
অবরোধে আটকা ১ হাজার ৫০০ ইউনিট গাড়ি নিলামে তোলার তোড়জোড়
শুরু হয়েছে। ডেলিভারি নেয়ার নির্ধারিত ৪৫ দিন পার হওয়ায় চট্টগ্র
াম
কাস্টম হাউস এসব গাড়ি নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অস্থির
পরিস্থিতির কারণে দু’মাস ধরে আটকা গাড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানের শোরুমগুলোতে
নিতে পারছেন না আমদানিকারকরা। নিলামে তোলা ঠেকাতে আতঙ্কিত আমদানিকারকরা
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে এরই মধ্যে
চিঠি পাঠিয়েছেন। গাড়ি নিলামে না তুলতে চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকেও
এনবিআরের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম
অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নিলামে তোলা হবে গাড়ি। নিলাম স্থগিত রাখতে এনবিআর
থেকে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের নির্দেশনা আসেনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি করা
গাড়ি নিলামে তোলা হলে তারা বিপাকে পড়বেন। গাড়ি ব্যবসায় চরম লোকসানের মুখে
পড়বেন বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে বন্দরে গাড়ির সবচেয়ে বড় শেডে কনটেইনার
রাখার কারণে জাহাজ থেকে গাড়ি নামানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে বন্দরে আবার গাড়ির
জট লেগে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাপানের বিভিন্ন বন্দর থেকে চট্টগ্রাম
বন্দরে রো রো জাহাজে করে আমদানি করা হয় নতুন ও রিকন্ডিশন্ড গাড়ি। জাহাজ
থেকে বন্দরে গাড়ি নামানোর পর আমদানিকারককে ৪৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারি নিতে
হয়। ৪৫ দিন অতিক্রম হলেই কাস্টম কর্তৃপক্ষ এসব গাড়ি নিলামে তোলেন। নিলামে
প্রতিযোগিতামূলক দামে কিনে নেন আগ্রহী ক্রেতারা। এতে আমদানিকারকরা গাড়ি
হারানোর মুখে পড়েন। কিন্তু অবরোধে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিরাপত্তাহীনতার
কারণে বেশিরভাগ আমদানিকারক বন্দর থেকে গাড়ি ডেলিভারি নেননি। এতে বন্দরে
বেড়ে গেছে গাড়ির জট। বন্দর শেডে নতুন ও রিকন্ডিশন্ড (একবার ব্যবহৃত) মোট
গাড়ির সংখ্যা ১ হাজার ৮০০ ইউনিটে পৌঁছেছে। এর মধ্যে বন্দরে অবস্থান সময় ৪৫
দিন পার হওয়ায় নিলামযোগ্য হয়ে পড়েছে অন্তত ১ হাজার ৫০০ গাড়ি। এসব গাড়ির
নিলাম ঠেকাতে নানাভাবে চেষ্টা করছে গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা।
নিয়ম অনুযায়ী নিলামযোগ্য গাড়ি নিলামে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম
কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার (নিলাম) সুশান্ত পাল। তিনি জানান, ৪৫ দিন পার
হওয়ার পর গাড়ি নিলামে তোলা হবে। নলাম বন্ধ করতে কোনো ধরনের নির্দেশনা
পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে গঠিত একটি কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর পরই নিলামের
আয়োজন করা হবে। বারভিডার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবর জানান,
নিলামে না তুলতে এনবিআর ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ
জানানো হয়েছে। এরপরও কাস্টম কর্তৃপক্ষ নিলামে তুলবে কিনা তা নিয়ে আমরা
উৎকণ্ঠায় আছি। কেন ডেলিভারি নেয়া হয়নি এ প্রশ্নে তিনি বলেন,
সীতাকু--মিরসরাইয়ে প্রতিদিনই গাড়ি পোড়ানো হচ্ছে। এ অবস্থায় আমদানি করা গাড়ি
শোরুমে পাঠাতে গিয়েÑ গাড়ি হারানোর আশঙ্কা আছে। তাই বন্দর থেকে গাড়ি
ডেলিভারি নেয়া হচ্ছে না। এদিকে বন্দরের চারটি নির্ধারিত শেডে আমদানি করা
গাড়ি রাখার জায়গা মিলছে না। শেডগুলো হচ্ছে এবিশেড, বেনলুপ, টিশেড ও এক্স
শেড। শেডে রাখা গাড়ির মধ্যে সাধারণ মানের কার থেকে, এলিয়ন, প্রাডো,
প্রোবক্স থেকে জিপ কার সবই আছে। বিলাসবহুল গাড়িও আছে প্রচুর।
চার শেডে চার হাজার ইউনিট গাড়ি রাখা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবি শেডেই
রাখা যায় ২ হাজার গাড়ি। কিন্তু এ শেডটিতে কনটেইনার রাখার কারণে গাড়ি রাখার
কোনো জায়গা নেই। বাকি দুটি শেডই এখন গাড়ি রাখার ভরসা। চলমান অবরোধের কারণে
গাড়ি ডেলিভারি একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শেডগুলোতে বাড়ছে গাড়ির জট। গাড়ি
রাখার মতো খালি জায়গা কমে আসছে। এ অবস্থায় কাল চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ছে
এশিয়ান লিডার নামে রো রো জাহাজ। জাপানের বন্দর থেকে আসা এ জাহাজে ৬০৪ ইউনিট
নতুন ও রিকন্ডিশন্ড গাড়ি রয়েছে। কিন্তু এবিশেডে কনটেইনার রাখায় খালাস নিয়ে
বিপাকে পড়েছে শিপিং এজেন্ট। বিশেষায়িত এ জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে একদিন
অতিরিক্ত সময় অবস্থান করলে ২৫ হাজার ডলার ডেমারেজ গুনতে হবে আমদানিকারকদের।
এভারেট শিপিংয়ের ম্যানেজার মামুনুর রশিদ জানান, এনওয়াকে শিপিংয়ের রো রো
জাহাজ এশিয়ান লিডারের ৬০৪ ইউনিট গাড়ি খালাস করে রাখার মতো জায়গা খালি নেই।
অথচ জাহাজটি বৃহস্পতিবার বন্দরে ভিড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বন্দরে গাড়ি
নিয়ে মহাসঙ্কট দেখা দিতে পারে। এ ব্যাপারে এনওয়াইকে শিপিং লাইনের ম্যানেজার
রবি শংকর জানান, এশিয়ান লিডারের ৬০৪ ইউনিট গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরেই খালাস
করতে হবে। মংলা বন্দরে খালাস করার কোনো সুযোগ নেই। শেডে জায়গা না থাকলে
বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলব। গাড়ির বড় শেডে কনটেইনার
রাখা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ভয়াবহ
কনটেইনার জট এড়াতে বিকল্প কোনো উপায় ছিল না। অনেকটা বাধ্য হয়ে গাড়ির
জায়গায় কনটেইনার রাখা হয়েছে।
উৎসঃ আলোকিত বাংলাদেশ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন