বাংলাদেশ বার্তাঃ গতকাল আসানসোলে, আসানসোলের নুরানি মসজিদের ইমাম মৌলানা ইমদাদুল্লাহ্ রশিদি-র পুত্রকে হত্যা করেছে দাঙ্গাকারী সংঘীরা। অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। বুক চিরে কলজে বের করে ইমাম সাহেবের পুত্রকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হয়েছে।
পোষ্ট মর্টেমের পরে আসরের নামাজের আগে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশগ্রহণ করেছিলেন প্রায় দশ হাজারের বেশি মানুষ। পরিস্থিতি ছিলি খুবই ভয়ানক এবং উত্তপ্ত । আসানসোলের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার নাসিম আনসারীর বয়ান অনুযায়ী,
"জানাজার ময়দানকে কারাবালার ময়দান বলে মনে হচ্ছিল। যুবকদের চোখেমুখে ফুটে উঠছিল প্রতিশোধগ্রহণের প্রতিজ্ঞা । আমি প্রায় হাল ছেড়েই দিয়েছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, না আর আসানসোলকে রক্ষা করা গেল না।"
জানাজার নামাজ শুরুর আগে মৃত সন্তানের পিতা ইমাম ইমদাদুল্লাহ্ রশিদি খুদবা(বক্তব্য) দিতে উঠলেন। ইমাম সাহেবের উর্দু বক্তব্যের নির্যাসটুকু অনুলিখন করার চেষ্টা করলাম,
" আল্লাহ্ আমার সন্তানের যতদিন আয়ু রেখেছিলেন, ততদিন সে বেঁচেছে। আল্লাহ্-র ইচ্ছায় তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে যারা হত্যা করেছে, আল্লাহ্ তাদের কেয়ামতের ময়দানে শাস্তি দেবেন।
কিন্তু, আমার সন্তানের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার আপনাদের কারও নেই। আমার সন্তানের মৃত্যুর জন্য একটিও মানুষের উপর আক্রমণ করা চলবে না। একটিও মানুষকে হত্যা করা যাবে না। বাড়িঘর, দোকানপাট কোথাও ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ বা লুটপাট করা চলবে না।
ইসলাম আমাদের নিরীহ কোনো মানুষকে হত্যা করতে শেখায় না। ইসলাম আমাদের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে বসবাস করতে শেখায়। আমাদের আসানসোলে আজ শান্তিশৃঙ্খলার প্রয়োজন। আপনারা যদি আমায় আপন মনে করেন, তাহলে ইসলাম নির্দেশিত শান্তি বজায় রাখবেন। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব আপনাদের।
আর যদি, আপনারা শান্তি বজায় রাখতে না পারেন, তাহলে ভাববো- আমি আপনাদের আপন নই। আমি আসানসোল ছেড়ে চিরতরে চলে যাবো।"
সাথে সাথেই পরিবেশ অদ্ভুতভাবে অত্যন্ত ঠান্ডা হয়ে যায়। জানাজার নামাজ শেষ হয়। প্রত্যেকেই নিজের নিজের বাড়ি ফিরে যান। মৌলানা সাহেব ফিরে যান মসজিদে।
না, আসানসোলের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে শান্ত করার জন্য একজন পুলিশ বা একজন প্রশাসনিক লোকের দরকার পড়েনি। মৌলানা সাহেবের মোহিত করা বক্তব্যই পুরো পরিস্থিতিকে শান্ত করে দেয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন