বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সেই সাথে অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির পাশাপাশি নির্বাচনের তারিখ এক মাস পিছিয়ে পুনরায় তফসিল ঘোষণার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন। এ সময় তাঁর পাশে ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আমরা যে সাত দফা দাবি দিয়েছি, তা থেকে একচুলও সরে আসছি না। সাত দফার সঙ্গে আমাদের একটি নতুন দাবি যুক্ত হয়েছে, সেটি হচ্ছে নির্বাচনের তফসিল বাতিল করে নির্বাচনের তারিখ এক মাস পিছিয়ে নতুন করে তফসিল ঘোষণা।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কোন প্রতীকে নির্বাচন করবে—জানতে চাওয়া হলে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘পরে একসঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের অত্যাবশ্যকীয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পূরণ হয়নি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও সরকারি প্রচার-প্রচারণা একতরফাভাবে চালানো হচ্ছে। এটা নির্বাচনী আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন। এ রকম পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।’
ড. কামাল বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু এ রকম একটি ভীষণ ভীষণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
নির্বাচনে যাবার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় লেভেল প্লেইং ফিল্ড এর নূন্যতম শর্তও এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও বিটিভিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। যা নির্বাচনী আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লংঘন। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. সামসুল হুদাসহ দেশের প্রায় সকল দল ও জনগণের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সরকার ও নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বাতিল করেনি। এরকম এক পরিসিস্থিতে একটা অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই কঠিন। কিন্তু এরকম ভীষণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে ৭ দফা দাবি আমরা এর মধ্যে দিয়েছি সেই দাবি থেকে আমরা সরে আসছি না। এর সাথে যুক্ত হয়েছে নির্বাচনের তফসিল পিছিয়ে দেবার দাবি। আমরা নির্বাচনের বর্তমান তফসিল বাতিল করে এক মাস পিছিয়ে দিয়ে নতুন তফসিল ঘোষণা করার দাবি করছি। সেই ক্ষেত্রেও বর্তমান সংসদের মেয়াদকালেই নির্বাচন করা সম্ভব হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, এইসব দাবি আদায়ের সংগ্রাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অব্যহত রাখবে। সে আন্দোলন সংগ্রামের সাথে নির্বাচনে অংশগ্রহণকেও আন্দোলনের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এ নেতা বলেন, একটা অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় দায়িত্ব সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতির পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কড়া নজর রাখবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের আচরণের প্রতি। জনগণের দাবি মানা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় দায়িত্ব সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, দশম সংসদ নির্বাচনের পর দেশে গণতন্ত্রের যে গভীর সংকট তৈরি হয়েছে সেই সংকট দূর করে আমাদের ঘোষিত ১১ দফা লক্ষ্যের ভিত্তিতে একটি সুখী, সুন্দর আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তোলার সংগ্রামে দেশের জনগণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পাশে থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত রায় চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, জেএসডি সহ-সভাপতি তানিয়া রব ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন প্রমূখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন