নাইম ও কান্তা দুই ভাইবোন। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মারধরে তারা আহত হয়েছেন। তাদেরকে মারধরের ছবি এসেছে একটি দৈনিক পত্রিকায়।
সেই পেপার কাটিংনিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে অভিভাবকদের সমাবেশে এসেছিলেন বাবা তালুকদার নজরুল ইসলাম। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং এসব ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। তবে মঙ্গলবার বিকালে পুলিশের বাধার মুখে সমাবেশটি পণ্ড হয়ে যায়। তালুকদার নজরুল পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমার ছেলে তালুকদার
নাইম ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্সে মাস্টার্স ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। আর মেয়ে তালুকদার কান্তা ইসলাম ইডেন কলেজে পলিটিক্যাল সাইন্সে অনার্স থার্ড ইয়ারে অধ্যয়নরত। তারা দুজনই কোটা সংস্কারের দাবিতে রাস্তায় নেমে হামলার শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি গর্বিত আমার সন্তানেরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে লড়াই করছে। তাদের এই লড়াইকে আমি গর্বের সহিত সমর্থন করছি। আমি চাই তাদের দাবি মেনে নেয়া হোক।’এই অভিভাবক বলেন, যারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা-নির্যাতন করছে তাদের বিচার হোক। আর আন্দোলনকারী যেসব শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের ছেড়ে দেয়া হোক।
গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ভেতরে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে, আমাদের সন্তানদের আহত করেছে। অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
আজকে এখানে তাদের অভিভাবকরাসহ আমরা সবাই আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে যে উদ্বিগ্ন, তা জানাতে এসেছি। তিনি বলেন, আমরা জানি না যে কেন এখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে? আমরা পুলিশের কাছে সমাবেশ না করতে দেয়ার কাগজপত্র বা নির্দেশনা দেখতে চেয়েছি। তারা তাও দেখাতে পারেনি। জোনায়েদ সাকি বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদএবং ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকি বিল্লাহকে পুলিশ আটক করেছিল মানববন্ধন শুরু হওয়ার আগে, যদিও তাদের পরবর্তীতে ছেড়ে দেয়া হয়। আমরা এসবের তীব্র নিন্দা জানাই। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও সমাবেশের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, আমরা এখানে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের পক্ষ থেকে জানাতে এসেছি যে আমাদের সন্তানরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নিরাপদ নয়।
আমরা চাই অবিলম্বে আমাদের সন্তানদের ওপর সরকার ও রাষ্ট্রের প্রশ্রয়ে, নির্দেশে বা অনুমোদনে যে হামলা ও নির্যাতন পরিচালিত হচ্ছে, সে বিষয়ে অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেয়া হোক। তিনি আরও বলেন, আন্দোলনরত যাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে ও গ্রেফতার করা হয়েছে সেসব মামলা প্রত্যাহার করে তাদের শিগগিরই মুক্তি দেয়া হোক। আর যাদেরকে তুলে নেয়া হয়েছে এবং যারা নিখোঁজ, তাদেরকে অবিলম্বে অভিভাবকদের কাছে ফেরত দেয়া হোক। এই অভিভাবক বলেন, আহতদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক এবং হল ক্যাম্পাসে যে দলীয় সন্ত্রাস ও ভীতির রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তার চিরতরে অবসান ঘটানো হোক।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, কোটা বাতিল করার সিদ্ধান্ত জানানোর এতদিন পরেও কোনোপ্রজ্ঞাপন বা সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য জারি হয়নি।
তাই শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে মাঠে নেমে আন্দোলন একটি যৌক্তিক অধিকার। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর যদি আক্রমণ করা হয় তাহলে শিক্ষক ও অভিভাবক হিসেবে আমরা বসে থাকতে পারি না। আমরা আমাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে প্রেসক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে এসেছি। কিন্তু পুলিশ আমাদের তা করতে দেয়নি। বরং আমাদের দুজনকে ধরে নিয়ে যায়।
সৌজন্যে: পরিবর্তন ডটকম ও Kontho24
সৌজন্যে: পরিবর্তন ডটকম ও Kontho24
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন