বাংলাদেশ বার্তাঃ আজ কেবল তুরস্ক নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের ভাগ্য নির্ধারণের দিন। ফিলিস্তিন, সিরিয়া, কাতার এবং পলিটিক্যাল ইসলামের নিভুনিভু প্রদীপগুলোর ভবিষ্যত নির্ধারণের দিন। ১৬ বছরের মধ্যে এই প্রথম এরদোয়ান কঠিন চ্যালেন্জের মুখোমুখী হতে যাচ্ছেন। বিরোধীজোট বিশাল চমক নিয়ে হাজির হয়েছে। মাত্র দুই মাসে তারা যা করেছে তা এক কথায় বিস্ময়কর। তারা গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে সম্পূর্ন নতুন রাজনৈতিক বয়ান নিয়ে হাজির হয়েছে। এর সুফলও জরীপের ফলাফলে দেখা গেছে। কৌশলের ক্ষেত্রেও তারা অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। বিপরীতে আক পার্টি তাদের পুরাতন কৌশল থেকে খুব একটা বের হয়েছে বলে মনে হয়নি। যে ইউনিক বয়ান দিয়ে এরদোয়ান ১৬ বছর তুর্কি রাজনীতির ময়দান দাবড়ে বেড়িয়েছে, তা এবার বিরোধী জোটও আয়ত্ব করেছে বলে মনে হয়েছ।
৩ টি বিষয় নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করে দেবে।
১. কুর্দি ভোট। কুর্দি এইচডিপি কত পার্সেন্ট ভোট পাচ্ছে তার উপর নির্ভর করছে পার্লামেন্টে আক পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং এরদোয়ানের বিজয়। যদি দলটি ১০% ভোট পেতে সক্ষম হয় তাহলে আক পার্টি পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে। এই সম্ভাবনাটি প্রবল। কারণ, অধিকাংশ জরীপের ফলাফলে এইচডিপি ১০% বা তারচেয়ে বেশি ভোট পাবে বলে দেখানো হয়েছে। এরদোয়ানের জন্যও কুর্দি ভোট তুরুপের তাস হবে। সর্বনিম্ম ৩০ থেকে ৪০% কুর্দি ভোট (প্রেসিডেন্সি ভোট) নিজের ঝুলিতে নিতে না পারলে এরদোয়ানের বিজয় কঠিন হতে পারে।
২. মিরাল একসেনারের প্রাপ্তভোট। তিনি কত ভোট পাচ্ছেন তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। কারণ, তাঁর ভোটগুলো মূলতঃ এমএইচপির। আক পার্টির অনেক ভোটও তার ঝুলিতে যেতে পারে। যদি তিনি ১০% এর বেশি ভোট পান তাহলে তা এরদোয়ানের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দেখা দেবে।
৩. এমএইচপির ভোট। এমএইচপির ভোট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। নির্বাচনী জোট হিসেবে তাদের সব ভোট এরদোয়ানের পাওয়ার কথা। কিন্তু যদি দলটির ভোটাররা ব্যক্তিগত পছন্দকে অগ্রাধিকার দিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তকে না মানে এবং এরদোয়ানকে ভোট না দেয় তাহলে তা এরদোয়ানের বিজয়কে অনিশ্চিত করে তুলবে। এটা অমূলক আশংকা নয়। বিগত গণভোটে দলটির সমর্থক এবং কর্মীরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে "না" এর পক্ষে ভোট দিয়েছিল। তাছাড়া, সিরিয়ান শরনার্থী ইস্যুও এরদোয়ানের জন্য বড় ধরণের ধাক্কা হিসেবে কাজ করছে। এটাকে বিরোধীরা বেশি ফোকাস করেছে এবং এর ফায়দা লুটার জন্য যা যা করা দরকার তার সবই করেছে।
প্রচারনার কৌশলেও বেশ নতুনত্ব দেখা গিয়েছে। আক পার্টি নিরাপত্তা এবং বহির্চ্যালেন্জের উপর জোর দিয়েছে। বিরোধী জোট আভ্যন্তরীন সমস্যা, মূদ্রাস্ফিতী, রাষ্ট্রীয় ঋণ বৃদ্ধি এবং অর্থনীতির উপর জোর দিয়েছে। কোনটা তুর্কি জাতীকে বেশি আলোড়িত করেছে তা বলা সম্ভব নয়।
চ্যালেন্জ সত্বেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ান প্রথম দফায় বিজয়ী হবেন এমনটা মনে করা হচ্ছে। তবে, ব্যাবধানটা খুবই অল্প হতে পারে। এমনকি মাত্র কয়েক লাখের বেশি নাও হতে পারে। যদি দ্বিতীয় দফায় গড়ায় তাহলে তা আরও বেশি চ্যালেন্জিং হয়ে যেতে পারে। তবে, সর্বাবস্থায় পার্লামেন্টে আক পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর সম্ভাবনা প্রবল।
কেন জানি আজ মনটা বার বার ১০০ বছর আগে ফিরে যাচ্ছে। যেদিন সুলতান আব্দুল হামীদকে সরিয়ে দিয়ে উসমানী সালতানাতের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকা হয়েছিল। সেই সাথে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল ফিলিস্তিন এবং গোটা আরবের ভাগ্যকেও। সেদিনের নব্যতুর্কি এবং অপরিনামদর্শি কিছু আরব বেঈমানের বিশ্বাসঘাতকতার খেসারত মুসলিম জাতি এখনও দিয়ে যাচ্ছে। আজকের মুহাম্মাদ আদ দোররাহ এবং রাজানরা তারই বলি হচ্ছে। বসফরাসের তীরে আজ আবারও ঝড় উঠেছে। এবারও ডিল অফ সেন্চুরী নিয়ে হেমিলনের বাঁশিওয়ালারা আরব শাসকদের দরবারে ঘুরছে। এবারও সেই পুরাতন পক্ষগুলোই। স্ক্রিপ্টেও তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। চেহারাগুলো কেবল পরিবর্তন হয়েছে। সেদিন ছিল হারৎজেল, শরীফ হোসাইন। আজ নেতানিয়াহু, রথশিল্ড ফ্যামিলি, রুপাট মার্ডক, ট্রাম্প, স্টিভ বেনন এবং আরবের কুলাংগার শাসক শ্রেনী। কিছু দিন আগে তুরস্ক থেকে ইসরাইলী রাষ্টদূতকে অপমান করে বহিষ্কার করার পর প্রভাবশালী ইসরাইলী লেখক ইদী কোহেন টুইট করেছিল-- "এরদোয়ান তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। এই ঘটনার ৪৮ ঘন্টার মাথায় আমরা তুর্কি মুদ্রার রেকর্ড পরিমান মূল্যপতন ঘটিয়েছি। সারা দুনিয়ার অর্ধেক সম্পদের মালিক রথশিল্ড ফ্যামিলি ইসরাইলের পৃষ্ঠপোষক। বাকী সম্পদও ইহুদীদের হাতে। তুমি কি মনে করেছ পার পেয়ে যাবে? সামনে আরও খারাপ দিন আসছে।" ইদী কোহেনের এই কথাগুলোই একদিন হার্তজেল সুলতান আব্দুল হামীদকে বলেছিল। তাই শংকাটা এখন খুব বেশিই চেপে বসেছে বুকে
এবার যেন ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি না হয়!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন