রাবি ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতার কাছেই একটি করে পিস্তল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের কাছে বর্তমানে অন্তত ২৫টি আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ রয়েছে। রাবি ছাত্রলীগের
অন্তত ২০জন নেতার কাছে সব সময় একটি করে ও সভাপতির পাশে থাকা দুই নেতার
কাছে দুটি করে পিস্তল রাখা হচ্ছে। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসন
বাধা দেওয়ার কথা থাকলেও কার্যত তারা সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাবি ক্যাম্পাসে এখন ছাত্রলীগের ৩০ জনের বেশি
নেতাকর্মী নেই। তাদের মধ্যে একাধিক নেতা নিজের আত্মরক্ষার জন্যই সাথে
রাখছেন একটি করে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। আবার অনেকে অন্যের কাছে রেখে তা
প্রয়োজন মতো ব্যবহার করছেন। ছাত্রলীগের বিভিন্ন সূত্র এই প্রতিবেদকের কাছে
অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ নেতাদের নাম নিশ্চিত করেছে। তারা হলেন, সুদিপ্ত সালাম
ওরফে বাইট্টা সালাম, দেলওয়ার হোসেন ডিলস, মাসুদ রানা, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইদুর ইসলাম রুবেল ও রাবি ছাত্রলীগের বর্তমান
কমিটির সহ-সভাপতি রানা চৌধুরী, মেহেদী হাসান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গোলাম
কিবরিয়া, সাহানুর ইসলাম শাকিল, নাসিম আঞ্জুম সেতু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল
আহমেদ রুনু, আখতারুল ইসলাম আসিফ, সামসুজ্জামান ইমন, দপ্তর সম্পাদক আনিসুর
রহমান, উপ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে শিমুল, অর্থ সম্পাদক
রাজু আহমেদ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ফারুক হোসেন, নাট্য ও
বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ, উপ-ছাত্র-বৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর
রহমান। এছাড়াও বহিরাগত ছাত্রলীগ ক্যাডার ও বিনোদপুরের বাসিন্দা সুজন ওরফে
রুবেল, শুভ, মেহেদী হাসান ও মেহেরচন্ডীর বাসিন্দা রাজু আহমেদ ক্যাম্পাসে
একটি করে আগ্নেয়াস্ত্র নিজেদের কাছে রাখছেন।
অস্ত্রের ধরণ ও ব্যবহার
গত কয়েক মাসে রাবি ছাত্রলীগের কাছে দলীয়ভাবে ‘সেভেন পয়েন্ট সিক্স’ নামের
অন্তত ১৮ থেকে ২০টি আগ্নেয়াস্ত্রের চালান এসেছে বলে নির্ভরযোগ্য কয়েকটি
সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই অস্ত্রে একসাথে ১২টি করে ম্যাগাজিন লোড করা
যায়। এর আগে ছাত্রলীগের কাছে এমন উন্নত অস্ত্র দুটি বা একটি ছিল বলে জানা
গেছে। ওই অস্ত্রের সাথে যোগ হওয়া নতুন অস্ত্রগুলো এখন ব্যবহার করছেন
ছাত্রলীগের প্রথম সারির নেতারা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, বাইট্টা
সালাম, মাসুদ রানা, ডিলস, রুনু, সেতু, আনিসুর রহমান, কিবরিয়া। এছাড়াও
একাধিক নেতার নাম অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
এদিকে অনেক আগে থেকেই রাবি ছাত্রলীগের কাছে ‘নাইন এমএম’ ও ‘থ্রি নট থ্রি
ওয়ান সুটার’ নামের অন্তত ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। তবে এসব অস্ত্রে একসাথে
৬টি ম্যাগাজিন ভর্তি করা ও ব্যবহারে কষ্ট হওয়ায় তা এখন বেশি ব্যবহার করছে
না ছাত্রলীগ।
এসব অস্ত্র ছাত্রলীগের পেছনের সারির নেতারা ব্যবহার করছেন বলেও জানা গেছে।
তাদের মধ্যে আসিফ, মেহেদী, মিজানুর, সুজন, রাজু অন্যতম। তবে অনেক সময় এসব
অস্ত্র হাত পরিবর্তন হয় বলেও ছাত্রলীগের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
যে কারণে এই অস্ত্রের ব্যবহার
রাবি ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে শিবিরের নেতৃত্ব ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায়
আসার পর ২০০৯ সালের শুরুর দিকে এই ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের দখলে আসে। তখন
থেকেই তারা আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে ও নিজেদের রক্ষা করতে এসব অস্ত্র ব্যবহার
করছে বলে জানা গেছে। গত দুই বছরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাবি ক্যাম্পাসে
বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে এসব অস্ত্রের মহড়া দেখিয়েছে।
গত বছরের ২ অক্টোবর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের মাঝে
সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ছাত্রলীগের বিগত কমিটির পদধারী নেতা তানিম, তাকিম,
আতিক, সেতুসহ আরও বেশ কয়েকজনকে পুলিশের সামনে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতে
দেখা যায়।
এছাড়াও একাধিকবার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভয় দেখাতে বা কোনো অনৈতিক কাজ করতে এসব
আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করেছেন। এমনকি পরীক্ষা কক্ষে বেঞ্চের ওপর অস্ত্র
রেখে ছাত্রলীগ নেতাদের পরীক্ষা দিতেও দেখা গেছে।
চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর শিবিরকে ক্যাম্পাস ছাড়া করতে পুলিশের সামনে
ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে। এসময়
তাদের গুলিতে শিবিরের দুই নেতাসহ এক সাধারণ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়। এর
পরের দিন অর্থাৎ ২৩ সেপ্টেম্বর সুজনসহ তিন ছাত্রলীগ ক্যাডার অস্ত্রসহ
ক্যাম্পাসের বধ্যভূমি থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি
মিজানুর রহমান রানা মতিহার থানায় গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। সর্বশেষ গত ২৮
নভেম্বর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ছাত্রলীগের
অন্তত ১০ নেতাকর্মীর হাতে পুলিশের সামনেই আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। তারা
প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ওই দিন গুলিও ছুঁড়েছে। যার চিত্র বিভিন্ন পত্রিকা ও
ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও এসেছে।
অস্ত্রের মজুদ যেখানে
রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দুই-একজন ছাড়া এখন সবাই বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান হলে থাকছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো অনাবাসিক ছাত্রকে
হলে না রাখলেও ছাত্রলীগের বেলায় এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। ওই হলের দ্বিতীয়
তলার ২১৬, ২২১, ২২২, ২২৫, ২২৬, ২২৭, ২২৮, ২২৯, ২৩২ নম্বর ও তৃতীয় তলার ৩১৩ ও
৩১৬ নম্বর কক্ষগুলোতে হল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনোরকম বরাদ্দ ছাড়াই
ছাত্রলীগ সভাপতিসহ অস্ত্রধারী ক্যাডাররা থাকছেন। ওই হলে অস্ত্র মজুদ করাসহ
ছাত্রলীগকে হলে টিকিয়ে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন বরং নিয়েছেন বাড়তি
নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এনিয়ে শঙ্কিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মাঝে-মধ্যে গভীর
রাতে ওই হলে অস্ত্র বা ককটেলের শব্দ শোনা যায়।
ক্যাম্পাসে অস্ত্র নিয়ে চলাচল
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে অস্ত্র নিয়ে নানা কৌশলে চলাফেরা করেন
বলে দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সভাপতির পাশে সব সময় কয়েকজন অস্ত্রধারী
ক্যাডার থাকে। এরা মূলত ব্যাগে বা পেটের সামনে অস্ত্র রেখে সভাপতিকে সবসময়
নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। আর অন্য নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে চলাফেরার সময়
সর্বদাই নিজেদের কাছে অস্ত্র রাখে।
অস্ত্র আসে যেভাবে
রাবি ছাত্রলীগের অর্থের মূল উৎস হলো দলীয় নেতাদের অনুদান, বিভিন্ন টেন্ডার,
চাঁদা ও সিট বাণিজ্যের টাকা। তবে এসব টাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আগে
নিজেদের কাজে খরচ করতো। সরকারের শেষ সময়ে এসে সংগৃহীত টাকা দিয়ে অস্ত্র
কেনা হচ্ছে। এছাড়া নেশা করতে এসব অর্থ খরচ করা হয় বলেও জানা গেছে। আর
অস্ত্র কিনতে ছাত্রলীগ দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের কাজে লাগাচ্ছে বলে দলের
একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে সক্রিয় রাখতে রাবি
ছাত্রলীগ সভাপতি মিজানুর রহমান রানা বিভিন্ন স্থান থেকে অর্থ সংগ্রহ করে
তাদের জন্য ব্যয় করছেন, যাতে নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে সক্রিয় থাকে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা অস্ত্র থাকার বিষয়ে
সোজা ‘না’ বলে দিয়ে শীর্ষ নিউজকে বলেন, প্রতিটি মানুষ যেখানে জীবনের
নিরাপত্তা গ্রহণ করে ছাত্রলীগও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য অনেক কিছুই করছে। এ
বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর তারিকুল হাসান শীর্ষ নিউজকে বলেন, বিষয়টি
ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ শীর্ষ নিউজকে বলেন,
ক্যাম্পাসের শান্তি-শৃংখলার দায়িত্বে আমাদের পুলিশ বাহিনীকে রাখা হয়েছে।
যদি পুলিশের সামনে ছাত্রলীগ বা অন্য কেউ অস্ত্র ব্যবহার করে তবে তাদের ছাড়
দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শিবিরের হামলায় ক্যাম্পাস ছাড়া হওয়ার
পরেই মূলত সভাপতি গ্রুপ বাড়াতে থাকে তাদের অস্ত্র ভা-ার। এখন ছাত্রলীগের
কাছে এসব আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র।
উৎসঃ শীর্ষ নিউজ
ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স
লেবেল
- খবর
- মতামত- বিশ্লেষণ
- বিবৃতি
- রাজনীতি
- প্রেস বিজ্ঞপ্তি
- আন্তর্জাতিক
- প্রচ্ছদ
- আইনশৃঙ্খলা
- শোক সংবাদ
- বিবিধ
- স্মৃতি
- আইন-আদালত
- জাতীয় সংসদ নির্বাচন
- শিক্ষা
- ডেমোক্রেসি
- ইসলাম
- স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান
- অর্থনীতি
- ইসলামী আন্দোলন
- সাহিত্য-সংস্কৃতি
- হাদীসের বাণী
- শীতবস্ত্র বিতরণ
- সভ্যতা
- ইতিহাস
- গল্প
- মিডিয়া
- শোকবাণী
- খেলাধুলা
- জাতীয়
- IIUC News
- চিঠি
- কৃষি
- দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
- প্রবাস
- গবেষণা
- আবিস্কার
- কুরআন
- সম্পাদকীয়
- বাণী
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- সাইবার ক্রাইম
- দারসুল কুরআন
- ব্রেকিং নিউজ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন