এদিকে এ ঘটনায় সিএমপি দায়িত্বশীল দুই কর্মকর্তা দুই রকম বক্তব্য দিয়েছেন। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) এসএম তানভীর আরাফাত দাবি করেন, জেলা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের নায়েক ফরিদুল আলম হত্যার আসামি ধরার জন্য পুলিশের একটি টিম গতকাল ভোরে নগরীর হালিশহর বন্দর টোল রোড এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ‘সন্ত্রাসীরা’ পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পরে পুলিশের পাল্টা গুলিতে দুই ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়।
অপরদিকে সিএমপির ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার হাসানুজ্জামান পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের ঘটনায় দুই ‘ছিনতাইকারী’ নিহত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান।
তবে নিহতদের পরিবার পুলিশের এসব বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, রাজিব আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এলাকায় একটি তেলের দোকানের মালিক ও নাছির ট্রাক ড্রাইভার। তাদের বিরুদ্ধে কোনো থানায় কোনো মামলা এমনকি জিডি’ও নেই।
নিহতরা হলেন, আগ্রাবাদ হাজীপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন রাজিব (২৫) ও একই এলাকার মো. নাছির উদ্দিন (২৬)।
অভিযানে নেতৃত্বদানকারী সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) এসএম তানভীর আরাফাত জানান, জেলা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের নায়েক ফরিদুল আলম হত্যার আসামি ধরার জন্য পুলিশের একটি দল ভোরে নগরীর হালিশহর বন্দর টোল রোড এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ‘সন্ত্রাসীরা’ পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলে দুই ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়। অন্য ‘সন্ত্রাসীরা’ টিকতে না পেরে পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বন্দুক, একটি এলজি ও দুটি ধারালো কিরিচ উদ্ধার করেছে বলে তিনি জানান।
প্রায় ১৫ মিনিট ধরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিন পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
এদিকে, সিএমপির ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার হাসানুজ্জামান পুলিশের সঙ্গে ‘গুলি বিনিময়ের’ ঘটনায় দুই ‘ছিনতাইকারী’ নিহত হয়েছে দাবি করে বলেন, পুলিশের নায়েক ফরিদুল আলমের হত্যাকারী আসামিদের ধরতে গেলে ‘ছিনতাইকারীরা’ পুলিশের ওপর হামলা চালালে পুলিশ গুলি চালায়। এতে দুজন নিহত হয়েছে। তাদের লাশ মর্গে নেয়া হয়েছে।
নিহত ইসমাইল হোসেন রাজিবের ছোট ভাই মফিজুল ইসলাম অপু জানান, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এলাকায় ‘মায়ের দোয়া’ নামক তাদের একটি খোলা তেলের দোকান রয়েছে। রাজিব ওই দোকানে বসত। ভোর সোয়া ৬টার দিকে পার্শ্ববর্তী গ্যারেজের সিকিউরিটি গার্ড কামাল ও মোখলেস তাদের ফোন করে জানান যে, রাজিবকে পুলিশ দোকানের সামনে থেকে ধরে নিয়ে গেছে। এ খবর পেয়ে তারা প্রথমে থানা ও পরে লালদীঘির পাড়ের সিএমপি কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে রাজিবের কোনো হদিস পাননি। পরে টেলিভিশনের মাধ্যমে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন নিহত হওয়ার খবর দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে তারা ঘটনাস্থল ও মর্গে ছুটে যান।
অপু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ভাই কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি ব্যবসা করতেন। দোকানের সামনে থেকে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। এরপর বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজানো হয়েছে।
নিহত নাছির উদ্দিনের বড় ভাই মো. আকরাম জানান, তার ভাই মাঝিরঘাট এলাকায় ট্রাক চালাতেন। আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এলাকায় গাউছিয়া ট্রেডার্স নামের তাদের একটি তেলের দোকান রয়েছে। নাছির সেখানে মাঝেমধ্যে বসতেন। বুধবার ভোরে দোকানের সামনে থেকে নাছির ও রাজিবকে একসঙ্গে পুলিশ ধরে প্রথমে একটি টেম্পোতে তোলে ও পরে একটি মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যায় বলে একটি ওই এলাকার সিকিউরিটি গার্ড তাদের ফোন করে খবর দেন। পরে তারা জানতে পারেন পুলিশের গুলিতে নাছির ও রাজিব মারা গেছে।
আকরাম বলেন, আমার ভাই নিরপরাধ। তার বিরুদ্ধে থানায় একটি জিডি পর্যন্ত নেই। পুলিশ পরিকল্পিতভাবে তাকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ জাম্বুরী মাঠ এলাকায় স্পেশাল রিজার্ভ ফোর্সের নায়েক ফরিদুল আলম খুন হয়। কে বা করা তাকে হত্যার পর লাশ ফেলে যায়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিত্সকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন