.08 Jan, 2014 ভাইয়ের জন্য ভাই। এ কথাটিই সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ যেন আরো একবার সবাইকে মনে করিয়ে দিলেন। নিজে ক্ষমতায় থাকবেন আর ছোট ভাই থাকবেন না, তা ভালো দেখায় না! তাই তো ভাইয়ের জন্য এরশাদ চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। জি এম কাদেরকে যেন সাংসদ বানানো হয়- এ অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন এরশাদ। নির্বাচনের এক দিন পরই এরশাদ এ চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসন এবং রংপুর-৬ আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। একটি আসন রেখে অন্যটি ছেড়ে দিতে হবে। তাই রংপুর-৬ আসন ছেড়ে দিয়ে সেখানে উপনির্বাচনে জি এম কাদেরকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচনে যাওয়া না-যাওয়ার নাটকের মধ্যেই রংপুর-৩ (সদর) আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন এরশাদ। পার্টির মহাসচিব ছাড়াও বেশির ভাগ নেতাই সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এরশাদের পক্ষে অনড় থেকে নির্বাচন বর্জন করেন জি এম কাদের। যে কারণে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন লালমনিরহাট-১ আসনে।
অন্যদিকে পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এরশাদের সঙ্গে থাকলেও গোপনে রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। প্রথম দিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকলেও শেষ দিকে এসে হেলিকপ্টার নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালান তিনি।
কথিত আছে, মহাসচিব আওয়ামী লীগের সঙ্গেও গোপনে রফা করেন। বেশ কয়েক দিন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে বৈঠক করেন। যে কারণে হাওলাদারের নির্বাচনী এলাকা পটুয়াখালী-১ থেকে আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থীকে সরিয়ে নেয়।
এতে করে সহজ বিজয় পেয়ে যান জাপা মহাসচিব। অন্যদিকে তার সহধর্মিণী রত্না আমিন হাওলাদার বরিশাল-৬ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। সিনিয়র নেতা বলতে গেলে সবাই নির্বাচিত হয়েছেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। কিন্তু বাদ পড়েছেন দলের সেকেন্ডম্যান খ্যাত জি এম কাদের।
এরশাদ মনে করেছিলেন আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে না। কিন্তু শেষমেশ নির্বাচন হয়ে যাওয়ায় পড়েছেন বিপাকে। এখন আর অনড় থেকে জেলে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে রাজি নন এরশাদ। কিন্তু আপন ভাই জি এম কাদেরকে ছাড়া সংসদে যেতে চান না তিনি। তাই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে রংপুর-৬ আসনের উপনির্বাচনে জি এম কাদেরকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এরশাদ বিরোধী দলে যেতে রাজি আছেন। কিন্তু সরকারের ক্ষমতার ভাগ নিতে রাজি নন।
কারণ যতবারেই ক্ষমতার ভাগ নিয়েছেন ততবারেই তার দল ভাঙনের মুখে পড়েছে। তাই নতুন করে আর দল ভাঙার ঝুঁকি নিতে চান না।
প্রসঙ্গত, ৯৬ সালের নির্বাচনে জেলে থেকে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেন এরশাদ। তখন ঐকমত্যের সরকারে ঠাঁই পেয়েছিলেন তার দলের মহাসচিব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ৯৮ সালে এসে মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় এরশাদের। তখন আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পদত্যাগ করতে বলেন এরশাদ। কিন্তু আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পদত্যাগ না করে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করেন। এমনকি লাঙ্গল প্রতীক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। শেষ অবধি বিষয়টি কোর্টে গড়ায়।
এবার ৪ ডিসেম্বর নির্বাচনকালীন সরকার থেকে তার দলের মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিলেও মন্ত্রীরা পদত্যাগে টালবাহানা শুরু করেন। রওশন এরশাদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছাড়াও অনেকেই বাগড়া দেন। শেষে পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা জানালেও তা ছিল রহস্যজনক।
পদত্যাগের বিষয়টি শুধুই নাটক ছিল, তা পরিষ্কার হয়ে যায় ২ জানুয়ারি জাতীয় পার্টির নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে। ওই দিন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, জাতীয় পার্টির নেতারা সবাই মন্ত্রিসভায় আছেন। কেউ পদত্যাগ করেননি।
অন্যদিকে এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও মাঠে থেকে যান মন্ত্রীরা। এতে বিব্রত পরিস্থিতির মুখোমুখি হন এরশাদ। এসব কারণে নতুন করে সরকারের অংশীদার না হয়ে অন্য রকম সুবিধা আদায় করতে চান এরশাদ। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি এরশাদ এ বিষয়ে দর-কষাকষি অব্যাহত রেখেছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পার্টির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কেউই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের কেউ কেউ জানিয়েছেন, তার পক্ষে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। তবে কি হয় দেখতে গেলে অপেক্ষা করতে হবে।উৎসঃ রাইজিংবিডি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন