয়সা উপার্জনের জন্যে নিজে শ্যামা-সঙ্গীত লিখেছিলেন এবং কলকাতা রেডিওতে তা গেয়েছিলেন! ওই এলাকাতেই চোখে পড়লো ১৮৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ক্যালকাটা বয়েজ স্কুলে’র সাইনবোর্ড। রাস্তার ডান পাশে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার অফিস। আমরা ক্রমশঃ এগোলাম কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র ন্যুমার্কেট-চাঁদনী চক এলাকার দিকে। চাঁদনী চকের একটা জীর্ণদশার মসজিদে আমরা জোহর পড়লাম এবং একটি রেস্টুরেন্টে মাছ-তরকারী দিয়ে খেলাম। এরপর আমরা বের হলাম কলকাতা শহর দেখার জন্যে। হুগলী নদীর পূর্বতীরে প্রিন্সেপ ঘাট। এখানে ওপারের সাথে একটি ব্রীজ আছে আর এপারে আছে মিঃ জেমস প্রিন্সেপের সম্মানে নির্মিত একটি সৌধ। বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে পার্ক। এতদঞ্চলের প্রাচীনতম শহর হলো কলকাতা। ছোটবেলায়ও মুরুব্বীদের মুখে কত না শুনেছি এই শহরের গল্প! আমার মরহুম আব্বা কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানার গল্প করেছিলেন, মনে আছে। গাড়ীতে বসে ঘুরে ঘুরে এর কতটুকুইবা দেখা যায়! হাওড়া ব্রীজ, ভিক্টোরিয়া পার্ক ইত্যাদি ঘুরে আমরা মগরেব পড়লাম ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদে। শুনলাম টালিগঞ্জে আরো একটি মসজিদ আছে সংগ্রামী বীর শহীদ টিপু সুলতানের নামে। ইংরেজের আনুগত্য স্বীকার না করে স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়া টিপুর জন্যে প্রতিটি স্বাধীন ভারতীয় নাগরিকেরই গর্ব বোধ করার কথা! অথচ ইদানিং পত্রিকায় দেখতে পাই, শহীদ টিপু সুলতানের নামে কুৎসা বর্ণনা করে বক্তব্য রাখছে বর্তমান ভারতের হিন্দুত্ববাদী নেতারা! ইতিহাস অস্বীকারকারীদের দম্ভ ও হীনমন্যতা আমাকে কষ্ট দেয়! আমরা হোটেলে ফিরে গিয়ে রাতের খাবার খেলাম।

গতকাল সকালে কলকাতা আসার পর থেকেই আমরা নিরন্তর ছুটছি! এই গতিময়তার মধ্যেই আমরা চট-জলদির মেহমান হয়ে গেলাম নুরুদ্দিন ভাইয়ের সুন্দর সাজানো বাড়ীটাতে! দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণের পর এখন হবে সকালের নাস্তা। একে একে আমরা সবাই ফ্রেস হলাম। এরপর হলো খাওয়া-দাওয়া। অন্দরমহলে পূর্ব প্রস্তুতি ছিল ভালই, তা না হলে এত পদের উপাদান দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করা সম্ভব হতো না। আবার আমরা পথে বেরিয়ে পড়লাম। গাড়ী চলতে শুরু করলো আল আমিন মিশন স্কুলের উদ্দেশ্যে। 

কলকাতার অবস্থান হলো পশ্চিমবঙ্গের ‘উত্তর চব্বিশ পরগনা’ জেলায়। এর পশ্চিমেই হাওড়া জেলা। আমরা যাবো হাওড়া জেলার উদয়নারায়ণপুরের অন্তর্গত খলতপুরে। পথে আমাদের সাথে যোগ দিলেন ‘মিজান’ পত্রিকার সাংবাদিক, লেখক ও সমাজ-চিন্তক মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন। হাসি-খুশী মানুষ। আলাপ করলেই মননশীলতা ও চিন্তা-চেতনার ধার আঁচ করা যায়। প্রথম সাক্ষাতেই ভাল লেগে গেল আমার। খলতপুরে আল আমিন মিশন স্কুলের কেন্দ্রীয় ক্যাম্পাস ও হেডকোয়ার্টার। প্রাইমারী ও হাই স্কুল, কলেজ, ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেল, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিবাস, অফিস সব মিলিয়ে বেশ ক’টি বহুতল ভবন আর বিস্তৃত খোলা মাঠ নিয়ে গড়ে ওঠা বিশাল ক্যাম্পাস। আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন আল আমিন মিশন ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম। তাঁর অফিসে বসে মিষ্টি খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তাঁর মুখেই শুনলাম আল আমিন মিশন পরিবারের কর্মযজ্ঞ ও সাফল্যের কাহিনী। শুধু হাওড়াতেই আছে এই স্কুলের আরো ছ’টি ক্যাম্পাস। গত বত্রিশ বছরে এর আবাসিক ক্যাম্পাস হয়েছে মোট ৬৪টি। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও আশেপাশের কয়েকটি প্রদেশে এর ডালপালা বিস্তৃত হয়েছে। এই বিশাল প্রতিষ্ঠানের প্রধান জনাব এম. নুরুল ইসলাম বল্লেন, “রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষা ও সেবামূলক ক্রিয়াকলাপে অনুপ্রাণিত হয়ে নবী(দঃ)র নামে ‘আল-আমীন মিশন’ গড়ে তুলি। সমাজের পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু মুসলমান সমাজে শিক্ষার আলো ছড়ানোই আমাদের লক্ষ্য।” উচ্চ-শিক্ষার নানা ক্ষেত্রে, বিশেষতঃ মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং, আল আমিন মিশন স্কুলের সাফল্যের রেকর্ড দেখে সত্যিই অবিভূত হতে হয়!

আল আমিন মিশন স্কুলের শাখা প্রধানদের ওয়ার্কশপ চলছিল। তাই আমরা পেয়ে গেলাম, একসাথে সবাইকেই বলা যায়। শিক্ষক-শিক্ষিকারা তো ছিলেনই! কোরআন বিতরণ প্রোগ্রামে অডিটরিয়াম ছিল টইটুম্বুর! সকলের হাতে একখানা কোরআন তুলে দেয়ার আগে কিছু বক্তব্য আমাদের রাখতেই হলো। সর্বজন শ্রদ্ধেয় ডঃ হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমদ বল্লেন, আপনারা যারা মানুষ গড়ার কারিগর তাদের হাতে পবিত্র কোরআনের সহজ সরল বাংলা অনুবাদ তুলে দিতে পেরে আমি এই ভেবে আনন্দিত যে, আপনাদের মাধ্যমেই ‘কোরআনের আলোকে জীবন গড়া’র অপরিহার্য্যতার কথা, আমাদের আগামী প্রজন্ম, প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর হৃদয়ে আসন গেড়ে নেবে। 

এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো ছাত্রী হোস্টেলে। চারশত ছাত্রী এখানে থেকে পড়াশোনা করছে। এদের কেউ বিনাবেতনে, কেউ আংশিক বেতনে আর কেউ পূর্ণ বেতন দিয়ে পড়াশোনা করছে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় সমগ্র প্রদেশের মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এই স্কুলের অনেকেই! একটি হল রুমে শুধুমাত্র একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীদের মধ্যে কোরআন বিতরণ করা হলো। তাতেই হলে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছিল না! তাদের হাতে কোরআন তুলে দেয়ার আগে ইসলামী সমাজে ও ইসলামে নারীর গুরুত্ব নিয়ে কিছু কথা বলা হলো। হাফেজ মুনির তাদেরকে ‘নাতনী’ বলে সম্বোধন করে অত্যন্ত আবেগময় ভাষায় বল্লেন, তারাই হচ্ছে আমাদের আগামী প্রজন্মের তথা আগামী দিনের ও জাতির সংরক্ষক ও হেফাজতকারী। কোরআনের সাথে আজীবনের ভালবাসাই তাদের জন্যে সফলতা বয়ে আনবে। আল আমিন মিশন থেকে বিদায় নিয়ে আছরের আগেই আমরা ছুটে চললাম মওলানা আজাদ একাডেমীর উদ্দেশ্যে। হাওড়া জেলারই বাগনানের অন্তর্গত হাল্যান গ্রামে এই একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 

এই ‘হাল্যান’ নামের একটা মজার ইতিহাস আছে। নামফলকে লেখা হয়ঃ হাল্যান, কিন্তু স্থানীয় মানুষজনের মুখে মুখে নামটা দাঁড়িয়েছেঃ হাল্যেন। মুরুব্বীদের কাছে শোনা প্রচলিত গল্পে জানা যায়, স্বাধীনতারও বহু যুগ আগে রাণা প্রতাপ সিংহের দুই সৈনিক হলদিঘাটের যুদ্ধে পরাজয়ের পর পালিয়ে আসে এই এলাকায়। তারা বাঙ্গালী ছিল না এবং বাংলা ভাষাও জানতো না। তবু তারা এখানেই বসবাস শুরু করে এবং তাদের হাতেই এই গ্রামের পত্তন ঘটে। তাদের অতীত জীবন সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন করলে ভাঙ্গা বাংলায় শুধু বলতে পারতোঃ ‘রাণা হারলেন!’ এই ‘হারলেন’ শব্দটাই মুখে মুখে পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘হাল্লেন’ বা ‘হাল্যেন’! হারলেন > হাল্লেন > হাল্যেন > হাল্যান। অপভ্রংশ আর বর্ণবিপর্যয়ের ফলে এধরণের কত নাম যে জন্ম নিয়েছে তার কি ইয়ত্তা আছে? আমি ভাবছিঃ যে লোকালয়ের নাম জন্ম নিলো হেরে যাওয়া থেকে, তেমন একটি অজপাড়াগাঁয়ে কেমন সুন্দর আলোকবর্তিকার মতো দাঁড়িয়ে আছে মওলানা আজাদ একাডেমী! 

মওলানা আজাদ একাডেমীর সাফল্যের গল্পও অনেক। ডঃ এস এ মুজিদ এই একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে এই বয়সেও অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, একদল পরিশ্রমী সহকর্মীকে সাথে নিয়ে, পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু মুসলমানদের শিক্ষার মানোন্ন্য়নের জন্যে। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন অল্পদিন আগে। এখানে বলে রাখা ভাল যে, শুধু পশ্চিবঙ্গে নয় বরং সমগ্র ‘ভারতে মুসলমানরাই শিক্ষায় সবচেয়ে অনগ্রসর’ (এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ১১ জুলাই ২০১৭)। মাঠ পর্যায়ের জরীপের উপর ভিত্তি করে এই রিপোর্ট তৈরী করেছে ভারত সরকারেরই একটি কমিশন। ধারাবাহিক কূট-পরিকল্পনা, হিংসার রাজনীতি ও নানা প্রকার সামাজিক অবিচারের মাধ্যমে পুরো ভারতের মুসলমান জাতিকেই লজ্জাজনক প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেয়া হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। যার ফল হয়েছে এই যে, এই পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান জনসংখ্যা শতকরা ২৫ ভাগ হলেও সরকারী চাকরিতে মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা ২ ভাগও নয়। ক্যাডার সার্ভিসে এই সংখ্যা ০.২ ভাগও নয়! এ বিষয়টা আমাকে ভীষণভাবে আহত করেছিল এই ভেবে যে, আমরা তো বরং আমাদের বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের এভাবে নির্যাতন বা বঞ্চিত করি না! বরং তাদেরকে নানাভাবে এগিয়ে যেতেই সাহায্য করি! সে যা’ই হোক, পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা সম্পূর্ণ বেসরকারী উদ্যোগে এধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে দেখে আমি খুবই উদ্দীপিত বোধ করি। মওলানা আজাদ একাডেমির দু’টি ক্যাম্পাস। মূল ক্যাম্পাসটি বেশ বড়। বাইরে থেকে আসা ও অতি-দরিদ্র ছাত্রদের জন্য আবাসিক সুবিধা আছে। কোরআন বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো ছাত্র-হোস্টেলের চতুর্থ তলার বিশাল হলঘরে। এবারের ভারত সফরে এযাবৎ যতগুলো কোরআন বিতরণ অনুষ্ঠান হয়েছে এই ক’দিনে তার মধ্যে এই আয়োজনটাই সর্ববৃহৎ। বিশাল হল পরিপূর্ণ হয়ে গেছে অভ্যাগত ও শিক্ষকদের দিয়ে। অল্প কিছু ছাত্র ভেতরে বসার সুযোগ পেয়েছিল। বাকী সব ছাত্রই বারান্দায় গাদাগাদি হয়ে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুনছিল। শুরুতেই আমাদের বরণ করে নেয়া হলো উত্তরীয়, ফুল-গুচ্ছ আর উপহার দিয়ে। এরপর বক্তারা বক্তব্য রাখলেন কোরআন সম্পর্কিত বিষয়ে। অবশেষে, The Quran: Savior of Humanity বিষয়ে বক্তব্য রাখলেন আল কোরআন একাডেমী লন্ডনের চেয়ারম্যান ডঃ হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমদ। এরপর শ্রোতাদের মধ্যে বিতরণ করা হলো কোরআন শরীফ: সহজ সরল বাংলা অনুবাদ। অনুষ্ঠান শেষে আমাদের রাতের খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করলেন তারা। রাত গভীর হচ্ছে বলেই আমাদের বিদায় নিতে হলো। সময়টা আরেকটু দীর্ঘ হলেই বোধ হয় ভালো হতো! হাওড়া থেতে কলকাতা ফেরার পথে মনে হচ্ছিলঃ যদি প্রতি দিন এধরণের অনুষ্ঠান হতে থাকে, তবু কতদিন আমাদের লাগবে পৃথিবীর প্রতি প্রান্তের প্রতিটি বাংলাভাষীর হাতে এক কপি কোরআন পৌঁছে দিতে! 

পরদিন শুক্রবার, ২৬ মে ২০১৭ তারিখ সকালে কলকাতার দু’খানা দৈনিকে (‘কলম’ ও ‘দিন দর্পন’) দেখলাম পশ্চিমবঙ্গে কোরআন বিতরণ অনুষ্ঠানের ছবিসহ সংবাদ ছাপা হয়েছে। একই সাথে বৃহস্পতিবারের পত্রিকা দু’টোও পেলাম, তা’তে শিলচরে কোরআন বিতরণ অনুষ্ঠানের ছবিসহ সংবাদ এসেছে। বিকেলে আমরা গেলাম আলিয়া ইউনিভার্সিটিতে। বিখ্যাত কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা (১৭৮২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অনেকে এর নাম লেখেনঃ ‘মোহামেডান কলেজ অব ক্যালকাটা’।) এখন (২০০৮ সালে এসে) হয়ে গেছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এর একাধিক ক্যাম্পাস। বেনিয়াপুকুর পুলিশ স্টেশনের নিকটে গোরাচাঁদ রোডে আলিয়া ইউনিভার্সিটির প্রধান ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলাম আমরা। ঢুকেই চোখে পড়লো ভারতের প্রথম প্রেসিডেন্ট সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের বড় আকারের ছবি। সৎভাবনা মঞ্চের উদ্যেগে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের উপর আলোচনা সভা চলছিল একটি হলে। আমরা এতে যোগ দিলাম। সভার এক পর্যায়ে একটি নব-প্রকাশিত গ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন করলেন আল কোরআন একাডেমী লন্ডনের চেয়ারম্যান ডঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ। গ্রন্থের নামঃ ‘বাহারপুত্রী সংস্তৃতি সৈনিক সেলিনা’, লেখিকাঃ প্রফেসর ডঃ মীরাতুন নাহার। বাহারপুত্রী বলতে প্রখ্যাত সংস্তৃতিসেবী হাবিবুল্লাহ বাহারের কন্যাকে বোঝানো হয়েছে। গ্রন্থের প্রকাশক বিশ্বকোষ পরিষদের সভাপতি পার্থ সেনগুপ্ত ধন্যবাদ জানিয়ে বল্লেন যে, এই গ্রন্থ প্রকাশের জন্য অর্থ-সাহায্য দিয়েছে আল কোরআন একাডেমী লন্ডন। জানতে পারলাম, বিশ্বকোষ পরিষদ নানা আয়োজনে এখনও তুলে ধরার চেষ্টা করছেন বাংলা সাহিত্য ও সংস্তৃতির দিকপাল মুসলমান কবি সাহিত্যিকদের। যাদের নিয়ে তারা এযাবৎ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন এবং বিভিন্ন গ্রন্থ/ সংকলন প্রকাশ করেছেন তাঁরা হলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, আব্বাস উদ্দীন আহমেদ, সেলিনা বাহার চৌধুরী এবং আরো অনেকে। পরিচয় হলো পার্থ সেনগুপ্ত বাবুর সাথে। উদার মনের অসাম্প্রদায়িক একজন মানুষ। সৎভাবনা মঞ্চের বর্তমান কর্ণধারও তিনি। সত্তরোর্ধ বয়সেও ব্যস্ত থাকেন নানা সামাজিক কর্মকান্ডে। পরিচয় হলো সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাসের সাথে। বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলের মানুষ, ’৭১এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এখন থিতু হয়েছেন কলকাতায়। নিজের লেখা একখানা বই উপহার দিলেন আমাকে। শিরোনামঃ ‘বঙ্গভঙ্গ-দেশত্যাগ-দাঙ্গা’। মলাটের উপরই লেখা আছেঃ ‘সংঘ পরিবারের একজন অন্যতম সদস্য হলেন তথাগত রায়; ঐ পরিবারের মিথ্যা ও অর্ধসত্য প্রচারের মোকাবিলায় এই পুস্তিকার পরিকল্পনা।’ বুঝলাম, মিথ্যা ইতিহাস সৃষ্টির রাষ্ট্রীয় অনাচারের বিপক্ষে এটা একটা জবাবী-বই! মগরেবের নামাজের পর অনুষ্ঠিত হলো ‘সৎভাবনা মঞ্চে’র সভা। আমরা এতে উপস্থিত ছিলাম। হিন্দু ও মুসলমান সমভাবেই এই মঞ্চের সদস্য। বিগত হাজার বছর ধরে বিশাল ভারতের প্রতিটি জনপদে গরু জবাই করা হয়েছে প্রতিদিন এবং মুসলমান ও অন্যরা তো বটেই, অনেক হিন্দুও গরুর গোস্ত খেয়েছে নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী। ধার্মিক হিন্দুরা গরুর গোস্ত খান না, গাভীকে ‘মা’ বা দেবী জ্ঞানে! ইদানিং উগ্রহিন্দুদের সরকার রাষ্টীয় ক্ষমতায় এসে ঘোষণা করলো, অন্যরাও গরুর গোস্ত খেতে পারবে না! গরু জবাই নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটালো সারা ভারত জুড়ে! ‘গো-মাতা’ নিয়ে ভারতের বর্তমান সরকারের ছত্রছায়ায় উগ্র-হিন্দুদের যেসব ভন্ডামী চলছে, এই সংগঠনের হিন্দুদেরও তা’তে কোন আস্থা নেই! ‘গো-মাতা’ ইস্যু নিয়ে বেশ কিছু দিন থেকে সমগ্র ভারতে তান্ডব চালাচ্ছে উগ্র হিন্দুরা। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে গরু-জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গো-মাংস বিক্রেতা ও কসাইদের (স্বাভাবিক কারণেই এরা সবাই মুসলমান) আক্রমণ ও হত্যা করা হচ্ছে! বাড়ীতে গো-মাংস রাখার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মুসলমানদের গণ-পিটুনিতে হত্যা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, গরুর গুরুত্ব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে জনসমক্ষে গাভীর পেছনে দাঁড়িয়ে সরাসরি গাভীর পেশাব পান করছে হিন্দু ধর্মের গুরুরা! আগে আমরা জানতাম, কেবল গাভীকেই ওরা মায়ের মতো ভক্তি করে আর তাই ওরা গাভীকে দিয়ে হাল-চাষ করায় না, তবে অন্য গরু দিয়ে করায়। এখন বলা হচ্ছে, সব গরুই ‘মা’! জানা গেছে বানারস বিশ্ববিদ্যালয়কে পঁচিশ কোটি রুপি দেয়া হয়েছে গরুর পেশাব নিয়ে গবেষণা করার জন্যে! পুরো ব্যাপারটার অনেকটাই ভন্ডামী আর বাকীটা রাজনীতি! ভন্ডামীটা হলোঃ ভারতের অনেকগুলো কোম্পানী প্রতিদিন শত শত গরু হত্যা করে সেই মাংস রফতানী করছে বিদেশে। ভারত হলো বিশ্বের অন্যতম প্রধান ‘বীফ এক্সপোর্টিং’ দেশ। আরো ভন্ডামী হচ্ছেঃ গো-মাংস রফতানীকারক এসব কোম্পানীর মালিক যদিও হিন্দু কিন্তু কোম্পনীকে দেয়া হয়েছে আরবী বা মুসলমানী নাম, যেমনঃ “আল কবীর” (মালিকের নাম ‘সতীশ সাবরওয়াল’), “এরাবিয়ান এক্সপোর্টার” (মালিকের নাম সুনীল কাপুর), বিশ্বের ৩৫টি দেশে ‘বীফ’ রপ্তানীকারক কোম্পানীর নাম “আল নূর” (মালিকের নাম সুণীল সুদ) ইত্যাদি। এদের বিরুদ্ধে ‘গো-মাতা’ হত্যার অপবাদও নেই, সরকার অথবা জনগণের কোন প্রতিবাদও নেই! রাজ্য সরকারগুলো সমগ্র রাজ্যে সাধারণ মানুষের জন্যে গরু-জবাই নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও কোন রাজ্যেই ‘শত শত গরু হত্যাকারী’ একটি কোম্পানীকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে শোনা যায়নি। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিশ্বে সেরা বীফ রপ্তানীকারক দেশ ছিল ভারত! 

সভায় আমার পাশে বসেছিলেন সাংবাদিক মোহাম্মদ হেলালউদ্দীন। এক ফাঁকে তিনি নিজের লেখা পাঁচখানা পুস্তিকার একটি প্যাকেট আমার হাতে গুঁজে দিলেন। বইগুলোর শিরোনামঃ ‘বাঙ্গালী মুসলমানের সঙ্কট’, ‘বাবর কা আওলাদ’, ‘দেশে কম জেলে বেশী মুসলমান’, ‘বাংলার মূল নিবাসীরা হিন্দু হল কবে!’, ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান’ এবং ‘শারদোৎসব সম্রাজ্যবাদী উৎসব’। বইয়ের শিরোনাম থেকেই তাঁর কলম-যুদ্ধের ক্ষেত্র সম্পর্কে আঁচ করা যায়। ‘বাকচর্চা’ নামে তাঁর নিজস্ব একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আছে। সভ্যতার এপর্যায়ে এসেও ভারতীয় মুসলমানদের উপর যেভাবে জাতিগত বিভেদের স্টীমরোলার চালানো হচ্ছে তা দেখে পার্থ বাবুদের মতো কিছু হিন্দুও চরম অস্বস্থিতে ভোগেন! অথচ এখানকার প্রতিটি মুসলমানের দু’টো পা’ই ভারতের মাটির উপর! আমাদের সংখ্যালঘুদের অনেকেই যেমন ‘এক পা রাখেন দেশের মাটিতে আর অন্য পা’ ভিনদেশে!’ তেমনটা একজন ভারতীয় মুসলমানের মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যাবে না! তবু কেন এই জলিুম-অবিচার বুঝতে পারি না! বেশীর ভাগ মুসলমানকেই জেলে পুরে রাখা হয়, যে কোন সাধারণ অজুহাতে! প্রায় সবগুলো জেলেই অধিকাংশ কয়েদী মুসলমান! মুসলমানদের পরিবারগুলোকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্যে এরচে’ সু² পরিকল্পনা আর কী হতে পারে! ইত্যকার জুলুমের বিপক্ষেই সোচ্চার হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্যে কাজ করছে ‘সৎভাবনা মঞ্চ’। সভা শেষে আলিয়ার প্রবেশ পথের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম আমরা সৎভাবনা মঞ্চের নেতা-কর্মীদের সাথে। 

পরবর্তী দেড় দিন আমি আর আবদুর রাজ্জাক ভাই মিলে কিছু সময়ের জন্যে ঘুরাঘুরি করেছি চাঁদনী চক আর ন্যু-মার্কেট এলাকায়। চোখে পড়েছে যেখানে সেখানে অসংখ্য বাংলাদেশী, পোষাক আর চেহারা দেখলেই বুঝতে পারি! প্রতিদিন অসংখ্য বাংলাদেশী কলকাতা আসছে, হোটেলে থাকছে, রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে আর দেদারছে কেনাকাটা করছে। এরমধ্যে রোজা শুরু হয়ে গেছে। তাই অনেক বাংলাদেশী কলকাতা এসেছে ঈদের বাজার করতে। বলা বাহুল্য, অধিকাংশ বাংলাদেশীকে দেখে রোজার কোন প্রভাব বুঝতে পারিনি! কলকাতা শহরের রাস্তা-ঘাট আর যান-বাহনগুলো যতই মলিন হোক, কোথাও কিন্তু জানজটে আটকে থাকিনি একবারও! মমতা ব্যানার্জীর সরকার বাংলাদেশকে তিস্তার পানি দেয়ার উদারতা দেখাতে না পারলেও পশ্চিমবঙ্গের সড়ক যোগাযোগের যে উন্নতি করেছে সে কথা ভাবতে ভাবতেই কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে রওনা হলাম। 
মিরপুর, ঢাকা, ২৫/১০/২০১৭
আশরাফ আল দীন ।। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, কবি, শিক্ষাবিদ ও গবেষক।