বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচারিক হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রবাসি বাংলাদেশিরা। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
২০ নবেম্বর বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন সময় দুপুর দেড়টায় হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ এর ব্যানারে শত শত প্রবাসি বাংলাদেশি ঐ বিক্ষোভে অংশ নেন। একই দাবী জানিয়ে ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনেও বিক্ষোভ করে সংঠনটি। দুতাবাসে স্মারকলিপি জমা দিতে গেলে দুতাবাসের কর্মকর্তারা স্মারকলিপি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে বিক্ষেুদ্ধ প্রবাসী বাংলাদেশীরা বর্তমান অবৈধ সরকারের সমলোচনা করে বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে। মিছিল সমাবেশে গুলি করছে। গুম অহপরণতো আছেই।
অন্যদিকে বিরোধী দলকে নিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে তথাকথিত টাইব্যুনাল বসিয়ে সকল আইন কানুনকে তোয়াক্কা করে বিচারিক হত্যাকান্ড শুরু করেছে। তারা বিচারিক হত্যাকান্ড বন্ধে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দুপুরের আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক প্রবাসিরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের নর্থ গেটে জড়ো হন। ওয়াশিংটনের ছাড়াও নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, নিউ জার্সি থেকে বিপুল সংখ্যক প্রবাসি ঐ বিক্ষোভে অংশ নেন। দুপুর দেড়টায় হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন এর সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশ পরিচালনা করেন ইঞ্জিনিয়ার নুসরাত লিমা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুসলিম আমেরিকান এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট মাহাদি ব্রে, ইজিপশিয়ান আমেরিকান এ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেসির ডিরেক্টর একরাম এঞ্জাজ, মুসলিম আমেরিকান সোসাইটির নিউইয়র্কের পরিচালক মুহাম্মদ আব্বাস আলী, হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ এর কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর নুরুল ইসলাম, এটর্নি এম আজিজ, মাহবাবুবুর রহমান, মনির উদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল আরিফ, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট শাহানা মাসুম, নকিবুর রহমান ও মীর মাসুম আলী প্রমূখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের আহবান জানান। তারা দেশ জুড়ে অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়া গুম, খুন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর পুলিশি ও রাষ্ট্রীয় হয়রানি বন্ধের আহবান জানান। তারা বাংলাদেশে চলমান আন্তর্জাতিক ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল এর কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে জাতি সঙ্ঘের তত্ত¦াবধানে ট্রাইব্যুনাল গঠন করার আহবান জানান।
মুসলিম আমেরিকান এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট মাহাদি ব্রে বলেন এটা দুঃখজনক যে একটি স্বাধীন দেশে বিচারের নামে অবিচার চলছে। মানুষের জীবন আজ হুমকির মুখে। একটি সম্মিলিত আন্তর্জাতিক প্রয়াস এখন সময়ের প্রয়োজন যার মাধ্যেমে নির্বিচারে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা সম্ভব হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আপত্তির মুখেও বাংলাদেশে ক্রাইমস ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আশংকা করেন একটি অবিচার এর আরেকটি নতুন সংকটের সৃষ্টি করবে যা বাংলাদেশবাসির জন্য ভবিষ্যতে কল্যাণকর হবে না।
তিনি আরো বলেন “বাংলাদেশের মানুষ ন্যায় বিচার চায়। তারা আশা করে একটি সুখি সময়ের। কিন্তু যখন রাষ্ট্র নির্যাতনকারীর ভুমিকা গ্রহণ করেন, তখন একটি দেশের উন্নয়নের ধারা বন্ধ হয়ে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।
অন্যান্য বক্তারা বলেন বাংলাদেশে ভয়ঙ্করভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন চলছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার সে বিষয়ে কোন কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। দেশের মিডিয়া এসব কথা বলতে পারছে না।
তারা অভিযোগ করেন দেশে বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে কিন্তু সেই ট্রাইব্যুনাল সরকারের নিন্দেশে একের পর এক মৃত্যুদ-ের রায় দিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রতিবাদ করায় নির্বিচারে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের উপর গুলি চালানো হয়েছে। জনগনের টাকায় গুলি কিনে জনগণের উপর গুলি করা বন্ধের আহবান জানান তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজি ছাত্রীদের উপর নির্যাতন করা এবং তাদেরকে হল থেকে বের করে দেয়ার নিন্দা জানান বক্তারা।
দুতাবাসের স্মারকলিপি গ্রহনে অস্বীকৃতি
হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ শেষে প্রতিবাদকারীরা বাংলাদেশ দুতাবাসে যান স্মারকলিপি দেবার জন্য। এসময় তারা সেখানে মানব বন্ধন করেন। পরে দুতাবাসে স্মারকলিপি দিতে চাইলে দুতাবাসের কর্মকর্তারা স্মারকলিপি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। তারা কোন প্রবাসি বাংলাদেশিকেও ভেতরে প্রবেশে বাধা দেন।
এরপর দূতাবাস থেকে দুজন কর্মকর্তা এসে নিরাপত্তারত যুক্তরাষ্ট্র পুলিশকে জানান যে দুতাবাসে কর্মকর্তারা কেউ নেই। কেউ স্মারকলিপি নিতে পারবে না। তবে দুতাবাসের প্রেস বিভাগের একজন কর্মীকে বিক্ষোভকারীদের ছবি নিতে দেখা যায়।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদ এ স্মারকলিপি গ্রহণ না করায় হতাশা প্রকাশ করেন হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন। তিনি সংগঠনের অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে অপেক্ষাও করেন। কিন্তু দূতাবাসের কর্মকর্তারা কোন সহযোগিতা করতে রাজি না হলে তিনি সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আমাদের সবার, এখানেও রাজনীতিতকরন হয়েছে। তারা এখন প্রবাসিদের দেশ সম্পর্কে যে উদ্বেগ তাও শুনতে চান না, এটা দুর্ভাগ্যজনক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন