বাংলাদেশ বার্তাঃ যারা ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলনে শরীক হয়েছেন তাদেরকে এ পথে চলতে গিয়ে অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অনেক বিপদ মুসিবতের পাহাড় অতিক্রম করে তাদের এগোতে হচ্ছে। যারা সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামী আদর্শের বাস্তবায়ন বরদাশত করতে পারে না, তাদের ক্ষমতার দাপট ও জুলুমের শিকার হয়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ব্যবসা বানিজ্য হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ, চাকুরী হয়েছে হুমকীর সম্মুখীন কোথাওবা চাকুরীচ্যুত। ক্ষেত খামার থেকে উপার্জনের পথ বন্ধ হয়েছে, শারীরিক নির্যাতনের শিকার, কেউবা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, জীবন বিপন্ন হয়েছে অসংখ্য ভাইয়ের। নিজ সম্পদ ভোগ করার অধিকার থেকে হচ্ছে বঞ্চিত, মর্যাদা নিয়ে বেচে থাকার পরিবেশ নষ্ট করেছে অনেকের, হামলা মামলায় নাভিশ্বাস উঠেছে মাঠে ময়দানে। এ অবস্থায় ব্যবসা, চাকুরী, ধন-সম্পদ রক্ষা, উপার্জনের উৎসকে জীবন ও সম্পদ, মান সম্মান ঝুকি মুক্ত রাখতে, পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ চিন্তা, কোন কোন ভাইকে এ পথ চলা থেকে থমকে দিচ্ছে। কেউবা পিছু হটছে, কেউবা ময়দানে অনুপস্থিত থাকছে আবার কেউ হতাশা ও ভীরুতার প্রকাশ ঘটাচ্ছে। অবশ্য ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার সাথে যারা রয়েছেন তাদের মাথায় এ বিষয়টি অনুপস্থিত থাকা উচিৎ হবে না যে, আমাদের সকল কর্মসূচী হতে হবে সময়োপযোগী, বিজ্ঞান সম্মত এবং ইসলাম সমর্থিত। উচিৎ হবে না কোন হঠকারী কর্মসূচী গ্রহণ করা।
অবশ্য এ পথে চলতে গেলে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা, বিপদ মুসিবত আসবেই, রয়েছে ক্ষতির সম্মুখীন হবার আশংকা। কোন্ শক্তিকে সাথে নিয়ে এ সবের মোকাবেলা করা যায়, কেই বা হবে এ পথে আমাদের অভিভাবক ও সাহায্যকারী, সে অভিভাবকত্ব ও সাহায্যের উপর কতটুকুই বা আস্থা করা যায়। এ পথে চলতে কে হবে আমাদের সবচেয়ে বড় সঙ্গী। বুকের মধ্যে কোন বিপদ ও ঝুকির ভয়ে ভীত থাকি, বুকে আল্লাহর ভয়ই বা কতটুকু স্থান পেয়েছে? এসবের মুকাবিলায় মুমিনের করনীয়ই বা কি এ সম্পর্কিত অনেক প্রশ্নের জবাব আমরা কুরআন থেকেই নিতে পারি।
এ পথে পরীক্ষা হতেই হবেঃ
আল্লাহ মুমিনদের পরীক্ষা করবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো ভয় ভীতি, ক্ষুধা, অনাহার, জান-মাল ও ফসলাদির ক্ষতি সাধন করে’।
(বাকারা-১৫৫) ولنبلونكم بشئ من الخوف والجوع و نقص من الاموال والانفس والثمراتতিনি আরো বলেছেন, ‘আমি তোমাদের মন্দ ও ভাল উভয় অবস্থার মধ্যে ফেলেই পরীক্ষা করি’।
(আম্বিয়া-৩৫) كُلُّ نفس ذائقة الموت- ولنبلوكم بشروالخيرفتنةً- والينا ترجعون
তার ঘোষনা হলো, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আসে না’ (তাগাবুন-১১) مااصاب من مصيبة الا باذن الله । তিনি আরো জানাচ্ছেন, ‘আল্লাহ যদি তোমাদের কোন দুঃখ কষ্ট দেন তাহলে তিনি ছাড়া অন্য কে্উ নেই তা দূর করার’।(ইউনুস-১০৭)و ان يمسسك الله بضر فلاكاشف له الا هو ।-তাহলে ভয়-ভীতি, ক্ষুধা, দারিদ্র, জীবন ও সম্পদ, ফল ফসলের, উপার্জনের উৎসের ক্ষতি, ভাল মন্দ যে অবস্থায়ই হোকনা কেন তা যদি আল্লাহর অনুমতি নিয়েই আসে আর তা আল্লাহ ছাড়া কেউ দূর করার না থাকে তাহলে আমাদের হতাশার কি আছে, আর ধর্না দেয়ার জন্য ‘আমার অসহনীয় বেদনা ও দুঃখ শুধু আল্লাহর নিকটই নিবেদন করছি-انما اشكوا بثى و حزنى الى الله -বলা ছাড়া আর কি আছে।
(সূরা বাকারা ১৫৫-১৫৭) ولنبلونكم بشئ من الخوف ------اولئك عليهم صلوات من
ربهم و رحمة و اولئك هم المهتدون । আর এখানে তো এ অর্থই পরিস্কার করে দেয় যে, বিপদ মুসিবতে আক্রান্ত হয়ে যারা কেবল আল্লাহকেই ডাকে এবং তার নিকট ফরিয়াদ করে হেদায়াত শুধু তাদের জন্যই।
সকল শক্তিও ক্ষমতার মালিক তো আল্লাহইঃ
কুরআনে বার বার যে কথাটি বলা হয়েছে তা হলো, ‘আল্লাহই সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান’ان الله على كل شئ قدير - আর প্রকৃত পক্ষে ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ক্ষমতা ও শক্তি নেই’ لا حول ولا قوة الا بالله আর সকল শক্তি ও ক্ষমতা যেহেতু তাঁর হাতে তাই, শক্তি ও ক্ষমতা যার হাতে বিপদ ও ক্ষতি হতে সে ছাড়া কেউ আপনাকে রক্ষা ও উদ্ধার করতেই পারে না।
বিপদ ও ক্ষতি সম্পর্কে আপনার ধারনা কিঃ
আল্লাহর ঘোষনা হচ্ছে, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বিপদই আসে না’। مااصاب من مصيبة الا باذن الله (তাগাবুন-১১)। ‘বল আল্লাহ আমাদের জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তাছাড়া অমাদের কিছুই হবে না। قل لن يصيبنا الا ما كتب الله لنا هومولنا (তাওবা-৫১)। ‘যদি তোমরা ধৈর্য্যশীল ও মুত্তাকী (সাবধান) হয়ে চলতে পারো তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’। ان تصبروا و تتقوا لا يضركم كيدهم شيئا (ইমরান-১২০)।‘আল্লাহ যদি তোমাকে কোন দুঃখ কষ্ট দেন তাহলে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই’। وان يمسسك الله بضر فلا كاشف له الا هو (ইউনুস-১০৭)। ধৈর্য্যশীলদের সু-সংবাদ দাও, যখন তাদের সমানে বিপদ-পরীক্ষা আসে তখন তারা বলে আমরাতো আল্লাহরই জন্য এবং আমাদেরতো আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। وبشرالصابرين الذين اذا اصابتهم مصيبة قالوا انا لله و انا اليه راجعون (বাকারা ১৫৫-১৫৬)। বিপদ যদি আল্লাহরই পক্ষ থেকে হয় আর তা যদি থাকে তাঁরই নির্দিষ্ট, প্রতিপক্ষ ক্ষতিই করতে না পারে, দুঃখ, কষ্ট দুর করার মালিক যদি আল্লাহই হয়ে থাকেন এবং মুমিনেরা এব সব অবস্থায় যদি শুধু আল্লাহরই জন্য হয়ে যাওয়া ও তাঁরই সান্নিধ্যে পোঁছে যাবার সুদৃঢ় ঘোষনা দিতে পারে তাহলে সে মুমিন পরাজিত হতে পারে না, পারে না সে আশাহত হয়ে বসে থাকতে।
আপনার অভিভাবক ও সাহায্যকারী কেঃ
বান্দাহ যখন অভাবগ্রস্থ, সাহায্যের কাংগাল তখন সেই মুমিন বান্দাকে সংবাদ জানাচ্ছেন যে, ‘ইমানদারদের জন্য আল্লাহই হচ্ছেন সাহায্যকারী (অভিভাবক বন্ধু)’।الله و لي الذ ين امنوا- (বাকারা-২৫৭)। তিনি আরো জানাচ্ছেন, ‘আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন বন্ধু সাহায্যকারী নেই’।وما لكم من دون الله من ولئ ولا نصير- (বাকারা-১০৭)। তিনি দৃঢ়তার সাথে জানাচ্ছেন যে, ধর্না দেয়ার জন্য কাংগালের মত আর কারো কাছে তোমাদের মাথা নত করার প্রয়োজন নেই। কারন ‘অভিভাবকত্বের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’। وكفى بالله وليا-এবং ‘সাহায্যের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’। كفى بالله نصيرا- ‘অভিভাবক (তত্বাবধায়ক কর্ম-বিধায়ক) হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট’। وكفى بالله وكيلا- (নিছা-১৭১)।আল্লাহ যেহেতু তোমাদের জন্য যথেষ্ট তাই, ‘তোমরা আল্লাহকে মজবুতভাবে ধারন কর, তিনি তোমাদের অভিভাবক। কত উত্তম অভিভাবক কত উত্তম সাহায্যকারী তিনি’। واعتصموا بالله هو مولكم فنعم المولى ونعم النصير- (হজ্জ-৭৮)।
ইমানদারদের সাহায্যকারী আল্লাহই, তিনি ছাড়া কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী নেই এবং অভিভবকত্ব ও সাহায্যের জন্য যখন তিনিই যথেষ্ট তখন তাঁকেই আকড়ে ধরতে হবে শক্ত করে। যাচাই করতে হবে তাঁকে যতটুকু আকড়ে ধরেছি, সে তুলনায় অন্য অবলম্বনদের ধরেছি কতটুকু এবং নির্ভর করছি কার উপর কেমন।
সাহায্য করা তার দায়িত্ব মুমিনের অধিকারঃ
মুমিনের এমন উত্তম অভিভাবক ও উত্তম সাহায্যকারী আল্লাহ নিজেই ঘোষনা দিচ্ছেন, ‘মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব কর্তব্য। وكان حقا علينا نصرالمؤمنين- (রুম-৪৭)। এ উত্তম সাহায্যকারীইতো যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, করছেন এবং পালন করবেন। তাঁর উপর মযবুতভাবে কি আপনি এ আস্থা করতে পারেন না?
আল্লাহ কি আপনার জন্য যথেষ্ট নয়?
আপনাকে আপনার আল্লাহই প্রশ্ন করছেন, ‘আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন’? اليس الله بكاف عبده- (ঝুমার-৩৬)। আল্লাহ আপনার জন্য যথেষ্ঠ কিনা তা নির্ভর করে তাঁর উপরে আপনার তাওয়াক্কুল কতটুকু এর উপর। তিনি বলেন, ‘যে আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’। - ومن يتوكل على الله فهو حسبه (তালাক-৩)। যে বা যারা আল্লাহর উপর এভাবে ভরসা করতে পারে তাদেরকে প্রতিপক্ষের ক্ষমতা শক্তি ও দাপটের ভয় দেখালে তারা ভয় পায়না, বরং তাদের ইমান আরো বেড়ে যায় এবং তারাই চিৎকার করে বলে ওঠে আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট’। فزاد هم ايمانا وقالوا حسبنا الله و نعم الوكيل- (ইমরান-১৭৩)।
যে আল্লাহতে আপনার ভরসা তিনি কোথায়, কত দুর?
অসহায় অবস্থায় অভাবী বান্দা যখন বিপদগ্রস্থ হয়ে সাহায্য চায় ও তার উপর ভরসা করে, তখন সাহায্যকারী সেই আল্লাহ কোথায়, কতদূর থাকেন তার জবাব তিনিই দিচ্ছেন, ‘আমি তার ঘাড়ের রগ থেকেও নিকটতর’। ونحن اقرب اليه من حبل الوريد- (ক্বাফ-১৬)। “আমার বান্দা যখন তোমাকে আমার ব্যাপারে প্রশ্ন করে আমিতো কাছেই আছি”। واذا سالك عبادي عني فاني قريب- (বাকারা-১৮৬)। ‘আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে’। - اجيب دعوة الداع اذا دعان فليستجيبوا لي(বাকারা-১৮৬)। ‘তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’। ادعونى استجب لكم- ‘নিশ্চয়ই তিনি সর্ব শ্রোতা এবং অতি নিকটেই আছেন’। انه سميع قريب- ‘তুমি আমার চোখের সামনেই আছ’ واصبر لحكم ربك فانك باعيننا- (তুর-৪৮)। ‘তোমরা যেখানেই থাক আল্লাহ তোমাদের সাথেই আছেন’। وهو معكم اينما كنتم- ‘তোমরাই বিজয়ী হচ্ছো, আল্লাহ তোমাদের সাথেই রয়েছেন’। - وانتم الاعلون والله معكم(মুহাম্মদ-৩৫)। মুসা ও হারুন আঃ যখন ফেরআউন ও তার ক্ষমতার ভয়ে ভীত তখনই আল্লাহ তাদের কে সাহসী হতে বললেন এই বলে যে, ‘তোমরা ভয় করোনা, আমিতো তোমাদের সাথেই আছি। আমি সব শুনছি এবং দেখছি’।قالا ربنا اننا نخاف ان يفرط علينا او ان يطغى قال لاتخافا اننى معكما اسمع وارا ى- (ত্বহা ৪৫-৪৬)। সওর শুহায় নবী সঃ আবু বকর রাঃ কে সাহস দিয়ে বললেন, ‘কোন দুশ্চিন্তা করো না, আল্লাহ আমাদের সাথেই আছেন’। اذ يقول لصاحبه لا تحزن ان الله معنا- (তাওবা-৪০)। যে অভিভাবক ও সাহায্যকারী আপনার এত নিকটে, যাকে আপনি ডাকলে তিনি সাড়া দেন, আপনি যাঁর চোখের সামনেই রয়েছেন, যিনি রয়েছেন আপনাদের সাথেই, তাঁকে আপনার সঙ্গী বানাতে, বিপদ মুসিবত ও সকল কঠিন মুহুর্তে তাকে আপনি সাথে নিয়ে চলবেন, তাহলে আপনার মধ্যে এতো ভীরুতা কেন?
আপনি ভীরু না সাহসী তা আপনিই বলুনঃ
আল্লাহ রব্বুল আ’লামীন বান্দার জন্য এতসব প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর মুমিন বান্দার নিজকে যাচাই করতে হবে, সে পৃথিবীর কোন শক্তি ও ক্ষমতাকে ভয় করে ভীরু হিসেবে পরিচিত হবে, না একমাত্র আল্লাহকে ভয় করে দুনিয়ায় দুঃসাহসী পরিচয় পেশ করবে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা তোমাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের ভয় দেখায়’। ويخوفو نك بالذين من دونه- (ঝুমার-৩৬)। ‘তোমরা কি তাদের কে ভয় কর? আল্লাহ কে ভয় করাই তোমাদের পক্ষে অধিক সমীচিন’। اتخشونهم فالله احق ان تخشوه- (তাওবা-১৩)। ‘তোমরা যদি ইমানদার হও কোন অবস্থায় তাদের ভয় করবে না বরং আমাকেই ভয় কর’। - فلا تخافوهم و خافون ان كنتم مومنين(ইমরান-১৭৫)। ‘সুতরাং মানুষকে ভয় করো না আমাকেই ভয় কর’। - فلا تخشواالناس واخشون(মায়েদা-৪৪)। ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য একটা পথ বের করে দেন’। ومن يتق الله يجعل له مخرجا- (তালাক-২) ‘কেউ আল্লাহকে ভয় করলে আল্লাহ প্রত্যেক ব্যাপার (সমস্যার সমাধান) সহজ করে দেন’ ومن يتق الله يجعل له من امره يسرا- (তালাক-৪)। ‘যারা বলে আল্লাহই হচ্ছেন আমাদের একমাত্র মালিক এর উপর তারা অবিচল হয়ে দাড়িয়ে থাকে তাদের জন্য নিঃসন্দেহে কোন ভয় শংকা নেই আর তাদের উদ্বিগ্ন ও হতে হবে না’। ان الذين قالوا ربناالله ثم استقاموا فلا خوف عليهم ولاهم يحزنون- (আহকাফ-১৩) ‘জেনে রাখ আল্লাহর বন্ধুদের জন্য ভয় নেই, তারা চিন্তিতও হবে না’। الا ان اولياءالله لاخوف عليهم و لاهم يحزنون- (ইউনুস-৬২) এ ভাবে যখন কেউ আল্লাহকে ভয় করে করে তখন তার প্রতিপক্ষ শক্তি, ক্ষমতার দাপট ও জুলুমের পাহাড় মাথার উপর চাপালেও অত্যাচারের ষ্টীম রোলারে নিষ্পেষিত করলেও তাদের দোর্দন্ড প্রতাপের মুখে কোরআনের ভাষায় তাদের বক্তব্য শুধু ফুটে ওঠে। الذين قال لهم الناس ان الناس قد جمعوا لكم فاخشوهم فزادهم ايمانا وقالوا حسبناالله ونعم الوكيل(ইমরান-১৭৩)। ‘মানুষ যখন বললো তোমাদের বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনী জমায়েত হয়েছে, অতএব তোমরা তাদের ভয় কর। এতে তাদের ইমান আরো বাড়িয়ে দিল। তারা বললো আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক’। বাস্তবে আপনি কি আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কাউকে বা কিছুকে ভয় করেন? কুরআনের এ সব বক্তব্য কি আপনাকে ভীরু কাপুরুষ তৈরী করে, না সাহসী করে তা আপনাকেই হিসাব মিলাতে হবে। আল্লাহর ভয় যার বুকে তার বুকে অন্য কোন ভয় তো স্থান পেতেই পারে না।
মুমিনের আশ্রয়স্থল শুধুই তার মালিকঃ
দুনিয়ায় সন্তান পিতা মাতার কাছে আশ্রয় নেয়। কর্মীরা রাজনৈতিক নেতার আশ্রয় নেয়, সন্ত্রাসীরা গডফাদারের আশ্রয় নেয়, রাজনৈতিক ক্ষমতাসীনেরা প্রশাসন, সরকার প্রধান ও ক্ষমতাধরদের আশ্রয় নিয়ে নিজদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কিন্তু মুমিনের জন্য এ সকল আশ্রয়ের পরিবর্তে শুধুমাত্র মানুষের রব মানুষের মালিক ও মানুষের প্রভুর আশ্রয়ে নিজেকে সমর্পন করার জন্য আল্লাহ রব্বুল আলামীন সূরা নাসে যে শিক্ষা দিয়েছেন, যে অবলম্বন গ্রহনের শিক্ষা দিয়েছেন সূরা ফালাকে তার চেয়ে কোন শ্রেষ্ঠ আশ্রয় ও অবলম্বন মুমিনের জন্য হতেই পারে না। অন্য সকল আশ্রয় থেকে মুমিন যখন নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে তার মালিকের আশ্রয়ে নিজকে পেশ করে দেয় তখন ভীরুতা ও কাপুরুষতা তার বুকের মধ্যে স্থান পেতেই পারে না। এ শ্রেষ্ঠ আশ্রয়ে থেকে সে হয়ে উঠবে সবচেয়ে দুঃসাহসী, নর শার্দুল আর বাধার প্রাচীর ভেঙ্গে এগিয়ে যেতে থাকবে আল্লাহর খিলাফত কায়েমের কর্মসূচী বাস্তবায়নে আগামী দিনের মানবতার মুক্তির পথে দুর্বার গতিতে। এ পথে চলতে গিয়ে পরম বন্ধুর পক্ষ থেকে দেয়া বিপদকে নিয়ামত হিসেবেই গ্রহণ করবে আর ধৈর্যে্যর মাধ্যমে বিপদ আপদকে আল্লাহর নিয়মতে রুপান্তরিত করবে। মানুষের মর্যাদাকে উচ্চআসনে সমাসীন করতে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিপদ আপদ আসবে। বিপদে পতিত হওয়া ছাড়াতো ইমানের স্বাদই হাসিল করা যায় না। আল্লাহর নবী সঃ এ কথাই বলেছেন যে, ‘আল্লাহ যখন কোন বান্দাহকে পছন্দ করেন তখন তিনি তাকে পরীক্ষা করেন। এ পরীক্ষায় সে ধের্য্য ধারণ করলেল আল্লাহ তাকে মনোনীত করে নেন। সে যদি আল্লাহর প্রতি রাজী ও সন্তুষ্ট হয় তাহলে আল্লাহ তাকে নিজের হিসেবে নির্বাচন করে নেন’। اذا احب عبدا ابتلاه فان صبرا جتباه و ان رضى اصطفاه- আর যে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করে সে মুমিনই বা থাকতে পারে কেমন করে।
তাই যদি সত্যিই মুমিন হিসেবে পরিচয় দিতে হয় তাহলে পৃথিবীতে অন্য কাউকে ভয় না করে শুধুমাত্র আল্লাহকেই ভয় করা উচিত। কারন যারা ইমান এনেছে তাদের জন্য আল্লাহই অভিভাবক হিসেবে যথেষ্ঠ। আর মুমিন তো শুধুমাত্র আল্লাহর উপরই নির্ভর করবে যেহেতু তিনিই মুমিনের সাহায্যের একমাত্র আশ্রয়স্থল।
রেজাউল করিম, বাগেরহাট।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন