স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর
উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চকক্ষের সিনেট। এ নিয়ে একটি
প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সিনেটের আলোচনায় বলা হয়েছে, সংবিধান থেকে নির্দলীয়
সরকার বাতিলই সংকটের কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেটিক
পার্টির প্রভাবশালী সদস্য ও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ঘনিষ্ঠ সিনেটর ডিক
ডারবিন বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ‘সেন্স অব দি ইউএস সিনেট রিগার্ডিং দ্য
ক্রিটিক্যাল নিড ফর পলিটিক্যাল রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রস্তাবনা
আকারে পেশ করেন সিনেট ফরেন রিলেশন কমিটিতে।
সিনেটের কাছে ছয়টি
সুনির্দিষ্ট বিষয়ে পদক্ষেপ চান সিনেটর রিচার্ড ডারবিন ও চারসহ প্রস্তাবক।
এগুলো হলো- এক. বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি অবাধ,
সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ফলপ্রসূ আলোচনায় বসতে
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাতে হবে।
দুই. বাংলাদেশের
রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও জনগণের চাহিদা পূরণে রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতায় গভীর
উদ্বেগ প্রকাশ করতে হবে। তিন. বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে এখনই সহিংসতা
বন্ধের উদ্যোগ নিতে এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির পথ তৈরি করতে
আহ্বান জানাতে হবে।
চার. আসন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে
পর্যবেক্ষকদের সুযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা দিতে
বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে।
পাঁচ.
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মতবিরোধ দূর করতে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব
ফার্নান্দেজ তারানকো যে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন, তা এগিয়ে নিতে
যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দিতে হবে। ছয়. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতে,
মানবাধিকার কর্মীদের হেনস্তা বন্ধে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের ‘স্বাধীনতা’
ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে।
গত বুধবার
দুপুরে এই প্রস্তাবনার ওপর আলোচনা হয়। এতে ফরেন রিলেশন কমিটির সদস্যরা
সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। নিউজ ওয়ার্ল্ড/বিডি নিউজ।
প্রস্তাবে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস উল্লেখ করে সিনেটর ডারবিন বলেন,
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতায় ২০১৩ সালে শত শত বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। এর
বাইরে গ্রেফতার করা হয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতা ও মানবাধিকার কর্মীদের।
প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অরাজকতার জন্য
দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলেও
বিচারের আন্তর্জাতিক মানদ- পূরণে ব্যর্থ হয়েছে কথিত ট্রাইব্যুনাল।
প্রস্তাবে বলা হয়, নির্বাচনের তিন মাস আগে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে
ক্ষমতা হস্তান্তরের সাংবিধানিক পদ্ধতি বাতিল করেছে বর্তমান সরকার।
এর প্রতিবাদে ১৮ দলীয় জোট সারা দেশে রাস্তা ও যানবাহন অবরোধ কর্মসূচি
দিয়েছে। এতে সহিংসতায় নিহত হয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। অবরোধের কারণে
শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না। এর ফলে বাধ্যতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ
করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের। সাধারণ মানুষ ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। যার ফলে
কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও স্থিতিশীলতার এটা
হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর ফলে অত্র অঞ্চলের বাইরেও বিশ্বের
সপ্তম বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর উদার ও গণতান্ত্রিক চেতনার বাংলাদেশ তার অতীত
ঐতিহ্য ও ইমেজ হারাতে বসেছে।
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার একটি
শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার
ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশ সফরে গিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সংলাপের
সূচনা করেছেন। যাতে সহিংসতার পরিবর্তে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান
সম্ভব হয়।
সিনেটর ডারবিন তার প্রস্তাবনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক
সহিংসতার নিন্দা করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সকল
রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। রাজনৈতিক দলসমূহকে সব
ধরনের সংঘাত পরিহার করে সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানের সুযোগ
প্রদানের দাবি জানান।
বাংলাদেশে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা,
মানবাধিকার কর্মীদের হয়রানি বন্ধ এবং গ্রামীণ ব্যাংকের স্বাধীনতা
পুনরুজ্জীবিত করারও দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিনেট
ফরেন রিলেশন কমিটির চেয়ারম্যান রবার্ট মেনেন্ডেজ (নিউ জার্সি-ডেমোক্রেট)।
কমিটির অন্য সদস্যরাও এতে অংশ নেন।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের বলেন, এটি একটি রুটিন বৈঠক। এ নিয়ে
আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন