বাংলাদেশ বার্তাঃ ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে আসলেন ঝিনাইদহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মহোদয়, সাথে ছিলেন মহেশপুর উপজেলার ইউএনও, ওসি, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহ আরো কয়েকজন।
এডিসি সাহেব ছিলেন একজন হিন্দু ধর্মের মানুষ। উনি বললেন ১৯৯২ সালে আমার চাকুরি জীবনের প্রথমে আমি রাঙামাটি জেলার এডিসি ছিলাম।একদিন ডিসি সাহেব আমাকে বললেন যে সরকারী কোন এক সফরে জামায়াত সংসদীয় দলের নেতা নিজামী সাহেব রাঙামাটি আসছেন।তোমাকে উনার প্রটোকল দেয়ার জন্য সার্কিট হাউসে যেতে হবে শুনে আমি কিছুটা বিব্রতবোধ করলাম এই ভেবে যে আমি একজন হিন্দু আর উনি হলেন ইসলাম ধর্মের একজন নামকরা আলেম।তারপরেও নির্দিষ্ট তারিখে কিছু পুলিশ ফোর্স নিয়ে সার্কিট হাউসের নিকট পতাকা স্ট্যান্ড করালাম।
কিছুক্ষণ পর উনি গাড়ী বহর নিয়ে ঢুকলেন।এগিয়ে গিয়ে উনাকে রিসিভ করলাম এবং অনুরোধ করলাম প্রটোকল গ্রহন করার জন্য।জবাবে নিজামী সাহেব বললেন, 'আপনারা এত রোদে এই ছেলেদেরকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন কেন? আমি এমন কোন দামী ব্যক্তি না যে যার জন্যে এটা করতে হবে।এরা তো রাতদিন দেশের জন্য অনেক শ্রম দেয়।এই মুহুর্তে তাদেরকে একটু বিশ্রাম গ্রহণের সুযোগ দেন'!অবশেষে তাঁর কথা মত পুলিশ ফোর্স সরিয়ে দিতে বললাম।নিজামী সাহেব কে নিয়ে আমি চললাম সার্কিট হাউসের দো'তলায়।বিস্তারিত কুশলাদী জানার পর উনাকে বললাম স্যার, আজ রাতে আপনার খাবার মেন্যুটা বললে ভালো হতো।ডিসি সাহেব রাতে খাবারের ব্যবস্থা করবেন।
এ কথা শুনে নিজামী সাহেব বললেন, 'দেখুন! আমরা বাঙালি মুসলমান, ধর্মে যা বৈধ সবই খাই।আপনাদের মর্জিতে যা ভালো তাই আয়োজন করতে পারেন।তবে যা খরচ হবে তা লিখে রাখবেন,এটার ব্যায় আমিই দেব'।শুনে বললাম স্যার এটা কেমন কথা? ডিসি স্যার তো খাওয়াতে চেয়েছেন।নিজামী সাহেব বললেন দেখুন! আমাদের মত ব্যক্তি আরো অনেকেই আসেন।ডিসি সাহেব এত টাকা কোথায় পাবেন?তাছাড়া সরকার তো এর জন্য কোন বাজেট দেয় না।তাই এ খাওয়ানোর বিনিময়ে আপনাদের মত সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিকট থেকে প্রচুর চাঁদাবাজি করা হয়।১০ হাজার টাকা খরচ হলে তার জায়গায় এক লাখ টাকা আয় করা হয়।এটা আমি করতে দেবো না।আজকের রাতের খরচ আমিই দেবো।আর আমার সাথে ডিসি সাহেব ও তার সহকর্মীরাও থাকবেন।
এরপর তাই ই হল।রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ হল।খুব সকালে উনি যখন চলে যাচ্ছেন তখন উনার পিএস এর নিকট খরচের হিসাব টা ধরিয়ে দিলাম।কিছুক্ষণ পর অতিরিক্ত ২০০০ টাকা সহ সমুদয় টাকা দিলেন আর বললেন যারা রান্নার খরচ করেছে সেই সব কর্মচারীদের নাস্তা বাবদ এটা পৌছে দিবেন।এর পর উনি বিদায় নিলেন।আর আমার স্মৃতির ডায়েরিতে এমনিতেই রচিত হয়ে গেল তাঁর স্মৃতি চিহ্ন।আজো স্মরণ হয়, এ রকম মানুষ দ্বারা যদি এ দেশ পরিচালিত হতো তাহলে কতই না ভালো হত।
এডিসি সাহেব যখন কথা গুলো বলতেছিলেন তখন ইউএনও এবং ওসি সহ সকলেই গোগ্রাসে কথাগুলো যেন গিলছিলেন।আর আজ সেই মানুষটিকেই সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সারা বিশ্বের লাখো কোটি মুসলমানকে কাঁদিয়ে তাঁর ফাঁসির রায় কার্যকর করলো জামাল নাসের আর ফেরাঊনের অনুসারী এই জালেম সরকার! অনেক বড় সম্পদ আমরা হারিয়ে ফেললাম।দোয়া করি আল্লাহ যেন উনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করেন এবং আমরাও যেন উনার অগ্রযাত্রার যাত্রাপথিক হতে পারি, আমিন!!
লেখকঃ অধ্যক্ষ মাও. আব্দুল হাই
চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ
মহেশপুর, ঝিনাইদহ.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন