(১) জুম‘আর দিন হ’ল ‘দিন সমূহের সেরা’ (سيد الأيام)। এদিন আল্লাহর নিকটে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিনের চাইতেও মহিমান্বিত। এইদিন নিকটবর্তী ফেরেশতাগণ, আকাশ, পৃথিবী, বায়ু, পাহাড়, সমুদ্র সবই ক্বিয়ামত হবার ভয়ে ভীত থাকে’।[ ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৩৬৩ ‘জুম‘আ’ অনুচ্ছেদ-৪২।]
(২) জুম‘আর রাতে বা দিনে কোন মুসলিম মারা গেলে আল্লাহ তাকে কবরের ফিৎনা হ’তে বাঁচিয়ে দেন’।[আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৬৭ ‘জুম‘আ’ অনুচ্ছেদ-৪২।]
(৩) এইদিন আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়। এইদিন তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় ও এইদিন তাঁকে জান্নাত থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। এদিনে তাঁর তওবা কবুল হয় এবং এদিনেই তাঁর মৃত্যু হয়। এইদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে ও ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।
(৪) এদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপরে বেশী বেশী দরূদ পাঠ করতে হয়।[আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৩৬১, ১৩৬৩।]
(৫) এই দিন ইমামের মিম্বরে বসা হ’তে জামা‘আতে ছালাত শেষে সালাম ফিরানো পর্যন্ত সময়ের মধ্যে[ মুসলিম, আবুদাঊদ, মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/১৩৫৬-৫৯ ও ১৩৬১ ‘জুম‘আ’ অনুচ্ছেদ-৪২; তিরমিযী হা/৪৯০-৯১, শরহ আহমাদ মুহাম্মাদ শাকির (বৈরূত ছাপা ১৪০৮/১৯৮৭) ২/৩৬১ ও ৩৬৩-৬৪ পৃঃ।] এমন একটি সংক্ষিপ্ত সময় (سَاعَةٌ خَفِيْفَةٌ) রয়েছে, যখন বান্দার যেকোন সঙ্গত প্রার্থনা আল্লাহ কবুল করেন।[ মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৫৭, ‘জুম‘আ অনুচ্ছেদ-৪২।] দো‘আ কবুলের এই সময়টির মর্যাদা লায়লাতুল ক্বদরের ন্যায় বলে হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জুম‘আর সমস্ত দিনটিই ইবাদতের দিন। অন্য হাদীছের [তিরমিযী হা/৪৮৯; মিশকাত হা/১৩৬০, ‘জুম‘আ’ অনুচ্ছেদ-৪২।] বক্তব্য অনুযায়ী ঐদিন আছর ছালাতের পর হ’তে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দো‘আ কবুলের সময়কাল প্রলম্বিত। অতএব জুম‘আর সারাটা দিন দো‘আ-দরূদ, তাসবীহ-তেলাওয়াত ও ইবাদতে কাটিয়ে দেওয়া উচিত।[ ইবনুল ক্বাইয়িম, যা-দুল মা‘আদ ১/৩৮৬।] এই সময় খত্বীব স্বীয় খুৎবায় এবং ইমাম ও মুক্তাদীগণ স্ব স্ব সিজদায় ও শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ ও দরূদের পরে সালামের পূর্বে আল্লাহর নিকটে প্রাণ খুলে দো‘আ করবেন। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই সময়ে বেশী বেশী দো‘আ করতেন।[মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪ ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪; ঐ, হা/৮১৩ ‘তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১; মুসলিম, রিয়াযুছ ছালেহীন হা/১৪২৪/১৭, (বৈরূত ছাপা ১৪০৯/১৯৮৯) পৃঃ ৫৩৭।]
(৬) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন গোসল করে সুগন্ধি মেখে মসজিদে এল ও সাধ্যমত নফল ছালাত আদায় করল। অতঃপর চুপচাপ ইমামের খুৎবা শ্রবণ করল ও জামা‘আতে ছালাত আদায় করল, তার পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত এবং আরও তিনদিনের গোনাহ মাফ করা হয়’।[ বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৮১-৮২, পরিচ্ছন্নতা অর্জন ও সকাল সকাল মসজিদে যাওয়া, অনুচ্ছেদ-৪৪।]
(৭) তিনি আরও বলেন, ‘জুম‘আর দিন ফেরেশতাগণ মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন ও মুছল্লীদের নেকী লিখতে থাকেন। এদিন সকাল সকাল যারা আসে, তারা উট কুরবানীর সমান নেকী পায়। তার পরবর্তীগণ গরু কুরবানীর, তার পরবর্তীগণ ছাগল কুরবানীর, তার পরবর্তীগণ মুরগী কুরবানীর ও তার পরবর্তীগণ ডিম কুরবানীর সমান নেকী পায়। অতঃপর খত্বীব দাঁড়িয়ে গেলে ফেরেশতাগণ দফতর গুটিয়ে ফেলেন ও খুৎবা শুনতে থাকেন’।[ মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৮৪, অনুচ্ছেদ-৪৪।]
(৮) তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন ভালভাবে গোসল করে। অতঃপর সকাল সকাল মসজিদে যায় পায়ে হেঁটে, গাড়ীতে নয় এবং আগে ভাগে নফল ছালাত শেষে ইমামের কাছাকাছি বসে ও মনোযোগ দিয়ে খুৎবার শুরু থেকে শুনে এবং অনর্থক কিছু করে না, তার প্রতি পদক্ষেপে এক বছরের ছিয়াম ও ক্বিয়ামের অর্থাৎ দিনের ছিয়াম ও রাতের বেলায় নফল ছালাতের সমান নেকী হয়’।[তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন