ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১৮

দাওয়াহ বিভাগের ঈদ ও আমার ভাবনা: আমিনুল হক


বাংলাদেশ বার্তাঃ ১৪ জুলাই ছিল দাওয়াহ বিভাগের ঈদ। মানুষ ঈদ উৎসবে যে আনন্দ করে তার চেয়েও বেশী আনন্দ করেছিলাম আমরা। এই আনন্দের তাৎপর্য, ব্যাপকতা ও গভীরতা কতটুকু তা বাক্যের ছন্দে প্রকাশ করার যোগ্যতা আমার নেই।

দাওয়াহ বিভাগে আমার ভর্তি হওয়ার ঘটনা বহু কাহিনী দিয়ে ঘেরা। চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফের একটি মাসিক পত্রিকায় একদিন একটি বিজ্ঞাপন দেখলাম, আইআইইউসিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি। কম্পিউটার, বিবিএ, কুরআনিক সাইন্স ও দাওয়াহ। তখন কোন বিভাগে ভর্তি হবো কিংবা কোনটায় ভর্তি হলে বেশী লাভ এমন পরামর্শ কেউ দেওয়ার ছিল না। দাওয়াহ কী জিনিষ তাও বুঝতামনা। কিন্তু তারপরও মনের মধ্যে দাওয়াহ নামটি আল্লাহ বসিয়ে দিয়েছিলেন। সিদ্ধান্ত নিলাম, দাওয়াহ বিভাগে ভর্তি হতে হবে। জীবনে প্রথম চট্টগ্রাম যাব, আমার মতো বরিশাইল্লা গ্রাম্য ছেলের জন্য ছিল ভীণদেশে যাত্রার মতো। 
হাতে টাকা ছিল না। মা বললেন, বাগানের গাছ আর আমার হাতের গহনা বিক্রি করে চট্টগ্রাম যাও.. আল্লাহ তোমার সহায় হবেন......
১৯৯৮ সন সেপ্টেম্বর মাস। বাংলাদেশের বেশকিছু অঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। বৈরি আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে চললাম চট্টগ্রামের দিকে...পথে পথে বাধা। ঐদিন বাড়ি ছেড়ে আসার সময় বড় জোরে হাউমাউ করে অনেক কান্না করেছিলাম....
আলিমে যখন পড়ি তখনও স্বপ্ন দেখতাম “প্রাইভেট কারের” ড্রাইভার হবো। কেন এমন স্বপ্ন দেখতাম? এর জওয়াবও কিন্তু সোজা। পড়ালেখায় ছিলাম পেছনের বেঞ্চের ছাত্র। রুগ্ন দেহে আর কতদূর কুলায়? নরকঙ্কাল মানুষটা সারাদিন অসুস্থ থাকতাম। পড়ালেখা মোটেও ভালো লাগত না। আমার মা ছিল নাছোড় বান্দি। বেচারি সারাদিন আমার পেছনে লেগে থাকত আর বলত, তোকে পড়ালেখা করতেই হবে, আইল্লা চাষা (কৃষক) হতে পারবি না। 
ফাজিল প্রথম বছর প্রায় শেষ তখন উঠল জজবা। পড়া-লেখা করতে হবে। মানুষের মত মানুষ হতে হবে। দ্বীন দুনিয়ার বিজ্ঞাপনটা আমাকে নিয়ে এল দাওয়াহ বিভাগে। দাওয়াহ বিভাগে এসে উস্তাজ হিসেবে যাদের সাথে দেখা মিলল, তাঁরা একেক জন সোনার মানুষ। তাঁদের পরশে পাথরও সোনা হয়, নোনা পানিও মধু হয়। ড. গিয়াস উদ্দিন হাফিজ, গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, ড. আছম তরিকুল ইসলাম, আব্দুর রহমান আল মাদানী, আব্দুস সালাম আজাদী, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ শিক্ষকগণ আমার মনোজগতকে তছনছ করে দেন। 
কোথায় রাস্তার ড্রাইভার হবো? পেছনের সেই স্বপ্ন গেল উবে। আমি হারিয়ে গেলাম অন্য জগতে। ডুব দিলাম গভীর জলে। চার বছর অনার্স যখন শেষ করলাম তখন আমি আর আগের আমিন নেই। আমার মত অথর্ব গরুকে ততক্ষণে সালাম আজাদীরা মানুষ করে ফেলছেন। চিন্তার জগতে তখন বড় হওয়ার স্বপ্ন। চলে গেলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ায়। উদ্দেশ্য মাস্টার্স ডিগ্রীটা সেখান থেকে সম্পন্ন করা। সেখানে গিয়ে মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হলাম। এরপর ফিরে এলাম আবার নিজ আলয়ে। তবে অন্য রূপে। ২০০৬ সালের ১লা মার্চ আইইউসির দাওয়াহ বিভাগের প্রভাষক হিসেবে। এতদিন যারা আমাকে বড় হওয়ার স্বপ্নগুলো বাতলে দিতেন তাদের সেই দায়িত্ব এসে গেল আমার কাঁধে। দাওয়াহ বিভাগের ছাত্র আবার দাওয়াহ বিভাগের শিক্ষক। তাও আবার একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। বিষয়টি আমাকে সবসময় আনন্দ দিত। দাওয়াহ বিভাগের সাথে প্রেমের সম্পর্কটা কেবল গভীর হতে লাগলো।
২০১০ সাল হতেই আমার হাতের লাগানো গাছগুলো ফল দিতে শুরু করলো। আমার ছাত্র আব্দুল গফুর ও জাকিয়া হান্না যখন দাওয়াহ বিভাগের শিক্ষক হলো তখন আনন্দে কেঁদেছিলাম। ঐ কান্না ওরা কেউ দেখেনি। দেখেছিল শুধু আমার রব। এরপর একের পর এক ফল দেখতে পেলাম। বর্তমানে ডজন ছাড়িয়ে যাবে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। ডজনের বেশী যারা এখন পিএইচডি করছেন। সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, লন্ডন আমেরিকার বহু নামী দামী ইউনিভার্সিটিতে ওরা পড়ছে ও নাম কুড়াচ্ছে। 
২০১৪ সালে আমি চলে যাই কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতে। এর দুই বছর পর দাওয়াহ বিভাগে মড়ক লেগেছিল। কার বুদ্ধিতে জানিনা। দাওয়াহ বিভাগ হটাৎ বন্ধ করে হাদিস বিভাগ খোলা হলো। একটি প্রতিষ্ঠিত বিভাগের চেয়ার-টেবিল, শিক্ষক-কর্মকর্তা এমনকি পিওনটাও হয়ে গেল ঐ বিভাগের। 
সৌদিতে বসে দাওয়াহ বিভাগ বন্ধ হওয়ার খবর পেয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। মাঝখানে প্রায় বছর খানেক বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হলো দাওয়াহ বিভাগ। ড. শাফি উদ্দিন মাদানী, ড. শাকের শওক, শাহ জালাল এ.এফ.এম নূরুজ্জামান, জাকিয়া হান্নাদের ঘাড়ে চাপল এই ভাঙ্গা নৌকা তালি দেওয়ার। যেখানে ইখলাস থাকে সেখানে আল্লাহ বরকত দেন। উনাদের নিরলস প্রচেষ্টায় আল্লাহ দাওয়াহ বিভাগকে সামনে ঠেলে দিলেন। 
আমি সৌদি থেকে চলে এলাম ২০১৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী। দাওয়াহ বিভাগের প্রতি পুরনো মহব্বত আরো তীব্রতর হলো বিভাগে পুনরায় যোগদানের সাথে সাথে। দাওয়াহ বিভাগকে সামনে নেয়ার জন্য মনোযোগী হলাম। সাথে পেলাম একদল মুখলেছ সহকর্মী ও একদল জানবাজ শিক্ষার্থী। দাওয়াহ বিভাগের প্রতি তাদের কমিটমেন্ট দেখে আমি বিমোহিত হই……..
বলতে বলতে চলে এলো ১৪ জুলাই। আইআইইউসির বন্ধ্যাত্ব কাটার দিন। বহু বছর যাবত কনভোকেশনের ফাইল আটকা পড়েছিল। দুই ছটাক ওজনের ফাইলখানা ততক্ষণে পাহাড়ের মত ওজন হয়ে গেছে। যাইহোক অনুমতি মিলল, ১৪ তারিখ ৪র্থ কনভোকেশন হবে। একদম সর্ট নোটিশ। তারপরও আইইউসি কতৃপক্ষ হাল ছাড়লেন না। বন্ধ্যাত্ব কাটাতে তারা বদ্ধ পরিকর। 
কনভোকেশন যতই ঘনিয়ে আসছিল ততই ছটফট করছিলাম দাওয়াহ বিভাগের প্রিয় মুখগুলো দেখার জন্য। ওদের সাথে দেখা হলে যে সকল বেদনা এক নিমেষে উড়ে যায়…..
চলে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৪ জুলাই। একে একে পুরানো মুখগুলো দেখা শুরু করলাম। মনের গহিন থেকে সরে গেল বেদনার পাতাগুলো। রবের কাছে শুধু বলেছি, আলহামদুলিল্লাহ। ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে নিয়ে বসলাম, আনন্দ করলাম, গল্প করলাম। কয়েকদিন যাবত নাওয়া খাওয়া আর ঘুমও হয়নি ঠিক মতো। তারপরও ১৪ জুলাই ফিরে এসেছিল ভরা যৌবন হয়ে। ঐদিন যে দাওয়াহ বিভাগের ঈদ ছিল……

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন