বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসের সাথে মিশে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস। দেশ ও জাতি গঠনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার পাশাপাশি বিশ্বজোড়া এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচিতি শহীদি ক্যাম্পাস হিসেবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ঊনিশজন মেধাবী তরুনকে হত্যা করার ইতিহাস এখানেই ঘটিয়েছে মানুষ নামক ঐ নরপশুরা। শহীদ সাব্বির, হামিদ, আইয়ুব, জব্বার থেকে শুরু হয়ে আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারী জীবন্ত শহীদদের এ মিছিল এখন অনেক লম্বা ও বিস্তৃত। আমাদের সামনেই এ সারিতে মিলিত হয়েছেন আমাদের প্রিয় ভাই শহীদ সাইফুদ্দীন, শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী, শহীদ হাফিজুর রহমান শাহীন। ১৯৯৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি শহীদ মোস্তাফিজুর রহমান ও শহীদ ইসমাঈল হোসেন সিরাজীর শাহাদাতের প্রায় ৮ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আবার জীবন দিতে হয়েছে আমাদের প্রিয় ভাই শহীদ সাইফুদ্দিন, শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী ও শহীদ হাফিজুর রহমান শাহীনকে। শহীদ সাইফুদ্দিন ভাইয়ের শাহাদাতের প্রাক্কালে আমি ছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি। আর আমাদের প্রিয় ভাই শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী ও শহীদ হাফিজুর রহমান শাহীন ভাইয়ের শাহাদাতের সময় আমার মত এই নগন্য মানুষটির উপর দায়িত্ব ছিল এ কাফেলার কেন্দ্রীয় সভাপতির। মানুষের এই ক্ষুদ্রজীবনে জীবনে অনেক ঘটনা মানুষকে প্রেরণা যোগায়।
আর আমার জীবন স্মৃতির অগ্রভাগ জুড়ে আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আনন্দ-বেদনার হাজারো ঘটনা। কিন্তু তা আজ শুধুই স্মৃতি। শহীদের সংস্পর্শের প্রতিটি মুহূর্তের জন্য আজ আমি গর্বিত, কারণ আল্লাহর এমন প্রিয় বান্দাদের খুব কাছাকাছি থাকার সুযোগ আমি পেয়েছিলাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখাকে মোবারকবাদ স্মারক বের করার এই মহতি উদ্যোগের জন্যে। আর এর মধ্যে দিয়ে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন স্মৃতির সাগরে আবার অবগাহন করার সুযোগটি করে দিল। সেই স্মৃতির ফ্রেমে আবদ্ধ ঘটনাগুলোর বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত কিছু কথা ও স্মৃতি প্রতিটি মুহুর্তেই আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
শহীদ নোমানী সম্পর্কে আমাকে কিছু লিখতে হবে। এই মুহুর্তে শহীদ নোমানীর সাথে প্রথম সাক্ষাতের কথা খুব করে মনে পড়ছে। দিন-ক্ষণ মনে নেই, এসএম হলের সামনে তার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। হাস্যোজ্জ্বল, মায়াবী চেহারার সুঠাম দেহের অধিকারী নোমানীকে প্রথম দেখাতেই নেতৃত্বের গুণাবলীসম্পন্ন মনে হয়েছে। জানলাম, তিনি কর্মী। বললেন, ‘কাম্পাসে এসে দাওয়াত পেয়েছি।’ আচরণে ও কথায় নম্র ও বিনয়ী নোমানীকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘দ্রুত সাথী হয়ে যান।’ এর কিছু দিন পরেই সাথী শপথ নিতে আসলেন তিনি। কন্টাক্ট করে বুঝলাম তার মেধার গভীরতা। শপথের পর তাকে দ্রুত সদস্য হতে বললাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল এই ভাইটি অনেক বড় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এতো অল্প সময়েই সদস্য হলেন তিনি। প্রথমে এলাকার দায়িত্ব দেয়া হয়। সবাই তার চাল-চলনে, আচার-আচরণে, মেধা ও যোগ্যতায় মুগ্ধ। তার সুন্দর বক্তব্য, অপূর্ব সুন্দর তেলাওয়াত তাকে সবার প্রিয় মানুষে পরিণত করল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হলেন। এতো অল্প সময়ে এতদূর অগ্রসর হয়ে দায়িত্ব পালনের নজিরও করেছেন শহীদ নোমানী। আমি তাকে কোনদিন রাগান্বিত, বিরক্ত হতে দেখিনি। সদা নিশ্চুপ, কিন্তু ছিলেন অবিচল।
ঘটনার আগের দিন রাত থেকে শুরু করে শাহাদাতের কয়েক মিনিট পূর্ব পর্যন্ত অনেকবার কথা হয়েছে তার সাথে। কিন্তু তিনি ছিলেন ধীর স্থির, প্রতিটি সময়ে তিনি আমাদের সাহস যুগিয়েছেন। রাত থেকে হলে তল্লাশি, ফজর থেকে শুরু করে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি; দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা জিম্মি করে নির্যাতন করার ঘটনা পিলখানার সেই ভয়াল জিম্মিদশা ও সেনা হত্যারই যেন আর এক অধ্যায়। এই পাশবিকতা শুধুমাত্র নরপশু হিংস্র হায়েনাদের পক্ষেই সম্ভব।
দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা স্তব্ধ গোটা ক্যাম্পাস। সেদিন যেন ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একযোগে লাশের খেলায় মত্ত। সব জায়গায় কথা বলে যখন নিরুপায়, তখন আমাদের করণীয় শেষ করলামÑ কখনো ফোনে, কখনো জায়নামাযে। পরিষদের ভাইয়েরা একসাথে বসে সবাই মিলে মহান রবের দরবারে হাত তুলে বললাম, ‘পরওয়ারদিগার! আমাদের যেখানে শেষ, তোমার সেখানে শুরু।’ চিৎকার করে তাঁর কাছে ফরিয়াদ করলাম, ‘আয় আল্লাহ, এই ভাইদের জীবন তোমার কাছেই সোপর্দ করলাম। তুমি আমাদের পরীক্ষা সহজ কর। প্রভু গো, শহীদের রক্তে কেনা এই জমিন থেকে আমাদের বিতাড়িত করো না!’ সেই কান্নার আওয়াজ এখনো কানে ভাসে। অতঃপর বিজয়ী হলাম ঠিকই তবে মূল্য দিতে হলো অনেক চড়া।
নোমানী ভাইয়ের কাছে যতবারই জানতে চেয়েছি কি খবর, তিনি বলেছেন কোন অসুবিধা নেই। এই তো ঠিক হয়ে যাচ্ছে। সেদিন গোটা ক্যাম্পাসে সবাইকে মুক্ত করতে নোমানী ভাইয়ের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। সর্বশেষ তিনি যখন জানতে পারলেন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলে পুলিশ ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে আটকরত সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৯ জনকে হত্যা করতে যাচ্ছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা, তখনি আল্লাহর পথের অকুতোভয় সৈনিক নিজের জীবনের বিনিময়ে ভাইদের উদ্ধার করেন। তখন পুলিশ ও র্যাব-এর সহায়তায় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা শিবির কর্মীদের উপর হামলা করে। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং রক্তলোলুপ ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় আমাদের অনেক ভাই আহত হয়। উন্মাদের মত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা নোমানী ভাইয়ের মাথায় ধারালো রামদা দিয়ে উপর্যুপরি কোপ দিলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা খুনের নেশায় এমনই উন্মত্ত হয়েছিল যে শহীদ নোমানীর মৃত্যু নিশ্চিত জানার পরও তারা রামদা দিয়ে তার বাম হাতের আঙুল কেটে ফেলে এবং মাথায় কুপিয়ে আঘাত করে মাথার মগজ বের করে ফেলে। বয়ে যায় রক্তের স্রোতধারা। যে মাথা ছিল মহাগ্রন্থ আল কুরআনের, তা তখন দ্বিখন্ডিত; যে কপাল আল্লাহকে সিজদা করতো, তা তখন রক্তাক্ত; যে হাতের ইশারায় মানুষকে দ্বীনের পথে ডাকতেন, সে হাতের আঙুল তখন হাত থেকে বিচ্ছিন্ন। মুহুর্তে লাল হয়ে গেল মতিহারের সবুজ চত্বর। ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হয়ে যান কর্মচঞ্চল প্রিয় ভাই নোমানী। নিথর হয়ে যায় বলিষ্ট নেতৃত্বের সাহসী মানুষটির সুঠাম দেহ। বীরবেশে পান করেন শাহাদাতের অমিয় সুধা। আমাদের বুক ভাসিয়ে মহান রবের সান্নিধ্যে চলে যান প্রিয় ভাই শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কয়েক মিনিট পরেই খবর এলো গোটা ক্যাম্পাস শিবিরের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু শহীদ নোমানীর শাহাদাতের খবরে ততক্ষণে তার পিতা ও মাতা বাকরুদ্ধ। সন্তানহারা পিতার নির্বাক জিজ্ঞাসা আর বৃদ্ধা মায়ের করুণ রোনাজারির প্রশ্নের কি জবাব দেবেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন? সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠকে ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে নোমানীকে হত্যার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এড়াবেন কিভাবে?
মাত্র একমাস পর যে ভাইটি মাস্টার্স পরীক্ষার সার্টিফিকেট নিয়ে মা বাবার কাছে ফিরে যেতেন, আজ তিনি শুধুই স্মৃতি। কি বলে সান্ত¦না দেবো তার আব্বা আম্মাকে? সদা হাস্যোজ্জ্বল নোমানী শুধু মেধাবী ছাত্রই ছিলেন না, সাধারণ ছাত্রদের কল্যাণে কত না ভূমিকা রেখেছেন তিনি। এমনকি দেশের কল্যাণেও বহু ভূমিকা রেখেছেন। তার মাঝে ছিল বাংলাদেশকে গড়ার তীব্র আকাঙ্খা, ছিল দীপ্ত শপথ। তিনি ছিলেন শিল্পী ও লেখক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্নেহভাজন ছাত্র, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রীর প্রিয় বন্ধু। সেদিন যখন আমেরিকা, লন্ডন, মক্কা শরীফসহ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করে সবাই খোঁজখবর নিচ্ছে, শহীদদের জন্য সর্বত্র দো’আ চলছে, তখন মনে হচ্ছিল যে, আমাদের শহীদেরা কতো বেশি ধন্য ও মর্যাদাবান! আমরা হয়তো হারিয়ে যাবো কিন্তু তারা অমর হয়ে থাকবে চিরকাল। শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী আজ একটি ইতিহাস।
আমরা আমাদের প্রিয় সাথী নোমানীকে ফিরে পাবো না। আমরা এভাবে ১৩৮ জন সাথী-ভাইকে হারিয়েছি। কিন্তু এর শেষ কোথায়? আর কত মায়ের বুক খালি হবে? আর কত ভাই-বোনের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হবে? আর কত দিন হত্যা, সন্ত্রাস, লুণ্ঠন চালিয়ে যাবে ছাত্রলীগের মানুষরূপী নরপশুরা। সত্য-মিথ্যার চিরন্তন আদর্শিক দ্বন্দ্বের সাহসী সৈনিক নোমানী ও রমজান বিশ্বাস নির্মাণে ছিলেন অকুতোভয়। দীপ্ত পথচলা আর আল্লাহভীতি ঘিরেই তাদের জীবন। আজ তারা আল্লাহর মেহমান, তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কিন্তু আমরা জানি, শহীদ নোমানীর শাহাদাত এ আন্দোলনকে পিছিয়ে দেয়নি বরং এগিয়ে নিয়েছে বহু দূর। এর সীমানা পরিমাপ আমাদের সাধ্যের বাইরে। আর আমাদের দায়িত্বের পরিধিও বেড়ে গেল অনেক দূর। সে সীমানাও অজানা। যারা শহীদ নোমানীকে ভালোবাসেন, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে শোককে শক্তিতে পরিণত করে এ কাফেলাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া। এতেই তাদের আত্মা শান্তি পাবে।
শহীদ নোমানী ভাইয়ের মা বাকরুদ্ধ। তিনি বলেন- ‘আহ্! আমার এতো আদরের বাবাকে তারা কিভাবে কুপিয়ে হত্যা করলো? আমি যদি সেখানে থাকতাম, তাহলে বলতাম, তোমরা আমাকে কোপ দাও কিন্তু আমার কলিজার টুকরো নোমানীকে আঘাত করো না।’ শহীদের বাবা জনাব হাবিবুল্লাহ নিজেই সন্তানের জানাযা পড়ান। তিনি জানাযার পূর্বে বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তো তোমার কাছে চেয়েছিলাম আমার ছেলে আমার জানাযা পড়াবে, কিন্তু আমি আজ ছেলের জানাযা পড়াচ্ছি। আর পিঠে বহন করছি তার কফিন। মাবুদ গো, তুমি শুধু আমার ছেলেকে শহীদ হিসেবে কবুল করো। কি অপরাধ ছিল আমার সন্তানের? আমি তোমার কাছেই এই হত্যার বিচার চাই।’ ছোট ভাতিজা-ভাতিজী কিছুই বুঝেনা, তারা বাকরুদ্ধ। ছোট দুই শিশুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনার ভাষা আর খুঁজে পেলাম না। তাদেরকে আদর করার প্রিয় চাচ্চু আর নেই। ‘কেন মারা হল তাদের প্রিয় চাচ্চুকে?’ এই হল তাদের জিজ্ঞাসা।
প্রিয় ভাইদের হারিয়ে আজ আমরা শোকাহত। তার বৃদ্ধ বাবা-মা আর পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে হারানোর বেদনায় জ্বলতে থাকবে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত। মহান রবের দরবারে সন্তানহারা মায়ের আহাজারি আর প্রতিরাতে তাহাজ্জুদের নামাজ শেষে চোখের পানি কি কোনই কাজে আসবেনা? আসবে, অবশ্যই আসবে। একদিন তারা পাবেন এই রোনাজারির পুরস্কার। আল্লাহর সম্মানিত অতিথি হবেন শহীদের পিতা মাতা হিসেবে। সেদিন জান্নাতের সবুজ পাখি হয়ে উড়তে থাকবেন শহীদেরা। এটাই তো শহীদের চূড়ান্ত সফলতা! ন্যায় ও বাতিলের এই দ্বন্দ্ব কোন সাময়িক বিষয় নয়, এটি চিরস্থায়ী আদর্শিক দ্বন্দ্বেরই ধারাবাহিকতা মাত্র। শাহাদাত ইসলামী আন্দোলনের বিপ্লবের সিঁড়ি, কর্মীদের প্রেরণার বাতিঘর, উজ্জীবনী শক্তি, নতুন করে পথচলার সাহস। আর খুনীরা হয় ক্ষতিগ্রস্ত, ভীত ও সন্ত্রস্ত। তবে ওরা থেমে থাকেনা। চালিয়ে যায় একের পর এক মানুষ হত্যা। কেননা, ওদের সত্ত কলুষিত। তবে আমাদের বিশ্বাস এই দুনিয়ার আদালতে এর নায্য বিচার না হলেও আল্লাহর আদালত থেকে খুনিরা রেহাই পাবে না।
শাহাদাতের রক্ত জমিনকে করে উর্বর। আন্দোলনকে এগিয়ে দেয় অনেক দুর। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে সে ঐসব লোকদের সঙ্গী হবে যাদের নিয়ামত দান করা হয়েছে, তারা হলো-নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সালেহ, আর তাদের সান্নিধ্যই হলো উত্তম।”
আল্লাহর পথে লড়াই করা কর্তব্য সেই সব লোকেরই যারা পরকালের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিক্রয় করে দেয়, আল্লাহর পথে যে লড়াই করে ও নিহত হয়, কিংবা বিজয়ী হয়, তাকে আমরা অবশ্যই বিরাট ফল দান করব। ইহলৌকিক এ জীবন থেকে শহীদরা বিদায় নিয়েও পৃথিবীতে তারা অমরত্ব লাভ করেন। আর পরজগতে যাওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা তাদের জীবিত করে নিজের পর পরজগতে যাওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা তাদের জীবিত করে নিজের মেহমান হিসেবে জান্নাতে থাকতে দেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের মৃত মনে করো না, প্রকৃতপক্ষে তারা জীবন্ত, কিন্তু তাদের জীবন সম্পর্কে তোমরা অনুভব করতে পারো না” (আল-বাকারা: ১৫৪)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, ‘তাদের প্রাণ সবুজ পাখির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহর আরশের সাথে ঝুলন্ত রয়েছে তাদের আবাস, ভ্রমণ করে বেড়ায় তারা গোটা জান্নাত, অত:পর ফিরে আসে আবার নিজ নিজ আবাসে।” (মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
প্রিয় রাসুল (সা) বলেছেন: ‘‘শাহাদাত লাভকারী ব্যক্তি নিহত হবার কষ্ট অনুভব করে না। তবে তোমাদের কেউ পিঁপড়ার কামড়ে যতটুকু কষ্ট অনুভব করে, কেবল ততটুকুই অনুভব করে মাত্র।’ (তিরমিযী)
হাদীসে উল্লেখ করেছেন নবী পাক (সা) বলেন, ‘‘কসম সেই সত্তার মুহাম্মদের প্রাণ যার হাতের মুঠোয়, কেউ আল্লাহর পথে কোনো আঘাত পেলে কিয়ামতের দিন সে আঘাত নিয়ে হাজির হবে। আর সে আঘাতের অবস্থা হবে ঠিক মিশকের মতো” (বুখারী ও মুসিলম)। এটা শহীদদের কত বড় সৌভাগ্য শহীদ বৃদ্ধ মা এখনো রাত জেগে তার সন্তানের চোখের পানি ফেলেন।
আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘সেইসব লোকদেরই আল্লাহর পথে লড়াই করা কর্তব্য, যারা পরকালের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবনকে বিক্রয় করে দেয়, যারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং নিহত কিংবা বিজয়ী হয়। আমরা তাকে অবশ্যই বিরাট পুরস্কার দান করবো।” (সুরা আন-নিসা: ৭৪)
সূরা আলে ইমরানে শহীদদের প্রাপ্য পুরস্কারসমূহ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন ‘তাদের সকল অপরাধ আমি ক্ষমা করে দেব। আর এমন জান্নাত তাদের দান করবো যার তলদেশে রয়েছে সদা প্রবাহমান ঝর্ণাধারা: এ হচ্ছে আল্লাহর নিকট তাদের পুরস্কার, আর আল্লাহর নিকট রয়েছে সর্বোত্তম পুরস্কার।’ (আল ইমরান: ১৩৬)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এখন শহীদ সাব্বির শহীদ আজিবর আর শহীদ শাহীনের কবর দিয়ে ঘেরা। আর এই ক্যাম্পাস থেকে ইসলামী আন্দোলনের মুলোৎপাটন করা পৃথিবীর কোন শক্তির পক্ষে সম্ভব নয়।
লেখক: সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও সহকারী সম্পাদক, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন