উন্নত গণতান্ত্রিক বিশ্বে ডায়ালগ বা সংলাপকে রাজনীতির একটি ‘অনিবার্য পরিণতি’ বলে গণ্য করা হয়। মূলত গণতন্ত্র মানেই সমঝোতা। আর সমঝোতায় পৌঁছার প্রধান মাধ্যম সংলাপ। পাশ্চাত্যে কোনো বিষয় বা ইস্যু যত কঠিন ও কুটিল মনে হোক না কেন, অবশেষে সংলাপের মাধ্যমেই সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করা হয়। আর জনমতকে দেয়া হয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব। বিচ্ছিন্নতা বা স্বাধীনতার মতো জাতীয় স্বার্থবিরোধী বিষয়ও আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণের প্রয়াস নেয়া হয়। স্পেনের কাতালোনিয়া এবং স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া সব কিছুই প্রাথমিকভাবে সংলাপ এবং চূড়ান্তভাবে জনগণের সংলাপ বা গণভোটের মাধ্যমেই নির্ধারিত হচ্ছে। শক্তি প্রয়োগ সর্বশেষ এবং অনাকাক্সিক্ষত পন্থা। শক্তি প্রয়োগের অপর নাম যুদ্ধ। তবে যুদ্ধের শেষ সীমানায় আছে সংলাপ। প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানের ক্ষেত্রেও সংলাপ ছিল অবধারিত।
এতদুদ্দেশ্যে সংলাপ ও সমঝোতা রাজনৈতিক দুর্বলতার লক্ষণ বলে বহু দেশে বিবেচিত। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার হাজারো সঙ্ঘাতে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানোর নজির বিরল। আমাদের দেশের পাকিস্তান আমল থেকে সংলাপের সুফলের রেকর্ড নেই। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের একপর্যায়ে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া এবং সিদ্ধান্তের বেলায় সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। প্রে. আইয়ুব খান আরেকটি সামরিক শাসন চাপিয়ে দিয়ে রেহাই পেলেন। ১৯৭১ সালে আমাদের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে নির্বাচন বিজয়ী আওয়ামী লীগ এবং সামরিকজান্তার মধ্যে দীর্ঘ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের ধুরন্ধর রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর কারসাজিতে সংলাপ-সমঝোতা ব্যর্থ হয়ে যায়। বাংলাদেশ আমলে সংলাপের প্রথম উদ্যোগ ১৯৯৪ সালে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন, তথা রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে এই সংলাপের আয়োজন করা হয়। কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টিফেনের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত সে সংলাপ সফল হয়নি। ১৯৯৫ সালে সঙ্কট নিরসনে দেশের দুই রাজনৈতিক নেত্রীর সাথে সংলাপ শুরু করেন সিভিল সোসাইটির শীর্ষ ব্যক্তিরা। তবে তা ব্যর্থ হয়। ২০০১ সালে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠনের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতার ভূমিকা নিয়ে আসেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার।
দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত সেক্রেটারি জেনারেল পর্যায়ের আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে। ২০১৩ সালে পরবর্তী নির্বাচনের ব্যবস্থাপনা নিয়ে জাতিসঙ্ঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সংলাপের চেয়ে সঙ্ঘাতের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপক দৃষ্টান্ত সত্ত্বেও সংলাপ ও সমঝোতার আবেদন পরিপূর্ণরূপে বিলীন হয়ে যায়নি। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮-এই ১০ বছরে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কিন্তু বিশেষত বিএনপি সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসছে। সরকার সমঝোতার চেয়ে শক্তি প্রয়োগের কৌশলে বেশি অভ্যস্ত থাকার ফলে কখনোই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়নি। এখন জাতীয় নির্বাচন সমাগতপ্রায়। রাজনীতিতে অস্থির সমীকরণ তথা অ্যালায়েন্স চলছে। দেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠিত হওয়ায় সর্বোচ্চপর্যায়ে চিত্ত চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ফ্রন্টের কুশলী রাজনৈতিক নেতৃত্ব গণসংযোগ ও আন্দোলনের পাশাপাশি সংলাপ ও সমঝোতার পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন।
এক রকম আকস্মিকভাবেই ড. কামাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখলেন। আরো আকস্মিকতার সাথে, প্রধানমন্ত্রী নিজ দলের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও সংলাপে রাজি হয়ে যান। কেন তিনি সংলাপে রাজি হলেন, এর একটি চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রবীণ আওয়ামী বুদ্ধিজীবী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তার ভাষায়, ‘শেখ হাসিনা রাজনীতিক হিসাবে সত্যই ম্যাচুরিটি অর্জন করেছেন। বিরোধী জোটগুলোর সঙ্গে কখন সংলাপে বসতে রাজি হতে হবে না এবং কখন হতে হবে, তা তিনি জানেন। বিএনপি সন্ত্রাস, হুঙ্কার-সব কিছুতে ব্যর্থ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংলাপে বসার আবেদন জানাচ্ছিল এবং এই সংলাপে প্রধানমন্ত্রীকে রাজি করার জন্য বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে ক্রমাগত ধরনা দিচ্ছিল, তখন তিনি রাজি হননি। কিন্তু যখনই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট পুনর্গঠিত হলো এবং কামাল হোসেন সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন, অমনি তিনি রাজি হয়ে গেলেন।... এটা শেখ হাসিনার কূটনীতির বড় সাফল্য।’ জনাব চৌধুরী ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, সংলাপের ‘উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের লোকেরা অবশ্য আরেকটু খোলসা করে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা আগুনে পানি ঢেলে দিতে সক্ষম হয়েছেন।’ বিরোধী দল যখন ব্যাপক আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন এ সংলাপ তার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও প্রায়োগিকতা হ্রাস করেছে। ‘দুপক্ষের মধ্যে সংলাপ হলেই জনসাধারণের মনে আন্দোলনে নামার আগ্রহ কমে যায়।’ এতক্ষণে নিশ্চয়ই এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, সরকারপ্রধান একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই সংলাপের আয়োজন অব্যাহত রেখেছেন। জনাব চৌধুরীর বিশ্লেষণে বিদেশী চাপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রচলিত রীতিনীতি অনুযায়ী এ দেশে অবস্থানরত কূটনীতিকেরা মনে করছেন যে, তাদের দেশের মতো, সংলাপই সমঝোতার পথ নির্দেশ করবে। ড. কামাল হোসেনের জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি প্লাস পয়েন্ট যে, তার ব্যক্তিত্ব, রণকৌশল ও বৈদেশিক যোগাযোগ সংলাপ ত্বরান্বিত করেছে। সংলাপের ব্যর্থতা দ্বারা তিনি সরকারের একগুঁয়ে মনোভাব ও কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা প্রমাণে সক্ষম হবেন। তখন আন্দোলনের যৌক্তিকতা হবে গ্রহণযোগ্য।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, সংলাপের ফলাফল ‘শূন্য’। ঐক্যফ্রন্টের যে সাত দফা দাবি দেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে একটি শব্দও সরকারপ্রধান সংলাপকালে উচ্চারণ করেননি। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘এক দফাও মানা হবে না।’ সে কথাই সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, নাগরিকের যে মৌলিক অধিকারগুলো সংবিধানে অলঙ্ঘনীয় বলা হয়েছে, সংলাপে তা নিশ্চিত করার আবেদন জানাতে হয়েছে। আজগুবি ও গায়েবি রাজনৈতিক মামলা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী লিখিত তালিকা দিতে বলেছেন। যেখানে প্রায় সব মামলাই রাজনৈতিক, আজগুবি ও গায়েবি সেখানে পৃথক তালিকা দেয়ার অর্থ সময়ক্ষেপণ ও জটিলতা নয়কি? সংলাপের পরবর্তী সময়েও ওই ধরনের মামলা ও হামলা অব্যাহত রয়েছে। তা ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সম্প্রচার নীতিমালা ইত্যাদি নামে যে আইনগুলো প্রণয়ন করা হচ্ছে নির্বাচনের পূর্বাহ্ণে সেগুলোর প্রয়োগ চিন্তা করলেই নির্বাচনের স্বচ্ছতা সন্দেহজনক হয়ে ওঠে।
নির্বাচন কমিশনের আইনগত ও প্রায়োগিক ভূমিকার মাধ্যমে নাগরিক সাধারণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার কথা; সেখানে আরো কঠিন আচরণবিধি ও অন্যান্য আইন তৈরি করে তাদের অধিকার খর্ব করার পাঁয়তারা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিদেশী পর্যবেক্ষকদের এর আগে নির্বাচন কেন্দ্রে প্রবেশ ও চিত্রগ্রহণের অব্যাহত অধিকার খর্ব করার উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে মন্ত্রী পরিষদের সম্মতি এবং সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা না দিয়ে শুধু ‘নিরাপত্তা’ রক্ষায় ব্যবহার কি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ইঙ্গিতবহ? সংলাপে এসব বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাহলে শুধুই কি আপ্যায়নের কিংবা তোষামোদের প্রতিযোগিতা? ড. কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধুর মতো নিয়মতান্ত্রিক ও সৌজন্যের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। সে জন্য হয়তো প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে উচ্চ কথা বলে তাকে তুষ্ট করতে চেয়েছেন। অবশ্য সংলাপে তার প্রতিফলন লক্ষ করা যায়নি।
অনেকে সংলাপের সুযোগে ভালো ভালো কথার ছড়াছড়ি, মুখোমুখি বসা ও গণভবনের উষ্ণতাকে ইতিবাচক বলছেন। নিঃসন্দেহে প্রথম উদ্যোগ ও আয়োজন হিসোবে এটি প্রশংসনীয়। ভালো হোক মন্দ হোক ফলাফল শূন্য হোক- তা তো ‘সংলাপ’ ছিল। কিন্তু পরে যারা সিরিয়াল দিলেন- তারা সেখানে কী জন্য গিয়েছিলেন, সেটা একটি বড় প্রশ্ন হতে পারে। ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরী ভালো ভালো কথা বলার জন্য বিখ্যাত। দ্বিতীয় দিনের সংলাপে তিনি ফুলের তোড়া হাতে প্রধানমন্ত্রীকে সাদর সংবর্ধনা জানিয়েছেন। অথচ কিছু দিন আগেও তিনি আওয়ামী লীগের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করেছেন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, তিনি আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী এবং পুত্রধন মাহী বি. চৌধুরীকে এমপি হিসেবে দেখতে চান। বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন জোটের সাথে বৈঠক শেষে ডা. বদরুদ্দোজা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যোগ দেয়ার আভাস দিয়েছেন। জনাব ওবায়দুল কাদের ওই জোটের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে আশা ব্যক্ত করেছেন। জনাব চৌধুরীর ভূমিকাকে রাজনৈতিক ডিগবাজি মনে করছে সাধারণ মানুষ। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হলে আবারো ভোল পাল্টাতে পারেন তিনি।
ড. কামাল সূচিত সংলাপের সুযোগ নিলেন গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে সমালোচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি খুচরো খুচরো দলের সমন্বয়ে গঠিত সম্মিলিত জাতীয় জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যেহেতু তারা সরকারি জোটের অংশ হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের সরকারি দলের প্রশস্তি ব্যতীত অন্য কোনো বক্তব্য থাকার কথা নয়। এরশাদ খোলামেলাভাবেই বলেছেন, তাদের কোনো দাবিদাওয়া থাকবে না। বেশি আসন চেয়ে, খাওয়াদাওয়া করে চলে আসবেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কি প্রায় সমপর্যায় পৌঁছতে যাচ্ছেন? সুতরাং তাদের সংলাপ আর বিলাপের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য থাকছে না। সংলাপের কাতারে আরেকটি সংযোজন ১৪ দলীয় মহাজোট। যেখানে দাবিদাওয়া নিয়ে সংলাপ হওয়ার কথা, সেখানে সরকারি জোট কেবল আনুষ্ঠানিকতা এবং প্রদর্শনেচ্ছা থেকে গণভবনে দাওয়াত খেতে গেছে। তারা সেখানে সরকারের প্রশংসা করেছে; প্রশস্তি গেয়েছে।
আর সব সংলাপে সরকারপ্রধান সুযোগ পেয়েছেন উন্নয়নের ফিরিস্তি বয়ানের। সূচনা থেকে সমাপনী- সর্বত্র আনুষ্ঠানিক, অ্যাকাডেমিক এবং রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমাদের নেতা-নেত্রীদের কথা ও কাজের মধ্যে যে বেজায় ফাঁক, তা সবাই উপলব্ধি করেন। বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে যে জোট সংলাপে অংশগ্রহণ করেছে তার সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছ নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তার কথা বললেন। সুতরাং অপর পক্ষের বক্তব্য দেয়ার আর কিছু ছিল না। সংলাপের আয়োজন করে সরকার দেশে, বিদেশে নির্বাচনী আমেজ তৈরি করতে চাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে বলেছেন, ২০১৪ সালের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের বদনাম তারা নেবেন না। পত্রপত্রিকা খবর দিচ্ছে, প্রধান বিরোধী দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে ডামি প্রার্থী দেবে আওয়ামী লীগ।
সংলাপের আগে ও পরে সরকার বা আওয়ামী লীগের নীতিগত ও কর্মকৌশলগত কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এক রকম সিদ্ধান্ত হয়েই আছে যে, আন্দোলনের চেষ্টা করলে সরকার কঠোরভাবে তা দমন করবে। সরকারের মন্ত্রী, নেতা, পাতিনেতা ও উপনেতারা অহরহ এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি সম্পর্কে অভিজ্ঞ একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলছেন, তারা ২০১৪ সালে অনুসৃত নির্বাচন প্রকৌশলের কলাকৌশল থেকে এতটুকু সরে আসেননি বা আসবেনও না। তাহলে তাদের ভালো ভালো কথা বলতে সমস্যা কী? সংলাপের মতো নিয়মতান্ত্রিক বিষয় দিয়েই যখন বিরোধী দল এবং সাধারণ মানুষকে তুষ্ট করা যায়, তখন প্রকৃত ভোটের দরকার কী? তাদের কাছে সংলাপ মানে, বিরোধী দলের প্রলাপ বৈ কিছু নয়। অপর দিকে বিরোধীগোষ্ঠী মনে করে সংলাপে, চ্যানেলে, প্রকল্পে এবং উৎকট বিজ্ঞাপনে প্রশস্তি প্রলাপের নামান্তর।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কুশলতার সাথে সংলাপ ও আন্দোলন, উভয় পথে এগোচ্ছে বলে তাদের কর্মপদ্ধতি প্রমাণ করছে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। ৬ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্র যথার্থভাবেই শাসকমহলে হতাশার সঞ্চার করেছে। অন্য দিকে ৭ নভেম্বরে ছোট পরিসরের সংলাপ প্রমাণ করছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক পথেই হাঁটতে চায়। সব পথ যদি কাঁটায় ঘেরা হয়, তাহলে তা আন্দোলন, প্রতিরোধ ও জাগরণের লক্ষ্যে ধাবিত হবে- এটাই স্বাভাবিক।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন