নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না |
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী চলমান সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দায়িত্ব নিতে পারবেন না। কিন্তু আমরা শোনলাম যে আগামীকাল নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিতে যাচ্ছেন। এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তা হবে সংবিধানের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। বেসরকারি টিভি চ্যানেল বাংলাভিশনের ফ্রন্টলাইন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমি যেটা শোনলাম আগামী কাল নতুন সংসদ সদস্যরা শপথ নিবেন এবং পরের দিন নতুন সরকার গঠন করা হবে। প্রথম আলোতে একটা নিউজ দেখলাম যেখানে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, দেশে যে সহিংসতা চলছে তাতে তাড়াতাড়ি নতুন সরকার গঠন করা প্রয়োজন। যদিও এই কারণটা আমারকাছে খুব একটা বোধগম্য মনে হয় নি। বর্তমান যে সরকার রয়েছে ২৪ জানুয়ারী পর্যন্ত এই সরকারের কাছে নৈতিকতা বা বৈধতার কোন চ্যালেঞ্জ নেই। ২৪ তারিখের পর যেটা হবে তা হলো সরকার বলবে আমরা ঠিক আছি আর বিরোধী দল তো বলছেই এটা বৈধ না। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে বিভাজন রয়েছে। সুতরাং ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, নৈতিকভাবে যেটা চলে না সেটাকে সাংবিধানিকভাবে আপনি কিভাবে বৈধ বলেন। এই বিবেচনায় সরকার তার সক্ষমতা হারিয়েছে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জনগণ দেখেছে যে ভোট হয় নি। অধিকাংশ ভোটার ভোট দিতে যায় নি। আমি নিজেও ভোট দিতে যাই নি। কারণ আমি যে এলাকার ভোটার সেখানে ভোটের কোন লক্ষণই ছিল না, কোন পোস্টারই ছিল না। ভোট তো একটা বিরাট ব্যাপার। সাধারণ আমাদের দেশে যত উৎসব রয়েছে তারমধ্যে ভোটের মতো এতো বড় উৎসব আর নেই। আমি গুলশানে থাকি, গুলশান হাইস্কুলে ভোট দিয়ে থাকি।
আমার এলাকায় প্রার্থী ছিল এইচ এম এরশাদ। তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তারপরে সেখানে যে কে প্রার্থী তাও কেউ জানে না। আপনি এখন যদি কাউকে জিজ্ঞেস করে এখান থেকে কে প্রার্থী হয়েছিল, কে বিজয়ী হয়েছে আমার মনে হয় কেউ ঠিক মতো বলতে পারবে না। কারণ প্রার্থীদের কোন পোস্টার ছিল না, কোন ছবি ছিল না। বলতে পারেন নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের কোন তৎপরতাই ছিলনা। আওয়ামী লীগের যাদের যাদের সাথে আমার কথা হয়েছে তারাও আমাকে বলেছে এই নির্বাচনে যেহেতু বিরোধী দল অংশ নেয় নি সুতরাং এটা সেরকম গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় নি। প্রধানমন্ত্রী তো আগেই বলেছেন যে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলে লাভ নেই আমাদের একাদশ নিয়ে চিন্তা করতে হবে। অর্থাৎ এই নির্বাচনটা করতে হয় তাই করা। যদিও আমি এটাও মানি না।
তিনি বলেন,সরকারী দল থেকে বলা হয়েছে কয়েকটা সেন্টারে এক লক্ষেরও বেশি ভোট পড়েছে। কিন্তু ঐসব কেন্দ্রের ভোট দেয়ার চিত্র টেলিভিশনে দেখা যায় নি। টেলিভিশনে যা দেখানো হয়েছে তা আমাদের মনে আছে। ভোট কেন্দ্রে লোকজন লাইনে দাড়িছে আছে, তাদেরকে যখন জিজ্ঞাস করা হলো আপনি ভোট দিবেন? উত্তরে বলছে না আমি তো ভোট দিব না। তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাকে দাঁড়াতে বলা হয়েছে তাই দাঁড়িয়েছি। এরকম অনেক স্টোরি রয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে অনেকগুলো চ্যানেলের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।
সেই চ্যানেলগুলোতে তো দেখানো যেতো যে গোপালগঞ্জে, কিশোরগঞ্জে, চট্টগ্রামে,শেরপুরে বা জামালপুরের এই কেন্দ্রগুলোতে এতো এতো ভোট পড়েছে। ভোটাররা যে সারাদিন লাইনধরে ভোট দিচ্ছে, সেগুলো তো দেখানো যেত। আর এরকম অবস্থা হলে টিভি চ্যানেলগুলোর তো অবশ্যই দেয়ানোর কথা। কিন্তু তা দেখা যায় নি। ফলে এটা নিয়ে অজস্র অভিযোগ রয়েছে।
অনেক প্রার্থী যারা অতীতে সরকারী দল করতো বা এখনও করেন তাদের অনেকেই এই নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন। দলের একজন প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন যে, বর্তমান প্রতিমন্ত্রীর কারণে তিনি নির্বাচন করতে পারছেন না। ৫০ টি কেন্দ্র দখল হয়ে গেছে। এবং সেই প্রতিমন্ত্রীর পূত্র নাকি সাড়ে ৪০০ ভোট একাই দিয়েছে। সবমিলিযে এই নির্বাচন আমাদের গণতন্ত্রের পথে একটা কালিমা লেপন করে গেছে বলে আমি মনে করি।
অনুষ্ঠনে শিক্ষক ও গবেষক মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। নির্বাচনের দিন অনেক সেন্টারে দেখা গেছে লাইন দিয়ে অনেক ভোটার ভোট দিয়েছে। একেবারে যে ভোট পড়েনি তা কিন্তু নয়। তবে সত্যি কথা কি সকালে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যšত্ম ভোট কেন্দ্র ফাঁকা ছিল। যত মানুষ ভোট দিতে আসার কথা সেটা কিন্তু এবার আসেনি। নির্বাচন কমিশনের দাবী ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে এটা যদি মেনেও নেই তারপরও তা যথেষ্ট নয়।
তিনি আরও বলেন, ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান জানিয়েছেন ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এটা তাদের ২ টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষনের ফলাফল। বিকালে ভোট বেশি পড়ায় নির্বাচন কমিশন দাবী করেছে সেখানে ১৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এটা ঢাকা-১৭ আসনের মাত্র ১০ টি কেন্দ্রর দুপুর ২টা পর্যšত্মর পর্যবেক্ষন। মুনিরা খান আর নির্বাচন কমিশনের তথ্যে বেশি অমিল দেখা যাচ্ছে না।
বগুড়াতে ১২ শতাংশ এবং গোপালগঞ্জে ৮৯ শতাংশ সিলেট মহানগরীতে ২৭ শতাংশ এবং বাহিরে পড়েছে ৫৪ শতাংশ এবং টাঙ্গাইল এ ৪৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। সব মিলিয়ে গড়ে ভোট পড়েছে ৪৪ শতাংশ।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে জানিপপ এবং ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ। যাদের ২৯ টি পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা সবাই বলছে গড়ে ৩১ শতাংশ ভোট পড়ছে।
আরাফাত বলেন, আরও কিছু ভোট পড়তে পারতো কিন্তু নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থাপনার জন্য সেটা হয়ে ওঠেনি। যেমন দক্ষিণখানে ১২ শ ভোটার তাদের কোন নামই খুঁজে পায়নি। গাড়ী চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা এবং সহিংসতা সন্ত্রাস সব মিলিয়ে একটি প্রভাব তো পড়েছে।
একজন দর্শক প্রশ্ন রেখে বলেন, বলা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের যারা বিরোধী তারা ভোট দিবে না তাহলে কি আমরা ধরে নিব নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী ৪০ শতাংশ ভোট পড়ে থাকলে ৬০ শতাংশ ভোটার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে?
জবাবে আরাফাত বলেন, সন্ত্রাস সহিংসতা না হলে আর ২০ শতাংশ ভোট বাড়ত। তবে সব মিলিয়ে এটি একটি আদর্শ নির্বাচন হয়নি। এ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীরও আন হ্যাপিনেস রয়েছে।
তবে মান্না বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে তাকে আন হ্যাপি বলে দেখেছি মনে হয়না। উনি সবাইকে প্রাণ খোলা ধন্যবাদ দিয়েছেন। তোফায়েল, এইচ টি ইমাম সকলের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়েছে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে।
এই নির্বাচন থেকে কি পেলাম এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না বলেন, ৩শ নতুন সংসদ সদস্য পাবেন নতুন একটি সরকার পাবেন।
তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর দিক হল, জাতিসংঘসহ বিশ্বের সকল দেশই বলা যায় এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। যে নির্বাচনের মাধ্যমে সকল সন্ত্রাস ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান ঘটার কথা সেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে আরও এগুলা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নঈম সুলতান ফোন করে বলেন, নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করা আমার অনেক ছাত্র ফোন করে বলেছে স্যার আমাদের ভোট বানিয়ে দিতে হয়েছে। আমাদের সময়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন