Bangladesh Barta Desk: জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন থেকে আমেরিকা নিজেদের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘটনায় আমার একটা স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেল।
সেই ঘটনাটা পরে বলছি। টিভির খবরে দেখলাম, সম্প্রতি জাতিসংঘে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক হেলি ঘোষণা করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তার সদস্য পদ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন থেকে। কি কারন? কারণটাও তারা স্পষ্ট করে বলেছে, কোনরকম রাখঢাক ছাড়াই। তা হল, বিগত বছরগুলোতে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, যুক্তরাষ্ট্রের মতে, অন্যায় ভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নানা প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং ইসরাইলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এই কমিশনের মোট সদস্য সংখ্যা ছেচল্লিশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য হচ্ছে, মানবাধিকার কমিশন এযাবৎ যা করেছে তা হিপোক্রেসি এবং মানবাধিকারের প্রতি মসকারা (মকারি)। সারা বিশ্ব বিশেষত: ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো যখন আজ প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে আগ্রাসী-রাষ্ট্র ইসরাইলের অন্যায়-অত্যাচারের বিপক্ষে সরব হচ্ছে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতে "ইসরাইল তাদের নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষা করছে মাত্র!" সমগ্র পৃথিবীর মানবাধিকার কর্মীরা, এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার সাধারণ ইহুদিরাও, যখন ইসরাইলের চরমপন্থী ইহুদিবাদী নীতির সমালোচনা করছে তখন নির্লজ্জভাবে যুক্তরাষ্ট্র ঘাতক-রাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষাবলম্বন করছে প্রকাশ্যে এবং অত্যন্ত নগ্নভাবে। তাদের মতে, প্যালেস্টাইনের আরবদের বাড়িঘর অন্যায় ভাবে দখল করে গুড়িয়ে দিয়ে বাইরে থেকে আগত ইহুদিদের জন্য বসতি স্থাপন করে, নিরস্ত্র প্যালেস্টাইনীদের উপর হত্যাযজ্ঞ এবং অসম যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে, গাজা ভূখণ্ডের ওপর অবরোধ চাপিয়ে দিয়ে একে উম্মুক্ত জেলখানায় পরিণত করার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশু এবং অসুস্থদের হত্যা করে এবং যেকোনো সময় প্যালেস্টাইনের জনবসতির উপর বিমান হামলা চালিয়ে ও নিরস্ত্র প্রতিবাদকারীদের গুলি করে হত্যা করে ইসরাইল কোনভাবেই মানবাধিকার লংঘন করে নি। বিশ্ব বিবেক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এহেন আচরণ দেখে! কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে এবং এক উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে পৃথিবীর এই অংশে। এই কারণে সৃষ্ট রক্তপাত ও প্রাণহানির জন্য ইসরাইলের সাথে যুক্তরাষ্ট্রও সমভাবে দায়ী। একথা বুঝতে আজ কষ্ট হয় না যে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের রাষ্ট্রীয় নীতিমালা নির্ধারণ করছে চরমপন্থী ইহুদীবাদীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এবং মানবাধিকারের স্বার্থে নয়।
এবার আমার স্মৃতির গল্পটা বলছি। ২০০৩ সালে, আমি তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্নেল Bangladesh Institute of International and Strategic Studies(BIISS)এর research director পদে কর্মরত, আমাকে চীনে অনুষ্ঠিত একটি সিম্পোজিয়াম কোর্সে যোগদান করতে হয়েছিল, বেইজিংয়ের পার্শ্ববর্তী শহর চামপিং-এর national defence university(NDU)-তে। ছয় সপ্তাহ ব্যাপী ওই কোর্সের ৭০ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৬০ জনই ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চ পদস্থ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা, সেনা নৌ ও বিমান বাহিনীর। সেখানেই পরিচয় হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল লেরির সাথে। তিনি ছিলেন তাদের intelligence কোরের একজন কর্মকর্তা। মোটামুটি দীর্ঘ সময় একসাথে অবস্থান করার কারণে আমাদের সম্পর্ক সখ্যতার পর্যায়ে পৌঁছেছিল। একদিন আমি লেরিকে প্রশ্ন করলাম, "তোমাদের দেশের ইহুদি লবি কতটুকু শক্তিশালী?" সে খানিকটা অবাক হওয়ার ভান করেই আমাকে বলল, "আমাদের দেশে তো কোন ইহুদি লবি নেই!" ওর কথায় আমি টাসকি খেয়ে গেছি অনুমান করে পরে সে হেসে বলল, "শোন আশরাফ, লবিং করতে হয় কোন দুর্বল পক্ষকে। আমাদের দেশে ইহুদিরা দুর্বল পক্ষ নয় বরংওরাই আমাদের রাষ্ট্র চালায়, ওরাই আমাদের নীতি নির্ধারণ করে নানাভাবে। সুতরাং একথা বলো না যে ইহুদী-লবি কতটা শক্তিশালী। ইহুদীরাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চালায় বলতে পারো।" তার কথার মর্মার্থ বুঝতে আমার কষ্ট হলো না।
আজ দীর্ঘদিন পর নিক হেলির টনটনে কথাবার্তা শুনে কর্নেল লেরির বক্তব্যের সত্যতা উপলব্ধি করতে পারছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন