সরকারের আচরণে দারুণ পাবলিক সিমপ্যাথি উপভোগ করছে বিধ্বস্ত জামায়াত। যারা মনে করে মানুষ হতে হলে দল লাগে, অতীত-বর্তমান কোনোটাই নেই, ভবিষ্যতের তো প্রশ্নই ওঠে না। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বৃত্তায়ন টিকিয়ে রেখে, টিকে আছে নিজেরা। বরং দুর্বৃত্তায়নের বাইরে এসে নিজের চেষ্টায় কোটিপতি হলে অভিনন্দন। যত দিন পর্যন্ত রাজনীতির চোখে পৃথিবী দেখা হবে, পরিবর্তন অসম্ভব। প্রতিটি মানুষের কাছেই কিছু শেখার আছে। তবে ব্যক্তিপূজকদের পরিবর্তনের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই পত্রিকার প্রথম থেকে শেষ পাতার খবর, ১০ বছর ধরেই এক জায়গায়।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম তুলে সাপের গর্তে পা দিয়েও ভীত নই। ১৯ বছরের কেউ যদি গণধর্ষণে নামে তাহলে ওই এলাকার ঘরে ঘরে যত ধর্ষিতা আর যুদ্ধশিশু, আন্তর্জাতিক বিচারের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে সবাইকে ট্রাইব্যুনালে আনা হোক। তার পরেও সুখরঞ্জন বালীর ঘটনা ঘটেছে এবং নিজামীর মামলায় সাক্ষীর ভিডিও ইন্টারভিউ, জীবন বাঁচাতে সাক্ষ্য দিয়েছি। যুক্তি খণ্ডানোর বদলে বেছে নিলো একজন সংখ্যালঘুর ৮০ বছরের ভিটার ওপর আক্রমণ।
২
মহাপণ্ডিত সক্রেটিস বলেছেন, ‘আমিই মহাজ্ঞানী। কারণ একমাত্র আমিই জানি, আমি আসলেই কিছু জানি না।’
একজন মন্ত্রী বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের সুফল পেতে জঙ্গি দমনের বিকল্প নেই’ (৬ মে নয়া দিগন্ত)। ’৭৩, ’৭৪ দেখা মানুষেরা বলবেন, ভূতের মুখে রামনাম! একমাত্র আওয়ামী লীগই হালাল-হারাম, একপাত্রে সব সম্ভবের দল। এরশাদ আমল থেকে যাদের সাথে রাস্তায় এবং সংসদে, সেই নিজামীরাই মহাজোটের চোখে জঙ্গি আর সামরিক শাসক এরশাদ গণতন্ত্রের ডুগডুগি হয়ে গেলেন কোন লজিকে?
ইরাক যুদ্ধের পর এশিয়ার আর কোনো সরকারের সমালোচনায় এতগুলো সম্পাদকীয় কি লিখেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস? পশ্চিমের মিডিয়াগুলো পুতিন কিংবা সিসির চেয়ে এ দেশের ১৪ দলকে কেন এত গুরুত্ব দিচ্ছে?
পাড়ার প্রত্যেকেই যখন গ্রামের এক পরিবারকে বারবার ভুল ধরিয়ে দিতে থাকে এবং তার পরেও যখন নিত্যনতুন ভুলের তালিকা নিয়ে ফিরে আসে, সমস্যা পাড়ার লোক নয়, বরং ওই পরিবারটি। সুতরাং পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারি থেকে রানা প্লাজা বিষয়ে ক্রিশ্চিয়ান আমানপোরের তীব্র বাক্যবাণ এবং রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারসহ মাঝখানে যত ঘটনা, একসাথে এতগুলো মানুষ ভুল হয় কী করে? ভাবুন ঠাণ্ডামাথায়।
জঙ্গি হত্যা করে গণতন্ত্র খাওয়াতে গেলে যা হয়, উদাহরণ মধ্যপ্রাচ্য। পাইকারি হারে মানুষ খুন করলেই যদি গণতন্ত্র আসত, মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তানের মতো হতো না। ‘বন্দুকের নলে আরবে বসন্ত আসেনি, এসেছে আইএস।’ হলোকাস্টের কথা বলি; কিন্তু আরব বসন্তে কত লাখ মারা গেছে? হয়তো এভাবে মানুষ না মারলে, মধ্যপ্রাচ্যের এই পরিস্থিতি হতো না। জোর করে গণতন্ত্র খাওয়ানো যায় না, তুলেও নেয়া যায় না। ন্যাটোর কাটা খাল ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে কুমির। গাদ্দাফি হত্যার পরে হোয়াইট হাউজে ওবামা আর হিলারির উচ্ছ্বাস দেখেছি। ড্যাডি বুশ, ‘মিশন একমপ্লিশড।’ স্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে প্রায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য দায়ী আরব বসন্তের অদ্ভুত গণতন্ত্র মেডিসিন। পশ্চিমারা এখন বলছে, ভুল করেছি।
আমাদের গণতন্ত্রের আইনস্টাইনদের সমস্যা হলো, না বোঝেন জঙ্গিবাদ, না গণতন্ত্র। ‘আইএসকে যদি আরব বসন্ত খাওয়ানো যেত, বাংলাদেশেও কথিত জঙ্গি খুন করে গণতন্ত্র আনা যেত।’ মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনা থেকে কোনো শিক্ষা না নিলেও ১৭ কোটি মানুষকে ঝুঁকিতে ফেলার অধিকার কে দিলো?
জরুরি যে বিচারগুলো হয়নি
আমরা কি হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে বারান্দায় ফেলে রেখে জ্বরের রোগীর ওপর সর্বশক্তি প্রয়োগ করিনি? দেখা যাক, বিচারের অগ্রাধিকার কার! বিষয়টি এ রকম, হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে ১০ ঘণ্টা বসে থেকেও ডাক আসে না; কিন্তু পাঁচ মিনিট আগে আসা রোগীকে নিয়ে ডাক্তারদের হুলস্থুলের কারণ, জ্বরের রোগীর তুলনায় হার্ট অ্যাটাকের রোগীর গুরুত্ব বেশি। ১০ বছরে এত অর্থসন্ত্রাস সত্ত্বেও একটি ফিন্যানসিয়াল ক্রাইমেরও বিচার হয়নি।
ক) ৬ মে ২০১৬, কলকাতার আনন্দবাজারের স্বীকৃতি, এই সরকারের আমলে ৫০ হাজার কোটি টাকার অধিক পাচার হলে, সুফল ভারতও পেয়েছে। ‘যাদের জেলখানার ভেতরে থাকার কথা, তারা বাইরে ঘুরে বেড়ায় কী করে? টাকা পাচারের র্যাকেট নেহাত ছোট নয়। এত বড় চক্র এক দিনে গজায়নি, ধীরে ধীরে ডানা গজিয়েছে... রফতানি বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি আয় পোশাক শিল্পে, পাচার চক্রে তারাই যুক্ত, পোশাক যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য শুল্ক নেয়া হয় না। কম দামে মাল কিনে বেশি দাম দেখানো হয়, অতিরিক্ত টাকা ফাঁক গলে চলে যায় বিদেশে... অপরাধীদের জেরা করলেই জানা যাবে, কোন দেশে কত টাকা যাবে।’ খ) অর্থনীতির আসল খোরাক পুঁজিবাজার। এই বাজারে এক ডলার বিক্রি হয় ১০ থেকে ৫০০ ডলার কিংবা বেশি দামে। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ না তুলে নিলে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের মুক্তবাজার অর্থনীতি সম্ভব নয়। অন্যথায়, এক হাজারের বদলে ১০টা পিজাহাট। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যা করল, সেটাই পুঁজিবাজারের আয়না। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট, আমরা সব বুঝি। সর্বশেষ উদাহরণ, শর্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নতুন ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারের বাইরে থাকার যে অনুমতি দিলো সরকার, অর্থসন্ত্রাসীদের মহোৎসব। স্টক মেনিপুলেশনের সন্ত্রাসী দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ এবং মুদ্রাসন্ত্রাস করেও বিচারের বাইরে, উদাহরণ পানামা পেপার্স এবং গভর্নর আতিউর। তদন্ত রিপোর্ট হাতে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা, অপরাধীরা এত বেশি প্রভাবশালী যে বিচার সম্ভব নয়। গ) প্রথম আলোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা, বেসিক ব্যাংকের সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা লুট করা ফিন্যানসিয়াল ক্রিমিনালের বিচার সম্ভব নয়; কারণ বিষয়টি রাজনৈতিক অর্থাৎ রাষ্ট্রের বিশেষ ব্যক্তির আত্মীয়। ঘ) ২০১০ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত গভর্নর আতিউরের আমলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগের মধ্যে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্র“প, রূপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ইত্যাদি পৃথিবীতে একমাত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক লুণ্ঠনের দৃষ্টান্ত। ব্যবস্থা নেয়ার বদলে তার জন্য অশ্র“সজল চোখ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপত্র? গডফাদারদের শিরোমণিকে বিচারের আওতায় আনলে অনেক অর্থসন্ত্রাস ঠেকানো যেত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি রবীন্দ্রপূজা আর রাখাল বালকের গল্প? এই ম্যালেরিয়ার কথা আনন্দবাজার বলেছে পরে। অর্থনীতির ফাঁপা বেলুনটির কথা দেশী লেখক-গবেষকেরা আগেই বলেছেন; কিন্তু কেউ কি গভর্নর কিংবা অর্থমন্ত্রীর টিকিটিও ছুঁতে পেরেছে? ব্যাংক ডাকাতি ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করলেও ফেডারেল রিজার্ভ সাফ জানিয়েছে, চোর ঘরেই। হবুচন্দ্রের আজব তদন্তে গবুচন্দ্রের উদয়। মিলিয়ন ডলারের সংসদীয় অর্থ কমিটির হানিমুন কি শেষ হয়নি? ঙ) মানবজমিন ১৬ মে, ১ বছরেই ৭৬ হাজার কোটি টাকা পাচার। নয়া দিগন্ত ১০ মে, নিরাপত্তা পেলে টাকা ফিরে আসবে : আ ফ ম মোস্তাফা কামাল। মন্ত্রী নিজেই স্বীকার করলেন। অর্থনীতির জন্য বাংলাদেশ কত অনিরাপদ। রাজনৈতিক আত্মীয়স্বজনেরা লুট করা এবং কর ফাঁকি দেয়া বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাঠায় যার কিছুটা প্রকাশিত হলো পানামা পেপার্সে। বিভিন্নভাবে রাঘব বোয়ালদের নাম ঠেকিয়ে রেখেছে দলের গডফাদারেরা। মানবজমিন, ‘জিএফআই-এর রিপোর্টে খারাপের তালিকায় ১৪৯-এর মধ্যে ২৬তম বাংলাদেশ। ১০ বছরে অর্থপাচারের পরিমাণ পাঁচ হাজার ৫৫৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা দেশের দুই বছরের বাজেটের সমপরিমাণ।’ চ) প্রথম আলোতে অর্থমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারে স্বীকারোক্তি, চুরির জন্য ১০০ ভাগ দায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গভর্নরের দায়িত্বে ৬ আঙুলের ছাপ। ছ) মিডিয়া খুললেই লাশ, রক্ত, চুরির ছড়াছড়ি, যেন বাতাসা আর জীবনের মূল্য এক। মন্ত্রী মায়ার জামাই ৭ মার্ডারের অভিযুক্ত একজন, সাড়ে পাঁচ মাস হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে? সাগর-রুনি, ত্বকী, ৭ মার্ডারের মতো বহু চাঞ্চল্যকর খুনের আসামিদের বেলায় রাজনীতির আলামত? রাজাকার মন্ত্রীকে ঝোলানোর কোনো লক্ষণই নেই। জ) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করেন, প্রতিটি ব্লগার হত্যাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা, তদন্ত চলছে, আইএস নেই, জঙ্গিরা ঘরের। দাবি, দেশের আইনশৃঙ্খলা আমেরিকার চেয়ে ভালো।’ মন্ত্রীকে বলি, শুধু ঘুষ দেয়ার অভিযোগে সিজারের ৪৪ মাসের জেল হয়েছে।
ঝ) তিন বছর পরেও সোহেল রানার মতো দুর্ধর্ষ খুনির বিচার আদালতে তোলাই হয়নি! অথচ সব অপরাধীর নাকি এক পরিচয়, ‘২০ দল’। ঝ) বিশ্বজিতের নৃশংস খুনিদের ফাঁসি কার্যকর করা অগ্রাধিকারের তালিকার, ১ নম্বর। চাপাতি লীগের ১২ খুনি এখনো ভ্যাকেশনে। দলীয় একজনের ফাঁসির দড়িটি একদিন আগে সরিয়ে নেয়া হলো। দলের খুনিদের রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে ক্ষমার ঐতিহাসিক রেকর্ড। ঞ) ধরা পড়েও কালো বেড়ালের বিচার হয়নি...।
উদাহরণগুলো প্রমাণ করল, সন্দেহাতীত নয়; বরং বিরোধী দলের বেলায় সব কিছুই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তবে ফাঁসি কার্যকর করার ঘটনা বাংলাদেশকে মোটেও কলঙ্কমুক্ত করেনি। রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারই সব নয়, আরো আসছে।
বন্দীদের একজনও কি সোহেল রানার চেয়ে দুর্ধর্ষ? জেলের ভেতরে থেকে বিদ্রোহ কিংবা অভ্যুত্থানের উপযুক্ত? সর্বশেষ বৃদ্ধের শরীর এতই দুর্বল, নিয়মের কম সময়েই লাশ নামাতে হলো। বিচারের অগ্রাধিকার কি খণ্ডাতে পেরেছি?
৩
প্রতিটি স্বাধীনতা যুদ্ধেরই দুই পক্ষ। বিজয়ীরা পরাজিতদের শাস্তি দেয়, আবার উল্টোটাও হয়। উদাহরণস্বরূপ, কিউবা বিপ্লব খ্যাত চে গুয়েভারা মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও বলিভিয়া স্বাধীন করতে গেলে তাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’র অপবাদ দিয়ে খুন করা হলো। এসব উদাহরণ বহু। শেষ পর্যন্ত পরাজিত হলে বরং ম্যান্ডেলাকেই ফাঁসি দিতো ব্রিটিশ।
আমাদের রাষ্ট্রধর্ম বহাল থাকা-না-থাকা নিয়ে আন্দোলনের বিষয়টিও ভাবতে হবে। মানবাতাবিরোধী অপরাধ করে থাকলে অবশ্যই ফাঁসি হবে কিন্তু বিচারও সন্দেহাতীত হতে হবে। তা করতেই জাতিসঙ্ঘের আওতায় আইসিসির জন্ম। প্রতিবারই স্বচ্ছ বিচারের দাবিতে জাতিসঙ্ঘ প্রতিবাদ করে। পাবলিকের প্রশ্ন, জাতিসঙ্ঘ যদি নিজের আইনে বিশ্বাস করে, ফাঁসি হয় কী করে?
৪
অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ব্যক্তিই নির্দোষ। একটি উদাহরণ, ’৯৬-এর চাঞ্চল্যকর মামলায় সন্দেহাতীত প্রমাণ না হওয়ায় জোড়া খুনি ‘ও জে সিমসন’কে খালাস দিতে বাধ্য হলো মার্কিন কোর্ট। দীর্ঘ ট্রায়াল শেষে উকিলের বিখ্যাত যুক্তি, ‘গ্লাভস্ ডোন্ট ফিট সো ইউ মাস্ট বি একুইটেড।’ অর্থাৎ দস্তানা হাতে পরানো যাচ্ছে না, মক্কেলকে মুক্তি দিতে হবে। বাংলাদেশে রায় কি সন্দেহাতীত? হলে, মৃত্যুদণ্ড নিয়ে এত সমালোচনা কেন? জাতিসঙ্ঘ, হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ, জন কেরির ফোন... রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের বার্তা কী? বিচার সন্দেহাতীত হলে, সরকার কেন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বদলে সবাইকে মিথ্যাবাদী ও শত্র“ মনে করে! এর মানে কি, বিশ্বজুড়ে প্রত্যেকেই ভুল এবং সরকার একাই পণ্ডিত? প্রমাণ ছাড়া বিদেশী পত্রিকা একটি কথাও লিখবে না। বিচার স্বচ্ছ হলে সরকারের উচিত উল্টো টাইমসের বিরুদ্ধে মামলা করা। টাইমস্ লিখেছে, ‘বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।’ আইনমন্ত্রী এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অনেকেই টাইমসের সঙ্গে একমত, ‘বিচার রাজনৈতিক’। জেল কোডের বদলে সরকারের দ্রুত রায় কার্যকরের মোটিভ অবশ্যই আইসিসির বাইরে (মাহবুবে আলম, সরকারের সিদ্ধান্তে রায় কার্যকর।)। যারা খুনি সোহেল রানাকে তিন বছর পরেও আদালতে তোলেনি, তারাই তাড়াহুড়ায় ফাঁসি দেয়। যুক্তি খণ্ডানোর বদলে সবাইকে ভুল বলাটা কোনো আইনেই সন্দেহাতীত বিচার নয়।
নিজামীদের ওপর বেজায় ক্ষিপ্ত মোদি। হোটেল সোনারগাঁওয়ে সে কথাই জানিয়ে দিলেন খালেদাকে, এর পরেই খালেদা বোবা। মোদিরা চাইলে হবে না, এমন সাহস কার? চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষ, ‘দেশ দুটোই থাকবে কিন্তু সীমান্তের সেলাইটা শিথিল হবে।’
৫
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে ‘আন্তর্জাতিক’ বাক্যটি যুক্ত। ফলে ট্রাইব্যুনালের প্রতিটি কাজই হতে হবে আইসিসির আইন অনুযায়ী। সমালোচনা করলেই অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে আত্মসমর্পণ। ‘আন্তর্জাতিক আইন কবে অভ্যন্তরীণ হয়?’
বিজেপির কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দেরি নেই, তখন বাংলাদেশ হবে কুরুক্ষেত্র। স্বাধীন কাশ্মির অ্যাক্টিভিস্ট আজমল গুরুর স্ত্রীর বক্তব্য, ‘ব্রিটিশরা অনেক ভালো ছিল। তারা ভগৎ সিং-এর লাশ পরিবারকে ফেরত দিয়েছিল। আমার ১৪ বছরের ছেলে শ্রীনগরে কবর খুঁড়ে রেখেছে, তিহার জেল থেকে বাবার লাশ তুলে ফেরত দেয়া হবে। পাকিস্তানিরাও ভালো; কারণ, সর্বজিতের দেহ পরিবারকে ফেরত দিয়েছিল। আমার চোখে ভারত একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র।’
৬
বিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে চাইছে, এদের ক্ষমতায় না রাখলে বাংলাদেশ হবে আফগানিস্তান, সরকার পতন হলে লাখ লাখ মানুষ মরবে। ঘরের জঙ্গিবাদ প্রচারে, আন্তর্জাতিক মহলে লবি করছে ভারতও। জামায়াতকে সন্ত্রাসী দল ঘোষণায় দিল্লির অসম্ভব তৎপরতা। লক্ষ্য একটাই, ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা এবং সেই মাফিক অগ্রিম প্রোগ্রামও দেয়া শেষ। সবাই বোকা নয়। কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র যখন আলোচনার টেবিলের বদলে কামান তুলে নেয় হাতে, সেটাই ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া...। এই দেশে আইএস আছে কি না, সময় বিচার করবে। কিন্তু সরকারের কর্মকাণ্ড জঙ্গিদের জন্য সবুজ সঙ্কেত। -