১৫ ডিসেম্বর ২০১৩, রবিবার,
গুলি চালিয়ে সারা দেশে পাখি শিকারের মতো সরকারের মানুষ হত্যার নিন্দা ও
প্রতিবাদ জানিয়ে এবং আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসসহ জামায়াত ও ১৮
দলীয় জোটের সকল কর্মসূচী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে পালনের
আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল
ডা. শফিকুর রহমান রোববার এক বিবৃতিতে এ আহবান জানিয়ে বলেন, সরকার একদিকে
গুলি করে মানুষ হত্যা করছে, অপরদিকে নির্বাচনের নামে তামাশা করছে। সরকার গত
৭২ ঘণ্টায় ৩৬ জন মানুষকে হত্যা করেছে। গড়ে প্রতি ২ ঘণ্টায় একজন মানুষকে
হত্যা করা দুনিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। মানুষের রক্তে ভাসছে দেশ।
ইতিমধ্যেই সরকারি জোটের ১৫৪ জন নির্বাচন ছাড়াই বিজয়ী হয়ে এক নতুন কলঙ্কিত
ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। গণতন্ত্র, সংবিধান ও মানুষের সাথে এটা এক নির্মম
পরিহাস।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও
গণনির্যাতন চালিয়ে ক্ষমতা জবরদখল করার যে ছক এঁকেছে জনতার প্রতিরোধে তা
চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই সারা বাংলাদেশে সরকারের বিরুদ্ধে
গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। সরকার কার্যত অচল। জনগণের মধ্যে ভয়-ভীতি ও ত্রাস
সৃষ্টির জন্য আকাশে হেলি কপ্টারের মহড়া দিয়ে এ অচল অবস্থা নিরসন করা যাবে
না। একমাত্র প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান
হতে পারে। দুনিয়ার ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতি আমি
আহ্বান জানাচ্ছি। গায়ের জোরে জনগণকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কেউ ক্ষমতায় থাকতে
পারেনি, আওয়ামী লীগও পারবে না।
বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে
হত্যা করার পর সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের
দ্বারা গুলি চালিয়ে সারা দেশে পাখি শিকারের মতো নির্বিচারে মানুষ হত্যা
করছে। সরকারের নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লক্ষ্মীপুরের জনপ্রিয়
নেতা ও সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. ফয়েজ
আহমাদকে বাসায় ঢুকে হত্যা করে ছাদ থেকে ফেলে দেয়। রোববার দিনব্যাপী
নোয়াখালী ও নীলফামারীতে গণহত্যা চালিয়েছে এ সরকার। নোয়াখালীতে ৮ জন,
নীলফামারীতে সাতজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। জনগণের প্রশ্ন, আইন-শৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে ভিন্ন বেশধারী যে সব সন্ত্রাসী গুলি করে মানুষ
হত্যা করছে এরা কারা? শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করার প্রতিবাদে
দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ হরতাল চলাকালে সরকারী বাহিনী গুলি চালিয়ে
লালমনিরহাটের পাটগ্রামকে এক বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত করেছে। পাটগ্রাম উপজেলা
ছাত্র শিবিরের সভাপতি মনিরুল ইসলাম, ছাত্রশিবির কর্মী সাজু মিয়া এবং
জামায়াত কর্মী আব্দুর রহীমকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম,
রাজশাহী, দিনাজপুর, নারায়ণগঞ্জ, পাবনা, ঝালকাঠি, নরসিংদী, নেত্রকোনাসহ
দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা গুলি
চালিয়ে তিন শতাধিক নেতা-কর্মীকে আহত ও দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার
করেছে। সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা ফেনীতে জামায়াত কার্যালয়, বিভিন্ন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাড়ীঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এক ভয়াবহ
তান্ডব সৃষ্টি করেছে। সরকার গত ৭২ ঘণ্টায় ৩৬ জন মানুষকে হত্যা করেছে। গড়ে
প্রতি দুই ঘণ্টায় একটি করে মানুষকে হত্যা করা দুনিয়ার ইতিহাসে এক নজিরবিহীন
ঘটনা। মানুষের রক্তে ভাসছে দেশ। তিনি বলেন, সরকার একদিকে গুলি করে
মানুষ হত্যা করছে, অপরদিকে নির্বাচনের নামে তামাশা করছে। ইতিমধ্যেই সরকারী
জোটের ১৫৪ জন নির্বাচন ছাড়াই বিজয়ী হয়ে এক নতুন কলঙ্কিত ইতিহাস সৃষ্টি
করেছে। গণতন্ত্র, সংবিধান ও মানুষের সাথে এটা এক নির্মম পরিহাস। ৫ বছরের
জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়নের পর দেশের মানুষ স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্তি
পাওয়ার জন্য যখন নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলন করছে, ঠিক সেই
মুহূর্তে গণহত্যা, গণগ্রেফতার, গণনির্যাতন চালিয়ে সরকার নির্বাচন ছাড়াই
ক্ষমতায় থাকায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সেই পরিকল্পনা
মোতাবেক ভোটের জন্য নির্ধারিত তারিখের পূর্বেই নির্বাচনের নাটকে বিজয়ীদের
নাম ঘোষিত হচ্ছে। নির্বাচনের নামে এ তামাশার নাটক বিশ্ববাসীর নিকট
বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করেছে।
ডা. শফিক বলেন, আওয়ামী লীগ
মনে করেছে, এদেশ তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তারা ভাবছে, এদেশে তারা ছাড়া আর
কেউ থাকতে পারবে না। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশ ১৬ কোটি
মানুষের দেশ। সুতরাং জনগণের অধিকারই এখানে প্রতিষ্ঠিত হবে। কোন দলের
স্বেচ্ছাচারিতা জনগণ বাস্তবায়িত করতে দেবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ
জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্র। দেশের সেনাবাহিনী জাতিসঙ্ঘ মিশনে গিয়ে
আমাদের দেশের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল করেছে। পুলিশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি
মিশনে গিয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছে। বিশ্ববাসীর নিকট বাংলাদেশের যে
মর্যাদা তৈরী হয়েছিল এ সরকার তা ধ্বংস করে বাংলাদেশকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন
করার ষড়যন্ত্র করছে। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যার পরিকল্পনা
বিশ্ববাসীর নিকট প্রকাশিত হওয়ার পর এ সরকারের নিকট জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র,
যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে হত্যার পরিকল্পনা
স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। সরকার সে আহ্বান শুধু অগ্রাহ্যই করেনি,
ওই আহ্বানকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে প্রধানমন্ত্রী রোববার প্রকাশ্য সমাবেশে
নোংরা বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা
চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে নিজেদের আঁকা ছকে বিচার নামক প্রহসনের নাটক করে
আরো জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যার খায়েস ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ
বক্তব্য উস্কানীমূলক। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর পরিস্কার হয়ে গিয়েছে
দেশপ্রেমিক নেতৃবৃন্দকে বেছে বেছে হত্যা করার যে পরিকল্পনা আওয়ামী লীগ
গ্রহণ করেছে, যেকোন উপায়ে তারা তা বাস্তবায়ন করতে চায়। সরকারের এ
চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্ববাসীকে সোচ্চার
হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল
বলেন, একদল ও এক ব্যক্তির কাছে ১৬ কোটি মানুষকে জিম্মি হতে দেয়া যায় না।
সকল উস্কানী ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে চরম ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে চলমান প্রতিরোধ
আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করে গণধিকৃত এ জালেম, খুনি সরকারের পতন ঘটিয়ে
দেশ বাঁচানোর জন্য দেশের সর্বস্তরের জনতার প্রতি আমি আহ্বান জানাচ্ছি।
বিজ্ঞপ্তি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন