মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান |
দেশব্যাপী সরকারের হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য; দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত করণ এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৮ দলীয় জোট ঘোষিত আজ বুধবার থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে সকল স্তরের নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
গতকাল মঙ্গলবার দেয়া এক বিবৃতিতে মহানগরী আমীর বলেন, সরকার নিজেদের সীমাহীন অপকর্ম ঢাকতেই কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে পাতানো ও ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগের রাখব-বোয়ালরাই বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ দুর্নীতি পদ্মাসেতু কেলেংকারীতে জড়িত। তাদের অপকর্মের কারণেই বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে আর্থিক মঞ্জুরী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ সরকারের আমলেই কেলেংকারীর মাধ্যমে শেয়ার মার্কেট থেকে লক্ষ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। হলমার্ক কেলেংকারীর সাথেও সরকারি দলের লোকদের যোগসাজশ রয়েছে। মূলত: বিগত ৫ বছরের অপশাসন, দুঃশাসন ও সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি এখন ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত হয়েছে। তারা যে কী পরিমাণ দুর্নীতি ও আর্থিক কেলেংকারীর সাথে যুক্ত ছিল তার প্রমাণ মেলে তামাশা ও ভাঁওতাবাজির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য থেকে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় বিগত ৫ বছরে আওয়ামী লীগের সব নেতারই অবিশ্বাস্যভাবে সম্পদ বেড়েছে। ্েক্ষত্র বিশেষে কোন কোন নেতার সম্পদ বেড়েছে আরও অস্বাভাবিক হারে। অভিজ্ঞমহল মনে করছেন হলফনামায় বর্ণিত সম্পদের তথ্যের চেয়ে বাস্তবতা আরও ভয়াবহ। মূলত আওয়ামী লীগ নিজেদের লাগামহীন দুর্নীতি ও সারা দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও দলন-পীড়নকে আড়াল করতেই যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যই একদলীয়, ভোটারবিহীন ও পাতানো নির্বচনের আয়োজন করেছে। তারা জনতার রক্তের ওপর দিয়ে ৫ জানুয়ারির পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রে কবর রচনা করতে চায়। কিন্তু তাদের সে স্বপ্নবিলাস কখনোই সফল হতে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, সরকার মানবাধিকার লংঘনে সকল সময়ের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এ সরকারের বিগত ৫ বছরের শাসনামলে বিরোধী দলীয় শত শত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে অকারণে গ্রেফতার করে কথিত রিমান্ডের নামে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। সরকার ইসলামী আখলাক-সুরতের লোকদের জঙ্গী এবং কুরআন-হাদিসসহ ইসলামী গন্থাদিকে জিহাদী বই বলে আখ্যা দিয়ে এসরের ধারক-বাহকদের উপর বিগত ৫ বছরের নানানভাবে নির্যাতন ও নাজেহাল করা হয়েছে। হিজাবধারী মহিলারাও সরকারের জিঘাংসা ও প্রতিহিংসা থেকে রেহাই পায়নি বরং তাদের কথিত জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার করে পুলিশি হেফাজতে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। হিজাব পরিধান ও ধর্মীয় গ্রন্থাদি বহন এবং সংরক্ষণের কথিত অভিযোগে এ সরকারের আমলে অর্ধশতাধিক ধর্মপ্রাণ ও পর্দানশীন নারীকে কথিত রিমান্ডের নামে আইয়্যামে জাহেলিয়ার কায়দায় বর্বরোচিত নির্যাচন চালানো হয়েছে, যা অতীতের সকল বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। রাজপথে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ব্যক্তির সাংবিধানিক, মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার হলেও সরকার জনগণকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। একতরফা নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে জনগণ রাজপথে নেমে আসলে সরকার জনতার উপর যৌথবাহিনী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে এ পর্যন্ত দু’শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে। শত শত মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। সরকার ১৮ দলীয় জোটের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে বাধা, যৌথবাহিনী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে সারা নৈরাজ্য ও সংঘাত সৃষ্টি করেছে। কিন্তু জনগণ সরকারের সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে কর্মসূচি পালন করেছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার বিরোধী দলকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে দলন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। তারা আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের অন্যায়ভাবে আটক করে বিচারের নামে তাদেরকে একের পর এক প্রাণদ-ে দ-িত করছে। তারা শিবির সভাপতি দেলাওয়ার হোসাইনকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে গ্রেফতার করে কথিত রিমা-ের নামে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ও ববর্রোচিত নির্যাতন চালিয়েছে। সরকার ১৮ দলীয় জোটকে নির্মূল ও দমন করতেই শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক যোগসাজশী মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করে রাখছে। মূলত সরকার বিরোধী দল দমনের জন্য মামলাকে হাতিয়ার বানিয়েছে। তারা বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা দিয়ে প্রমাণ করেছে সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মামলা, হামলা ও গ্রেফতার করে নির্মূল করতে চায়। আদালতে বিরোধী দলীয় নেতার বিরুদ্ধে কথিত মামলার খারিজের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। কিন্তু দলন-পীড়ন চালিয়ে আওয়ামী লীগের শেষ রক্ষা হবে না বরং গণবিরোধিতার কারণে এক দিন আওয়ামী লীগকে জনগণের আদালতে দাঁড়াতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন