প্রশাসনযন্ত্রের সাহায্যে সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবরোধ সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ এনেছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ এনে বলেছেন, দেশব্যাপী যেন সরকারের অঘোষিত হরতাল বা ১৪৪ ধারা চলছে। সরকারি অবরোধ জাতি উত্কণ্ঠিত উল্লেখ করে তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, সব ধরনের নিপীড়ন ও বর্বরতা প্রতিহত করে গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় অংশ নিন। রোববার ভোর থেকেই নয়াপল্টনে সমবেত হোন। আমাদের এ কর্মসূচি হচ্ছে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আহূত ঢাকা অভিযাত্রা হবে লাল সবুজের জাতীয় পতাকা বুকে ধারণ করে গণতন্ত্রের উত্সব। গতকাল শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, যত বাধাই আসুক, মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসি হবেই। গণতন্ত্র অভিযাত্রায় বাধা দিয়ে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক না ঠুকতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। রাজধানী ঢাকায় সমবেত হওয়ার জন্য খালেদা জিয়া ‘মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসি’ নামে যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তা বানচালে সরকারের অপকৌশল ও দেশব্যাপী সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। এর ফলে জনজীবনে সৃষ্ট নৈরাজ্য ও অস্থিরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি। বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, বিরোধী দলের যে কোনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বানচাল করার লক্ষ্যে বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বরাবরের মতো এবারও রোববারের ‘মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসি’ কর্মসূচিকে সামনে রেখে সারাদেশ থেকে লাখ লাখা মানুষের জনস্রোতকে ঠেকাতে দেশব্যাপী বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও সব গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে রাজধানী ঢাকা গোটা দেশ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এমনকি জেলা শহর ও মহানগরগুলোকেও উপজেলা ও থানা থেকে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে সেগুলোকেও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মনে হয় দেশব্যাপী যেন সরকারের অঘোষিত হরতাল বা ১৪৪ ধারা চলছে। সরকার প্রশাসনযন্ত্রের সাহায্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য জনগণের বিরুদ্ধে নিজেরাই অবরোধ সৃষ্টি করেছে। রাজধানী ঢাকার সব আবাসিক ও খাবার হোটেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশির নামে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, যাতে হোটেলে কোনো মানুষ প্রবেশ ও অবস্থান করতে না পারে। পাশাপাশি যৌথবাহিনীর মাধ্যমে সারাদেশে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় হামলা, বেআইনি তল্লাশির নামে আসবাবপত্র ভাংচুর, বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেয়া, পরিবারের পুরুষ সদস্য ও মহিলাদের গ্রেফতার, অশালীন আচরণ এবং জুলুম-নির্যাতনের এক নজিরবিহীন ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এসব ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে কিনা তা দেখতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ফখরুল। বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকে অগ্রাহ্য এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আগামী ৫ জানুয়ারি যে প্রহসনের নির্বাচন সরকার করতে যাচ্ছে তা সরকারের জন্য হিতে বিপরীত হবে মর্মে দেশের সুশীল সমাজ ও বিজ্ঞ নাগরিকদের মতামতকেও গুরুত্ব না দিয়ে যেভাবে ক্ষমতার দম্ভ দেখানো হচ্ছে তার অশুভ পরিণতি কারও জন্যই কাম্য নয়। মির্জা ফখরুল বলেন, এখন পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ও তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়সহ নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় সরকার কর্তৃক অবরুদ্ধ এবং নেতা-কর্মীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা একদলীয় ও ফ্যাসিস্ট সরকারের গণতন্ত্রের বিকৃত নমুনা হিসেবেই জনগণ মনে করে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, শুক্রবার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পুনরায় দেশবাসীর উদ্দেশে আওয়ামী শাসকের হাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধারের স্বার্থে দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে ঢাকায় আসার জন্য যে ডাক দিয়েছেন তা সফল করতে যে কোনো বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। জনগণই সব ক্ষমতার উত্স, জনগণের বিজয় এবং আওয়ামী লীগের পতন অত্যাসন্ন বলেও সরকারকে হুশিয়ার করে দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন