বাংলাদেশ বার্তাঃ ফ্যাসিস্ট এবং ফ্যাসিবাদি, এই শব্দ দুটো বাংলাদেশে সম্প্রতি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। অথচ মাত্র বছর দুয়েক আগেও এগুলোর ব্যবহার তেমন একটা লক্ষ্য করা যেত না। ২০১৩ সালের প্রথম দিকে ইন্দো-মার্কিন গোষ্ঠীর আনুকূল্যে বাংলাদেশের চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষী মহল রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে প্রায় এক সমান্তরাল সরকারই প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছিল। ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকার সেই উদ্যোগের সহায়ক শক্তির ভুমিকা পালন করেছিল। দখলদার প্রধানমন্ত্রী, অধিনস্ত মন্ত্রিবর্গ, চাটুকার সম্পাদক ও কলাম লেখক শ্রেণি এবং ভারতীয় দালাল বুদ্ধিজীবীকুল শাহবাগের সেই উদ্দাম মেলাকে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ নাম দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের চরম অপমান করতেও কোনরকম দ্বিধা করেননি। শেখ হাসিনা কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধকালীন’ সরকারের কথিত প্রধানমন্ত্রী জনৈক ডাক্তার ইমরান এইচ সরকারের নির্দেশে সেই সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলিত, অর্ধনমিত কিংবা অবনমিত করা হতো। সংসদ সদস্য এবং ডাকসাইটে সচিবকুল অফিসের কাজ-কর্ম শিকেয় উঠিয়ে রেখে ইমরানের আদেশক্রমে রাস্তায় নেমে সাড়ি বেধে সং এর মত দাঁড়িয়ে থাকতেন। মাসের পর মাস ধরে র্যাব-পুলিশের তিন স্তরের নিরাপত্তার ভেতরে রাস্তাঘাট বন্ধ রেখে তামাশা চলেছিল। স্বয়ং শেখ হাসিনার নির্দেশে ব্যাংক লুটেরা আর ভুমিদস্যু ব্যবসায়ীরা জাগরণ মঞ্চের নেতা, কর্মী এবং উৎসুক দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য অঢেল খাদ্য, পানীয়, নগদ অর্থ, এবং অন্যান্য দ্রব্যাদির যোগান অব্যাহতভাবে দিয়েছেন। নাটকের চরম লগ্নে দখলদার প্রধানমন্ত্রী সংসদে বক্তৃতাকালে কন্ঠে যথাসম্ভব আবেগ ঢেলে বলেছিলেন যে তাঁর শরীরখানি সংসদে আবদ্ধ থাকলেও মন যে সারাক্ষন শাহবাগেই পড়ে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের প্রভু ভারতের তৎকালিন রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জী একই সময় বাংলাদেশ সফরে এসে আক্ষেপের সঙ্গে জানিয়েছিলেন যে, শুধু প্রটোকলের বাঁধন এবং সময়ের স্বল্পতা তাকে শাহবাগের মেলায় উপস্থিত হয়ে জাগরণের মঞ্চে উঠতে দিচ্ছে না। ভারত, মার্কিন এবং বাংলাদেশ সরকারের ইঙ্গিতে ইমরান গং দাবী তুলেছিলেন যে বাংলাদেশে সকল ভিন্ন মতের মিডিয়া বন্ধ করে দিতে হবে, অভিযুক্ত হলেই টুপি-দাড়িঅলা লোকজনদের বিনা বিচারে অথবা বিচারের প্রহসন করে ফাঁসিতে ঝোলাতে হবে, ভিন্ন মতের ব্যক্তিদের ব্যবসা-বাণিজ্য করা এবং তাদের চাকুরি দেয়া চলবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। আজ যে সকল সম্পাদকরা ডিজিটাল আইন নিয়ে কান্নাকাটি করছেন তারাই সেদিন ইমরানের ফ্যাসিবাদী দাবী শুনে সাধু, সাধু বলে উঠেছিলেন। প্রায় চার দশক পর ডাক্তার ইমরান এইচ সরকারের মধ্যে নতুন শেখ মুজিবকে খুঁজে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছিলেন। সেই ভয়ানক বৈরী সময়ে শ্রোতের একেবারে বিপরীতে দাঁড়িয়ে আমার দেশ পত্রিকা লীড নিউজের শিরোনাম করেছিল, শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি। বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগনই অবশ্য সেই দানবের পায়ের আওয়াজ শুনতে পায়নি। আজ ফ্যাসিবাদ ঘাড়ের উপর চেপে বসে গল্পের ভ্যাম্পায়ারের মত রক্তপান করার পর অসহায়ের মত ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিবাদ বলে আর্তনাদ করছেন।
যাই হোক, ইসলামফোবিয়াতে আক্রান্ত গণ-জাগরণ মঞ্চের আয়োজক কথিত ব্লগারগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধকে উপলক্ষ্য করে নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশে ইসলামের মহান নবী হযরত মোহাম্মদ (স:) কে কটুক্তি করলে আলেম সমাজের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। সেই প্রতিক্রিয়া থেকেই হেফাজতে ইসলাম জন্মলাভ করে এবং আল্লামা শফী সংগঠনের নেতৃত্বে আসীন হন। সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করার বছর দুয়েক আগে আল্লামা শফীর সঙ্গে আমার একবার সাক্ষাৎ হয়েছিল। সম্ভবত: ২০১১ সালে এক ইসলামী সমাজ সেবামূলক সংগঠনের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে আমি চট্রগ্রামের হাটহাজারিতে গেছিলাম। ওখানকার প্রধান মাদ্রাসাটি সুপ্রাচীন, বিশাল এবং উপমহাদেশে সুপরিচিত। মাদ্রাসার প্রানপুরুষ হিসাবে আল্লামা শফীও অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। আমার অনুষ্ঠান শেষে তরুণ আয়োজকরা মাদ্রাসা দেখতে যাওয়ার এবং আল্লামা শফীর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রস্তাব করলে আমি সানন্দে সম্মতি দেই। আল্লামা শফী সাদরে অভ্যর্থনা জানান, আমার জন্য বিশেষভাবে দোয়া করেন এবং জায়নামাজ ও কোরান শরীফ উপহার দেন। তিনি আমাকে সময়-সুযোগ মত মাদ্রাসায় কয়েকটা দিন আতিথ্য গ্রহন করতেও বলেন। সেই দাওয়াত রাখার সুযোগ অবশ্য আমার হয়নি। প্রবীণ, পরহেজগার এবং জ্ঞানী মানুষটির সঙ্গে দ্বিতীয়বার দেখা হওয়ার সৌভাগ্যও আর ঘটেনি। তবে, ২০১৩ সালের এপ্রিলে দিল্লীর তাবেদার সরকার আমার মায়ের বিরুদ্ধেও বানোয়াট মামলা করলে তার প্রতিবাদে আমি টানা সাতদিন অনশন করেছিলাম। সেই সময় আল্লামা শফী ইসলামের ব্যাখ্যা সহকারে এক চিঠি লিখে আমাকে অনশন ভঙ্গের অনুরোধ করেছিলেন। কষ্ট করে চিঠি লেখার জন্য আমি আজো তার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা বোধ করি। তার দেওয়া উপহারও অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে সংরক্ষণ করেছি। আল্লামা শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম যে অভাবনীয় দক্ষতার সাথে ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল এবং ৫ মে ঢাকায় দুইবার অভূতপূর্ব মহাসমাবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল সেটি বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে সমুজ্জল হয়ে থাকবে। আদর্শের লড়াইয়ে হেফাজতে ইসলামের কাছে গনজাগরন মঞ্চের পরাজয়ের কাহিনিও বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে যুগে যুগে অনুপ্রাণিত করবে। এদেশের সেক্যুলার নামধারী ইসলাম বিদ্বেষীরা হয়ত সেই পরাজয়ের কথা মানতে চাইবেন না। সেক্যুলার মিডিয়াতে অব্যাহত প্রচারনা চালাতে দেখি যে ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ ফাঁসির মধ্য দিয়ে গনজাগরনের আন্দোলন সফল হয়েছে। অপরদিকে সরকার হেফাজতকে একবার শিক্ষা দিয়েই ঠান্ডা করেছে। আমি অবশ্য মনে করি এই প্রচারনা অর্ধসত্য। কথিত সেক্যুলার সরকার এবং সেই সরকারের জালিম প্রধানমন্ত্রীর সাথে আল্লামা শফীর বর্তমান মাখামাখি দেশবাসীকে সম্পূর্ন ভিন্ন বার্তাই দিচ্ছে। শেখ হাসিনা এবং তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা যখন ইমরান এইচ সরকারকে প্রায় ১৯৭১ এর শেখ মুজিবের কাতারে তুলে ফেলছিলেন, সেই একই সময়ে সংসদের ভিতরে এবং বাইরে আল্লামা শফীর নামে হেন কুৎসা নাই যেটা করা হয়নি। শেখ হাসিনা, হাসানুল হক ইনু, মতিয়া চৌধুরী এবং সরকারের অন্যান্য কেষ্ট বিষ্টুরা তেঁতুল হুজুর বিশেষন সহকারে দিনের পর দিন আল্লামা শফীকে তুলোধোনা করেছেন। স্বয়ং শেখ হাসিনা আল্লামা শফীর চরিত্র নিয়ে অশ্লীল ইঙ্গিত করেছেন। শাপলা চত্বরের গনহত্যাকে উপহাস করে ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে আলেমরা নাকি গায়ে রঙ মেখে সেখানে শুয়েছিলেন এবং র্যাব-পুলিশ-বিজিবি দেখামাত্র দাঁত বের করে পালিয়ে গেছেন। আওয়ামীপন্থী এবং ইসলাম বিদ্বেষী সুশীল মিডিয়া সম্মিলিত ভাবে শেখ হাসিনার সুরে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশের আলেম সমাজকে অপমান করে সংবাদ ও নিবন্ধ প্রকাশ করে গেছে। একমাত্র ‘আমার দেশ’ ইসলাম, হেফাজত এবং বাংলাদেশের আলেম সমাজের পক্ষে তাদের সম্পাদকীয় নীতি শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছিল। দেশী-বিদেশী কোন চাপের কাছেই আমরা মাথা নত করি নাই। ইসলামী আদর্শে অবিচল থাকার জন্য আজ পর্যন্ত আমার দেশ পরিবারকে অসহনীয় মূল্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। বিষ্ময়ের ব্যাপার হলো হেফাজতে ইসলাম এবং আল্লামা শফী ক্ষমতাসীনদের কাছে আজ আর অচ্ছুৎ নন। মাত্র দুদিন আগে আমেররিকা ফেরত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা দাবী করেছেন যে হেফাজতে ইসলাম নাকি কোনদিনই তাদের শত্রু ছিল না। বাংলাদেশে তাবৎ সেক্যুলার ইসলাম বিদ্বেষীদের একচ্ছত্র নেতা শেখ হাসিনা এর আগে আল্লামা শফীসহ হেফাজতের নেতাদের গনভবনে দাওয়াত করে নিয়ে গেছেন। একদার ‘তেঁতুল হুজুর’ আল্লামা শফীকে প্রধানমন্ত্রী প্রায় নতজানু হয়ে সালাম দিয়েছেন। যে সরকার ক্ষমতা গ্রহন করেই বলেছিল বাংলাদেশের মাদ্রাসা গুলো নাকি জঙ্গী তৈরীর কারখানা, তারাই ২০১৮ সালে এসে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাকে সেক্যুলার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমমানের বলে স্বীকৃতি দিয়েছে!!! আর ২০১৩ সালের শেখ মুজিব, ইমরান এইচ সরকারকে মার্কিন মুলুকে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের অধিকাংশ পান্ডারাই বিদেশে ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে। যারা বাংলাদেশে আছে তাদেরও কোন সাড়া-শব্দ নেই। এদিকে আল্লামা শফী আজ শেখ হাসিনার ‘মোহব্বতের’ মানুষ। তাহলে গণজাগরণ এবং হেফাজতের লড়াইয়ে শেষ হাসি আজ কার মুখে? হাসানুল হক ইনুর তেঁতুল হুজুরের নাকি এ যুগের শেখ মুজিবের?
এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। শেখ হাসিনার মত ফ্যাসিস্ট শাসকশ্রেণি কোন কালেই ন্যায়-নীতি ও আদর্শের তোয়াক্কা করেন নাই। তারা চানক্য এবং মেকিয়াভেলির একনিষ্ঠ শিষ্য। আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবীকে পুঁজি করে যে অখ্যাত ইমরান এইচ সরকার এ যুগের শেখ মুজিবে পরিনত হয়েছিলেন, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের কন্যার পানি গ্রহণ করেছিলেন, ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের’ সেই জাতির পিতাকে রাজনীতির প্রয়োজনে ফাঁসিতে চড়াতেও শেখ হাসিনা কিছুমাত্র দ্বিধা করবেন না। আপন স্বার্থ সিদ্ধিতে তাদের ভাষায় তেঁতুল হুজুর আল্লামা শফীকে কদমবুসি করতে তার কোন অস্বস্তি হয়নি। জাগতিক স্বার্থপূরনই এদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য। বর্তমান বিশ্বেও আদর্শহীন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় সর্বত্র স্বার্থই মুখ্য। ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের সংখ্যালঘু মুসলমানদের গনহত্যার অপরাধে এই সেদিনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাল তালিকাভূক্ত ছিলেন। তাকে সেদেশের ভিসা দেয়া হতো না। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর সেই কাল তালিকাভূক্তি কেবল প্রত্যাহারই করা হয়নি, ডেমোক্রেট, রিপাবলিকান নির্বিশেষে নরেন্দ্র মোদি সকল মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ মিত্র। কারন ভারত দক্ষিন এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র কৌশলগত মিত্র। এই নীতিহীন রাজনীতিই চানক্য এবং মেকিয়াভেলি শিক্ষা দিয়েছেন।
আল্লামা শফীর কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন, মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর অপমানের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা সংগঠন, হেফাজতে ইসলামের জন্য চানক্য নীতি অনুসরন করা কী জায়েজ? ২০১৩ সালের এক ঘটনার কথা বলি। হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ৬ মে শাপলা চত্বর থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। প্রথমে তাকে রিমান্ডে ডিবি অফিসে এবং পরে কাশিমপুর দুই নম্বর কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছিল। আমার পাঁচ বছরের রিমান্ড এবং জেলজীবনে উভয় জায়গাতেই ছিলাম। বাবুনগরীকে যে রাতে মুমূর্ষ অবস্থায় কাশিমপুর কারাগার থেকে বারডেম হাসপাতালে আনা হয় আমিও কাকতলীয়ভাবে তখন পুলিশ হেফাজতে উল্টো দিকের পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাবুনগরীকে হাসপাতালে আনার সময় কী বিপুল সংখ্যায় র্যাব এবং পুলিশের গাড়ি দিয়ে সমগ্র এলাকা ঘিরে ফেলে আতংক সৃষ্টি করা হয়েছিল তার স্বাক্ষী আমি নিজে। মাসখানেক পর কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে মাওলানা বাবুনগরীর উপর অত্যাচারের সব কাহিনিই শুনেছি। প্রবীন মানুষটির ভীষণভাবে আহত হাঁটুতে বিনা চিকিৎসায় পচন ধরে যাওয়ার পর ডিবির কর্মকর্তারা আদালত মারফত তাকে কাশিমপুরে পাঠায়। তিনি তখন প্রচন্ড জ্বরের প্রচন্ড তাপে প্রায় সংজ্ঞাহীন, দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। সেই অবস্থাতেও মাত্র একদিন কারা হাসপাতালে রাখার পর ‘উপরের’ নির্দেশে বাবুনগরীকে ফাঁসির সেলে স্থানান্তর করা হয়। তাকে যন্ত্রনা দেয়াই প্রশাসনের উদ্দেশ্য ছিল। পরবর্তী দুই দিনের মধ্যে তিনি মরনাপন্ন হয়ে পড়লে কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যুর দায়িত্ব নিতে অসম্মতি জানায়। হাঁটুতে গ্যাংরীনের (Gangrene) আশংকা সৃষ্টির কারনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় তাকে বারডেমে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল ধরেই নিয়েছিল যে তিনি আর বাঁচবেন না। ঝামেলা এড়ানোর জন্য একদিনের মধ্যে সিএমএম আদালত তার জামিনও মঞ্জুর করে। অথচ এই আদালতই একজন আহত, অশক্ত এবং গুরুতর অসুস্থ আলেমকে অমানবিকভাবে রিমান্ড এবং জেলে পাঠিয়েছিল। সেই অসহায় দিনগুলোর কথা নিশ্চয়ই মাওলানা বাবুনগরী ভুলে যান নাই।
তবু তো জুনায়েদ বাবুনগরী বেঁচে আছেন। ৬ মে’র যে ভোরে শাপলা চত্বর থেকে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তার পূর্ব রাতে শেখ হাসিনার নির্দেশে ওখানেই কত অসংখ্য আলেমকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই শহীদদের রক্তের চেয়েও কি আজ শিক্ষার সনদের মূল্য বেশি হয়ে গেল? হেফাজতের ঐতিহাসিক আন্দোলন কী সনদ প্রাপ্তির দাবীতে হয়েছিল? আল্লামা শফী বলছেন যে তিনি আওয়ামী লীগ হয়ে গেলে কোন সমস্যা নাই! আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন মাদ্রাসায় নাকি ‘মোটা অংকের’ অনুদান দেন এবং শেখ হাসিনা হেফাজত ও আল্লামা শফীকে ‘মোহাব্বত’ করেন। অর্থাৎ ‘মোটা অংকের’ অনুদান দিলে আর মোহাব্বত করলে আলেমদের খুন করা এবং বাবুনগরীকে টর্চার করা জায়েজ হয়ে যায়। দেশের প্রবীনতম আলেমদের কাছ থেকে এমন চানক্যীয় ব্যাখ্যা শোনার দু:খ রাখবো কোথায়? ২০১৩ সালে যে আল্লামা শফী হেফাজতের ১৩ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে শাহাদাতের আকাঙ্খা ব্যাক্ত করেছিলেন আমার কাছে সেই ব্যক্তিই উচ্চ সম্মানের অধিকারী। শেখ হাসিনার মহব্বতে এবং ‘মোটা অংকের’ অনুদানে যিনি আদর্শচ্যুত হন প্রবীণ বয়সের কারনে তাকে কেবল করুণা করা চলে। “ আলেমদের রক্তে যে ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রীর হাত রঞ্জিত তার কাছ থেকে সনদ কিংবা মোটা অংকের অর্থ গ্রহন অবশ্যই ইসলামের বানীর পরিপন্থী। ভাইয়ের হত্যাকারীর কাছ থেকে কোন মুমিন মুসলমান ভিক্ষা নিতে পারে না। অবশ্যই আল্লামা শফী যদি শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতা অথবা ডিজিএফআই এর কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ তার আলেম ভাইদের খুনের বিনিময়ে রক্তপন (Blood Money) হিসেবে গ্রহন করে থাকেন তাহলে আমাকে নতুন করে লিখতে হবে।” আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আলেমদের বিপুল সংখ্যাগিরিষ্ঠ অংশই প্রকৃত ইসলামী আদর্শের অনুসারী। কেবল সনদের মোহে এবং ‘মোটা অংকের’ অনুদানের বিনিময়ে তারা ইসলাম বিদ্বেষী শাসকের সাথে আপস করতে পারেন না। আমি আরো আশাবাদী যে গৌরবজ্জ¦ল মুসলিম ঐতিহ্যের বাংলাদেশে ইসলাম বিরোধী এবং মোনাফেকরা অবশ্যই পরাজিত হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা সেই লড়াইয়ে আমাদের সহায় হোন।
সম্পাদক, দৈনিক আমার দেশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন