বাংলাদেশ বার্তাঃ কোলকাতার দমদম বিমানবন্দর থেকে আসামের শিলচরের উদ্দেশ্যে আমাদের বিমান আকাশে উড়াল দিলো জ্যৈষ্ঠের এক আলো ঝলমল সকালে। অল্প কিছু যাত্রী নিয়ে ছোট্ট একখানা বিমান! ভালই লাগছিল! এ যেন খেলনা বিমানে চড়ে খোকা-খুকুদের আকাশ-যাত্রা! আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে আকাশের প্রাঙ্গণটা অন্তহীনতার একটি নমুনা মাত্র! বিশাল এই আকাশেরই কোথাও চিরিক দেয়া রোদের খেলা আবার কোথাও মেঘ-বালিকাদের জমজমাট মেলা! নানা প্রকারের মেঘ, নানা বর্ণেরও! কিছু মেঘ উজ্জ্বল হাসি ছড়ায়, আমাদের মনটাকে সুখবোধে ভরে দেয়! আবার ছিঁদকাঁদুনে কিছু মেঘ যেন সুযোগ পেলেই কেঁদে-কেটে পৃথিবী ভাসায়! শ্যামল বরণ ওসব মেঘের মেয়েরা খুব বেশী উঁচুতে উড়তে পারে না! জলের ভারে ওরা নেমে আসে অনেক নীচে। আমাদের কোলে নিয়ে ভারতীয় স্পাইস জেট-এর ছোট্ট বিমানখানা মেঘমূক্ত আকাশের পরিচ্ছন্ন অঙ্গন ছেড়ে বড্ড আহ্লাদে ভাসতে ভাসতে ক্রমশঃ একদল কালো মেঘের দিকেই ছুটে গেল যেন! প্রথমে চোখে পড়লো আমাদের আশেপাশে ও নীচে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো শাদা শাদা মেঘ! রোদ পিছলে যাওয়া কিছু মেঘকে মনোহর লাগছিল দেখতে! এরপর দৃশ্যমান হলো জল-টলমলে কিছু কালো মেঘ! বাহ! বাহ! বলতে বলতে আমরা মহা উৎসাহে মেঘের ছবি তুলছি! প্লেনের জানলা দিয়ে দৃশ্যমান মেঘের ছবি! হুঁশ হলো যখোন পুরো বিমানটা দু’তিনটে ঝাঁকুনি খেল আর পাইলটের কেবিন থেকে ভেসে এলো সতর্ক বার্তা! সিট-বেল্ট বেঁধে নিতে হবে আর সোজা হয়ে বসতে হবে!
ততক্ষণে আমরা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে আসামের আকাশে উড়তে শুরু করেছি! আসাম পাহাড়ী প্রদেশ। পাহাড়ের সাথে মেঘের সখ্যতা আজন্ম-লালিত বলা যায়! তা বলে, তাদের সেই সখ্যতা আমাদের বিমানযাত্রাকে বিপজ্জনক পর্যায়ে ঠেলে দেবে, তা বুঝতে পারিনি! তবে, ব্যাপারটা ভালভাবেই টের পেতে আমাদের খুব বেশী সময় লাগলো না! বিমান বাম্পিং করতে থাকলো পুরো দমে! যাত্রীদের মধ্যে ভয়-কাতরতার আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠলো! কারো কারো বমির শব্দ সেই ভয়কে আরো গাঢ় করে তুললো! ঠোঁট নড়ছে প্রায় সবারই! সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছে সবাই প্রগাঢ় আন্তরিকতায়! ‘প্রভু! এবার অন্ততঃ বিপদ থেকে রক্ষা করো! ছেড়ে দাও আমি অসহায়কে!’ আমার ধারণা, পাহাড়ের মতো বিশালাকৃতির এসব জমাটবাঁধা কালো মেঘের ভেতর কিছু কিছু শূন্যস্থান বা খালি পকেট হয়তো থাকে যেখানে কোন হাওয়া থাকে না, যাতে ভর করে বিমান উড়তে পারে! ওই খালি পকেটগুলোতে এলে বিমান যেন একটুখানি ‘ফ্রি-ফল’ করে! ব্যাপারটা বড্ড অ¯^স্থিকর! ওই সামান্য সময়টুকুতেই পেটের ভেতর যা কিছু আছে তার সবই গুলিয়ে উঠে ছুটে বেরিয়ে আসতে চায় মুখ দিয়ে! ঢোক গিলে গিলে শান্ত থাকার চেষ্টা করছি আর মুখে জারী হয়ে গেছে নানা প্রকার দোয়া-দরূদ! বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে! বিমানের কাঁচের জানলায় পানির ফোঁটা দেখতে পাচ্ছি। ঘণ মেঘের ধোঁয়াটে আবরণ জড়িয়ে রেখেছে আমাদের বিমানকে চতুর্দিক থেকে! ছোট্ট বিমানখানার এত বেশী কাঁপুনি-ঝাঁকুনি আর ফ্রি-ফল চরম অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে প্রতিটি যাত্রীকে! মনে হচ্ছিল, এখুনি এই খেলনা-বিমান গোত্তা খেয়ে ভেঙ্গে পড়বে জমিনের উপর! আমি অন্ততঃ এধরণের বাম্পিংয়ের মুখোমুখি হইনি কখনো। জানলার পাশেই বসে ছিলাম! ‘আর কত পথ বাকী!’ বুঝার আশা নিয়ে অসহায় দৃষ্টি রাখলাম নীচের দিকে। অবাক হয়ে দেখলাম, অল্প নীচেই পাহাড়ের চূড়াগুলো চোখে পড়ছে! আমার দৃষ্টি খুঁজে ফিরছিল এয়ারপোর্ট ধরণের কোন স্থাপনা! নাহ্! তেমন কিছু চোখে পড়লো না! আমার পাশে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ঠ শিক্ষাবীদ, সমাজ-সংগঠক ও আলেম জনাব মোহাম্মদ নুরুদ্দিন। লেখালেখিতেও বেশ সচল তাঁর হাত! ছোটদের জন্যে বেশ কিছু বই লিখেছেন। আমি তাঁর সাথে আলাপ জুড়ে দিলাম, মূলতঃ নিজেকে হালকা করার জন্যে। অন্তর জুড়ে তো আল্লাহ নামের জিকির চলছেই! হাফেজ মুনির ভাই ছিলেন একই সারিতে অন্য আসনে। একটু বড় করেই আল্লাহর নাম নিচ্ছিলেন। তাঁর কাছেই জেনেছিলাম যে, বিমান যত ছোটই হোক না কেন আর যত বেশী বাম্পিংই করুক না কেন, যদি রোটার বা পাখা বন্ধ না হয় তাহলে কোন ভয় নেই; সে কখনো দড়াম করে ঢিলের মতো ভূমিতে গিয়ে আছড়ে পড়বে না! এধরণের তথ্য সাহসের মাত্রাটা বাড়িয়ে দেয়, নিঃসন্দেহে! একটু পরেই আমাদের বিমান মেঘের অনেক নীচে নেমে এসে ল্যান্ড করার জন্যে উড়তে থাকলো আর ভয়াল দুঃস্বপ্নের মতো হঠাৎ করেই আমাদের সকল অস্বস্থি শেষ হয়ে গেল! আলহামদুলিল্লাহ। খারাপ আবহাওয়ার জন্য আধ ঘন্টা বাড়তি সময় উড্ডয়নের পর ল্যান্ড করলো আমাদের বিমান। শিলচর এয়ারপোর্টকে বড্ড সাদামাটা গ্রামীন বিমান বন্দর বলা যায়! স্থাপনা বলতে একতলা কয়েকটি ঘর। এটি ভারতের আভ্যন্তরীণ রুটের একটি এয়ারপোর্ট। মনে পড়লো চীনের বিভিন্ন প্রদেশে ঘরিতে গিয়ে দেখা সেদেশের আভ্যন্তরীণ রুটের এয়ারপোর্টগুলোর কথা। ওখানকার প্রতিটি এয়ারপোর্টই আধুনিক, সুন্দর ও পরিসরের দিক থেকে অনেক বড়! সেই তুলনায় এখানকার এয়ারপোর্টগুলোর কোন উজ্জ্বলতা নেই; বড্ড মলিন!
আসামে আমরা এসেছি আল কোরআন একাডেমি লন্ডনের ‘বিশ্বব্যাপী কোরআন বিতরণ কর্মসূচী’র অংশ হিসেবে পবিত্র কোরআন মজিদের সহজ সরল বাংলা অনুবাদ বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্যে। এয়ারপোর্টে যারা অভ্যর্থনা জানালেন তাদের আন্তরিকতা ও কথাবার্তায় মনে হলো আমরা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের কোন আত্মীয়-বাড়ীতে বেড়াতে এসেছি। একেবারেই দেশজ প্রাণখোলা অভ্যর্থনা। একবারও মনে হয়নি আমরা ভিন্ন একটি দেশে এসেছি এক অচেনা জায়গায়! আকাশ মেঘলা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে বেশ কয়েক মাইল দীর্ঘ জীর্ণদশার রাস্তা পেরিয়ে স্থানীয় কন্সট্রাকশন ব্যবসায়ী জনাব আবদুল মুকিত টোপাদারের আলীশান বাড়ীতে মেহমান হলাম আমরা। তিনি আসামের নামকরা পুস্তক প্রকাশক রহমানিয়া বুক ডেপোর মালিক জনাব লুৎফর রহমানের বেয়াই। লুৎফর রহমান সাহেব আবার স্থানীয় সমাজ-সংগঠকদের একজন। দুই বেয়াই মিলে আমাদের সঙ্গ দিলেন সারাক্ষণ। প্রথমে নাস্তা ও পরে দুপুরের খাবারের আয়োজনে তাদের অন্তরের ধনাঢ্যতা আমাদের মুগ্ধ করলো। অনেকেই এলেন আমাদের সাথে মোলাকাত ও গল্প করার জন্যে! কেউ কেউ মূখর হয়ে বল্লেন এতদঞ্চলের মুসলমান সংখ্যা গরিষ্ঠতার কথা! দুই সহোদরের নামে জকিগঞ্জ ও করিমগঞ্জ নামকরণ হয়েছে তা’ও শুনলাম। করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দি-কাছার নিয়ে বিশাল এলাকায় বিপুল সংখ্যক মুসলমানের বাস। কিন্তু দারিদ্র এদের নিত্য সঙ্গী; শিক্ষার আলোর প্রভাব মোটেও প্রখর হতে পারেনি আর তাই, মূলতঃ দারিদ্র ও অশিক্ষা-কুশিক্ষার কারণে, মুসলমান সমাজ নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে- ঐক্য নেই! পীর আর মাজার ভক্ত, তবলীগ, নাদওয়াতুত তামীর, জামাতে ইসলামী আর দেওবন্দ ইত্যাদি নানা মত ও পথে বিভক্ত হয়ে আছে মুসলমান সমাজ। খাওয়া-দাওয়ার ফাঁকে ফাঁকেও গল্প হলো অনেক। কোরআন বিতরণের প্রথম অনুষ্ঠানটা হবে শিলচর শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদে, বা’দ যোহর। ভুঁড়ি-ভোজনের পর দুইখানা গাড়ীতে আমরা সেই মসজিদে পৌঁছালাম। সবাই চেনে ‘বড় মসজিদ’ হিসেবে। নামাজের পর যথারীতি ঈমাম সাহেব ঘোষণা দিলেনঃ ‘নামাজ শেষে মসজিদের দোতলায় পবিত্র কোরআনের উপর এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে যোগ দেয়ার জন্যে সুদূর লন্ডন থেকে আল কোরআন একাডেমি লন্ডনের চেয়ারম্যান ডঃ হফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ তশরিফ এনেছেন এবং বাংলাদেশ থেকেও কয়েকজন মেহমান এসেছেন। আপনারা সকলেই আমন্ত্রিত।’
মসজিদের দোতলার পরিসর অনেক বড়। ‘কোরআন সেমিনারে’র ব্যানার ঝুলিয়ে, মাইক লাগিয়ে বেশ ভালই ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেখতে দেখতে অনেক লোকের সমাগম হলো। বাংলাদেশ থেকে আগত মিডিয়া এক্সপার্ট জনাব আবদুর রাজ্জাক ক্যামেরা ও মিডিয়ার বিষয়টা দেখভাল করছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখলেন জনাব লুৎফর রহমান এবং কয়েকজন স্থানীয় মুরুব্বী। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত মেহমান জনাব মোহাম্মদ নুরুদ্দিনের পর আমাকেও কিছু কথা বলতে হলো। কোরআন নিয়ে তো নতুন কিছুই বলার নেই! কোরআন কেন আল্লাহ পাঠালেন আর কোরআনের প্রতি সুবিচার করতে হলে আমাদের প্রত্যেককে কী কী করতে হবে, এটুকু বলতে গেলেই তো অনেক কথা বলা হয়ে যায়! কোরআন যে তাবিজ-তুমারের বই নয়, এর প্রতিটি কথা যে জানার ও মানার জন্যে সেকথা বিশেষতঃ বাংলাভাষী লোকদের স্মরণ করিয়ে দেয়া অত্যন্ত জরুরী! এরপর অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ডঃ হফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ বক্তব্য রাখলেন। তিনি তাঁর হৃদয়-ঘণিষ্ঠ ‘কোরআন বিতরণ’ প্রোগ্রাম নিয়ে কথা বল্লেন। আর বল্লেন, কোরআন পড়ার কথা, কোরআন বুঝার কথা এবং জীবনের সুখ-শান্তি ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোরআনের আলোকে জীবন গড়ার কথা। মসজিদ ভর্তি শ্রোতা একাগ্রচিত্তে তাঁর কথাগুলো শুনলো। এরপর কোরআন বিতরণের সময় দেখা গেল, তাঁর অনুবাদকৃত কোরআন তাঁরই হাত থেকে গ্রহণ করার জন্যে প্রতিটি মানুষের সে কি আগ্রহ!
শিলচর বড় মসজিদের অনুষ্ঠান শেষ করে বিকেল সাড়ে তিনটায় আমরা বের হলাম বদরপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আমাদের গাড়ী ধীরে ধীরে শিলচর শহর ছেড়ে প্রধান সড়কে উঠে এলো। শিলচর কাছার জেলার প্রধান শহর। বারাক নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা অনেক বড় আয়তনের এই শহরের পুরোটা দেখা হয়নি; অংশ বিশেষ আমার চোখে পড়েছে মাত্র। তা’তে মনে হলো দারিদ্রের ছোঁয়া সব কিছুতেই! রাস্তা-ঘাট, বাড়ী-ঘর, অফিস-আদালত এবং সব রকম যানবাহনের মধ্যে! আধুনিকতার ছোঁয়াহীন তৃত্বীয় বিশ্বের জনবহুল একটি জেলা-শহর! উন্নয়নের লক্ষ্যে অনেক কাজ করার আছে এই মানুষগুলোর জন্যে। প্রধান সড়কের অবস্থাও ততৈবচঃ! দীর্ঘ পথের দুইপাশে যতটা না জনবসতি তার চে’ বেশী উঁচু-নীচু টিলা ও পাহাড়! বাংলাদেশের সিলেট জেলার সীমান্তরেখা নানারকম বক্রতায় সমšি^ত হয়েছে আসামের করিমগঞ্জ ও কাছার জেলার সাথে। আজন্ম প্রতিবেশী। বাঙ্গালী মুসলমান প্রধান কাছার-করিমগঞ্জের লোকেরা খুব সহজেই সীমান্তরেখা পার হয়ে সিলেটের আত্মীয়-বাড়ীতে বেড়াতে যায়! ওরাও আসে। পাসপোর্ট-ভিসার হাঙ্গামা ওরা করে না। এমনটা আগেও হতো, এখনো হয়। তবে, ইদানিং কড়াকড়িটা বাড়িয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সীমান্তে দিয়েছে কাঁটাতারের বেড়া!
আমরা চলতে থাকলাম বদরপুরের দিকে। পথে একটি দোকানে চা-মিষ্টি খেলাম। বিকেলের রোদ গায়ে লাগছে আর হাওয়াটাও বেশ গরম! বদরপুরের আল আমিন একাডেমী পৌঁছালাম সূর্য্য ডোবার একটুখানি আগে, বিকেল সোয়া পাঁচটায়। পথে কোন মসজিদ চোখে পড়েনি যেখানে নামাজ পড়তে পারি! মুসলমান-প্রধান জনপদের জন্যে ব্যাপারটা মানানসই মনে হয় নি। তাড়াহুড়ো করে আছর আদায় করলাম একাডেমীর মসজিদে এবং একটু পরেই মগরেব পড়লাম। এর মধ্যেই নানা পদের ফল দিয়ে আমাদের নাস্তার ব্যবস্থা করা হলো। আল আমিন একাডেমী মুসলমানদের পরিচালিত একটি আবাসিক স্কুল। পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ছোঁয়া আছে বলেই এই প্রতিষ্ঠান খুব ভালো রেজাল্ট করে চলেছে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই, বছরের পর বছর। এশার আগেই কোরআন বিতরণ অনুষ্ঠান হলো তিন তলা মসজিদের দোতলায়। স্থানীয় অনেক গণ্যমান্য লোক ও শিক্ষকমন্ডলী উপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষা শেষে স্কুলের ছুটি চলছে, তাই ছাত্ররা নেই। অনুষ্ঠানে বিতরণ-পূর্ব বক্তব্যে স্থানীয় বিশিষ্ঠ ব্যক্তিদের আহ্বান জানানো হলো ‘কোরআন বিতরণ কর্মসূচী’তে আপন আপন সক্ষমতা অনুযায়ী প্রত্যেককে সংশ্লিষ্ঠ হওয়ার জন্যে। কোরআন বিতরণ তো প্রত্যেক মুসলমানেরই আপন কাজ! আমাদের বক্তব্যের পর, স্থানীয়দের বক্তব্যও শোনা হলো। রাজনীতি-সম্পৃক্ত একজন স্থানীয় নেতা কোরআন বিতরণের কাজকে তাঁদের এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। বল্লেন, বর্তমান অশান্ত বিশ্বে শান্তি ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে কোরআন-মুখী হওয়ার বিকল্প নেই। খুব আগ্রহ ও ভক্তি সহকারে সমাগতরা প্রত্যেকে এক কপি কোরআন গ্রহণ করলেন। আল কোরআন একাডেমী লন্ডনের কোরআন বিতরণের এই জনসেবামূলক কাজটাকে আমার কাছে খুবই সময়োপযোগী বলেই মনে হয়। এই প্রতিষ্ঠান নেপালে নেপালী ভাষায় অনুদিত কোরআন, উর্দুভাষীদের জন্যে উর্দুভাষায় অনুদিত কোরআন এবং পাশ্চাত্যের লোকদের জন্যে ইংরেজী ভাষায় অনুদিত কোরআন বিতরণ করে আসছে বেশ ক’বছর ধরে। আর সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের মধ্যে প্রায় বিশ কোটি কোরআন বিতরণের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। এবারের সফরটাও সেই লক্ষ্যেরই পরিপূরক!
পরদিন ফজর পড়েই আমরা গাড়ীতে চাপলাম। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শিলচর শহরকে পাশ কাটিয়ে আমরা শিলচর বিমানবন্দর পৌঁছালাম। বিমানবন্দরের বাইরেই একটি ঝুপরি দোকানে বসে চা-নাস্তা সারলাম। এখানে মানসম্মত দোকান এটাই! আশার কথা হলো, এবারের বিমানটা আকৃতিতে অনেক বড়। বড় বিমানগুলো মেঘের অনেক উপরে উঠে চলাচল করে এবং স্বাভাবিকভাবেই এর স্থিরতা অনেক বেশী। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বড় আকারের বিমানে চড়ে সাদা-কালো সব রকমের মেঘ ফুঁড়ে কোন রকম তকলিফ ছাড়াই আমরা দমদম পৌঁছে গেলাম, আলহামদুলিল্লাহ। রানওয়েতে বিমানের টেক্সিয়িং-এর সময় নুরুদ্দিন ভাই আঙ্গুল উঁচিয়ে তাঁর বাড়ীটা দেখালেন। বিমানবন্দরের সীমানা দেয়ালের ঠিক অপর পাশে ছবির মতো একখানা বাড়ী! আমি বল্লামঃ বাহ্! সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্সের ঝক্কিটা না থাকলে, এক লাফেই তো যাওয়া যেত! নুরুদ্দিন ভাই হাসলেন এবং বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে নানা পথ ঘুরে ঠিক ওই বাড়ীতেই নিয়ে গেলেন আমাদের সকলকে।
খুব অল্প সময়ে আপন করে নিতে পারেন নুরুদ্দিন ভাই। গতকাল সকালে আমি আর আবদুর রাজ্জাক ভাই কলকাতার অত্যাধুনিক ‘নেতাজী সুবাস চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে পৌঁছালে আমাদের আনার জন্যে গাড়ী পাঠিয়েছিলেন নুরুদ্দিন ভাই। আমরা উঠলাম দমদম এলাকার একটি হোটেলে। তিনি এসে সেখানে দেখা করলেন এবং আমাদের নিয়ে বেরুলেন। দমদম থেকে নতুন সড়ক ধরে কলকাতার শহর-কেন্দ্রে যাওয়ার পথে তিনি আমাদের কোথায় নতুন শহর হয়েছে আর কোথায় উড়াল-সড়ক হয়েছে তা বর্ণনা করলেন। ধর্মতলার আগেই তালতলা। এর আগে যে এলাকাটা পার হলাম তাকে উন্নয়ন-বঞ্চিত একটি ভুতুড়ে এলাকার মতো মনে হলো আমার কাছে। শহরের প্রায় মধ্যিখানে এমনটা হলো কেন? নুরুদ্দিন ভাই বল্লেন, এটা ছিল প্রাচীনকাল থেকেই মুসলমান-প্রধাণ এলাকা। পাকিস্তান ও ভারত স্বাধীন হওয়ার মাত্র এক বছর আগে উনিশশ’ ছেছল্লিশ সালে যে বিরাট দাঙ্গা হয়েছিল এটাই সেই এলাকা! অনেক মুসলমান নিহত হয়েছিল উগ্র-হিন্দুদের হাতে! বাকীরা নিজেদের বাড়ী-ঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল প্রাণ নিয়ে। অনেকেই আর কখনো ফিরে আসেনি। যারা ফিরেছে তারাও হিন্দু পান্ডাদের ভয়ে নিরাপত্তা পায়নি! আমি অবাক হয়ে বল্লাম, স্বাধীনতার সত্তর বছর পর এখনো কি কোন নিরাপত্তা নেই? নুরুদ্দিন ভাই কোন জবাব দিলেন না! বাড়ী-ঘর ফাঁকা পড়ে আছে। অবৈধভাবে দখল করে আছে অনেক হিন্দু মাস্তান। আইনগত ভিত্তি নেই বলে দালান-কোঠা গড়ে বড় আকারের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। এভাবেই চলছে ‘গণতান্ত্রিক স্বাধীন ভারতে’ মুসলমানদের হালহাকিকত! ইতিহাসে পড়েছি, ছেছল্লিশে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল পশ্চিমবঙ্গে। সবচেয়ে কুখ্যাত দাঙ্গাটা হয়েছিল কলকাতায়! আমি এখন সেই জায়গায় হাজির! হাজার হাজার মুসলমানকে কচু-কাটা করেছিল উগ্র হিন্দুরা! হোসেন শহীদ সহরোয়ার্দীর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে দাঙ্গা থেমেছিল। কিন্তু মুসলমানদের যে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তাতো আমি এখনো সচক্ষে দেখতে পাচ্ছি! হিন্দু-প্রধান পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় মুসলমান-প্রধান পূর্ববঙ্গে (অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে) কোন দাঙ্গাই হয়নি! নোয়াখালীতে যে দাঙ্গার খবরে গান্ধী নিজেই ছুটে এসেছিলেন তাতে একজন মাত্র নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছিল! ভালো লাগলো এই কথা ভেবে যে, আমাদের অঞ্চলে সংখ্যালঘু হিন্দুরা সেকালেও নিরাপদে ছিল এবং এখনো আছে বহাল-তরবিয়তে, মহাসুখে! এনিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি। আমাদের গাড়ী এগোচ্ছে। তালতলায় একটি বাড়ী দেখিয়ে নুরুদ্দিন ভাই বল্লেন, এই বাড়ীতে বসেই কাজী নজরুল বিদ্রোহী কবিতা লিখেছিলেন। কিন্তু দুঃখের কাহিনী হচ্ছে, ভাড়া আদায় করতে না পারায় বাড়ীওয়ালা তাঁকে সেই বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল! আর্থিক অনটনের এসময়েই তিনি পয়সা উপার্জনের জন্যে নিজে শ্যামা-সঙ্গীত লিখেছিলেন এবং কলকাতা রেডিওতে তা গেয়েছিলেন! ওই এলাকাতেই চোখে পড়লো ১৮৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ক্যালকাটা বয়েজ স্কুলে’র সাইনবোর্ড। রাস্তার ডান পাশে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার অফিস। আমরা ক্রমশঃ এগোলাম কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র ন্যুমার্কেট-চাঁদনী চক এলাকার দিকে। চাঁদনী চকের একটা জীর্ণদশার মসজিদে আমরা জোহর পড়লাম এবং একটি রেস্টুরেন্টে মাছ-তরকারী দিয়ে খেলাম। এরপর আমরা বের হলাম কলকাতা শহর দেখার জন্যে। হুগলী নদীর পূর্বতীরে প্রিন্সেপ ঘাট। এখানে ওপারের সাথে একটি ব্রীজ আছে আর এপারে আছে মিঃ জেমস প্রিন্সেপের সম্মানে নির্মিত একটি সৌধ। বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে পার্ক। এতদঞ্চলের প্রাচীনতম শহর হলো কলকাতা। ছোটবেলায়ও মুরুব্বীদের মুখে কত না শুনেছি এই শহরের গল্প! আমার মরহুম আব্বা কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানার গল্প করেছিলেন, মনে আছে। গাড়ীতে বসে ঘুরে ঘুরে এর কতটুকুইবা দেখা যায়! হাওড়া ব্রীজ, ভিক্টোরিয়া পার্ক ইত্যাদি ঘুরে আমরা মগরেব পড়লাম ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদে। শুনলাম টালিগঞ্জে আরো একটি মসজিদ আছে সংগ্রামী বীর শহীদ টিপু সুলতানের নামে। ইংরেজের আনুগত্য স্বীকার না করে স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়া টিপুর জন্যে প্রতিটি স্বাধীন ভারতীয় নাগরিকেরই গর্ব বোধ করার কথা! অথচ ইদানিং পত্রিকায় দেখতে পাই, শহীদ টিপু সুলতানের নামে কুৎসা বর্ণনা করে বক্তব্য রাখছে বর্তমান ভারতের হিন্দুত্ববাদী নেতারা! ইতিহাস অস্বীকারকারীদের দম্ভ ও হীনমন্যতা আমাকে কষ্ট দেয়! আমরা হোটেলে ফিরে গিয়ে রাতের খাবার খেলাম।
গতকাল সকালে কলকাতা আসার পর থেকেই আমরা নিরন্তর ছুটছি! এই গতিময়তার মধ্যেই আমরা চট-জলদির মেহমান হয়ে গেলাম নুরুদ্দিন ভাইয়ের সুন্দর সাজানো বাড়ীটাতে! দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণের পর এখন হবে সকালের নাস্তা। একে একে আমরা সবাই ফ্রেস হলাম। এরপর হলো খাওয়া-দাওয়া। অন্দরমহলে পূর্ব প্রস্তুতি ছিল ভালই, তা না হলে এত পদের উপাদান দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করা সম্ভব হতো না। আবার আমরা পথে বেরিয়ে পড়লাম। গাড়ী চলতে শুরু করলো আল আমিন মিশন স্কুলের উদ্দেশ্যে।
কলকাতার অবস্থান হলো পশ্চিমবঙ্গের ‘উত্তর চব্বিশ পরগনা’ জেলায়। এর পশ্চিমেই হাওড়া জেলা। আমরা যাবো হাওড়া জেলার উদয়নারায়ণপুরের অন্তর্গত খলতপুরে। পথে আমাদের সাথে যোগ দিলেন ‘মিজান’ পত্রিকার সাংবাদিক, লেখক ও সমাজ-চিন্তক মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন। হাসি-খুশী মানুষ। আলাপ করলেই মননশীলতা ও চিন্তা-চেতনার ধার আঁচ করা যায়। প্রথম সাক্ষাতেই ভাল লেগে গেল আমার। খলতপুরে আল আমিন মিশন স্কুলের কেন্দ্রীয় ক্যাম্পাস ও হেডকোয়ার্টার। প্রাইমারী ও হাই স্কুল, কলেজ, ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেল, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিবাস, অফিস সব মিলিয়ে বেশ ক’টি বহুতল ভবন আর বিস্তৃত খোলা মাঠ নিয়ে গড়ে ওঠা বিশাল ক্যাম্পাস। আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন আল আমিন মিশন ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম। তাঁর অফিসে বসে মিষ্টি খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে তাঁর মুখেই শুনলাম আল আমিন মিশন পরিবারের কর্মযজ্ঞ ও সাফল্যের কাহিনী। শুধু হাওড়াতেই আছে এই স্কুলের আরো ছ’টি ক্যাম্পাস। গত বত্রিশ বছরে এর আবাসিক ক্যাম্পাস হয়েছে মোট ৬৪টি। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও আশেপাশের কয়েকটি প্রদেশে এর ডালপালা বিস্তৃত হয়েছে। এই বিশাল প্রতিষ্ঠানের প্রধান জনাব এম. নুরুল ইসলাম বল্লেন, “রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষা ও সেবামূলক ক্রিয়াকলাপে অনুপ্রাণিত হয়ে নবী(দঃ)র নামে ‘আল-আমীন মিশন’ গড়ে তুলি। সমাজের পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু মুসলমান সমাজে শিক্ষার আলো ছড়ানোই আমাদের লক্ষ্য।” উচ্চ-শিক্ষার নানা ক্ষেত্রে, বিশেষতঃ মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং, আল আমিন মিশন স্কুলের সাফল্যের রেকর্ড দেখে সত্যিই অবিভূত হতে হয়!
আল আমিন মিশন স্কুলের শাখা প্রধানদের ওয়ার্কশপ চলছিল। তাই আমরা পেয়ে গেলাম, একসাথে সবাইকেই বলা যায়। শিক্ষক-শিক্ষিকারা তো ছিলেনই! কোরআন বিতরণ প্রোগ্রামে অডিটরিয়াম ছিল টইটুম্বুর! সকলের হাতে একখানা কোরআন তুলে দেয়ার আগে কিছু বক্তব্য আমাদের রাখতেই হলো। সর্বজন শ্রদ্ধেয় ডঃ হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমদ বল্লেন, আপনারা যারা মানুষ গড়ার কারিগর তাদের হাতে পবিত্র কোরআনের সহজ সরল বাংলা অনুবাদ তুলে দিতে পেরে আমি এই ভেবে আনন্দিত যে, আপনাদের মাধ্যমেই ‘কোরআনের আলোকে জীবন গড়া’র অপরিহার্য্যতার কথা, আমাদের আগামী প্রজন্ম, প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর হৃদয়ে আসন গেড়ে নেবে।
এরপর আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো ছাত্রী হোস্টেলে। চারশত ছাত্রী এখানে থেকে পড়াশোনা করছে। এদের কেউ বিনাবেতনে, কেউ আংশিক বেতনে আর কেউ পূর্ণ বেতন দিয়ে পড়াশোনা করছে। মাধ্যমিক পরীক্ষায় সমগ্র প্রদেশের মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এই স্কুলের অনেকেই! একটি হল রুমে শুধুমাত্র একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীদের মধ্যে কোরআন বিতরণ করা হলো। তাতেই হলে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছিল না! তাদের হাতে কোরআন তুলে দেয়ার আগে ইসলামী সমাজে ও ইসলামে নারীর গুরুত্ব নিয়ে কিছু কথা বলা হলো। হাফেজ মুনির তাদেরকে ‘নাতনী’ বলে সম্বোধন করে অত্যন্ত আবেগময় ভাষায় বল্লেন, তারাই হচ্ছে আমাদের আগামী প্রজন্মের তথা আগামী দিনের ও জাতির সংরক্ষক ও হেফাজতকারী। কোরআনের সাথে আজীবনের ভালবাসাই তাদের জন্যে সফলতা বয়ে আনবে। আল আমিন মিশন থেকে বিদায় নিয়ে আছরের আগেই আমরা ছুটে চললাম মওলানা আজাদ একাডেমীর উদ্দেশ্যে। হাওড়া জেলারই বাগনানের অন্তর্গত হাল্যান গ্রামে এই একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই ‘হাল্যান’ নামের একটা মজার ইতিহাস আছে। নামফলকে লেখা হয়ঃ হাল্যান, কিন্তু স্থানীয় মানুষজনের মুখে মুখে নামটা দাঁড়িয়েছেঃ হাল্যেন। মুরুব্বীদের কাছে শোনা প্রচলিত গল্পে জানা যায়, স্বাধীনতারও বহু যুগ আগে রাণা প্রতাপ সিংহের দুই সৈনিক হলদিঘাটের যুদ্ধে পরাজয়ের পর পালিয়ে আসে এই এলাকায়। তারা বাঙ্গালী ছিল না এবং বাংলা ভাষাও জানতো না। তবু তারা এখানেই বসবাস শুরু করে এবং তাদের হাতেই এই গ্রামের পত্তন ঘটে। তাদের অতীত জীবন সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন করলে ভাঙ্গা বাংলায় শুধু বলতে পারতোঃ ‘রাণা হারলেন!’ এই ‘হারলেন’ শব্দটাই মুখে মুখে পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘হাল্লেন’ বা ‘হাল্যেন’! হারলেন > হাল্লেন > হাল্যেন > হাল্যান। অপভ্রংশ আর বর্ণবিপর্যয়ের ফলে এধরণের কত নাম যে জন্ম নিয়েছে তার কি ইয়ত্তা আছে? আমি ভাবছিঃ যে লোকালয়ের নাম জন্ম নিলো হেরে যাওয়া থেকে, তেমন একটি অজপাড়াগাঁয়ে কেমন সুন্দর আলোকবর্তিকার মতো দাঁড়িয়ে আছে মওলানা আজাদ একাডেমী!
মওলানা আজাদ একাডেমীর সাফল্যের গল্পও অনেক। ডঃ এস এ মুজিদ এই একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে এই বয়সেও অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, একদল পরিশ্রমী সহকর্মীকে সাথে নিয়ে, পিছিয়ে পড়া সংখ্যালঘু মুসলমানদের শিক্ষার মানোন্ন্য়নের জন্যে। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা বিভাগের একজন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন অল্পদিন আগে। এখানে বলে রাখা ভাল যে, শুধু পশ্চিবঙ্গে নয় বরং সমগ্র ‘ভারতে মুসলমানরাই শিক্ষায় সবচেয়ে অনগ্রসর’ (এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ১১ জুলাই ২০১৭)। মাঠ পর্যায়ের জরীপের উপর ভিত্তি করে এই রিপোর্ট তৈরী করেছে ভারত সরকারেরই একটি কমিশন। ধারাবাহিক কূট-পরিকল্পনা, হিংসার রাজনীতি ও নানা প্রকার সামাজিক অবিচারের মাধ্যমে পুরো ভারতের মুসলমান জাতিকেই লজ্জাজনক প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেয়া হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। যার ফল হয়েছে এই যে, এই পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান জনসংখ্যা শতকরা ২৫ ভাগ হলেও সরকারী চাকরিতে মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা ২ ভাগও নয়। ক্যাডার সার্ভিসে এই সংখ্যা ০.২ ভাগও নয়! এ বিষয়টা আমাকে ভীষণভাবে আহত করেছিল এই ভেবে যে, আমরা তো বরং আমাদের বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের এভাবে নির্যাতন বা বঞ্চিত করি না! বরং তাদেরকে নানাভাবে এগিয়ে যেতেই সাহায্য করি! সে যা’ই হোক, পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা সম্পূর্ণ বেসরকারী উদ্যোগে এধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে দেখে আমি খুবই উদ্দীপিত বোধ করি। মওলানা আজাদ একাডেমির দু’টি ক্যাম্পাস। মূল ক্যাম্পাসটি বেশ বড়। বাইরে থেকে আসা ও অতি-দরিদ্র ছাত্রদের জন্য আবাসিক সুবিধা আছে। কোরআন বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো ছাত্র-হোস্টেলের চতুর্থ তলার বিশাল হলঘরে। এবারের ভারত সফরে এযাবৎ যতগুলো কোরআন বিতরণ অনুষ্ঠান হয়েছে এই ক’দিনে তার মধ্যে এই আয়োজনটাই সর্ববৃহৎ। বিশাল হল পরিপূর্ণ হয়ে গেছে অভ্যাগত ও শিক্ষকদের দিয়ে। অল্প কিছু ছাত্র ভেতরে বসার সুযোগ পেয়েছিল। বাকী সব ছাত্রই বারান্দায় গাদাগাদি হয়ে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুনছিল। শুরুতেই আমাদের বরণ করে নেয়া হলো উত্তরীয়, ফুল-গুচ্ছ আর উপহার দিয়ে। এরপর বক্তারা বক্তব্য রাখলেন কোরআন সম্পর্কিত বিষয়ে। অবশেষে, The Quran: Savior of Humanity বিষয়ে বক্তব্য রাখলেন আল কোরআন একাডেমী লন্ডনের চেয়ারম্যান ডঃ হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমদ। এরপর শ্রোতাদের মধ্যে বিতরণ করা হলো কোরআন শরীফ: সহজ সরল বাংলা অনুবাদ। অনুষ্ঠান শেষে আমাদের রাতের খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করলেন তারা। রাত গভীর হচ্ছে বলেই আমাদের বিদায় নিতে হলো। সময়টা আরেকটু দীর্ঘ হলেই বোধ হয় ভালো হতো! হাওড়া থেতে কলকাতা ফেরার পথে মনে হচ্ছিলঃ যদি প্রতি দিন এধরণের অনুষ্ঠান হতে থাকে, তবু কতদিন আমাদের লাগবে পৃথিবীর প্রতি প্রান্তের প্রতিটি বাংলাভাষীর হাতে এক কপি কোরআন পৌঁছে দিতে!
পরদিন শুক্রবার, ২৬ মে ২০১৭ তারিখ সকালে কলকাতার দু’খানা দৈনিকে (‘কলম’ ও ‘দিন দর্পন’) দেখলাম পশ্চিমবঙ্গে কোরআন বিতরণ অনুষ্ঠানের ছবিসহ সংবাদ ছাপা হয়েছে। একই সাথে বৃহস্পতিবারের পত্রিকা দু’টোও পেলাম, তা’তে শিলচরে কোরআন বিতরণ অনুষ্ঠানের ছবিসহ সংবাদ এসেছে। বিকেলে আমরা গেলাম আলিয়া ইউনিভার্সিটিতে। বিখ্যাত কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা (১৭৮২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অনেকে এর নাম লেখেনঃ ‘মোহামেডান কলেজ অব ক্যালকাটা’।) এখন (২০০৮ সালে এসে) হয়ে গেছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এর একাধিক ক্যাম্পাস। বেনিয়াপুকুর পুলিশ স্টেশনের নিকটে গোরাচাঁদ রোডে আলিয়া ইউনিভার্সিটির প্রধান ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলাম আমরা। ঢুকেই চোখে পড়লো ভারতের প্রথম প্রেসিডেন্ট সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের বড় আকারের ছবি। সৎভাবনা মঞ্চের উদ্যেগে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের উপর আলোচনা সভা চলছিল একটি হলে। আমরা এতে যোগ দিলাম। সভার এক পর্যায়ে একটি নব-প্রকাশিত গ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন করলেন আল কোরআন একাডেমী লন্ডনের চেয়ারম্যান ডঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ। গ্রন্থের নামঃ ‘বাহারপুত্রী সংস্তৃতি সৈনিক সেলিনা’, লেখিকাঃ প্রফেসর ডঃ মীরাতুন নাহার। বাহারপুত্রী বলতে প্রখ্যাত সংস্তৃতিসেবী হাবিবুল্লাহ বাহারের কন্যাকে বোঝানো হয়েছে। গ্রন্থের প্রকাশক বিশ্বকোষ পরিষদের সভাপতি পার্থ সেনগুপ্ত ধন্যবাদ জানিয়ে বল্লেন যে, এই গ্রন্থ প্রকাশের জন্য অর্থ-সাহায্য দিয়েছে আল কোরআন একাডেমী লন্ডন। জানতে পারলাম, বিশ্বকোষ পরিষদ নানা আয়োজনে এখনও তুলে ধরার চেষ্টা করছেন বাংলা সাহিত্য ও সংস্তৃতির দিকপাল মুসলমান কবি সাহিত্যিকদের। যাদের নিয়ে তারা এযাবৎ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন এবং বিভিন্ন গ্রন্থ/ সংকলন প্রকাশ করেছেন তাঁরা হলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, আব্বাস উদ্দীন আহমেদ, সেলিনা বাহার চৌধুরী এবং আরো অনেকে। পরিচয় হলো পার্থ সেনগুপ্ত বাবুর সাথে। উদার মনের অসাম্প্রদায়িক একজন মানুষ। সৎভাবনা মঞ্চের বর্তমান কর্ণধারও তিনি। সত্তরোর্ধ বয়সেও ব্যস্ত থাকেন নানা সামাজিক কর্মকান্ডে। পরিচয় হলো সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাসের সাথে। বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলের মানুষ, ’৭১এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এখন থিতু হয়েছেন কলকাতায়। নিজের লেখা একখানা বই উপহার দিলেন আমাকে। শিরোনামঃ ‘বঙ্গভঙ্গ-দেশত্যাগ-দাঙ্গা’। মলাটের উপরই লেখা আছেঃ ‘সংঘ পরিবারের একজন অন্যতম সদস্য হলেন তথাগত রায়; ঐ পরিবারের মিথ্যা ও অর্ধসত্য প্রচারের মোকাবিলায় এই পুস্তিকার পরিকল্পনা।’ বুঝলাম, মিথ্যা ইতিহাস সৃষ্টির রাষ্ট্রীয় অনাচারের বিপক্ষে এটা একটা জবাবী-বই! মগরেবের নামাজের পর অনুষ্ঠিত হলো ‘সৎভাবনা মঞ্চে’র সভা। আমরা এতে উপস্থিত ছিলাম। হিন্দু ও মুসলমান সমভাবেই এই মঞ্চের সদস্য। বিগত হাজার বছর ধরে বিশাল ভারতের প্রতিটি জনপদে গরু জবাই করা হয়েছে প্রতিদিন এবং মুসলমান ও অন্যরা তো বটেই, অনেক হিন্দুও গরুর গোস্ত খেয়েছে নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী। ধার্মিক হিন্দুরা গরুর গোস্ত খান না, গাভীকে ‘মা’ বা দেবী জ্ঞানে! ইদানিং উগ্রহিন্দুদের সরকার রাষ্টীয় ক্ষমতায় এসে ঘোষণা করলো, অন্যরাও গরুর গোস্ত খেতে পারবে না! গরু জবাই নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটালো সারা ভারত জুড়ে! ‘গো-মাতা’ নিয়ে ভারতের বর্তমান সরকারের ছত্রছায়ায় উগ্র-হিন্দুদের যেসব ভন্ডামী চলছে, এই সংগঠনের হিন্দুদেরও তা’তে কোন আস্থা নেই! ‘গো-মাতা’ ইস্যু নিয়ে বেশ কিছু দিন থেকে সমগ্র ভারতে তান্ডব চালাচ্ছে উগ্র হিন্দুরা। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে গরু-জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গো-মাংস বিক্রেতা ও কসাইদের (স্বাভাবিক কারণেই এরা সবাই মুসলমান) আক্রমণ ও হত্যা করা হচ্ছে! বাড়ীতে গো-মাংস রাখার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মুসলমানদের গণ-পিটুনিতে হত্যা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, গরুর গুরুত্ব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে জনসমক্ষে গাভীর পেছনে দাঁড়িয়ে সরাসরি গাভীর পেশাব পান করছে হিন্দু ধর্মের গুরুরা! আগে আমরা জানতাম, কেবল গাভীকেই ওরা মায়ের মতো ভক্তি করে আর তাই ওরা গাভীকে দিয়ে হাল-চাষ করায় না, তবে অন্য গরু দিয়ে করায়। এখন বলা হচ্ছে, সব গরুই ‘মা’! জানা গেছে বানারস বিশ্ববিদ্যালয়কে পঁচিশ কোটি রুপি দেয়া হয়েছে গরুর পেশাব নিয়ে গবেষণা করার জন্যে! পুরো ব্যাপারটার অনেকটাই ভন্ডামী আর বাকীটা রাজনীতি! ভন্ডামীটা হলোঃ ভারতের অনেকগুলো কোম্পানী প্রতিদিন শত শত গরু হত্যা করে সেই মাংস রফতানী করছে বিদেশে। ভারত হলো বিশ্বের অন্যতম প্রধান ‘বীফ এক্সপোর্টিং’ দেশ। আরো ভন্ডামী হচ্ছেঃ গো-মাংস রফতানীকারক এসব কোম্পানীর মালিক যদিও হিন্দু কিন্তু কোম্পনীকে দেয়া হয়েছে আরবী বা মুসলমানী নাম, যেমনঃ “আল কবীর” (মালিকের নাম ‘সতীশ সাবরওয়াল’), “এরাবিয়ান এক্সপোর্টার” (মালিকের নাম সুনীল কাপুর), বিশ্বের ৩৫টি দেশে ‘বীফ’ রপ্তানীকারক কোম্পানীর নাম “আল নূর” (মালিকের নাম সুণীল সুদ) ইত্যাদি। এদের বিরুদ্ধে ‘গো-মাতা’ হত্যার অপবাদও নেই, সরকার অথবা জনগণের কোন প্রতিবাদও নেই! রাজ্য সরকারগুলো সমগ্র রাজ্যে সাধারণ মানুষের জন্যে গরু-জবাই নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও কোন রাজ্যেই ‘শত শত গরু হত্যাকারী’ একটি কোম্পানীকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে শোনা যায়নি। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিশ্বে সেরা বীফ রপ্তানীকারক দেশ ছিল ভারত!
সভায় আমার পাশে বসেছিলেন সাংবাদিক মোহাম্মদ হেলালউদ্দীন। এক ফাঁকে তিনি নিজের লেখা পাঁচখানা পুস্তিকার একটি প্যাকেট আমার হাতে গুঁজে দিলেন। বইগুলোর শিরোনামঃ ‘বাঙ্গালী মুসলমানের সঙ্কট’, ‘বাবর কা আওলাদ’, ‘দেশে কম জেলে বেশী মুসলমান’, ‘বাংলার মূল নিবাসীরা হিন্দু হল কবে!’, ‘হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান’ এবং ‘শারদোৎসব সম্রাজ্যবাদী উৎসব’। বইয়ের শিরোনাম থেকেই তাঁর কলম-যুদ্ধের ক্ষেত্র সম্পর্কে আঁচ করা যায়। ‘বাকচর্চা’ নামে তাঁর নিজস্ব একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আছে। সভ্যতার এপর্যায়ে এসেও ভারতীয় মুসলমানদের উপর যেভাবে জাতিগত বিভেদের স্টীমরোলার চালানো হচ্ছে তা দেখে পার্থ বাবুদের মতো কিছু হিন্দুও চরম অস্বস্থিতে ভোগেন! অথচ এখানকার প্রতিটি মুসলমানের দু’টো পা’ই ভারতের মাটির উপর! আমাদের সংখ্যালঘুদের অনেকেই যেমন ‘এক পা রাখেন দেশের মাটিতে আর অন্য পা’ ভিনদেশে!’ তেমনটা একজন ভারতীয় মুসলমানের মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যাবে না! তবু কেন এই জলিুম-অবিচার বুঝতে পারি না! বেশীর ভাগ মুসলমানকেই জেলে পুরে রাখা হয়, যে কোন সাধারণ অজুহাতে! প্রায় সবগুলো জেলেই অধিকাংশ কয়েদী মুসলমান! মুসলমানদের পরিবারগুলোকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্যে এরচে’ সু² পরিকল্পনা আর কী হতে পারে! ইত্যকার জুলুমের বিপক্ষেই সোচ্চার হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্যে কাজ করছে ‘সৎভাবনা মঞ্চ’। সভা শেষে আলিয়ার প্রবেশ পথের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম আমরা সৎভাবনা মঞ্চের নেতা-কর্মীদের সাথে।
পরবর্তী দেড় দিন আমি আর আবদুর রাজ্জাক ভাই মিলে কিছু সময়ের জন্যে ঘুরাঘুরি করেছি চাঁদনী চক আর ন্যু-মার্কেট এলাকায়। চোখে পড়েছে যেখানে সেখানে অসংখ্য বাংলাদেশী, পোষাক আর চেহারা দেখলেই বুঝতে পারি! প্রতিদিন অসংখ্য বাংলাদেশী কলকাতা আসছে, হোটেলে থাকছে, রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে আর দেদারছে কেনাকাটা করছে। এরমধ্যে রোজা শুরু হয়ে গেছে। তাই অনেক বাংলাদেশী কলকাতা এসেছে ঈদের বাজার করতে। বলা বাহুল্য, অধিকাংশ বাংলাদেশীকে দেখে রোজার কোন প্রভাব বুঝতে পারিনি! কলকাতা শহরের রাস্তা-ঘাট আর যান-বাহনগুলো যতই মলিন হোক, কোথাও কিন্তু জানজটে আটকে থাকিনি একবারও! মমতা ব্যানার্জীর সরকার বাংলাদেশকে তিস্তার পানি দেয়ার উদারতা দেখাতে না পারলেও পশ্চিমবঙ্গের সড়ক যোগাযোগের যে উন্নতি করেছে সে কথা ভাবতে ভাবতেই কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে রওনা হলাম।
মিরপুর, ঢাকা, ২৫/১০/২০১৭আশরাফ আল দীন ।। অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, কবি, শিক্ষাবিদ ও গবেষক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন