বাংলাদেশ বার্তাঃ যদি কেউ পুলিশ বা অাইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের হাতে গ্রেপ্তার হয় অার তারপর তাদের হেফাজতে মারা যায়, সাধারণ গৎবাঁধা বক্তব্য হাজির করা হয় তার হৃদরোগ ছিল বা মারধর বা অত্যাচারের কারণে সে মারা যায়নি। অাইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ নেহাৎ সাফসুতরো। অথচ মাত্র কয়েকদিন অাগে প্রেসক্লাবে ডিবি সাদা পোষাকে যে পাশবিক হিংস্রতা দেখায় সেটা দেশের মানুষ পর্দায় দেখেছে। অথচ সাদা পোশাকে একাজ করার অনুমোদন নেই। অন্তত এ বিষয়ে উচ্চ অাদালতের স্পষ্ট নির্দেশ অাছে। সরকার বলছেন, তারা উচ্চ অাদালতের অাদেশের বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করেন না। তাহলে ডিবি কি ভূত প্রেতের নির্দেশে এ হেন জঘন্য কাজ করছে? না অাতঙ্ক তৈরির মনোপলি পেয়েছে? কাউকে গ্রেপ্তার করতে অাতঙ্ক তৈরি করার প্রয়োজন কি অাদৌ ছিল? এই অাতঙ্কের মাত্রাটি বোঝা যাবে বিএনপি মহাসচিবের দেহ জড়িয়ে ছাত্রদল নেতার একই ঘটনার ডিবি অাতঙ্ক থেকে খড়-কুটো ধরে বাঁচার অসহায় দৃশ্য থেকে। ইতিপূর্বে বিনপি’র একজন প্রবীণ অাইনজীবীর পুলিশী অাতঙ্কে মৃত্যুর হৃদয়বিদারক ঘটনা অামরা প্রত্যক্ষ করেছি।
একই ধরণের ঘটনার অাতঙ্কিত বন্দি ছাত্রদল নেনতা জাকির হোসেন মৃত্যুর অাগে নিচের ভাষায় জানিয়ে যান -
`শরীলটা ভালা না। কাকা দোয়া কইরেন, মনে হয় বাঁচুম না', কথাগুলো কারাবন্দি অবস্থায় মরহুম ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেন মিলনের (৩৮)। মৃত্যুর অাগে জাকির তার চাচা বিএম অলিউল্লাহকে কথাগুলো বলেছিলেন। সোমবার, মার্চ ১২, সোমবার বেলা দুইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে এসব কথা বলছিলেন পুলিশের রিমান্ডে নিহত ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেনের চাচা।
গত ৫ ডিসেম্বর সচিবালয়ের প্রথম গেটের সামনে গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় জাকির হোসেনকে অাটক করে রমনা থানা পুলিশ। অাটকের পর তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।
জাকিরের চাচা বিএম ওলিউল্লাহ প্রিয়.কমকে জানান, গত ৭ মার্চ অাদালতে তোলার পর কারাগারে পাঠানোর সময় জাকিরের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখন জাকিরের চাচা তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাকে কোনো ধরনের টর্চারিং করা হয়েছে কিনা। তখন জাকির মুখে কোনো কথা উচ্চারণ করেননি। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেছিলেন, ‘কাকা শরীলটা ভালা না, মনে হয় বাঁচুম না, অামার জন্য দোয়া কইরেন।’
চাচা ভাতিজার এই কথোপকথন হয়েছিল জাকিরকে কারাগারে নেওয়ার সময়। জাকিরের চাচা মর্গের সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘দুঃখ একটাই, ভাতিজাটারে মাইরা ফ্যালাইলো। বাঁচতেই দিলো না।’
তিনি বলেন, ‘থানায় গ্যাসিলাম কিন্তু তারা কিচ্ছু কইবার চায় না। খালি কয়, এই নামে কেউ এন্ট্রি নাই। অার রাজনৈতিক মামলা এন্ট্রি হয় না। শুক্রবার অাবার থানায় গেলাম, তদন্ত কর্মকর্তা অামার সাথে কথাই কয় না। তারে কী কারণে ধরলো তাও কইবার চায় না।’
জাকিরকে অাটকের পর তিনি ডিবির কাছে গিয়ে যোগাযোগ করলে তারা তাকে অাটক করেননি বলেও জানিয়েছিল তার চাচাকে।
জাকিরের চাচা গণমাধ্যমের কর্মীদের বলেন, ‘তারে মাইরা একটা দাগ লাগাইয়া দিল। কী অার কমু? অাপনারা লিখলে কী কিছু হবে! কিছুই হবে না।’
এদিকে ছাত্রদল নেতা জাকিরের মৃত্যুর সংবাদ শুনে তার অাত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভিড় করে। বিকেল চারটা ১৮ মিনিটে হাসপাতালে তার লাশের সুরতহাল করার জন্য ম্যাজিস্ট্রট এসে হাজির হন।
এর অাগে সকাল অাটটার দিকে জাকির অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অানা হয়। পরে আটটা ৪০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয় বলে ঘোষণা করেন বলে জানান কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী হানিফ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন