সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তদন্ত কমিশন গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
বুধবার জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে হামলা চালিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দায় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের ওপর চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।’
ডা. শফিকুর দাবি করেন, ‘এ পর্যন্ত যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী দলীয় ক্যাডারদের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, কতিপয় প্রচার মাধ্যম ঘটনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করছে, আর বিনা তদন্তে সত্যতা যাচাই করা ছাড়াই জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের ওপর দোষ চাপিয়ে কল্পকাহিনী রচনা করছে।’
জামায়াত সেক্রেটারি মনে করেন, ‘এতে প্রকৃত ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে এবং সরকারি মদদে সন্ত্রাসীরা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে অপকর্ম সংঘটিত করছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নোংরা রাজনৈতিক খেলার শিকার হচ্ছেন।’
বিবৃতিতে সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সাথে ক্ষমতাসীন মহল সরাসরি জড়িত দাবি করে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হয়-
এক. নোয়াখালীর কৃষ্ণপুরে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ ক্যাডাররা হিন্দুদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা চালায়। এ ঘটনায় স্থানীয় পূজা কমিটি আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ১০ ক্যাডারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
দুই. টাঙ্গাইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা করে। এর প্রতিকার চেয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশান দায়ের করা হয়। হাইকোর্ট ঘটনার জন্য দায়ী আওয়ামী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।
তিন. পাবনার সাঁথিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও ভাঙচুর করতে গিয়ে ধরা পড়ে যুবলীগের ক্যাডাররা।
চার. ময়মনসিংহে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয় থেকে শিবমূর্তি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যুবলীগের কর্মী।
পাঁচ. সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করতে গিয়ে যুবলীগ কর্মী হাতেনাতে ধরা পড়ে। আদালত তাকে এক বছর কারাদণ্ড দেয়।
ছয়. বগুড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ওই স্কুলের আওয়ামী লীগপন্থি প্রধান শিক্ষক ধরা পড়ে।
সাত. যশোরের অভয়নগরে সংখ্যলঘুদের ওপর সহিংসতা ঘটনায় ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী এমপি আওয়ামী লীগ নেতা রনজিৎ কুমার রায় বলেছেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়েছে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আবদুল ওহাবের ক্যাডাররা।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ এ ঘটনা জামায়াত-শিবির ঘটিয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন এবং কতিপয় পত্রিকায় সরকারের এই বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে।
জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, এ সরকারের আমলে বিশেষ করে প্রহসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনগণের শন্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকার বেসামাল হয়ে বেপরোয়াভাবে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়িতে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালাচ্ছে।
তিনি করেন, এসব ঘটনার সাথে সরাসরি সরকার সম্পৃক্ত থাকায় কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী সরকারের মিথ্যা প্রচারণা ও নোংরা রাজনৈতিক খেলার নির্মম শিকার হচ্ছে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
ডা. শফিকুর বলেন, ‘সরকার নিজেই যেখানে হিংসাত্মক ঘটনা সংঘটিত করছে সেখানে জনগণ অসহায়।’
তিনি বলেন, ‘প্রকৃত সত্য উৎঘাটন এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনসহ চলমান সহিংসতা বন্ধে আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে আমরা জাতিসংঘের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
এ ধরনের তদন্ত কমিশনকে বাংলাদেশের হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য ও বিবরণ দিয়ে তদন্তকার্যে সহযোগিতার জন্য জামায়াত সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান দলটির এ শীর্ষস্থানীয় নেতা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন