#হাতুড়ি দিয়ে এভাবে নৃশংস হামলা আগে দেখিনি - সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
#প্রতিবাদ করার অধিকার বন্ধ করা গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী - আসিফ নজরুল
#বাংলাদেশ ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে - আকমল হোসেন
#শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সাথে ছিলেন, আরো বেশি থাকবেন - গীতি আরা নাসরিন
কোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক, লজ্জাজনক ও অবিশ্বাস্য। এটা পাকিস্তান বা ব্রিটিশ আমলে ঘটেনি।
গতকাল রোববার সকাল ১১টায় ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষকবৃন্দের’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত পদযাত্রা শেষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, স্ট্যামফোর্ড, ইউল্যাব ও ইন্ডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫ জন শিক্ষক অংশ নেন। শতাধিক শিক্ষার্থীও তাদের সঙ্গে ছিলেন। সমাবেশে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে পাঁচটি দাবি উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন।
দাবিগুলো হচ্ছে- সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকল হামলাকারীদের বিচার, আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সরকারিভাবে আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা, নারী আন্দোলনকারীদের শারীরিক ও সাইবার যৌন নিপীড়নের বিচার, এবং দ্রুত কোটা সংস্কারের প্রতিশ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে দেওয়া। শহীদ মিনারে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খানের সঞ্চালনায় শিক্ষকদের সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কোটা আন্দোলন যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত। এ জন্য ছেলে, মেয়ে, অভিভাবক, শিক্ষক সবাই এতে সমর্থন দিয়েছে। ৫৬ ভাগ কোটা অত্যন্ত অযৌক্তিক। আন্দোলন করেছে বলে সরকার কমিটি করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের ওপর নৃশংস বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে এভাবে নৃশংস হামলা আগে দেখিনি। যে অবস্থা চলছে, তাতে মানুষের নিরাপত্তা নেই। যারা আন্দোলন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এটি যৌক্তিক নয়। কোটা সংস্কারের দাবি যেন বাস্তবায়ন করা হয়, এই প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে তার দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষকদের পাঁচ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন করা হয়েছে, অভিভাবক ও শিক্ষকরা যখন তাদের জন্য দাঁড়াল তাদের ওপরও নিপীড়ন চালানো হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হাতুড়ি দিয়ে যে নৃশংশতা চালানো হয়েছে, এধরনের নৃশসংশতা আমরা আগে কখনো দেখিনি। যারা আহত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়া হয়েছে, রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। যে দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে তার সাথে আমার পূর্ণ সমর্থন আছে।
আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আন্দোলন করার কারণে শিক্ষার্থীকে হাতুড়িপেটা করা হয়েছে। মেয়েদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। মিথ্যা হয়রানির মামলা করা হয়েছে। নানা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদ করার অধিকার বন্ধ করা গণতন্ত্রবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। সকল ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার চাই এবং হাতুড়িপেটাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদ- চাই।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। জামায়াত-শিবির ও বিএনপির সংশ্লিষ্টতা দেখানো হয়েছে। এখন যেকোনো দাবি তুললেই এ রকম করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্রদের দাবি প্রত্যাখ্যান করার ভাষা নিন্দনীয়। তিনি উল্লেখ করেন, একটি তরুণকে যখন চিকিৎসা নিতে গেলে সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা বুঝি বাংলাদেশে গণতন্ত্র কোন পর্যায়ে আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, বাংলাদেশ যে তৈরি হয়েছে এবং বাংলাদেশ তৈরি হবার সূচনা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে তখন যে ‘না না না’ উচ্চারিত হয়েছে তা কিন্তু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই যে না বলার শক্তি, এই না বলা থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা বের হয়ে এসেছিলেন, গড়ে তুলেছিলেন এই শহীদ মিনার, ১৯৭১ সালে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল, তা আবার গড়া হয়েছে। সেই শহীদ মিনারের সামনে আমরা দেখেছি প্রতিবাদরত একজন শিক্ষার্থীকে কিভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সাথে ছিলেন, আরো বেশি থাকবেন।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক তাসনিম সিরাজ মাহবুব বলেন, ভিন্নমতের বিরুদ্ধে গলা চেপে ধরার যে প্রবণতার নিন্দা জানাচ্ছি। হাসপাতাল থেকে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা না করে বের করে দেওয়ারও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এ সময় সংবিধানে প্রতিবাদ করার অধিকার আছে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, আমাদের সংবিধানে প্রতিবাদ করার অধিকার আছে। সেটি সমুন্নত রাখার সুযোগ দিতে হবে। সৌজন্যেঃদৈনিক সংগ্রাম
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন