মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন রাষ্ট্র সংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূত এ্যান্ড্রু গিলমার। শীর্ষ নিউজ বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে গতকাল মঙ্গলবার তিনি বলেন, কক্সবাজারে আমি এ পর্যন্ত যা দেখেছি, তা দিয়ে কোনো উপসংহারে পৌঁছাতে পারবো না। কারণ সহিংসতার ধরণ এখন পরিবর্তন করা হয়েছে। -খবর এএফপির।
গিলমার রাষ্ট্র সংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।
তিনি বলেন, এখন রক্তপাত, ধর্ষণ, হত্যা, নির্যাতন ও অপহরণের মাত্রা কমে গেলেও রোহিঙ্গাদের অনাহারে রেখে ধুকে ধুকে মারা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এটা বোধগম্য নয় যে নিকট ভবিষ্যতে কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরতে পারবেন কিনা। যদিও দেশটি কিছু রোহিঙ্গা ফেরত নিবে বলে বারবার প্রতিশ্রুতি আওড়ে যাচ্ছে।
গিলমার তার বিবৃতিতে বলেন, মিয়ানমার বিশ্বকে বোঝাতে ব্যস্ত যে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে রাজি রোহিঙ্গাদের গ্রহণে তারা প্রস্তুত রয়েছে। অথচ একই সময় নিপীড়ন চালিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে। কাজেই বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক পত্যাবর্তন অসম্ভব।
এছাড়াও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নো ম্যানস ল্যান্ডে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানিয়েছে রাষ্ট্র সংঘ।
রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিক সহায়তার প্রশংসা করেন গিলমার। কিন্তু তিনি সতর্ক করে বলেন, বর্ষার মৌসুমে তাদের ওপর মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে।
গিলমারের ভাষায়, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিস্তৃত ও পরিকল্পিত সহিংসতা থেমে নেই।
সহায়তায় ৯৫০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন : ১০ লাখ রোহিঙ্গা ও তিন লাখ স্থানীয় মানুষকে বাসস্থান, শিক্ষা সহায়তা ও অন্যান্য ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য রাষ্ট্র সংঘের প্রায় ৯৫০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এ বিষয়ে তারা একটি জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান তৈরি করছে, যা এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা বিষয়ক ন্যাশনাল টাস্কফোর্সের বৈঠকে রাষ্ট্র সংঘের প্রতিনিধিরা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান সরকারের কাছে ব্যাখ্যা করেন।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মাদ আবুল কালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ (সোমবার) রাষ্ট্র সংঘের প্রতিনিধিরা জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের বিভিন্ন বিষয়গুলি আমাদের জানিয়েছেন। তাদের প্রাক্কলন অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ৯৫০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।’
তিনি জানান, কক্সবাজারে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আছে এবং এদের উপস্থিতির কারণে প্রায় তিন লাখ স্থানীয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা হচ্ছে। এছাড়া পরিবেশসহ অন্যান্য অনেক কিছুর ক্ষতি হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ছাড়াও বন্যা, বৃষ্টি বা অন্য ঝুঁকিসহ এবং স্থানীয় জনগণকে সহায়তা দেওয়ার জন্য মোট ১২টি খাতে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে। আমাদের সময়.কম।
এর আগে, গত আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে নয় লাখ রোহিঙ্গা ও তিন লাখ স্থানীয় জনগণকে সহায়তা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্র সংঘ বলেছিল প্রায় ৪৩৪ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন। এবারের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে খাতভিত্তিক অর্থাৎ খাদ্য, বাসস্থান ইত্যাদি খাত অনুযায়ী বরাদ্দ হবে যেটি বর্তমান জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে ছিল না।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘এবারের প্ল্যানটি অনেক বেশি সামগ্রিক এবং এখানে ঝুঁকি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।’ কি ধরনের ঝুঁকি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসন্ন বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গারা কিভাবে থাকবে বা পাহাড় ধস সংক্রান্ত ঝুঁকি এখানে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের মতামত জানিয়েছি এবং আমরা আশা করছি বাংলাদেশের মতামতকে সংযুক্ত করে এটি জেনেভাতে ঘোষণা দেওয়া হবে।’
ঢাকায় আসছেন রাষ্ট্র সংঘের বিশেষ দূত
এদিকে ‘রাখাইনে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে’ নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যাক্তিসহ বিভিন্নজনের এমন দাবির প্রেক্ষিতে গণহত্যা বিষয়ক রাষ্ট্র সংঘের বিশেষ দূত আদামা দিয়েং আগামী ৭ মার্চ এক সপ্তাহের জন্য ঢাকায় আসছেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়াও তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য রাখাইনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, গত বছরের আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু হলে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে থেকে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিল।
https://goo.gl/KEPR2W
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন