গত শুক্রবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় বঙ্গবন্ধু একাডেমী আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের বক্তব্য নিয়ে সিলেটে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শুধু সিলেট মহানগরীতে নয় সেন বাবুর নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের নির্বাচনী এলাকা সিলেট এবং শিক্ষামন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে। গত বৃহস্পতিবার শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে সুরঞ্জিত সেনের এলাকা দিরাই উপজেলার বাসিন্দা ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র সুমন দাস ছাত্রলীগের অপর গ্রুপের হাতে নিহত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সুরঞ্জিত সেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, সিলেটে গিয়ে ছাত্রলীগকে রাবিশ বলে আসুন। গতকাল শনিবার তার এ বক্তব্য জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশের পর সিলেটের জনগণের মধ্যে আলোচনার ঝড় উঠেছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি চায়ের দোকানগুলোতেও এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ বক্তব্য যেন টক অব দ্যা সিলেট।
এ অনুষ্ঠানে সুরঞ্জিত বলেন, বিগত সময়ে যখন ছাত্রলীগ সিলেট এমসি কলেজ পোড়ানোর ঘটনা ঘটায়, তখন শিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী দু’জনই গিয়েছিলেন। তখন শিক্ষামন্ত্রী সেখানে গিয়ে কেঁদেছিলেন। আমি এবারও শিক্ষামন্ত্রীকে বলব, আর কিছু না পারেন একবার সেখানে গিয়ে কাঁদেন। আর অর্থমন্ত্রীকে বলব সেখানে গিয়ে রাবিশ বলে আসেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় তার নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন যাতে তিনি সেখানে গিয়ে কেঁদে আসেন। এর আগে ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দিয়েছিল ছাত্রলীগ। এ ঘটনা পরিদর্শনে গিয়ে কেঁদেছিলেন নূরুল ইসলাম নাহিদ। সুরঞ্জিত বলেন, ছাত্রলীগকে রক্ষা করতে হবে। গুটি কয়েক কর্মী ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছে। সময় চলে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগকে আবার নীতি ও আদর্শের পথে নিয়ে আসতে হবে।
এ ব্যাপারে সিলেটের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট-এর সভাপতি ফারুক মাহমুদ দৈনিক সংগ্রামের কাছে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রায়ই রাবিশ শব্দ ব্যবহার করেন। এমনকি গত কিছুদিন আগে মদনমোহন কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের তিনি বদমাশ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু গত শুক্রবারের ঢাকার মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের সভায় সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের বক্তব্যে রাবিশ কথাটা ব্যবহার করলেও বদমাশ শব্দটা হয়তো তিনি ভুলে গেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি অর্থমন্ত্রীর মুখে রাবিশ ও বদমাশ শব্দ মানায় না। তিনি বারবার এ সমস্ত শব্দ ব্যবহার করেন বলে তার সহকর্মী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত গত শুক্রবারের সভায় সিলেট গিয়ে ছাত্রলীগকে রাবিশ বলে আসুন বলতে পেরেছেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি এ লজ্জা সিলেটবাসীর। ফারুক মাহমুদ আরো বলেন, সরকার যদি সত্যিকার অর্থে মনে করে দেশে আইনের শাসন আছে তবে ওই সমস্ত অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
উল্লেখ্য, এমসি কলেজ ছাত্রাবাস ছাত্রলীগ ক্যাডাররা পোড়ানোর পর অর্থমন্ত্রী সেখানে গিয়ে দোষীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ভষ্মীভূত ছাত্রাবাস দেখে কেঁদেছিলেন এবং দোষীদের গ্রেফতারের নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু সিলেটের পুলিশ প্রশাসন অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ এবং শিক্ষামন্ত্রীর কান্নাকে নিয়ে উপহাস করেছিল বলে মনে করেন সিলেটের বিশিষ্টজনেরা। আজও ছাত্রাবাসে আগুন যারা ধরিয়েছিল সেই ছাত্রলীগ ক্যাডারদের গ্রেফতার করেত পারেনি এসএমপি পুলিশ। গ্রেফতার করতে পারেনি শাহপরাণ থানা। কবির আহমদ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন