বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ নির্বাচনে আমার নমিনেশন প্রসঙ্গে ; Momen Najib
প্রিয় দ্বীনি ভায়েরা,আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
পাবনা-১ নির্বাচনী আসনে জামায়াতের প্রার্থিতা পরিবর্তন নিয়ে একটি অনলাইন পত্রিকার সত্য মিথ্যা মিশ্রিত রিপোর্টকে কেন্দ্রকরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ভাই অতি আবেগের বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন ধরনের পোষ্ট দিচ্ছেন। কেও কেও আবার আমাকে আবেগঘন ম্যাসেজ দিচ্ছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত অবস্হান তুলে ধরার জন্যই এই বিবৃতি। আশাকরি এরপর বিভ্রান্তিগুলো দুর হবে।
--
রিপোর্টে সংগঠনের কিছু নেতৃবৃন্দের মিথ্যা উদৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে আমার পরিবারের বাধার কারনে আমি নির্বাচনে অংশ নিতে কিংবা দেশে আসতে অনিচ্ছুক এবং আমার বৃটিশ তুরস্ক সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব আছে যা ইলেকশনে অংশগ্রহনে বাধা। কিছু আবেগী ভাই আমাকে আমার শহীদ পিতার কোরবানীর কথা স্বরন করিয়ে দিয়ে দুনিয়াবী আরাম আয়েশের মায়া ত্যাগ করে বাবার পথ অনুসরনের পরামর্শ দিয়েছেন। কোরআনের উদৃতি দিয়ে স্বরন করিয়ে দিচ্ছেন যে স ভাল মন্দ শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় সুতরাং ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই। আমি আপনাদের পরামর্শকে শ্রদ্ধা করি, আপনারা ইসলামী আন্দোলনকে ভালবাসেন বলে, শহীদ মাওলানা নিজামীকে ভালবাসেন বলেই আমাকে এবং সংগঠনকে সুপরামর্শ দিচ্ছেন বলে আমি মনে করি। আবার কেও কেও সংগঠনের সিদ্ধান্তকে জাস্টিফাই করার জন্য বিপরীতমুখী মন্তব্যও করছেন যা কোন কোন ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে আমার ও আমার পরিবারের জন্য চরম অবমাননাকর ও বিব্রতকর হয়ে যাচ্ছে।
--
সকল কিছুর জবাবে আমি দ্বার্থহীন ভাষায় বলতে চাই, কিছু ব্যাক্তির উদৃতি দিয়ে আমার ও আমার পরিবারের সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে তার সাথে সত্যের লেশমাত্র সম্পর্ক নেই। আমি একজন জামায়াতের রোকন। আমি বিশ্বাস করি, রাসূলের হাদীস অনুযায়ী দায়িত্ব যেমন চেয়ে নেয়া যায় না, তেমনি দায়িত্ব চলে আসলে পিছিয়ে যাওয়ারও কোন সুযোগ নেই। আমাকে সংগঠন পাবনা-১ এর নমীনী নির্বাচিত করার পর আমি পরিষ্কার করে বলেছি, সংগঠন যখন আমাকে দেশে আসতে বলবে আমি দেশে চলে আসব। দেশ থেকে বিদেশে আমি বা আমার পরিবার যেমন স্বইচ্ছায় দুনিয়ার লোভে আসে নাই, বরং সংগঠনের নির্দেশে যুক্তিযুক্ত কারনেই আমরা দেশের বাইরে অবস্হান করছি, তেমনি ভাবে সংগঠন যখন মনে করবে আমাদের দেশে আসা দরকার, আমরা অবশ্যই আসব। একজন রোকন হিসাবে আমার দায়িত্ব নিজেকে সংগঠনের কাছে পেশ করা। বাকিটা সংগঠনের সিদ্ধান্ত, তার জনশক্তিকে কখন কোথায় কিভাবে কাজে লাগাবে।
--
সংগঠন আমাকে জানিয়েছে, বর্তমান দেশের এই পরিস্থিতিতে আমি দেশে আসতে পারব কিনা কিংবা আসা আদৌ ঠিক হবে কিনা সে ব্যাপারে আমাদের মুরুব্বি, দায়িত্বশীলদের সাথে বিস্তারিত আলাপ করা হয়েছে। সবাই বলেছেন, যেখানে আমার আসা না আসায় সংগঠনের কিংবা দেশের অবস্থার বিশাল কোন পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই, এই গুম, খুনের রাজত্বে যেহেতু আমরা ইতমধ্যেই অনেক ভাইকে হারিয়েছি, সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় সংগঠনের সিদ্ধান্ত আমার এই মুহুর্তে দেশে আসা ঠিক হবে না।
--
আমি মনে করি সংগঠন এক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। ইসলামী আন্দোলনে এটাই হওয়ার কথা, একজন রোকন সংগঠনের স্বার্থকে ব্যাক্তি স্বার্থ, নিরাপত্তা এগুলোর চেয়ে বড় করে দেখবে। অন্য দিকে জনশক্তির জান মাল সংগঠনের জন্য আমানত। আবেগের বশবর্তী হয়ে লাভ লোকসানের হিসাব না করে এগুলোকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিলে অবশ্যই আল্লাহর কাছে জবাবদিহী করতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতেও নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ন, উপযুক্ত কারন ছাড়া জেনে বুঝে মানুষের জানমালকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়াটা ইসলাম সম্মত নয়। সূরা ইবরাহীমের শেষ কটি আয়াতে ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের দোয়ার তাফসীর যদি আমরা ভালভাবে অধ্যায়ন করি তবে আমরা দেখবো ইব্রাহীম আ: আল্লাহর কাছে সকল কিছুর আগে, এমনকি দ্বীনী বিষয়ের আগেও তার বংশধরদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমি চাইলেন। আল্লাহ তায়ালা মুসা আ: কে ফেরআউনের কাছে পাঠানোর আগেই মুসা আ: এর অনুরোধে তার নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করলেন, (সূরা ক্বাসাস ২৩-২৫, সূরা ত্বহা ৪৫-৪৬) রাসূল সা: তয়েফ থেকে মক্কা প্রত্যাবর্তনের সময় মুতইম বিন আদীর নিরাপদ আশ্রয়ে মক্কায় ফিরে আসলেন। সংগঠনের জনশক্তিকে নিরাপদে রাখা, ভবিষ্যত পরিকল্পনা করে কাজ করা, লাভ ক্ষতির হিসাব করে পদক্ষেপ নেয়া কোন ভাবেই আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়।
যারা বলতে চাচ্ছেন অমুক নেতার ছেলে দেশে থাকলে আপনি কেন আসতে পারবেন না। তাদেরকে রাসূল সা: ঐ হাদীসটি স্বরন করিয়ে দিতে চাই, তোমরা উপদ্রুত এলাকায় থাকলে সেখান থেকে বের হবে না আর বাইরে থাকলে সেখানে যাবে না। সর্বপরি সিদ্ধান্ত আমার না সিদ্ধান্ত সংগঠনের।
--
আমাদের পরিবারের জন্য সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হবে দ্বীনি ভায়েরা যদি মনে করে প্রবাসে বিলাসী জীবনের মায়ায় আমরা সংগঠনের স্বার্থকে ছোট করে দেখছি। আমীরে জামায়াতে রক্তে ভেজা জমীন আমাদের কাছে দুনিয়ার সব জায়গার থেকে বেশী প্রিয়। তিনি যে সংগঠন করে জীবন দিয়েছেন সেটিও আমাদের নিজেদের জীবনের চেয়া অধিক প্রিয়। বিদেশে থাকবনা বলেই শত প্রতিবন্ধকতা স্বত্বেও দেশে ফিরে এসেছিলাম। সংকল্প ছিল শত প্রতিকূলতার মাঝেও দেশেই থাকার। কিন্তু যেহেতু আমি জামায়াতের রোকন এবং শপথ নিয়েছি দায়িত্বশীলদের শরিয়ত সম্মত সকল সিদ্ধান্তের আনুগত্যের, সুতরাং সংগঠনের নির্দেশেই আমার আর আমার আম্মুর এই বিদেশ নির্বাসন। আমরা আল্লাহ চাহেত অবশ্যই দেশে ফিরে আসব। কোন পদ পদবির লোভে নয় বরং আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নির্ভেজাল ভূমিকা রাখার জন্য।
--
পরিশেষে সকলের কাছে দোয়া চাই আল্লাহ যেন দেশেই আমার মৃত্যু দেন, শহীদ পিতার কবরের কাছে আমাকে চীরনিদ্রায় শায়িত হওয়ার তাওফীক দান করেন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে ক্ষমা করে দিন, আমৃত্যু ইসলামের উপর টিকিয়ে রাখুন এবং ঈমান নিয়ে তার কাছে হাজির হওয়ার তাওফীক দিন। আমীন ইয়া রব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন