বাংলাদেশ বার্তাঃ ‘ইসলামের খিদমাত’ ও ‘ইসলামী আন্দোলনে’ সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের সাথে প্রচলিত ক্ষমতাসীন ও কায়েমী স্বার্থের সংঘর্ষ অনিবার্য। কিন্তু ইসলামের যে সব খিদমাত সম্পর্কে কায়েমী স্বার্থ বিচলীত নয়, সেসবের সঙ্গে তাদের সংঘাত হয় না। ইসলামের ঐ সব খিদমাত পরোক্ষভাবে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে ইসলামী আন্দোলনের সহায়ক হতে পারে; কিন্তু এসব খিদমাত প্রচলিত সমাজব্যবস্থাকে বদলে দিতে পারে বলে আশংকা না করলে কায়েমী স্বার্থ তাদের বাঁধা দেয়না। যদি কোন দাওয়াত ও কর্মসূচি সম্পর্কে কায়েমী স্বার্থের ধারণা হয় যে, তা দ্বারা তাদের পরিচালিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনশক্তি গড়ে ওঠবে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তারা সে আন্দোলনকে বরদাশত করে না।
সত্যিকার পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন প্রকৃতিগত ভাবেই বিপ্লবাত্মক। আল্লাহর দাসত্ব ও রাসুল (সাঃ) এর ব্যক্তিত্বের ভিত্তিতে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে গঠন করার বিপ্লবী কর্ম পদ্ধতি ও কর্মসূচিই নবীদের প্রধান সুন্নাত। আল্লাহ ও রাসুল(সাঃ)এর আনুগত্যহীন সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তনই ইসলামী আন্দোলনের মুল লক্ষ্য। এ আন্দোলনকেই কোরআনে করিমের ভাষায় জিহাদ ফী সাবীলীল্লাহ বলা হয়।
ইসলামী আন্দোলন সঠিক কর্ম পদ্ধতি ও কর্মসূচী দিয়ে দীর্ঘ সংগ্রামী যুগ অতিক্রম করা সত্বেও এবং ইসলাম কায়েমের যোগ্য নেতৃত্ব ও কর্মী বাহিনী গঠন করতে সক্ষম হলেও শেষ পর্যন্ত বিজয় যুগ নাও আসতে পারে। অবশ্যই ইমানদার ও সৎকর্মশীল এক জামায়াত লোক তৈরি হলে ইসলামের বিজয়ের প্রথম শর্ত পূরণ হয়। কিন্তু যে সমাজে ইসলামী বিধান কায়েমের চেষ্টা চলে, সে সমাজের বৃহত্তর জণসংখ্যা যদি আদর্শের সক্রিয় বিরোধী হয়, তাহলে বিজয় অর্জন সম্ভব নয়। রাসুল (সাঃ) এর তৈরি যে নেতৃত্ব ও কর্মী বাহিনী মদিনায় ইসলাম কায়েম করতে সক্ষম হল তারা মক্কায় কেন অক্ষম ছিল? মক্কার জনগণ সক্রিয় ভাবে ইসলাম বিরোধী ছিল বলেই সেখানে বিজয় আসেনি। এ থেকেই প্রমানিত হয় যে, ইসলাম বিরোধী জনতার উপর ইসলাম কায়েম করা যায় না। আল্লাহ তাআলা তাঁর দ্বীনের মহান নিয়ামাত অনিচ্ছুক জনতার উপর চাপিয়ে দেন না।
আল্লাহর অনেক রাসুলের সময়ে, দ্বীন ইসলাম বিজয় হয়নি। এটা তাদের ব্যর্থতা নয়। তাদের চেয়ে যোগ্য আর কে হতে পারে। ইসলাম কায়েমের যোগ্য লোক তৈরি হওয়ার শর্তটি মক্কায় পূরণ হলেও জনগণ বিরোধী হওয়ায় সেখানে বিজয় পূরণ হয়নি। দ্বিতীয় শর্তটি মদিনায় পূরণ হওয়ায় সেখানে ইসলামের বিজয় সম্ভব হয়েছে ।
এ কথা বিশেষ ভাবে লক্ষ করার বিষয় যে, ইসলামী আন্দোলনের কাজ হল প্রথম শর্ত পূরণের চেষ্টা করা অর্থাৎ বাতিল শক্তির সাথে মোকাবেলা করে সমাজের মধ্য থেকে একদল বিপ্লবী মুজাহিদ তৈরি করা। যদি এ শর্ত পূরণ হয় এবং দ্বিতীয় শর্তও উপস্থিত থাকে তাহলে ঐ মুজাহিদ বাহীণীকে নেতৃত্ব দান করার দায়িত্ব আল্লাহ নিজ হাতে রেখেছেন। কিভাবে, কি পন্থায়, কখন তিনি ক্ষমতা দান করবেন তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। ক্ষমতার আসনে পৌঁছে দেওয়া আল্লাহরই দায়িত্ব। কোন অস্বাভাবিক ও কুটিল পন্থায় নেতৃত্ব হাসিল করার চেষ্টা ইসলামী আন্দোলনের সঠিক কর্মপন্থা হতে পারেনা। আল কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, তোমাদের মধ্যে যারা ইমানদার ও সৎ কর্মশীল তাদেরকে দুনিয়ায় খেলাফাত দান করার ওয়াদা আল্লাহ করেছেন। (সুরা নুরঃ ৫৫)
অধ্যাপক গোলাম আজম (রঃ) এর করা আল কুরআনের অনুবাদের ভুমিকা থেকে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন