বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার আগে তড়িঘড়ি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় বিষ্ময় প্রকাশ করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সংলাপ পর্ব শেষ না হতেই তাড়াহুড়া করে নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা বোধগম্য নয়। তফসিল অনুযায়ী ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আবার দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ রয়েছে ২৮ জানুয়ারী ২০১৯ পর্যন্ত। সংস দ ভেঙ্গে দেয়া হয়নি। ২৩ ডিসেম্বর ভোট হলে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারীর আগ পর্যন্ত একসঙ্গে এক মাস দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ বহাল থাকবে। এক দেশে এক সঙ্গে দুটি সংসদ বহাল নজীরবিহীন এবং এটা বোধগম্য নয়। গতকাল শনিবার ‘জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াডে’ এসব কথা বলা হয়।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা দি হাঙ্গার প্রজেন্টের সহযোগিতায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুজন সভাপতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন। বক্তৃতা করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, প্রমূখ। সেমিনারে সারা দেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী এ অংশ গ্রহণ করে। এর আগে জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়ার্ডে ৩০টি সংসদীয় আসনের ২৯৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনী অলিম্পিয়ার্ড অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় চরমান রাজনীতি বর্তমান সরকারের কর্মকান্ড ছাড়াও নির্বাচন এবং ইসির কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা হয়। বক্তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন নিজেই নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করছে।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা ইভিএম ব্যবহার নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, জাতীয় নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল রাজি না থাকলে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা ঠিক হবে না। দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে ২০০৮ সালে আমরা দুই বার তফসিল পিয়িছে দিয়েছিলাম, যাতে করে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। তখন জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেয়েছে। এবার করতে পারবে কি না জানি না। জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহার নিয়ে যখন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তখন এর বিরোধিতা করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা। তিনি মনে করেন, সব দল রাজি না থাকলে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা ঠিক হবে না। এ কমিশন তো ইভিএম পরিচালনা করতে পারবে না। আমরা ইভিএম প্রকল্প নিয়েছিলাম স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো করতে। মানুষ যখন জানবে তখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ব্যবহার করবে। কিন্ত দেশের মানুষ তো এখনো ইভিএম ব্যবহার জানে না। তার আগে বর্তমান সিইসি কীভাবে করে তা আমার জানা নেই। সাবেক সিইসি বলেন, আমার মনে হয় এবার বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া উচিত। নির্বাচনে গিয়ে তাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করা উচিত। সরকার চাইবে বিএনপি যেন নিবাচনে না আসে। তখন তাদের ফাঁকা মাঠে খেলতে সুবিধা হয়। সেটা যেন খেলতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিবে।
সাবেক সিইসি ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, মোদ্দাকথা হচ্ছে, আপনি একটা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন করতে চান সব দলের অংশগ্রহণে। তো সেখানে সকল দল যদি এটা করতে রাজি না হয়, এ রকম বিষয় তো করা উচিত নয়। ইভিএম কেনার দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হচ্ছে, যেটি আশঙ্কার বিষয়। তিনি আরো বলেন, আমার জানা মতে এবার বিদেশী পর্যবেক্ষণ না আসতে পারে। কারণ ২৫ ডিসেম্বর তাদের বড় দিন রয়েছে। আর বিদেশীদের পর্যবেক্ষণের জন্য বিধিমালা করা হয়েছে, সেটাও না আসার একটি কারণ হতে পারে।
এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, সংসদের মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। তাই তড়িঘড়ি করে ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন না করে সরকার চাইলে সময় আরো বাড়াতে পারত। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারীর মধ্যে নির্বাচন করা নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক ভাবে বাধ্য। কিন্তু সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নির্বাচন করতে চাইলে তফসিল ঘোষণা আরো পিছিয়ে দিতে পারতো। ইসি তো দেখছে গণভবনে সব দল সংলাপ করছে সংকট সমাধানের পথ খুঁজে পেতে। ইসি অপেক্ষা করতে পারতো। তাছাড়া ডিসেম্বর মাসে সারাদেশে পরীক্ষা চলছে। মূল কথা বলো দেশে কি এক সঙ্গে দুটি সংসদ কার্যকর থাকবে? যদি ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারীর আগে এক মাসের বেশি সময় ধরে এক সাথে দুটি সংসদ বহাল থাকবে। এটি পৃথিবীর কোনো দেশেই সাধারণত দেখা যায় না।
অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘আমরা শ্লোগান দিতাম আমার ভোট আমি দেব যাকে খুশি তাকে দেব’। বর্তমানে এ সুযোগ নেই। দেখা যায় নির্বাচনে টাকার খেলার প্রভাবে ভালো প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে থাকতে পারেন না। বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থার পরিবর্তন গুনমান মান বৃদ্ধির জন্য দ্বিক্ষ বিশিষ্ট সংসদ রাখা, এবং স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে নতুন আইন প্রণয়ন অপরিহার্য।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এটা রাজনৈতিক দল অন্যান্য অংশীজনকে ডেকে এটা প্রমাণ করানো। কিন্তু এগুলো কিছুই করে না। আর বিশেষজ্ঞরা বলে, এই জিনিস সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে, রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টি করতে বছরের পর বছর লেগে যাবে।’ তিনি বলেন, কেন এত তড়িঘড়ি করে? কার স্বার্থে?’ সেমিনারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকার যে তড়িঘড়ি করছে তা মোটেও জনগণের কাছে বোধগম্য নয়।’ সুজন সম্পাদক জানতে চান, ৩৮শ’ কোটি টাকা খরচ করে কার স্বার্থে ইভিএম কেনা হচ্ছে?
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এক সময় আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলে তার মাধ্যমে এতগুলো নির্বাচন হল। স্বার্থে দেয়া হলো। আমরা জানি না। এ সরকার নির্বাচনের আগে বলেনি সংবিধান সংশোধন করবো। নির্বাচনের পরে তারা নিজেদের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করেছে এবং তা ব্যবহার করছে। আর আমরা নিয়ন্ত্রীত ভোট দেখতে চাই না। জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে, ইসিকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
উৎসঃ ইনকিলাব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন