সাবেক মার্কিন কূটনৈতিক উইলিয়াম বি মাইলাম প্রশ্ন তুলেছেন, রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ এখন বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সকল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান নিয়েছে। তার মতে গত ৫ তারিখের নির্বাচন বাংলাদেশকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে। একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের দৃষ্টি আর এদেশে কূটনৈতিক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পূর্ব অভিজ্ঞতায় মাইলাম মনে করছেন, বাংলাদেশের বর্তমান শাসকদের পরবর্তী টার্গেট হলো এক ব্যক্তির শাসন- একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়া, ইতিহাস মূলত তাই বলে। মাইলাম এও প্রশ্ন তুলেছেন, ১৯৭২ সালের তলাবিহিন ঝুড়ির বাংলাদেশ সব সময়ের জন্য উদাহরণ হয়ে রইবে কি না ? কারণ মাইলাম মনে করছেন, যদিও মনে হচ্ছে বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে তবুও রাজনীতিতে ইতিহাসই একমাত্র নিয়ামক বা সিদ্ধাšেত্মর দাবিদার হতে পারে না। তার ভাষায় যতক্ষণ না সে পরিণতি আসছে তা নিশ্চিত করে বলাও যাচ্ছে না। মাইলাম স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা ১৯৭২ সালে দেশটিকে কোন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা যে দেশটিকে পেতে হয়েছিল তা ভুলে যাবার নয়। তাই আবারো এমন কোনো তকমার মধ্যে বাংলাদেশ পড়ে যায় কি না সে দুশ্চিšত্মা রয়েই যায়। মাইলাম বলছেন, বর্তমান অবস্থার জন্য আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণরূপে দায়ী। বিএনপি-প্রধান বিরোধীদল, যে সুষ্ঠু,নিরপেক্ষ, নিদর্লীয়, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতো বলেই জনমতে সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে আগেই। এই দল এর আগে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দুই বার ক্ষমতাসীন হয়েছিল। তারপরেও বিএনপি এই নির্বাচন বয়কট করে- নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে। এ নির্বাচন আগে থেকেই ধারণা করা হয়েছিলো, আওয়ামী লীগ জনরায়কে ক্ষমতার দাপটে নিজেদের দিকে নিয়ে যাবে এবং বিএনপিকে সম্পূর্ণরূপে এর বাইরে রাখবে। যা হওয়ার তাই হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তা আগেই ঠাহর করা গিয়েছিল। নির্বাচনে কোনো নিরপেক্ষ তদারকি ব্যবস্থা বা নিরপেক্ষ সরকার না থাকায় বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরীষ্ঠতা পায়। মাইলাম বলেন, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের রাজনীতি অস্থির এবং সহিংসতায় পূর্ণ হয়ে ওঠার পাশাপাশি সেই ১৯৭৫ সালে এমন এক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কথা মনে করিয়ে দেয়। বাংলাদেশে এখনো দরিদ্র এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের পর্যায়টি যা অর্জন করেছে তা উল্টে যেতে পারে এমন আশংকা রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থান করে নেয়া বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ও রফতানি অনেকটাই হুমকির মুখে। অথচ গত দুই দশকে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল বেশ শক্তিশালী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ছিল বেশ সম্ভাবনাময়। গুরুত্ব সহকারে দেশটি শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে পারায় এর সুফল পাওয়া গেছে জনস্বাস্থ্যে। মাইলামের কাছে এটি পরিস্কার যে এ নির্বাচন আগের নির্বাচনগুলোর মত জনগণের আকাঙ্খার কোনো প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ৪০ শতাংশ ভোট পাওয়ার দাবি করেছে ৩শ’ আসনের মধ্যে ১৪৭টি আসনে। কিন্তু নির্বাচন কেন্দ্রে দিনের শেষ ভাগে বড় আকারের কারচুপি বা ব্যালট পেপারের ছড়াছড়িতে বাক্সগুলো ভোটারবিহীনভাবে পরিপূর্ণ হয়ে যায় এমন অভিযোগ রয়েছে পর্যবেক্ষকদের। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনে খুব বেশি হলে ভোট পড়েছে ১২ শতাংশ। অথচ ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ হার ছিল ৮৬ শতাংশ, ২০০১ সালে ৭৪ শতাংশ, ১৯৯৬ সালে ৭৫ শতাংশ ও ১৯৯১ সালে ৫৫ শতাংশ। মাইলাম মšত্মব্য করেছেন, ইতিহাস সাক্ষী, যে সব দেশে একদলই শাসন করে এমন সব দেশগুলোর নির্বাচনের মাধ্যমে বা নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতাসীন শাসক যখন একদলীয় শাসনের দিকে যায়, কিংবা নির্বাচনের আয়োজন করলেও, তা বৈধ কি অবৈধ হল তার ধার ধারেনা, যা শুধু তাদের ক্ষমতাই দেয়, জনসমর্থন নয়। এধরনের শাসকরা তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে জনগণের মতামতের তোয়াক্কা করেনা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সহ্য করে না, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের জেলে ভরে, অবরুদ্ধ করে রাখে, শত্রুর উপর বল প্রয়োগের মত বিরোধীদের উপর দমননীতি চালায় এবং এর প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদকারীরাই তাদের শত্রুতে পরিণত হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি ক্ষমতার ভাগাভাগি, প্রলোভন বা আর্থিক আনুকুল্য পাইয়ে দেয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের একটা সংস্কৃতি চালু করে। এভাবে একদলীয় শাসকরা দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে থাকে-ঋণের ভারে জর্জরিত করে ফেলে, যেখান থেকে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে দেশ পরিচালনা করে থাকে এবং সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। একদলীয় শাসকরা প্রায়শ তাদের স্বৈরাচারী পদ্ধতি টিকিয়ে রাখতে বিরোধীদের ‘রাষ্ট্রের শত্রু’ বানিয়ে ফেলে। মাইলাম বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার এধরনের দেশ শাসনের প্রক্রিয়া নির্বাচনের আগে থেকে শুরু করে। প্রথমত দলটি ইসলাম পন্থীদের বিরুদ্ধে সাড়াশী অভিযান শুরু করে বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যে দলটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের জন্যে কাজ করে আসছে। একটি অবস্থান নেয়, বিএনপির একাধিক নেতাকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক গ্রেপ্তার অভিযান চালায়। দলটির নির্বাচনী প্রচারণার ভিত্তি আওয়ামীলীগ সরকার নির্বাচনের আগে থেকে সেই স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ শুরু করে, বিরোধী নেতা কর্মীদের জেলে পুরে। বিএনপির অধিকাংশ নেতা কর্মীদের জেলে বন্দী করে। আওয়ামীলীগ নির্বাচনের সময় জামায়াতে ইসলামীর তা-বে জামায়াতের সাথে বিএনপির সহযোগিতা প্রচারণা হিসেবে কাজে লাগায়, যে জামায়াত চায় বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বানাতে। আওয়ামী লীগের এ ধরনের ইসলামপন্থীদের বিরোধীতা চলে অব্যাহতভাবে। এধরনের বিরোধীতা রাষ্ট্র ক্ষমতায় টিকে থাকতে আওয়ামী লীগ ব্যবহার করে এবং শেষ পর্যšত্ম একদলীয় শাসন কায়েমে সক্ষম হয়। মাইলাম মনে করেন, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ফের নির্বাচন আসবে। কারণ নির্বাচনের বিকল্প নেই। কিন্তু তার আগেই কি বাংলাদেশে বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করা হবে। আগামী নির্বাচন আসার আগেই কি একব্যক্তির ও একদলীয় শাসনে বিরোধীদল কি শেষ করে দেয়া হবে ? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে হয়ত সংশয় বোধ করছেন। তার অধীনে আগামী নির্বাচন এবং এর সময়ের নিশ্চয়তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। আগামী নির্বাচনের অনিশ্চয়তা ও সময়ের মধ্যে বিরোধীদলকে কার্যকরভাবে ধ্বংস করে দেয়া হবে ? বিরোধীদল কি সেই ভবিষ্যত নির্বাচনের সময় পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে একদলীয় স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে ? মাইলাম লিখেছেন, বিএনপির জন্য এসব প্রশ্ন এক ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ। এমনকি বাংলাদেশে রাজনীতির ভবিষ্যত কি হবে তাও এসব বিষয়ের উপর নির্ভর করছে। এসব প্রশ্নের উত্তর বাংলাদেশের অবস্থানকে সঠিক পথে ধরে রাখতেই প্রয়োজন। কারণ গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেক্যুল্যার কিন্তু সর্বজনগ্রাহ্য একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরো বৃদ্ধি করবে এমন একটি এজেন্ডা দেশটির ৪৮ মিলিয়ন ভোটারকে কাছে টানবে। বেগম জিয়ার উচিত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক ত্যাগ করা। বেগম জিয়াকে একদিকে যেমন ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে আদালতকে নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থায় নিয়ে যেতে হবে যাতে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এর ফলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে এমন অভিযোগ থাকবে না। এর পাশাপাশি রাজবংশের রাজনীতি থেকে বিএনপিকে একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দলে পরিণত করা বড় চ্যালেঞ্জ। এবং তা বেশ কঠিন। ওয়াশিংটন উড্রো উইলসন সেন্টারের স্কলার, বাংলাদেশে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং পাকিস্তানের ট্রিবিউন পত্রিকায় বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন উত্তর শাসনব্যবস্থা নিয়ে এ নিবন্ধ লেখেন, যা প্রকাশিত হয়েছে ১৩ জানুয়ারি ২০১৩।
ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স
লেবেল
- খবর
- মতামত- বিশ্লেষণ
- বিবৃতি
- রাজনীতি
- প্রেস বিজ্ঞপ্তি
- আন্তর্জাতিক
- প্রচ্ছদ
- আইনশৃঙ্খলা
- শোক সংবাদ
- বিবিধ
- স্মৃতি
- আইন-আদালত
- জাতীয় সংসদ নির্বাচন
- শিক্ষা
- ডেমোক্রেসি
- ইসলাম
- স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান
- অর্থনীতি
- ইসলামী আন্দোলন
- সাহিত্য-সংস্কৃতি
- হাদীসের বাণী
- শীতবস্ত্র বিতরণ
- সভ্যতা
- ইতিহাস
- গল্প
- মিডিয়া
- শোকবাণী
- খেলাধুলা
- জাতীয়
- IIUC News
- চিঠি
- কৃষি
- দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
- প্রবাস
- গবেষণা
- আবিস্কার
- কুরআন
- সম্পাদকীয়
- বাণী
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- সাইবার ক্রাইম
- দারসুল কুরআন
- ব্রেকিং নিউজ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন