সারা দেশে জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের পাইকারি গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। গতকাল গাইবান্ধা জেলা আমীর ডা. আব্দুর রহীম সরকার, নওগাঁ পৌর জামায়াতের আমীর মাওলানা হোসাইন আহমেদ মুজাহিদসহ ৫ জন শিবির কর্মী এবং রায়পুর পৌর শহর শাখার শিবির সভাপতিসহ ২ জন এবং বগুড়া আদমদীঘি ও শাহজাহানপুর উপজেলা জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ৭ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এছাড়া সাভারে বিএনপির ২ প্রধান নেতাসহ বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে বিএনপির ৯ নেতাকর্মী এবং রায়পুরে বিএনপির ২১ নেতাকর্মীকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া গত ২ দিনে চট্টগ্রামে ১৭৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গাইবান্ধা সংবাদদাতা : গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের আমির ডা. মো. আবদুর রহিম সরকার (৫৫)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, গাইবান্ধা শহরের রাবেয়া ক্লিনিকের উপর তলার নিজ বাসা থেকে গতকাল রোববার রাত ২টায় তাকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গ্রেফতার করা হয়। এর আগেও তিনি গ্রেফতার হয়ে ৩ মাস জেল খেটেছিলেন। সর্বশেষ তাকে তুলসিহাটের প্রেট্রল বোমায় নিহত ৮ মার্ডার মামলার আসামী দেখানো হয়েছে।
এদিকে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান জানান, উক্ত ডা. আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে সদর ও সুন্দরগঞ্জ থানায় একাধিক নাশকতার মামলা রয়েছে। সম্প্রতি আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি জানান, ডা. আবদুর রহিমকে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে, আদালতের পরবর্তি শুনানিতে তা নির্ধারিত হবে। শেষে তাকে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
নওগাঁয় পৌর জামায়াতের আমীরসহ ৫ জন শিবির কমী গ্রেফতার
নওগাঁ সংবাদদাতা : নওগাঁ জেলা পুলিশের বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে গত শনিবার রাতে ডিবি পুলিশ পৌর জামায়াতের আমীর মাওলানা হোসাইন আহমেদ মুজাহিদকে গ্রেফতার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শহরের দয়ালের মোড়ে সৈকত ছাত্রাবাস থেকে রোববার ভোররাতে ডিবির ওসি মোস্তাফা কামালের নেতৃত্বে পুলিশ পৌর ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি মিজানুর রহমান (১৮), দফতর সম্পাদক রেজাউল করিম (২২), ছাত্র শিবিরের সক্রিয় কর্মী সাজেরুল ইসলাম (২০) ও জামিলুর রহমান (২৩)কে গ্রেফতার করে। তাদের নিকট থেকে বাংলাদেশ জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মুক্তির দাবি সম্বলিত ও সরকার বিরোধী বিপুল পরিমাণ লিফলেট, ব্যানার, জিহাদী বই, রামদা, হাসুয়া, চাপাতিসহ নাশকতামূলক ষড়যন্ত্র করাকালে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর মডেল থানায় মামলা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। রবিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হোসেন পিপিএম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য প্রদান করেন। সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোরশেদ আলমসহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
বগুড়া অফিস : বগুড়ার আদমদীঘি ও শাজাহানপুর উপজেলা থেকে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ৭ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বেশকিছু ইসলামী বই এবং কিছু সিডি উদ্ধার করা হয় বলে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান ম-ল জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, রোববার সকালে আদমদীঘিতে অভিযান চালিয়ে আবু সাঈদ (২০), আব্দুর রাজ্জাক (২৮), মোখলেছুর রহমান (৫৫) এবং মুকুল মুন্সি (৫০)কে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় বিভিন্ন ধরনের ইসলামী বই এবং বেশকিছু সিডি উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, শনিবার রাতে শাজাহানপুর থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ শাজাহানপুর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি হাসান আলী (৫০) এবং মাদলা ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর গাজিউর রহমান (৫০)কে গ্রেফতার করে। এছাড়াও শহরের ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী সোহাগ (৪০)কে শনিবার রাতে শহরের কাটনারপাড়া এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ভাংচুরের অভিযোগে ১৮টি মামলা রয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আমিরুল ইসলাম জানিয়েছেন।
সাভারে বিএনপি ও জামায়াত শিবিরের ৫ নেতাকর্মী গ্রেফতার
সাভার সংবাদদাতা : সাভারে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করেছে সাভার থানা পুলিশ। নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা ও অস্ত্র আইনে দায়েরকৃত গ্রেফতারকৃত এ দুই নেতা হলেন, ঢাকা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, আশুলিয়া থানা বিএনপির সভাপতি ও সাভার এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ডা.দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু ও সাভার পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি মো. রেফাত উল্লাহ। এদিকে সাভার পৌর শাহীবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশী পিস্তল, ২৯ রাউন্ড গুলী, দুটি ককটেলসহ জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের পাঁচ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাভারের সাবেক সংসদ সদস্য ডা: সালাউদ্দিন বাবু ও পৌর মেয়র রেফাত উল্লাহর নেতৃত্ব ঢাকা মহানগর ও সাভার এবং পাশ্ববর্তী এলাকায় নাশকতা চালাতে তারা পরিকল্পনা করছিলো বলে দাবি করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের আদলতে পাঠানোর পর সাভার মডেল থানায় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এমন দাবি করেন ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল আজিম।
তিনি জানান, শনিবার রাতে শাহীবাগ এলাকায় সাভার মডেল থানা পুলিশ ও ঢাকা জেলা উত্তর ডিবি পুলিশ যৌথভাবে শাহীবাগ এলাকায় মোকলেছুর রহমানের বাড়ির ৫ম তলায় একটি ভবনে অভিযান চালায়।
এ সময় বাংলাদেশ ছাত্রশিবিরের মেহেরচন্ডী কড়ইতলা রাজশাহী শাখার প্রচার সম্পাদক মো. শরীফুল ইসলাম (২৮), সাভার পৌর ৮নং ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মো.জাহাঙ্গীর আলম (২৫), পৌর ৮নং ওর্য়াড জামায়াত সমর্থক মঞ্জুরুল ইসলাম (২৮) ৮নং জামায়াত কর্মী শহিদুল ইসলাম (২৮) ও ৮নং ওয়ার্ড ছাত্রশিবির কর্মী ইসমাইল হোসেন (২০)কে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, ২৯ রাউন্ড গুলী, দুটি ককটেল ও বেশকিছু বই উদ্ধার করে পুলিশ।
আশরাফুল আজিম আরো জানান, গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়টি প্রাথমিক প্রমাণিত হওয়ায় এ ঘটনায় সাভারের সাবেক বিএনপি দলীয় এমপি ডা: সালাউদ্দিন বাবুকে রোববার রাতে রাজধানীর পরিবাগ ও পৌর মেয়র রেফাত উল্লাহকে রোববার সকালে সাভার পৌর কর্ণপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
তবে পুলিশ কর্মকর্তা পিস্তল, ম্যাগজিনের কথা বললেও সাংবাদিকদের সামনে একটি জং পড়া পুরানো রিভালবার ও কয়েক রাউন্ড ভিন্ন আরেকটি পিস্তলের গুলী পরিবেশন করেন। যার ওই পরিবেশনকৃত রিভালভারের সাথে কোন মিল নেই। এদিকে সাভার মডেল থানা এক পুলিশের উপ পরিদর্শক বলেন এই রিভালভার দিয়ে মানুষ মারা যাবে না। এর কোন মূল্য নেই।
রায়পুরে শিবির সভাপতিসহ গ্রেফতার-২
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) সংবাদদাতা : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌর শহর শাখার শিবির সভাপতি পরান (২৮) ও শিবির কর্মী ফরহাদ (২২) নামের দু’জনকে গ্রেফতার করেছেন থানা পুলিশ। রবিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে উপজেলার দক্ষিণ কেরোয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পরাণ দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে ও ফরহাদ উত্তর কেরোয়া গ্রামের হাফেজ আমির হোসেনের ছেলে।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লোকমান হোসেন বলেন, গ্রেফতারকৃত দু’জনেই শিবিরের কর্মী। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। তাদের দুজনকেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে।
বিএনপি’র ২১ নেতাকর্মীকে কারাগারে প্রেরণ
রায়পুর থানা পুলিশের দায়ের করা সড়কে নাশকতার মামলায় বিএনপি ১৫ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। রোববার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে নেতাকর্মীরা লক্ষ্মীপুর জেলা দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠান। নেতাকর্মীরা হলেন, পৌর ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারি নাজমুল ইসলাম নাজু, রায়পুর পৌর যুবদলের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, পৌর ২নং ওয়ার্ড স্বেচ্চাসেবক দল সভাপতি মো. রিপন, ৭নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি হাসানুজ্জামান সবুজ, বামনী ইউনিয়নের সভাপতি মহাসিন কাজি ও সেক্রেটারি শাহাজান ঢালিসহ ১৫ নেতাকর্মী। এছাছাড়াও একই সাথে কমলনগর উপজেলার ৬ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বাদী এসআই মো. সিরাজ মিয়া জানান, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি রায়পুর বাস টার্মিনাল এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা সড়কে নাশকতার উদ্দেশ্যে হামলা-ভাংচুর ও শহরে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এতে আ’লীগ বিএনপির কয়েক নেতাকর্মী আহত ও প্রতিষ্ঠান ভাংচুর হয়। পরে তিনি বাদী হয়ে ৪৯ জনের নাম উলে¬খ করে অজ্ঞাত প্রায় আড়াইশ বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধ নাশকতার মামলা করেন। এ মামলার চার্জসিট প্রায় ৬ মাস আগে জমা দেয়া হয়েছে। এ মামলায় কয়েক নেতাকর্মী উচ্চ আদালত থেকে জামিনের আবেদন করলে তাদেরকে নিম্ম আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। এতে ১৫ নেতাকর্মী জেলা দায়েরা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অন্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সরকার পক্ষে আইনজীবি ছিলেন এডভোকেট পি.পি জসিম উদ্দিন ও আসামী পক্ষের আইনজীবি সাবেক পি.পি মনিরুল ইসলাম হাওলাদার ও এড. শামছুল আলম।
এ মামলার আসামী নাজমুল ইসলাম নাজু ও ইকবাল পাটওয়ারি বলেন, ওই তারিখে ঘটনায় আমরা জড়িত ছিলাম না। আ’লীগ ও পুলিশ মিলে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করছে বলে তারা দাবি করেছে।
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা : ৫ জানুয়ারির ভোটার বিহীন নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের সময় ৪টি নাশকতার মামলার আসামী বিএনপির মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহম্মদ ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম সরকারসহ ৯ জন নেতা-কর্মী গতকাল আদালতে একযোগে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণকারী অন্যান্য নেতা কর্মীরা হলেন, মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মনিরুল আলম সজল, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশিদুর রহমান রশু, বিএনপি নেতা রানা মুজিব, মাসুদ রানা, জুলহাস দিপু চৌধুরী ও ছাত্রদল নেতা রিয়াদ আহসান। এ সময় আসামীদের পক্ষ জামিনের শুনানিতে অংশ নেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খাঁন। সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট আ. বারী ভূইয়া। সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন ও সাবেক পিপি এ্যাডভোকেট নবী হোসেনসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন