বাংলাদেশ বার্তাঃ ‘লেবু খেলে গ্যাস্ট্রিক বেড়ে যায়’ আমাদের দেশে ভিটামিন– সি সমৃদ্ধ লেবুর এই বদনাম প্রায়ই শুনা যায়। তাই অনেকে ভয়ে লেবু খান না। তবে এটা যে কত বড় ভুল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ লেবুর রস, খোসা, বিচি, লেবু গাছের পাতা থেকে শুরু করে লেবুর সব কিছুই উপকারী।
বিশ্বব্যাপী লেবুর কদরই আলাদা। লেবু ছাড়া সালাদ হয় না। লেবুর শরবত বোতলজাত যে কোন পানীয় থেকে উত্তম, খাদ্যপুষ্টিমান সম্পন্ন, আদর্শ ও স্বাস্থ্যসম্মত। এক সময় আমাদের গ্রামে এটাই রেওয়াজ ছিল যে, ঘরে মেহমান আসলে লেবুর শরবত দিয়ে প্রথম আপ্যায়ন করা হত।
আধুনিক জীবন যাত্রায় ওষুধ ও বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে লেবুর ব্যবহার সুদীর্ঘকালের। দেশীয় ও বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানি তাদের ওষুধ, এয়ার ফ্রেশনার, সাবানসহ বিভিন্ন সুগন্ধিদ্রব্য ও প্রসাধনীতে লেবু ব্যবহার করছে। দিন দিন লেবুর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লেবুতে আছে প্রচুর ভিটামিন–সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। একটি মাঝারি সাইজের লেবুতে প্রায় চল্লিশ গ্রাম ভিটামিন–সি থাকে। যা একজন মানুষের দৈনিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট। লেবু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কারণ ভিটামিন–সি এর কারণে দেহের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সকালে খালি পেটে লেবুর রস এক গ্লাস স্বাভাবিক পানি অথবা কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করা উত্তম। এতে দেহ হতে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। ফলে শরীর অবাঞ্চিত জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।
লেবুর স্বাদ টক। এর কারণ লেবুতে আছে শতকরা প্রায় ৫ ভাগ সাইট্রিক এসিড। দেহের জন্য এটি খুবই উপকারী। মানবদেহের প্রায় সর্বত্র লেবু কোন না কোনভাবে কাজ করে।
লিভার : লেবুর রস লিভার পরিষ্কার ও শক্তিশালী করে। ফলে লিভার দেহের প্রয়োজনীয় এনজাইম তৈরি করতে সক্ষম হয় এবং লিভারে থাকা এনজাইমগুলিকে সক্রিয় করে। যারা দীর্ঘদিন ধরে লিভারের বিভিন্ন সমস্যায় ভোগছেন, কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কিছু দিন খেলে লিভারের জটিলতা কমে যায়।
পরিপাক : লেবুর রস হজমশক্তি বাড়ায়, পেট ফাঁপা ও পেট ফোলা কমায়, পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা রোধ করে। কারণ লেবুতে থাকে সাইট্রিক এসিড। নিয়মিত লেবুর রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, পায়খানা পরিষ্কার হয়। আহারের পর লেবু খেলে দ্রুত খাবার হজম হয়।
গ্যাস্ট্রিক : অনেকে মনে করেন, লেবুর রস খেলে অ্যাসিডিটি বৃদ্ধি পায়, বুক জ্বালা করে। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। বরং লেবু বুক জ্বালা দূর করে। এমন কি আলসার প্রতিরোধেও লেবু কার্যকর। মনে রাখতে হবে, লেবু অ্যাসিটিডি বাড়ায় না, বরং কমায়।
ক্ষুধামন্দা : যাদের মুখে রুচি নেই, কিছুদিন নিয়মিত লেবুর রস খেলে মুখের রুচি বাড়ে, ক্ষুধামন্দা দূর হয়।
রক্ত : লেবু রক্তবহা ধমনী ও শিরাসমূহ পরিষ্কার করে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। অক্সিজেন পরিবহণের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এইচডিএল বৃদ্ধি করে। শ্বেতকণিকা বৃদ্ধি করে। ইউরিক এসিড এর সমস্যা দূর করে।
ত্বক : লেবুতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন–সি ত্বকের নানা সমস্যা দূর করে ত্বক সুন্দর, মসৃণ ও উজ্জ্বল করে। ব্রণ ও মুখের মেছতাসহ স্কিনের বিভিন্ন দাগ দূর করতে সাহায্য করে। দেখা যায় অনেকের হঠাৎ করে মুখমণ্ডলে কালো কলো দাগ পড়ে গেছে। কিছুদিন নিয়মিত পানির সাথে মিশিয়ে লেবুর রস খেলে দাগ কমে যায়। কারণ লেবুর রস ত্বক কালো হওয়ার জন্য দায়ী মেলোনিন তৈরি হতে দেয় না। মনে রাখতে হবে, ত্বক উজ্জ্বল ও পরিষ্কার রাখার জন্য লেবুর কোন জুড়ি নেই।
ব্রণ : যাদের মুখে প্রায়ই ব্রণ দেখা দেয়, কিছু দিন মুখে লেবুর রস মাখলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
পিত্ত ও মূত্রপাথরি : লেবু পিত্ত ও মূত্রপাথরি পীড়ায় বেশ কার্যকর। পাথর অপসারণ করতে সক্ষম। কারণ লেবুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাইট্রিক এসিড বিদ্যমান। পিত্ত ও কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হওয়া প্রতিরোধ করে লেবুর রস।
স্থুলতা : লেবুতে থাকা পেকটিন ফাইবার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে, যা শরীরের বাড়তি মেদ ও অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে সকালে কুসুম গরম পানির সাথে লেবুর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে ভাল কাজ করে।
গর্ভ : গর্ভকালীন নিয়মিত লেবু মিশ্রিত পানি খেলে গর্ভবতীর শরীর ভাল থাকে এবং লেবুতে থাকা প্রচুর ভিটামিন–সি ও পটাশিয়াম গর্ভের সন্তানের হাড়, মস্তিষ্ক ও দেহ–কোষ গঠনে সহায়তা করে।
শ্বাসকষ্ট : লেবুতে থাকা ভিটামিন–সি ঠাণ্ডা লাগা প্রতিরোধ করে, কারণ এটি অ্যান্টিসেপটিক। ঠাণ্ডালাগা প্রবণতা, ঠাণ্ডা জনিত কারণে জ্বর ও গলা ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট নিরাময় করে লেবুর রস। নিয়মিত ঈষদষ্ণু গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে কিছু দিন নিয়মিত খেলে অ্যাজমা–শ্বাসকষ্ট দূর হয়। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ের শ্বাসকষ্ট দূর করতে একটি একটি কার্যকর ব্যবস্থা।
দাঁত : ভিটামিন–সি থাকায় লেবু দাঁত ব্যথা কমায়, দাঁত ও মাড়ির ক্ষয়রোধ করে। মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
ঠোঁট ফাটা : যাদের প্রায়ই ঠোঁট ফাটে, ঠোঁট থেকে চামড়া উঠে যায়, ঠোঁটে লেবুর রস মাখলে, বিশেষ করে রাতে শুয়ার আগে কিছুদিন ঠোঁটে ভালকরে লেবুর রস মেখে শুলে ঠোঁটফাটা বন্ধ হয়ে যাবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে লেবুর রস। গবেষণায় দেখা গেছে, লেবুতে এমন কিছু উপাদান আছে যা ম্যালিগনেন্ট টিউমার প্রতিরোধ করে।
যারা ক্রিমিজনিত সমস্যায় ভোগেন, ক্রিমি প্রতিরোধে লেবু মিশ্রিত পানি খুবই উপকারী।
লেবু মানবদেহের পুরো নার্ভাস সিস্টেম সচল ও সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে। লেবুতে থাকা পটাশিয়াম বিষণ্নতা, অবসাদ, ক্লান্তি ও উৎকণ্ঠা দূর করে। মাথাঘোরা ও দুর্বলতা দূর হয়।
শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ও মাসল ব্যথা উপশম হয়। যারা আথ্রাইটিসে ভোগেন তাদের জন্য লেবুর শরবত একটি ভাল পানীয়।
সতর্কতা : একই খাদ্য সব মানুষের জন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। যেমন কারো গরু গোস্তে এলার্জি, কারো, ছাগলের গোস্তে। কেউ বেগুন খেতে পারে না, কেউ সিম খেতে পারে না। যার জন্য যে খাদ্যদ্রব্য এলার্জি তাকে সেটিই পরিহার করতে হবে। লেবু একটি উচ্চমাত্রার ভিটামিন–সি সমৃদ্ধ ফল। কারো কারো অ্যাসিডিটি হতে পারে। তবে এটা সাময়িক। যার এমন হয়, লেবুর রস সরাসরি না খেয়ে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া উত্তম।
বাজার থেকে কী ধরনের লেবু কিনবেন : সবধরনের লেবুই স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম। তবে পেকে একেবারে হলুদ হয়ে গেছে সেগুলোর চাইতে হাল্কা সবুজ রঙের পাকা তাজা লেবু অধিকতর মান সম্পন্ন।
নইম কাদের
চেম্বার ঃ হোমিও হেলথ হোম, বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম৷
মোবাইল ঃ 01991948591 , 01819398338
মোবাইল ঃ 01991948591 , 01819398338
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন