বাড়ছে গুম, খুন, আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারের বিরোধ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
সদস্যদের মূল কাজ বাদ দিয়ে বিরোধী আন্দোলন দমনে ব্যস্ত থাকায় দেশের
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে।
বিশেষ করে গত কয়েক মাসে দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের শায়েস্তা
করতে গিয়ে গতানুগতিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী। এরই প্রেক্ষাপটে বেড়ে গেছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, খুন ও চাঁদাবাজির
ঘটনা। রাজনৈতিক সহিংসতা তো আছেই।
বিগত কয়েক মাসে লক্ষ্য করা গেছে, স্বাভাবিক শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ ফেলে রেখে
বিরোধী রাজনৈতিক দল দমন-পীড়নে সরকারি নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি চলে গেছে
নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
দেশে একের পর এক খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ আকস্মিক
বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে পড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের
মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয়
জোট। আর এ পরিস্থিতিতে জামায়াত নেতাদের কোনঠাসা করতে সরকারের নির্দেশে
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপড়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, সরকারের নির্দেশে র্যা ব-পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা
আইন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড এবং গুমের মতো তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।
এদিকে, সরকারের রাজনৈতিক দমন-পীড়ন সত্ত্বেও বিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষ করে
বিএনপি-জামায়াত মাঠের রাজনীতি ছেড়ে দিতে নারাজ।
সরকারের দমন-পীড়ন আর বিরোধী জোটের ছাড় না দেয়ার প্রেক্ষাপটে ইতোমধ্যে
রাজনৈতিক সহিংসতা চরমে উঠেছে। রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে
উগ্রপন্থি জঙ্গি সংগঠনগুলোর নব উত্থান হতে পারে এমন আতঙ্কও দেখা দিচ্ছে।
এমন এক পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ নিজেদের জান ও মালের নিরাপত্তা নিয়ে
ভীত-সন্ত্রস্ত। সর্বোপরী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষপাতমূলক আচরণও সাধারণের
মধ্যে বিক্ষোভের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়েছে।
এই অবস্থা চলতে থাকলে যে কোনো মুহূর্তে দেশের সাধারণ মানুষ রাস্তায় এসে
প্রতিবাদ কর্মসূচি দিতে পারেন। এরইমধ্যে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা সদরে এমন
চিত্র লক্ষ করা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে সব সেক্টরের মতো আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর মধ্যেও 'দেখে শুনে চলা'র মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
গোয়েন্দাদের রাজনৈতিক পক্ষাপাত দুষ্টতার কারণে তাদের সরবরাহ করা তথ্যেও
অনেক গরমিল থেকে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে সরকারী দলের পক্ষ থেকে বিরোধী জোটকে মাঠে
মোকাবেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। কিন্তু পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা এই
সময়ে কোনো ধরনের রিস্ক নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নন বলে জানা গেছে।
কোনো ভাবে সরকার পরিবর্তন হয়ে গেলে হয়তো চাকুরিটাই চলে যেতে পারে এই শঙ্কায়
নিজেদের পিঠ বাঁচিয়ে চলার প্রবণতাও রয়েছে অনেক সাধারণ পুলিশ সদস্যের
মধ্যে।
এ সুযোগে পালিয়ে থাকা অপরাধীরা আবারও প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক
ছত্রছায়ায় থাকা সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রিত অবৈধ ব্যবসাগুলোর হাতবদল শুরু
হয়েছে। এতে করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে তারা। রক্ত ঝড়ছে, লাশ পড়ছে।
অতিসত্ত্বর অপরাধের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার
আশঙ্কা অপরাধ বিশেষজ্ঞদের।
পুলিশের সাবেক এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জানান, সরকারের মেয়াদ শেষে
নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিরা পর্যন্ত
উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। পুলিশ সদর দফতরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা
বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে নিয়মিত। এতে জনজীবনে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের
বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত কয়েক মাস ধরেই পুলিশ, র্যা ব ও বিজিবি’র সব শাখা রাজনৈতিক দলগুলো
দমন-পীড়নে ব্যস্ত। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা ও বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের
নির্বিচারে দমনে সাধারণ জনগণের মধ্যেও সরকার বিরোধী বিষবাষ্পের সাথে সাথে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপরও ক্ষোভ বাড়ছে। কারণ রাজনৈতিক দমন-পীড়নে
সময় অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষই সরকারী পীড়নের শিকার হচ্ছেন।
দেশব্যাপী রাজনৈতিক দমন পীড়ন ইস্যুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি
শাখার ব্যস্ততার সুযোগে সন্ত্রাসী আর দুর্বৃত্তরা সরব হয়ে উঠেছে। ছিঁচকে
চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী ও পেশাদার খুনিদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে নিরাপত্তাহীন
হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আজিজুল হক জানান, প্রতিটি সরকারের শেষ
সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। তবে এবারের অবনতির মাত্রা সীমাহীন।
তিনি জানান, বর্তমান সময়ে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে দুই দলের মধ্যে
জটিলতা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অন্যতম কারণ। দুই দলের নেতা-কর্মীরা
মারমুখি অবস্থান নিয়েছে।
আধিপত্যের দ্বন্দ্বের কারণে পরিস্থিতি যখন চরম হুমকির মুখে তখন দেশের
বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের হাতে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ছে,
খুন হচ্ছে।
কয়েক মাসে শুধু রাজধানীতেই বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর খূনের ঘটনা লক্ষ্য করা
গেছে। এসবের জন্য একসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই রাজনৈতিক বিবেচনায় দায়ী হবেন
বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এমন প্রশ্নে আংশিক স্বীকারোক্তি জানিয়ে
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, রাজধানীতে পুলিশ
কর্মকর্তা ও সাবেক গোয়েন্দা সদস্য খুন হয়েছে। এরপর বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী,
ডেভেলপার, রেলওয়ে কর্মকর্তাসহ খুনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এটা খুবই
দুঃখজনক। সারা দেশেই বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি
থেকে পরিত্রাণের উপায় খোঁজা হচ্ছে। আশা করি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পারবে।
সামনে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী
কঠোরভাবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখবে বলে দাবি করেন তিনি।
তবে 'সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি খুনের ঘটনা ছাড়া সার্বিক আইনশৃঙ্খলা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করেছেন র্যা বের মহাপরিচালক (ডিজি)
মোখলেছুর রহমান।
তিনি গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতির বিষয়টি অস্বীকার করে জানিয়েছেন, গোয়েন্দারা
চাইলেও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডগুলো ঠেকাতে পারবে না। হঠাৎ করেই এসব ঘটনাগুলো
ঘটে থাকে।
সংবিধান বিশ্লেষক মিজানুর রহমান খান বলেছেন, সরকার সংবিধান সংবিধান বলে
মুখে ফেনা তুলছে। তারা বলছে সংবিধানের বাইরে কিছু করতে পারবেন না। কিন্তু
সত্যিকার অর্থে দুই দলের সমঝোতার জন্য সংবিধান কোন বাধা নয়। রাজনৈতিক
সংকটের সমাধানে সমঝোতার মাধ্যমেই ৯১ সালে প্রধান বিচারপতি সাহাবউদ্দীনকে
অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট করা হয়েছিল। সে সময় সংবিধান কোন বাধা হয়নি। সে সময় যদি
সংবিধান বাধা না হয়ে থাকে, তবে এখন কেন?
রাজনৈতিক সমঝোতা সম্ভব না হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি আরো বেশি
হবে এমনকি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার জানান,
ফায়দাতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফায়দার মাত্রা সীমিত হওয়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা
পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
আদর্শবিহীন এবং সুবিধাবাদী রাজনীতি পরিহার না করতে পারলে এর মাত্রা আরও
বাড়বে। কোনোভাবেই তা ঠেকানো সম্ভব হবে না। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে
দেশের মানুষ।
৬ মাসে ৩ হাজারের বেশি খুন:
পুলিশ সদর দফতরের হিসেব অনুযায়ী সারা দেশে বিগত ছয় মাসেই তিন হাজারের
বেশি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন
শতাধিক ব্যক্তি। তবে গত এক মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন
দলের নেতা-কর্মীরা খুনের শিকার হন সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া শেষ ছয় মাসে
ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে সহস্রাধিক।
৬ শতাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটেছে এই সময়ে। প্রায় এক হাজারেরও বেশি পুলিশ
সন্ত্রাসী হামলার শিকার।
পুলিশের সূত্র জানায়, গত তিন মাসে শুধু রাজধানীতেই খুনের ঘটনা ঘটেছে ৪
ডজনেরও বেশি। এর মধ্যে অধিকাংশ খুনের ঘটনা ঘটেছে রাজনৈতিক প্রভাবাধীনে।
চাঁদাবাজি ঘটনায় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। অন্তত ৫ জন রয়েছেন
ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী। এ ছাড়া খুনের তালিকায় রয়েছেন পুলিশ দম্পতি,
ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী।
পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তার বাসভবনে ঢুকে অস্ত্রধারীরা গুলি করে হত্যার পর
আবার অস্ত্র হাতেই পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। একই পরিস্থিতি দেশের
অন্যান্য জেলাগুলোতেও।
উৎসঃ টাইমনিউজবিডি
ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স
লেবেল
- খবর
- মতামত- বিশ্লেষণ
- বিবৃতি
- রাজনীতি
- প্রেস বিজ্ঞপ্তি
- আন্তর্জাতিক
- প্রচ্ছদ
- আইনশৃঙ্খলা
- শোক সংবাদ
- বিবিধ
- স্মৃতি
- আইন-আদালত
- জাতীয় সংসদ নির্বাচন
- শিক্ষা
- ডেমোক্রেসি
- ইসলাম
- স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান
- অর্থনীতি
- ইসলামী আন্দোলন
- সাহিত্য-সংস্কৃতি
- হাদীসের বাণী
- শীতবস্ত্র বিতরণ
- সভ্যতা
- ইতিহাস
- গল্প
- মিডিয়া
- শোকবাণী
- খেলাধুলা
- জাতীয়
- IIUC News
- চিঠি
- কৃষি
- দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
- প্রবাস
- গবেষণা
- আবিস্কার
- কুরআন
- সম্পাদকীয়
- বাণী
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- সাইবার ক্রাইম
- দারসুল কুরআন
- ব্রেকিং নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৩
বাড়ছে গুম, খুন, আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন