ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের অতি উৎসাহে ভাটা পড়েছে। ফাঁসির মহড়া, জল্লাদ ও মঞ্চ প্রস্তুতের কথা শোনা গেলও কামারুজ্জামানের ফাঁসির বিষয়ে আপাতত আর কোন কথাই শুনা যাচ্ছে না। এমনকি আইনমন্ত্রী এবং অ্যাটর্নি জেনারেলও সেই তোড়জোড় আর নেই। সিনিয়র আইনজীবীদের মতে, আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই মৃত্যুদন্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নিতে আইনমন্ত্রী জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশের পরপরেই মৃত্যুদন্ড কার্যকরের বিষয়ে দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। অপরদিকে অ্যাটর্নি জেনারেলও রায় কার্যকরের বিষয়ে কোন বাধা নেই বলে একাধিকবার মিডিয়াতে মন্তব্য করেছেন। কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করতে এই দুই আইনজীবী অতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন বলেই অনেকে মনে করেন। সরকারের আনুকূল্য পেতেই তারা এই প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। ফাঁসি কার্যকর করতে অতি উৎসাহি হয়ে নানা বক্তব্য দেয়ায় সচেতন মানুষ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, গণজাগরণমঞ্চ ছাড়াও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও ক্ষুব্ধ।
সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী আপিল বিভাগের রায় প্রকাশের পর প্রথমে তা ট্রাইব্যুনালে যাবার কথা। এরপর ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হবে। এ মৃত্যু পরোয়ানা আসামির হাতে যাবে। এরপর আসামি সিদ্ধান্ত নিবে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন কি না।
সিনিয়র আইনজীবী ব্যরিস্টার রফিক-উল হক এ সম্পর্কে বলেছেন, মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে সংক্ষিপ্ত হোক কিংবা পূর্ণাঙ্গ হোক রায়ের কপি আসামিকে দেখানো উচিত। তিনি বলেন, রায়ের কপি না পেলে আসামি ক্ষমা চাইবে কোন গ্রাউন্ডে। রায়ের কপি দেখেই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবে। রায় কার্যকর হওয়ার আগে কপি পাওয়া আসামির অধিকার।
কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করার বিষয়ে জামায়াতের কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, সরকার আইনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে যে ফাঁসি কার্যকর করতে যাচ্ছে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল সে হত্যাকে তরান্বিত করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন। কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করতে আইনমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, কারাগারের ভেতর ফাঁসির মহড়াও সম্পন্ন হয়েছে। তারপরেও রায় কার্যকর করতে দেরি হচ্ছে। এ থেকে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই সরকার তার স্বার্থ বাস্তাবায়ন করতে চাচ্ছে।
এদিকে, মোহম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধি অপরাধের মামলায় আপীল বিভাগের দেওয়া রায় লিখিতভাবে প্রকাশের বিষয়টি অনিশ্চিত। ঠিক কবে নাগাদ এই রায় প্রকাশ হবে তা জানে না রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এই কারণে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা ও আইনমন্ত্রী যত দ্রুত রায় কার্যকর করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছিল রায়টি ততো তাড়াতাড়ি কার্যকর করতে পারছে না। কারণ তার মামলার রায়ের পর কোন নোট ট্রাইব্যুনাল হয়ে কারাগারে পৌঁঁছায়নি। বিচারপতিগণ লিখিতভাবে কোন সংক্ষিপ্ত রায়ও দেননি। পূর্নাঙ্গ রায় দিতে সময় লাগবে। সব মিলিয়ে আদালতের দেওয়া রায় কার্যকর করা নিয়ে একটা জটিলতায় পড়েছে। রায় কার্যকর করতে হলে লিখিত রায়ের কপি লাগবে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এটর্নী জেনারেল এডভোকেট মো: মাহবুবে আলম বলেন, কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগের রায়ে বেশিরভাগ বিচারপতিগণ মৃত্যুদন্ডের পক্ষে রায় দেন। পাশাপাশি মৃত্যুদন্ডের পক্ষে নন এমন বিচারপতিও সেখানে রয়েছেন। তবে তিনি কে এটা ওই সময়ে আমাদেরকে জানানো হয়নি। এখনও জানি না ঠিক কি কারণে ও কেন বিচারপতি তার মৃত্যুদন্ডের পক্ষে নন। এই ঘটনার পর এখনও পর্যন্ত রায় প্রকাশের দিন যে রায় মৌখিকভাবে বলা হয়েছে সেটাই। এরপর আর কোন লিখিত রায় প্রকাশিত হয়নি। এই ক্ষেত্রে আর কোন অগ্রগতি নেই। কেন রায় প্রকাশিত হচ্ছে না এর কারণ জানেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমি বলতে পারি না সুত্রঃ দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন