বাংলাদেশ বার্তাঃ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে অংশগ্রহণকারী সকল দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। এজন্য নির্বাচন কমিশনকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য সংবিধান কমিশনকে যথাযথ ক্ষমতা প্রদান করেছে। তাই কমিশনকে সে ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা, নিরপেক্ষতা ও সাহসীকতার পরিচয় দিতে হবে। নির্বাচনের লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড বা সবার জন্য সমতা নিশ্চিত করার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনেরই দায়িত্ব। যা সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি কোনভাবেই উপেক্ষা করতে পারে না।
মূলত যেকোন সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে নির্বাচনে সকল পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বিষয়টি আপাতত নিশ্চিতও হয়েছে। নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ঘোষণার মাধ্যমে ২০ দলীয় ঐক্যজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দূরদর্শী ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তবে তারা এও বলেছেন যে, তাদের এ সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত নয় বরং তা পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। তারা নির্বাচনে রেফারির ভূমিকায় থাকা নির্বাচন কমিশনের কর্মতৎপরতা ও ভূমিকা দেখে তাদের পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন বলে জানিয়েছেন। তাই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার বিষয়টি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দলনিরপেক্ষ ভূমিকা ও গতিশীল তৎপরতার ওপরই নির্ভর করছে। তাই বিরোধী দলকে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে ধরে রাখার দায়িত্ব যুগপৎভাবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের।
মূলত নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তাদেরকে ভোটের মাঠে ধরে রাখতে নির্বাচন কমিশনকে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত তা হচ্ছে নির্বাচনের সবার জন্য সমান সুযোগ বা লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা। আর তা নিশ্চিত করতে এবং নির্বাচনকে সার্থকভাবে অংশগ্রহণমূলক করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে-
১. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের নিরপেক্ষ আচরণ নিশ্চিত করতে হবে।
২. ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দেয়ার সুযোগ দিতে হবে ।
৩. স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভোট গ্রহণ ও গণনার মাধ্যমে নির্বাচিত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করতে হবে।
৪. প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলমতের ঊর্ধে উঠে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কোন চিহ্নিত দলবাজ কর্মকর্তাকে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত করা যাবে না।
৫. নির্বাচনী আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে যেকোন ধরনের বৈষম্য নির্বাচনী ময়দানকে অসমতল করে তুলবে।
৬. কোনভাবেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম-এর ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, যন্ত্রটি স্বচ্ছ ভোট গ্রহণে সহায়ক নয় বরং এতে বড় ধরনের কারচুপির সুযোগ রয়েছে।
৭. বিরোধী দলের প্রস্তুতির জন্য নির্বাচন কমপক্ষে ৩ সপ্তাহ পেছাতে হবে। কারণ, বিরোধী দলের সাথে কোন পমামর্শ ছাড়াই একতরফা তফসিল ঘোষিত হওয়ায় তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণের মত প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেনি।
৮. প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
৯. গায়েবি মামলা বন্ধ ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
১০. কারাবন্দী বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
১১. জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনে প্রয়োজনীয় রদবদল করতে হবে এবং দলবাজ কর্মকর্তাদের নির্বাচনকালে ওএসডি করতে হবে।
১২. প্রতিটি ভোট কেন্দ্র থেকে ভোটকেন্দ্রের কার্যক্রম ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচারের অনুমতি দিতে হবে।
১৩. ভোট কেন্দ্রে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।
১৪. ভোট কেন্দ্রেই ভোট গণনা ও প্রিজাইডিং অফিসার স্বাক্ষরিত কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রতিটি প্রার্থীর পুলিং এজেন্টদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
১৫. বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনী প্রচারণা, সভা-সমাবেশ করার অধিকার নির্বিঘœ করতে হবে।
১৬. যেহেতু জামায়াত একটি বৈধ, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক দল। তাই তাদের জন্য লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সকল অধঃস্ত কার্যালয় খুলে দিতে হবে।
১৭. দলের কয়েকজন কেন্দ্রেীয় নায়েবে আমীর এবং একাধিক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এখন কারারুদ্ধ আছেন। অংশীজনদের সমতা নিশ্চিতের জন্য তাদেরকেসহ সকল নেতাকর্মীর মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি আ ন ম সামসুল ইসলাম ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
অতীব পরিতাপের বিষয় যে, সবার জন্য সমতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে নির্বাচন কমিশন সকল ক্ষেত্রেই দায়িত্বশীলতার দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রায় সকল ক্ষেত্রেই কমিশনের সিদ্ধান্ত শাসক দলের অনুকূলেই নেয়া হয়েছে। শো-ডাউন করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা যখন মনোনয়ন ফরম কিনলো তখন নির্বাচন কমিশনের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। তাদেরকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগেও অভিযুক্ত করা হয়নি। কিন্তু যখন বিএনপির নেতাকর্মীরা মনোনয়ন ফরম কেনার জন্য তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে শো-ডাউন করলো তখনই নির্বাচন কমিশন নড়েচড়ে বসেছে। তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ। পুলিশি হামলাও হয়েছে তাদের ওপর। কিন্তু নির্বাচন কমিশন একেবারে নির্বিকার। যা কোন নিরপেক্ষতার পরিচয় বহন করে না। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সকল মহলের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাচন অংশ গ্রহণমূলক হওয়ার সম্ভবনা সৃষ্টি হওয়ায় জনমনে যে আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছিল নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকার কারণে তা আবারও ব্যর্থ হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতহীন ভূমিকার বিষয়টি অনস্বীকার্য। নির্বাচন কমিশন যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ এটা শুধু মুখে বললে চলবে না বরং তা কমিশনের কর্মতৎপরতার মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে। বিরাজমান পরিস্থিতিতে তাদেরকে প্রধানত খবরদারিটা শুধু বিরোধী দল নয় বরং সরকারি দলের ওপরও দেখাতে হবে। কিন্তু কোনভাবেই তা লোক দেখানো হলে চলবে না। সংবিধান কমিশনকে যথেষ্ট ক্ষমতা দিলেও পক্ষপাতদুষ্ট মানসিকতার কারণেই তার যথাযথ প্রয়োগ খুব কমই দেখা যায়। কিন্তু নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই দলীয় মনোবৃত্তি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে এবং ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সরকারি দল করলে নীরব আর বিরোধী দল করলে সরব থাকার নীতি অনুসরণ করলে তা দেশের মানুষের কাছে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। নয়া পল্টনে বিএনপির ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা যা প্রমাণ করেছে তা কোনভাবেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মোটেই সহায়ক নয়।
নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে যা করা দরকার তার সবকিছুই অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে। তারা যে শপথ নিয়েছেন সে শপথ বিশ্বস্ততা, আন্তরিকতা ও সততার সাথে পুরোপুরি রক্ষা করে দেশ ও জাতিকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। তা নাহলে সংবিধান লঙ্ঘন ও শপথ ভঙ্গের অপরাধে তাদেরকে একদিন জনতার আদালতে জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
নির্বাচন কমিশনকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই বর্তমান আইন ও বিধি কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল নয়। সুরতাং পরিবর্তিত বাস্তবতাকে সামনে রেখে অবিলম্বে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতের জন্য নির্বাচনী আচরণবিধিকে সময়োপযোগী করে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন আনতে হবে। নির্বাচনী পক্ষগুলোর সমান অধিকারের নিশ্চিয়তা দিতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই। সে ক্ষেত্রে একটি বিষয় তাদেরকে ভালভাবে চিন্তা করতে হবে যে, এখানে একটি পক্ষ বিগত ৫ বছর থেকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রস্তুতি নিয়েছে। অপর পক্ষ এখনো সার্বিকভাবে আগোছালো ও অপ্রস্তুত। এমতাবস্থায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচন তিন সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়ার দাবি মোটেই অযৌক্তিক নয়। সংবিধানে ১২৩(ক) ধারা অনুযায়ী সংসদের মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন হলেও ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে।
তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৩ সপ্তাহ নির্বাচন পেছানোর দাবি কোন অসাংবিধানিক দাবি নয়। আর সংবিধানের ১২৩(খ) অনুসরণ করে সংসদ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও নির্বাচন করার সুযোগ আছে। ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯৬, ২০০৬ ও ২০০৮ সালে দফায় দফায় নির্বাচনী তফসিল পরিবর্তনের অতীত রেওয়াজ রয়েছে। তাই এখানে সকলকে আস্থায় নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে সরকারি দলের আপত্তি বিবেচনায় না নিয়ে দেশবাসী ও অধিকাংশ জনগণ যা চায় তাদের মনোভাবকে গুরুত্ব প্রদান করে নির্বাচন পিছানোর দাবির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় তাদের নিরপেক্ষতা ও দক্ষতার ব্যাপারে জনমনে যে সন্দেহ, সংশয় ও আস্থার সংকট রয়েছে তা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ভোট উৎসব নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যে প্রত্যাশা তা সার্বিকভাবে বিঘ্নিত হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল মহলেই উদ্বেগ-উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে উন্মুক্ত বিতর্ক ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনায় রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, মানবাধিকারকর্মী, সরকারের সমালোচক, আইনজীবী এবং বিরোধীদের ওপর ক্রাকডাউন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনই শেষ সুযোগ, যেখানে নির্ধারিত হবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে, নাকি পরিস্থিতি অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত হবে।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিক চার্লস টানোক বলেছেন, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে’। আরেক পার্লামেন্ট সদস্য টমাস জেকোভস্কি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে। নানা জল্পনা-কল্পনার পর আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। এখন অপেক্ষা- অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের’।
আমরা আশা করি, দেশ ও দেশের জনগণ ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উদ্বেগের জায়গা থেকে নির্বাচন কমিশন নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে উপলব্ধি করবে এবং একটি উৎসবমুখর পরিবেশে জনগণ যাতে রায় প্রদান করতে পারেন এবং ভোট গণনায়ও কোন প্রকার লুকোচুরি কিংবা রেজাল্ট পাল্টানোর মত কোন ঘটনাও যাতে না ঘটে তার জন্য সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ লোকের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে পাওয়া তার কর্মশক্তি প্রয়োগ করবে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি এমনই আশা ও দাবি করেন দেশের সকল আত্মসচেতন মানুষ। আশা করি নির্বাচন কমিশন জনগণের প্রত্যাশার দিকে তাকিয়ে সেরকম একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি গণমুখী, কল্যাণকামী, গণতান্ত্রিক, আদর্শিক, বৈধ ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। স্বাধীনতার পর থেকে জামায়াতে ইসলামী দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নির্বাচন কমিশন এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে একদিকে যেমন দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে অসম্মান করেছে, ঠিক তেমনিভাবে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি নিরপেক্ষতাও হারিয়েছে। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশন জাতিকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবে কি না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ-সংশয়, উদ্বেগ-উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।
জামায়াত একটি বৈধ রাজনৈতিক দল হলেও সরকারের প্রতিহিংসা ও বিভেদের রাজনীতির কারণে দীর্ঘদিন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ অধঃস্তন কার্যালয়গুলো সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে আমরা যথাযথভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি না। ক্ষমতাসীন দলসহ দেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলীয় কার্যালয়ের মাধ্যমে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম বিক্রিসহ নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলেও এক্ষেত্রে জামায়াতের সাথে সরকার ও নির্বাচন কমিশন বিমতাসূলত আচরণ করছে। ফলে জামায়াতের ক্ষেত্রে লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ডের প্রত্যাশাটা উপেক্ষিতই থাকছে। তাই সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ অধঃস্তন কার্যালয় খুলে দিয়ে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় নির্বাচনে সবার জন্য সমতা নিশ্চিত হবে না। শুধু তাই নয়, এরকম অবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশ, জনগণ ও বহির্বিশ্বে তা কোন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বরং তা অগ্রহণযোগ্য ও প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে।
# লেখক : কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তর আমীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন