বাংলাদেশ বার্তাঃ আজ আমার পরম শ্রদ্ধেয় আব্বা আল্লামা সাঈদীর সাথে কারাগারে দেখা করলাম । মাথায় কারুকার্যময় সেই টুপি, মোটা ফ্রেমের কালো চশমা, হাতে সোনালী রঙের ঘড়ি, হাল্কা নীলাভ পাঞ্জাবী আর তার উপরে কালো রঙের কোটিতে আব্বাকে বেশ সুন্দর লাগছিল আজ, আলহামদুলিল্লাহ !
কিন্তু আমাদের সাক্ষাতের সময় যে বড় অল্প । আব্বার মায়াভরা পবিত্র চেহারাখানি নয়ন ভরে দেখতে দেখতেই তো সময় ফুরিয়ে যায় !!
নতুন করে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের উপর বিশেষ করে শিশুসহ মহিলা জামায়াত নেতা কর্মীদের গ্রেফতার ও রিমান্ডের নামে নির্যাতনের খবরে আব্বা খুবই ব্যথিত । সাথে সাথে আব্বা এটাও বললেন যে, ‘ইসলামী আন্দোলনকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্যই মূলত এই দমন পীড়ন চলছে । তবে হাজারো জুলুম নির্যাতন চালিয়ে ইসলামী আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যায়নি আর যাবেও না ইনশাআল্লাহ ।‘
আব্বা আরো বললেন, ‘ইসলামী আন্দোলন আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া নেয়ামত । এ আন্দোলনে শামিল হতে না পারলে আমরাই হারিয়ে যেতাম । কেউ কেউ বলে থাকেন, আমি জামায়াতে যোগ না দিলে আমাকে হয়তো জেল জরিমানার মুখোমুখি হতে হতো না । আল্লাহর কসম ! দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর ধরে জেলে থাকার পরও আমার মনে একবারও এ ধরনের কোন কথা জাগ্রত হয়নি। বরং আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি ইসলামী আন্দোলন আল্লাহ পাকের বিশেষ এক নেয়ামত । আল্লাহ পাকের দয়ায় আমি এই নেয়ামত লাভে ধন্য হয়েছি । সুতরাং ইসলামী আন্দোলনের নেতা কর্মীদের জন্য হতাশার কিছু নেই । বরং দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে মনযিল পানে ।’
আমার আব্বার বয়স এখন ৭৮ । তিনি গত ৩৭ বছরের ডায়াবেটিক পেশেন্ট। তাঁর হার্টে ৫টি রিং বসানো আছে। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ আর্থাইটিস রোগেও আক্রান্ত । বিগত দিনগুলিতে কারাগার কর্তৃপক্ষ তাঁর হাটু কিংবা কোমড়ে সামান্য থেরাপির ব্যবস্থাও করেনি । যে কারনে আমার আব্বা আল্লামা সাঈদী একনাগাড়ে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না এমনকি তিনি দাঁড়িয়েও নামাজ আদায় করতে পারছেন না । হাঁটু ও কোমড়ের তীব্র ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন আব্বা । কিন্তু আব্বাকে ডাক্তার দেখানো বা চিকিৎসা কোনটাই করাতে পারছিনা আমরা । বহু চেষ্টা করার পরও আব্বাকে হাসপাতালে নেয়া বা ডাক্তার দেখানোর কোন অনুমতি আমাদেরকে দিচ্ছেনা কারা কর্তৃপক্ষ ।
আব্বার শারিরীক সুস্থতার জন্য তিনি আপনাদের সকলের কাছে বিশেষ দোয়া চেয়েছেন ।
আমাকে যারা আব্বার কাছে আপনাদের সালাম পৌঁছাতে বলেছিলেন আমি আপনাদের প্রত্যেকের সালাম আব্বার কাছে পৌঁছে দিয়েছি । বিশেষ করে হাফেজ আব্দুস সালাম, ডঃ প্রফেসর ইউসুফ, ডাক্তার শাহীন, মানসুর, শাহাদাত, মুস্তাফিজুর রহমান, ইদ্রীস আলী, লিটন ভাইএর কথা আলাদাভাবে বলেছি । কোন কোন ভাই তার নিজের জন্য এবং সন্তান ও পরিবারের জন্য দোয়া চেয়েছেন, তাদের কথাও বলেছি । আব্বা আপনাদেরকেও সালাম জানিয়েছেন এবং দোয়া চেয়েছেন ।
সাক্ষাতের সময় শেষ বলে কারারক্ষী এসে জানালো আমাদের । কতোদিন পর দেখা, কতো কথা বলবো ভেবেছিলাম । বুকের ভেতর জমানোও ছিল অনেক কথা কিন্তু বলা হলো না । খেয়াল করে দেখেছি, আব্বার সাথে সাক্ষাতের ৩০ মিনিট যেন পাঁচ মিনিটেই শেষ হয়ে যায় ! তাই বুকের ভেতর জমানো কথাগুলো বুকে চাপা দিয়েই কারাগার থেকে বেরিয়ে এলাম ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন