বাংলাদেশ বার্তাঃ আমার পাশে দাড়ানো লোকটি একটি চেক ডিজনার মামলার আসামী। আজ তার মামলার তারিখ ছিলো। ঢাকা জজ কোর্টে বিগত ২০১২ সাল হইতে আমি ওনার পক্ষে মামলা পরিচালনা করে আসছি।
মামলার fact হলঃ এই মুরব্বির সন্তান বলতে শুধু একটা মেয়ে। মেয়েটা মাদ্রাসায় পড়েছে। মেয়েকে বিয়ে দেন এক মুফতির কাছে। সে এক মসজিদের ইমাম ছিল। পরবর্তী কালে মেয়ের জামাই বায়না ধরল ব্যবসা করবে। এই মুরব্বির ছোট একটা ব্যবসা প্রতিষ্টান ছিল এটা দেখিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৬ লক্ষ টাকা লোন তুলে আনলো মেয়ের জামাইয়ের জন্য। লোনের সম্পূর্ণ টাকা ও ব্যাবসা প্রতিষ্টান মেয়ের জামাইকে বুঝিয়ে দিল।
### কিছু দিন যেতে না যেতেই মেয়ের জামাই ব্যবসা গুটিয়ে দেওলিয়া হয়ে পড়ে। সে সমস্ত টাকা পয়সা নিয়ে ভেগে যায়। কিছু দিন পর এই মুরব্বির বাড়িতে তার মেয়ের নামে জামাইয়ের পক্ষ থেকে একটা তালাকের নোটিশ আসে।
এদিকে দোকানের মালিক দোকান নিয়ে নেয়। ব্যাংক লোনের টাকা না পেয়ে এই মুরব্বির নামে মামলা করে।
# বর্তমানে ওনার তালাক প্রাপ্ত মেয়ে, মেয়ের এক সন্তান, মুরব্বি ও তার স্ত্রী এই চার জন সদস্য। তাদের আয় হল মেয়ে আরবি টিউশনি করে। মুরব্বি নিজেও নাকি কয়েকটা ছাত্র পড়ান (আরবি)। বেশির ভাগ সময়ে নাকি দিনে একবার খাওয়া হয় তাদের।
## আমি বছরে ২/৩ টা মামলা ফ্রি করার চেষ্টা করি। ফ্রি মামলার মাঝে এটা অন্যতম। মুরব্বির বক্তব্য হল গ্রামের বাড়িতে কিছু জায়গা আছে এটা বিক্রি করে লোনের টাকা পরিশোধ করবে। কিন্ত গ্রামের জায়গাটা অন্যজন দখল করে রেখেছে। এই জায়গা নিয়ে সিভিল কোর্টে মামলা চলছে। তাই সিভিল মামলাটা যতদিন শেষ না হবে ততদিন এই মামলায় আমাকে সময় নিতে হবে।
## আমি কোর্টে বেশ কয়েকটা হেয়ারিং করেছি। যতবার শুনানি করি আমি আবেগতাড়িত হয়ে যাই। আমি জজ সাহেবের চোখের কোনে পানি জমতে দেখেছি।
## এই মুরব্বির চোখ দিয়ে সারাক্ষণ পানি পড়ে। মাঝে মাঝে আমাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে ডুকরে কাদে।আমি স্হির থাকতে পারি না। আমার কাছে মনে হয় আল্লাহর আরস যেন খেপে উঠে। মুরব্বির সাদা দাড়ি বেয়ে যখন চোখের পানি জড়তে থাকে।
## আজ বললাম আপনার আসার প্রয়োজন নেই। আমি সময় চেয়ে নেব। কিছু টাকা দিয়ে একটা পিটিশন কিনে শুনানী করার পর দেখি ওনি কোর্টে চলে এসছেন। আমি বললাম কেন আসলেন বলল আপনাকে না দেখলে শান্তি লাগে না। এই কথা বলেই আমাকে ধরে ডুকরে কান্না করে দিল। জিজ্ঞেস করলাম সাথে গাড়ী ভাড়া আছে কি না। বলল নেই, হেটে হেটে আসলাম। কিছু ভাড়া দিয়ে বললাম বাসায় চলে যান।
## এই মামলায় কোর্ট ও বাদী পক্ষের এডভোকেট এবং ব্যাংকের অফিসার সহযোগীতা করে যাচ্চেন। তাদেরকে ধন্যবাদ।
## পরিশেষে বলবো মুফতি জামাই এই মুরব্বির চোখের যে পানি জড়িয়েছে। সেই পানি মুচার সুযোগ কি সে পাবে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন