ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১৮

সিরাত- রক্ত হিম করে দেয়া এক প্রিয়ভাজন

বাংলাদেশ বার্তা ডেসবকঃ দেলওয়ার ভাই বললেন "তারেক ভাই, কে নাকি ট্রেনে কাটা পড়েছে।' বিশ্বাস হয়নি! কি মনে করে সিকিউরিটি বক্সে কল দিলাম। ওখানে জানিয়েই আবার নিচে নামলাম। অশান্তি দূর করতে হাঁটছি। দেখি দেলওয়ার ভাই দৌড়াচ্ছে, আর বলছে ভাই, 'ওসমান হলের কে জানি!'- আমি আর স্থির থাকতে পারিনা, কারণ এই অভিজ্ঞতা আরেকবার হয়েছিল।  পিছন পিছন আমিও দৌঁড়। একটু আগাতেই সিরাতের নাম ভেসে আসছিল। সিকিউরিটি আংকেল গিয়ে আইডিকার্ড হাতে নিতেই 'আমার রক্তগুলো জমে যায়।' এটা কিভাবে সম্ভব। ভাবলাম হয়ত শুধু হাত পা ভাঙ্গবে! মনকে বেশ শক্ত করে মোবাইলটা হাত দিয়ে চেপে ধরে একপা দু'পা আগাচ্ছি। একটু পরেই কেটে পড়া হাত! নিস্তেজ। এবার পাগলের মত জিজ্ঞেস করছি সিরাত কই? ওরে মেডিকেল নিছে কেউ? সবাই হাত ইশারা করে কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বলেনা! সবাই যেন কোন অপঘাতে বোবা হয়ে যাওয়া ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ। স্বভাবগতভাবেই ধমকিয়ে উঠি। যাকে ধমক দিলাম সে জড়াই ধরে কান্না শুরু করে দিল। আমি তখনও ভাবছি "একটা হাত'ইতো, বাকীটা বেঁচে গেলেই হয়। কিন্তু পরক্ষণেই যে অভিজ্ঞতার সম্মুখিন আমি হয়েছি তা অতীতের সকল আঘাতকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। শরীরের শিরা-উপশিরাগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছিল।
সিরাতের ছিন্নভিন্ন দেহ। বিচ্ছিন্ন হাঁড়গোড় আর রাস্তায় পিষে যাওয়া মগজ দেখে আমি স্তম্ভিত!

ওসমান (রাঃ) হল প্রভোস্ট স্যারকে ( এড. আব্দুল মালেক স্যার) কল দিলাম। বড় ভাই, বন্ধু, রুমমেট সবাইকে কল দিচ্ছিলাম। একটা নাম্বারে কল দিতে আমার হাত কাঁপছিল। Rabiul। যার মাধ্যমে সিরাত আই আই ইউ সি'র সবুজ ক্যাম্পাসে আমাদের সহযাত্রী হয়েছে। রবিউল আমাকে জড়াই ধরে সিরাত কিনা সেটা সিউর হচ্ছিল। বার বার জানতে চাচ্ছে সে কেন আসবে? সিরাত হবার কথা না। ঠিক একই কাজ করেছেন সিরাতের খুব কাছের Fudayel ভাই! কেউ মেনে নিচ্ছেনা সিরাত কিভাবে হয়! আরেকজন স্যার যিনি সিরাতের পাশের গ্রামের। ফরহাদ স্যার। যার রিকমান্ড নিয়ে সে প্রভোস্ট স্যারদের কাছে হল সীট আবেদন করেছিল। শ্রদ্ধেয় Afm Nuruzzaman স্যার, বার বার উনাকে বলতে হয়েছে, এমনকি Abdul Malek স্যারও! "হ্যাঁ, তুমি যাকে পাঠাইছিলা ঐ ছেলেটাই! একপর্যায়ে মালেক স্যার বললেন 'আমি নিশ্চিত! '- ওপার থেকে আর কথা আসেনা। - কি বলবে কে! সবাই বাকরুদ্ধ! Eftekhar স্যারতো কিংকর্তব্যবিমূঢ়! উনি বোঝতেই পারছেন না "এটা কিভাবে সম্ভব!'
চটপটে, অল্পভাষী , সদাহাস্যজ্জ্বল, জনমদুঃখী সিরাত! ক্যাম্পাসে আসার আগেই হলে থাকা না থাকা নিয়ে একদিন রবিউল জানিয়েছিল। সম্ভবত শুরু থেকে সে ফুদায়েল ভাইয়ের সাথে ছিল। পরে রবিউলের রুমে পার্মানেন্ট ফ্লোরিং হয়েছিল সীট হবার আগ পর্যন্ত। আমার একটা স্বভাব হচ্ছে "কাউকে আদর করলে ধমক দিতাম বেশি।"- সিরাত সেই তালিকার একজন। বেশি হাসত বেশি ধমক খাইতো। ওঁর সবগুলো ফ্রেন্ডই আমার খুব কাছের কচিকাঁচা। যদিও ভার্সিটি পড়ুয়া তবুও ওরা যেন আপন ছোটভাই। একটা তো সরাসরি রুমমেট! Md Ryhanul Islam ই- একদিন বললো, 'ভাই ওঁর আম্মা নেই।' সেদিন থেকে সিরাত আমার কাছে অন্য কিছু। তাঁকে বলেছিলাম 'তোর সাথে খুব একা একা কথা আছে।' খুব ছোটবেলা আম্মু হারানো ছেলেটা এত হাসে কিভাবে! এইযে হলে আছে উনাকে মিস করেনা। কয়দিন আগে ঈদ গেল! তাঁর ঈদ কেমন ছিল? এসব নিয়েই মূলত গল্প করা। কিন্তু ব্যস্ততা আমাদের সে সুযোগ দেয়নি।
এত অল্প সময়ে ভার্সিটির বড় একটা অংশের নজর কাড়বে সিরাত এটা কেউ ভাবেনি। হয়ত আড়াল থেকে কেউ কেউ ঈর্ষাও করত!- ছেলেটা এত ভাল কেন!
মানুষের স্থিরচিত্র ধারণ করে নিজেকে আনন্দ দিত সিরাত! ডিএসএলারে সুনিপুণভাবে এঁকে নিত প্রিয় মানুষগুলোর মুখাবয়েব, শারীরিক সৌন্দর্য। কিন্তু সিরাত, সেকি জানত অল্প সময়েই তাঁকে বিদায় জানাতে হবে এই মানু্ষের আয়োজন, পৃথিবীর মোহ আর জাগতিক ভালবাসা।
দুঃখীদের দেখলেই চেনা যায়! সিরাতকে দেখলে এটা কস্মিনকালেও কেউ ভাবতনা তাঁর মনে কোন কষ্ট আছে। সে স্বাভাবিক চাঞ্চল্য ধরে রেখেছে পুরো ক্যাম্পাস লাইফ। ফুটবল মাঠ, বন্ধুদের আড্ডা, ডিপার্টমেন্ট, ক্লাব, স্কাউটস সবকিছুতেই ছিল তাঁর সরব উপস্থিতি। আজ সব সেই উপস্থিতির স্মৃতিচিহ্ন। 
আমরা সীরাতকে হারাইনি, একটা সদাচঞ্চল, হাস্যজ্জ্বোল, পরোপকারী বন্ধুকে আল্লাহ'র সিদ্ধান্তে তাঁর স্থায়ী ঠিকানায় স্থানান্তরিত করেছি। আমরা সব্বাই মিলে জান্নাতে আবার হাসবো, গল্প করবো, জীবনের না বলা গল্পগুলো শুনবো আর শুনাবো ইন শা আল্লাহ। সিরাত একটা ক্ষণজন্মা ভালবাসার নাম। 
------------------------------
সংক্ষিপ্ত পরিচিতঃ
""""""""""""""""""""""""""""
নামঃ কাজী এস. এম আমিরুল ইসলাম সিরাত
জন্ম: ১৯৯৭
মৃত্যুঃ ৩০ জুলাই ২০১৮, সকাল ৮.৪৫ মি.
পিতা: মো: আব্দুল গফুর
প্রতিষ্ঠানঃ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।
বিভাগ: ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ১ম বর্ষ ২য় সেমিস্টার।
মৃত্যুর ধরণ: ট্রেন দুর্ঘটনা। ( নানুর জানাযায় যাওয়ার জন্য সকাল ৮.৪৫ টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলঘ্ন রেলওয়ে রাস্তা দিয়ে ভার্সিটি বাস ধরতে যাওয়ার সময় পিছন থেকে চাঁদুপুর থেকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনগামী আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন